স্বাস্থ্য বিশেজ্ঞদের সতর্কতা সত্ত্বেও জাপানে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া টোকিও অলিম্পিক ২০২০-এর প্রতিটি ভেন্যুতে সর্বোচ্চ ১০ হাজার দর্শককে প্রবেশের অনুমতি দিল আয়োজক কমিটি। সোমবার এক মিটিং শেষে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
বিজ্ঞাপন
এর ফলে দেশটিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া অলিম্পিকে কী পরিমাণ দর্শক মাঠে বসে খেলা দেখতে পারবেন সে বিষয়ে জল্পনা-কল্পনার অবসান হলো।
করোনা মাহামারির কারণে এক বছর পিছিয়ে চলতি বছর ২৩ জুলাই থেকে শুরু হচ্ছে এ মেগা ইভেন্ট। মহামারির সতর্কতার অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে নানা পদক্ষেপের কথা জানায় কর্তৃপক্ষ।
আগামী মাস থেকে শুরু হওয়া এ প্রতিযোগিতায় প্রতিটি স্টেডিয়ামে দর্শক সংখ্যা হবে মোট আসনের অর্ধেক।
সতর্কতার অংশ হিসেবে স্টেডিয়ামে জয়োল্লাস নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দর্শকদের মাস্ক পড়ে স্টেডিয়ামে প্রবেশ করতে বলা হয়েছে। তাছাড়া দর্শকদেরকে কোনো ধরনের ভিড় তৈরি না করে সরাসরি স্টেডিয়ামে প্রবেশ এবং ইভেন্ট শেষে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।
স্টেডিয়ামে অ্যালকোহল পানের অনুমতি দেওয়া হবে কিনা সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আয়োজক কমিটি টোকিও ২০২০-এর প্রধান সেইকো হাশিমোতো বলেন, খেলা চলাকালীন স্টেডিয়াম অ্যালকোহল পান করতে দেওয়া হবে কিনা তা বিবেচনা করছে তারা।
এদিকে, প্রাথমিকভাবে প্রতিটি ইভেন্টে সর্বোচ্চ ১০ হাজার দর্শককে পব্রশের অনুমতি দেওয়া হলেও এ সংখ্যা আরো কমিয়ে আনা হতে পারে। করোনা ভাইরাসের পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ১২ জুলাইয়ের পর এ বিষয়ে নতুন সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
টোকিও অলিম্পিক: জাপান এখনো সংশয়ে
আবার না পিছালে দু মাসের মধ্যেই শুরু হবে টোকিও অলিম্পিক৷ কিন্তু জাপানের অনেক মানুষ ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে বড় আসরকে এখনো মন থেকে মেনে নিতে প্রস্তুত নন৷ করোনা আতঙ্ক এখনো ছাড়েনি তাদের৷ ছবিঘরে বিস্তারিত...
ছবি: Kim Kyung Hoon/REUTERS
‘অর্থনীতির স্বার্থে হওয়া দরকার, তবে সবার নিরাপত্তার দিক দেখলে একেবারেই নয়’
ফিনল্যান্ডের নাগরিক থেরেজ উইক টোকিওর এক বহুজাতিক কোম্পানিতে চাকরি করেন৷ তার মতে, ‘‘ দেশের অর্থনীতির স্বার্থে আয়োজনটা হওয়া দরকার, তবে সবার নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দিলে তা একেবারেই হওয়া উচিত নয়, বরং পরিকল্পনা বাতিল করা উচিত৷’’
ছবি: Kim Kyung Hoon/REUTERS
‘মানুষকে সক্রিয় এবং স্বপ্ন পূরণে সচেষ্ট দেখতে চাই’
টোকিওর এক পোষা প্রাণির দোকান মালিক নোবুয়াকি মোরিবে বলেন, ‘‘করোনা ভাইরাস আরো কিছুদিন থাকবে, তাই মানুষের হাল ছেড়ে দেয়া উচিত নয়৷ আমি মানুষকে সক্রিয় এবং তাদের স্বপ্ন পূরণে সচেষ্ট দেখতে চাই৷’’
ছবি: Kim Kyung Hoon/REUTERS
‘এ সময়ে এর প্রয়োজন নেই’
