গত ১৫ বছর ধরে তিনি প্রতিটি সামার ও উইন্টার অলিম্পিকের আসরে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু থাকতে পারলেন না নিজের দেশেই।
বিজ্ঞাপন
তার নাম কুজোনরি তাকিশিমা। ইচ্ছে ছিল বিশ্বরেকর্ড করার। কিন্তু বাদ সাধল করোনা। বাদ সাধল দর্শকহীন অলিম্পিক করার সিদ্ধান্ত। তাই গত ১৫ বছর ধরে প্রতিটি অলিম্পিকের আসরে উপস্থিত থাকলেও এবার টোকিও অলিম্পিকের আসরে দর্শকের আসনে নেই তিনি। ফলে ওয়ার্ল্ড রেকর্ড করা সম্ভব হচ্ছে না।
প্রতিবার যখন তিনি অলিম্পিকের আসরে দর্শক হিসাবে হাজির হন, তখন তার চুল রাঙিয়ে নেন অলিম্পিক রিংয়ের রঙে। রিওতে তার চুলের রঙ ছিল সবুজ। এবারও তিনি তার চুল লাল করেছিলেন। জাপানি অ্যাথলিটদের সমর্থনে গলা ফাটাবার জন্য সব প্রস্তুতি নিয়ে নিয়েছিলেন। টিকিটও কেনা হয়ে গেছিল। হোক্কাইডো থেকে তিন বন্ধুকে তার টোকিওর বাড়িতে আমন্ত্রণও জানিয়ে রেখেছিলেন। যাতে তারা অলিম্পিক দেখতে পারেন, উত্তেজনার আঁচ পেতে পারেন এবং পরবর্তী অলিম্পিকের আসরে তার সঙ্গী হন।
স্টেডিয়ামে গিয়ে অলিম্পিক দেখা হয়নি। তাও তাকিশিমার বন্ধুরা এক হাজার ৩০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে তার বাড়িতে এসেছেন। তাকিশিমার বন্ধু সোকো ফুসিমোতো বলছিলেন, ''তাকিশিমা অলিম্পিক বলতে পাগল। আমি এটা একেবারেই বুঝি না। কিন্তু আমার তাকিশিমার এই মনোভাব ভালো লাগে। তাই আমি তাকে সমর্থন করতে চাই।''
তাকিশিমা ৩৫ হাজার ইয়েন দিয়ে ২৮টি প্রতিযোগিতার ১৯৭টি টিকিট কেটেছিলেন। নিজের, আত্মীয় ও বন্ধুদের জন্য। কিন্তু এখন তাকে টিভির পর্দায় অলিম্পিক দেখতে হচ্ছে। বন্ধুদের সঙ্গে বসেই টিভি দেখছেন তিনি।
অলিম্পিক নিয়ে তাকিশিমার উন্মাদনা জেগেছিল ১৫ বছর আগে। তিনি প্রথমে একটি আইস স্কেটিং প্রতিযোগিতা দেখেন। তার শব্দ, গতি, প্রতিদ্বন্দ্বিতা তাকে মুগ্ধ করে। তারপরই ২০০৬-এর উইন্টার অলিম্পিক দেখতে যান তিনি। সেই শুরু। সেখানে জাপানের অ্যাথলিট আরাকাওয়ার সোনা জেতা দেখে আপ্লুত হন।
অলিম্পিকে ইসরায়েলি খেলোয়াড়দের বয়কটের কয়েকটি ঘটনা
টোকিও অলিম্পিকে দুজন জুডো খেলোয়াড় ইসরায়েলের এক প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে খেলেননি৷ একজন নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন, অন্যজন ম্যাচে উপস্থিত হননি৷ অলিম্পিকে অতীতেও এমন ঘটনা ঘটেছে৷
ছবি: Reuters/M. Blake
আরাশ মিরইসমাইল
২০০৪ অলিম্পিকের উদ্বোধনীতে ইরানের পতাকা বহন করেছিলেন এই জুডো খেলোয়াড়৷ সেই সময় জুডোর অনুর্ধ্ব-৬৬ কেজি বিভাগে তিনি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ছিলেন৷ কিন্তু প্রতিযোগিতা শুরুর আগে ওজন মাপার সময় তার ওজন দুই কেজি বেশি পাওয়া যায়৷ সে কারণে মিরইসমাইল বাদ পড়ে যান৷ তবে প্রথম রাউন্ডে ইসরায়েলের ইহুদ ভাকসের সঙ্গে খেলা পড়ায় তিনি তার মুখোমুখি হতে চান না বলে ইরানে খবর প্রকাশিত হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/H. Sar
মোহাম্মদ আলীরেজাই
ইরানের প্রথম সাঁতারু হিসেবে ওয়াইল্ডকার্ড ছাড়াই ২০০৮ অলিম্পিক খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি৷ তবে বাছাইপর্বে ইসরায়েলের সাঁতারু থাকায় প্রতিযোগিতা শুরুর আগে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন আলীরেজাই৷ ইরানি কর্তৃপক্ষের নির্দেশের কারণে তিনি এটা করেছেন বলে সেই সময় গণমাধ্যমের খবরে দাবি করা হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/K. Jebreili
