বিশ্বকাপ ফুটবলের পর এবার অলিম্পিক প্রতিযোগিতা আয়োজনের দায়িত্ব বণ্টনের প্রক্রিয়া নিয়েও বিতর্ক দানা বাঁধছে৷ ২০২২ সালের শীতকালীন অলিম্পিক আয়োজনের দৌড় থেকে চারটি শহর সরে দাঁড়িয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
প্রথমে সুইডেনের স্টকহোম, তারপর একে একে ইউক্রেনের লভিভ, পোল্যান্ডের ক্রাকভ এবং সবশেষে নরওয়ের অসলো শহর৷ ২০২২ সালের শীতকালীন অলিম্পিক আয়োজনের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েও পিছিয়ে এলো এই চারটি শহর৷ থেকে গেল শুধু কাজাকস্তানের আলমাটি ও চীনের বেইজিং শহর৷
বলা বাহুল্য, এমন পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির জন্য অত্যন্ত অস্বস্তিকর৷ আইওসি নরওয়ের এই তড়িঘড়ি সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছে৷ তাদের মতে, সে দেশের রাজনীতিকরা অর্ধসত্য ও ভুল তথ্যের ভিত্তিতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগে থেকেই নরওয়ের সংবাদমাধ্যমে আইওসি-র চুক্তির পূর্বশর্ত সম্পর্কে অনেক চর্চা চলছিল৷ যেমন দাবি করা হচ্ছিল, যে হোটেলের ঘরের তাপমাত্রা থেকে শুরু করে অলিম্পিক কর্মীদের মুখের হাসি – সবই নাকি স্থির করে দেওয়া আছে৷ ককটেল প্রোটোকল, হোটেল বার ভর্তি মদ, দেশের রাজার সঙ্গে দেখা করার সুযোগের মতো শর্তও নাকি চাপানো হবে নরওয়ের উপর৷
‘বাংলার বাঘিনী’ রিতার বিশ্বজয়
পুরো নাম মার্গারিতা মামুন, ডাকনাম রিতা৷ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রুশ এই তরুণী রিদমিক জিমন্যাস্টিকসে গোটা বিশ্বের নজর কেড়েছেন৷ রিতার সাফল্য নিয়ে আমাদের বিশেষ ছবিঘর৷
ছবি: Alex Grimm/Bongarts/Getty Images
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রিতা
মার্গারিতা মামুনের বাবা বাংলাদেশি ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল্লাহ আল মামুন, মা রাশিয়ান আন্না মামুন৷ ছোটবেলায় অনেকবার বাংলাদেশে গেছেন রিতা৷ রিও অলিম্পিকে স্বর্ণ জেতার ৬ দিনের মাথায় মারা যান তার বাবা, যিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Naumov
যেভাবে শুরু
রাশিয়ার রিদমিক জিমন্যাস্ট দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য রিতা৷ এপর্যন্ত পৌঁছানোর ইতিহাস জানা যায় দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে৷ ১৯৯৫ সালের ১ নভেম্বর জন্ম নেয়া রিতা সাত বছর বয়স থেকেই রিদমিক জিমন্যাস্টিকস চর্চা শুরু করেন৷
ছবি: AFP/Getty Images/S. Supinsky
বাংলাদেশি হিসেবে প্রতিযোগিতায়
দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, রিতা জুনিয়র হিসেবে অনেকগুলো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছেন৷ ২০০৫ সাল থেকেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিচরণ তাঁর৷ জুনিয়র পর্যায়ে বাংলাদেশের হয়েও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন তিনি৷ তবে এক পর্যায়ে রাশিয়ার হয়েই এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন রিতা৷
ছবি: Alex Grimm/Bongarts/Getty Images
সাফল্যের শুরু
২০১১ সাল থেকে রিতার জীবনে উল্লেখযোগ্য সাফল্য আসতে শুরু করে৷ প্রথম আলোতে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ওই বছর রাশিয়ার চ্যাম্পিয়নশিপে হুপ ও বলে অল-অ্যারাউন্ড চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মধ্য দিয়ে জাতীয় দলে সুযোগ পান৷
ছবি: Alex Grimm/Bongarts/Getty Images
প্রথম সোনা জয়