বায়ান জুমাহ
২০০৮ অলিম্পিকের ৫০ মিটার ফ্রিস্টাইল সাঁতারের বাছাইপর্বে ইসরায়েলি সাঁতারুর সঙ্গে লড়তে অস্বীকৃতি জানিয়ে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন সিরিয়ার বায়ান জুমাহ৷ ইসরায়েলের পত্রিকা জেরুসালেম পোস্ট সেই সময় এই খবর দিয়েছিল৷
ছবি: Getty Images
জৌদ ফাহমি
তিনি সৌদি আরবের জুড়ো খেলোয়াড়৷ ২০১৬ অলিম্পিকের দ্বিতীয় রাউন্ডে ইসরায়েলের প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে লড়তে হতে পারে এই সম্ভাবনায় ফাহমি হাত, পায়ে ইনজুরির দাবি করে প্রথম রাউন্ড থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নেন বলে অভিযোগ উঠেছিল৷ ইসরায়েলের এক গণমাধ্যম বলেছিল, ফাহমির আসলে কোনো ইনজুরি ছিল না৷ তবে ফাহমির নাম প্রত্যাহারের কারণ ইনজুরি বলে জানিয়েছিল সৌদি অলিম্পিক ডেলিগেশন৷ আল অ্যারাবিয়া সেই তথ্য প্রকাশ করেছিল৷
ছবি: alarabiya.net
ফেঠি নুরিন
২০২০ টোকিও অলিম্পিকের দ্বিতীয় রাউন্ডে শনিবার ইসরায়েলের প্রতিদ্বন্দ্বী তোহার বুতবুলের সঙ্গে লড়ার সম্ভাবনা থাকায় প্রথম রাউন্ড থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেন আলজেরিয়ার জুডো খেলোয়াড় নুরিন৷ সে কারণে তাকে ও তার কোচকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে আন্তর্জাতিক জুডো ফেডারেশন৷ আলজেরিয়াও অলিম্পিকে ঐ দুজনের অ্যাক্রিডিটেশন বাতিল করেছে৷ নাম প্রত্যাহারের কারণ হিসেবে তিনি ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থনের কথা জানিয়েছেন৷
ছবি: REUTERS
মোহামেদ আবদালারাসুল
ফেঠি নুরিনের পর সুদানের জুডো খেলোয়াড় আবদালারাসুলও ইসরায়েলের প্রতিদ্বন্দ্বী তোহার বুতবুলের (ছবি) সঙ্গে লড়েননি৷ বুতবুলের সঙ্গে ম্যাচে তিনি অনুপস্থিত ছিলেন৷ অথচ ম্যাচের জন্য তিনি ওজন মাপিয়েছিলেন৷ ম্যাচে উপস্থিত না হওয়ার কোনো কারণ জানাননি তিনি৷
ছবি: Annegret Hilse/REUTERS
অন্যান্য প্রতিযোগিতা
অলিম্পিক ছাড়াও অন্য অনেক প্রতিযোগিতায় ইসরায়েলের অ্যাথলিটদের বিরুদ্ধে খেলতে অনেক দেশের খেলোয়াড়েরা অস্বীকৃতি জানিয়েছেন৷ তাদের বেশিরভাগই ইরানের অ্যাথলিট৷ এছাড়া টিউনিশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, কুয়েত, সিরিয়া, আলজেরিয়া, সৌদি আরব, লেবানন ও জর্ডানের খেলোয়াড়রাও আছেন৷
7 ছবি1 | 7
তাকিশিমা বলছিলেন, ''অ্যাথলিটরা এতটা পরিশ্রম করে, প্রতিটি জেতা বা হারার পিছনে থাকে হাসি, আনন্দ, চোখের জলের কাহিনি, তা আমাকে স্পর্শ করে। আমাকে প্রেরণা জোগায়।''
তাকিশিমা একজন রিয়েল এস্টেট এজেন্ট। ৪৫ বছর বয়সি তাকিশিমা সাতটি অলিম্পিক দেখেছেন। ১০৬টি প্রতিযোগিতায় তিনি হাজির থেকেছেন। তিনি বলছিলেন, ''প্রতিটি অলিম্পিকের আসর আলাদা। তার রূপ, রস গন্ধ আলাদা। তাই কোনো একটিকে বিশেষ বলে চিহ্নিত করতে পারব না।''
অলিম্পিকের সময় তিনি বেশিক্ষণ ঘুমোন না। যত বেশি সম্ভব ইভেন্ট দেখেন। টোকিও অলিম্পিকের আসরে হাজির থাকতে পারলে তিনি ১৩৪টি ইভেন্টে থাকার রেকর্ড করে ফেলতে পারতেন। গিনেসে নাম উঠে যেত তার। কিন্তু নিজের শহরে রেকর্ড করতে পারলেন না তিনি। তাকে এখন অপেক্ষা করতে হবে পরের অলিম্পিকের জন্য।