২০১১ সালে মন্ট্রিল ওয়ার্ল্ড কাপে অংশ নিয়ে ১০৬.৯২৫ পয়েন্ট অর্জন করে অল-অ্যারাউন্ডে ব্রোঞ্জ পান রিতা৷ আর বল ফাইনালে ২৭.০২৫ পয়েন্ট নিয়ে স্বর্ণ জিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন৷
ছবি: AFP/Getty Images/S. Supinsky
রিতার এগিয়ে চলা
এই ছবিটি জার্মানির স্টুটগার্টে আয়োজিত একটি প্রতিযোগিতা থেকে তোলা৷ চলতি বছরের মার্চে এই আসরে রিতা তিনটি স্বর্ণ পদক, একটি সিলভার এবং একটি ব্রোঞ্জ পদক জয় করেন৷
ছবি: Alex Grimm/Bongarts/Getty Images
সাফল্যের কিছু নমুনা
উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী রিতা রিদমিক জিমন্যাস্টিকসের ২০১৪ সালের ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে সবমিলিয়ে সিলভার মেডেলিস্ট এবং ২০১৩ সালের ওয়ার্ল্ড কাপ ফাইনালে ‘অল অ্যারাউন্ড’ চ্যাম্পিয়ন৷
ছবি: Alex Grimm/Bongarts/Getty Images
‘বাংলার বাঘিনী’ রিতা
এই তরুণী বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন্সশিপে আটটি এবং ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন্সশিপে চারটি সোনা জিতেছেন। রিদমিক জিমন্যাস্টিকসে বিশ্ব রেকর্ডও রয়েছে মার্গারিটার। ২০১৬ বাকু বিশ্বকাপে চারটি ইভেন্টে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছিলেন তিনি। ২০১৬ রিও অলিম্পিকে সোনাজয়ী এই জিমন্যাস্ট। রিতাকে বলা হয় ‘বাংলার বাঘিনী৷’ আর এই খেতাব তাঁকে দিয়েছেন তাঁর রুশ কোচ ইরিনা ভিনের৷ রাশিয়ার গণমাধ্যমেও রিতাকে ‘বাংলার বাঘিনী’ হিসেবেই উল্লেখ করা হয়৷
ছবি: Alex Grimm/Bongarts/Getty Images
বাংলা বলা
রিতা নাকি ছোটবেলায় ভাঙা ভাঙা বাংলাও বলতে পারতেন৷ বাবার সঙ্গে বাংলাদেশে অনেকবার বেড়াতেও গিয়েছেন তিনি৷ রাশিয়ার গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা জানিয়েছেন তিনি৷
ছবি: Alex Grimm/Bongarts/Getty Images
ফেসবুকে, ইন্সটাগ্রামে রিতা
রিতার সাফল্যের খবর নিয়মিত পাওয়া যাবে ফেসবুকে৷ ‘মার্গারিতা মামুন ফ্যানস’ নামক একটি পাতা রয়েছে তাঁর৷ এছাড়া ইন্সটাগ্রাম এবং ভিকন্টাক্টিয়াতেও পাওয়া যাবে তাঁকে৷
ছবি: Alex Grimm/Bongarts/Getty Images
10 ছবি1 | 10
এমন সব প্রতিবেদন পড়ে দেশের জনমতও অলিম্পিক আয়োজনের বিরুদ্ধে যেতে শুরু করে৷ ফলে সরকারকেও নড়েচড়ে বসতে হয়৷ সম্ভবত এত বিরোধিতার মুখেই অলিম্পিক আয়োজনের প্রচেষ্টা ছেড়ে দেয় নরওয়ের সরকার৷
আইওসি এখন আত্মপক্ষ সমর্থনে বলছে, সব বিষয় মোটেই শর্ত হিসেবে চাপানোর কথা বলা হয়নি৷ এর মধ্যে অনেকগুলিই ছিল শুধু পরামর্শ৷ অতীতে যে সব শহর অলিম্পিক আয়োজন করেছে, তাদের কিছু পদক্ষেপেরও তালিকা রয়েছে৷ নরওয়েজিয়ান অলিম্পিক কমিটির মহাসচিব ইঙে আন্ডারসেন রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিষয়টি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন৷ তিনি বলেন, এই প্রথম আইওসি ম্যানুয়াল প্রকাশ্যে পেশ করা হয়েছে৷ ইউরোপ, অ্যামেরিকা বা ক্যানাডার মতো দেশ যাতে সেটা বুঝতে পারে, আইওসি-কে তা নিশ্চিত করতে হবে বলেও তিনি মনে করেন৷ সোশাল মিডিয়ার এই যুগে স্বচ্ছতা অত্যন্ত জরুরি, বলেন আন্ডারসেন৷
আন্ডারসেন এ প্রসঙ্গে মনে করিয়ে দেন, অলিম্পিক আয়োজনের ক্ষেত্রে ব্যয়ভারও একটা বড় বিষয়৷ ২০১৪ সালে রাশিয়ার সোচি-তে শীতকালীন অলিম্পিকে প্রায় ৫,০০০ কোটি ডলারের ব্যয়ভার দেখে অনেকেই শঙ্কিত হয়ে পড়েছে৷ তবে সোচি-কে যেভাবে প্রায় নতুন করে গড়ে তুলতে হয়েছিলো, অন্যান্য শহরের ক্ষেত্রে এমন বাড়তি ব্যয়ভারের আশঙ্কা নেই বলে তিনি মনে করেন৷