ডাবল-ডাচ রোপ জাম্পার কাই মনে করেন জাপানের মানুষ যখন করোনার চতুর্থ ঢেউয়ের আগমনের আশঙ্কায়, তখন এমন আয়োজনের খুব প্রয়োজন ছিল না৷ টোকিওর ইয়োয়োগি পার্কে প্র্যাকটিস করতে করতে তিনি বলেন, ‘‘আমার মনে হয় এখন অলিম্পিক আয়োজনের দরকার নেই৷ তবে তারা (আয়োজক কমিটি) যদি মানুষকে খুব উজ্জীবিত করতে পারে, সবার মনে আনন্দ ফিরিয়ে আনতে পারে, তাহলে তা হতে পারে৷’’
ছবি: Kim Kyung Hoon/REUTERS
‘এখনো তো খুব কম মানুষই টিকা পেয়েছে’
টোকিওর ব্যাংক-কর্মী তাকাশি কিতাহারা মনে করেন জাপানের অধিকাংশ মানুষ এখনো করোনার টিকা পায়নি, সুতরাং এমন পরিস্থিতিতে চতুর্থ ঢেউকে আহ্বান জানানোর মতো পদক্ষেপের কোনো মানে হয় না, ‘‘এখানে কয়েক শতাংশ মানুষ এখনো টিকা পেয়েছে৷ তাই আমার মনে হয় এই পরিস্থিতিতে গেমস আয়োজন করার সিদ্ধান্ত খুবই বিপজ্জনক৷’’
ছবি: Kim Kyung Hoon/REUTERS
‘নিয়ম মানলে আয়োজন করা সম্ভব’
৫৭ বছর বয়সি কেনিচি হোন্ডা অবশ্য স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে অলিম্পিক গেমস আয়োজনের পক্ষে৷ তার মতে, ‘‘তারা (আয়োজক) বলছে, বেসবলে দর্শক থাকবে, সুমো কুস্তিতে দর্শক থাকবে- এসব ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থাও নেয়া হবে৷ সেক্ষেত্রে তো মনে হয়, এমন আয়োজন করা যেতেই পারে৷’’
ছবি: Kim Kyung Hoon/REUTERS
‘ক্রীড়াবিদদের কথা ভাবলে মনে হয় অলিম্পিক হওয়া উচিত’
যোগ ব্যায়ামের ইন্সট্রাক্টর কাইকো ইয়ামামুরা বলেন, ‘‘এটা ঠিক অংশগ্রহণকারী ক্রীড়াবিদদের মাধ্যমে করোনার অন্য ভ্যারিয়েন্টগুলো চলে আসার ঝুঁকি রয়েছে৷ সেরকম হলে তো বিপজ্জনক৷ তবে ক্রীড়াবিদরা যে এ আয়োজনের জন্য দীর্ঘদিন কঠোর পরিশ্রম করেছেন, তাদের কথা ভাবলে মনে হয়- চলো অলিম্পিকটা আয়োজন করে ফেলি৷’’
ছবি: Kim Kyung Hoon/REUTERS
‘এমন পরিস্থিতিতে অলিম্পিক আয়োজনের পরিকল্পনা অবিশ্বাস্য’
আয়োজক কমিটি আগেই জানিয়েছে, এক বছর পর শুরু হতে যাওয়া টোকিও অলিম্পিক দেখতে বিদেশি দর্শকরা যেতে পারবেন না৷ ৭৩ বছর বয়সি সাবেক চাকরিজীবী মিরেই সাকাই মনে করেন, ‘মহামারি সারাবিশ্বে যখন আতঙ্ক ছড়িয়ে চলেছে, তখন বিদেশি (ক্রীড়াবিদদের) এভাবে আমন্ত্রণ জানানো সত্যিই অবিশ্বাস্য৷’’
ছবি: Kim Kyung Hoon/REUTERS
‘বাতিল করলে জাপান পস্তাবে’
সুশি রেস্তোরাঁর মালিক তাকাশি ইওনেহানা বলেন, ‘‘অলিম্পিক আয়োজন না করার সিদ্ধান্ত নিলে জাপানের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে৷ তখন জাপান পস্তাবে৷আমি মনে করি,আগামি দুমাসে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে অলিম্পিকও হওয়া উচিত৷’’
ছবি: Kim Kyung Hoon/REUTERS
’৯৭ বছর বয়সি শ্বশুর অপেক্ষায় আছে’
সাচি ওহাশি জানালেন জাপানে এমন মানুষও আছে যারা ১৯৬৪ সালের টোকিও অলিম্পিক দেখেছিলেন৷ তারা সবাই জীবদ্দশায় দেশের মাটিতে দ্বিতীয় অলিম্পিক গেমস দেখার জন্য মুখিয়ে আছেন৷ সাচি জানালেন, তার ৯৭ বছর বয়সি শ্বশুরও জাপানে আবার অলিম্পিক দেখার জন্য উদগ্রীব৷
ছবি: Kim Kyung Hoon/REUTERS
9 ছবি1 | 9
বিদেশি দর্শকদের বেলায় আগে থেকেই নিষেধাজ্ঞা জারি আছে। তবে এনবিসিইউনিভার্সেলসহ অন্যান্য টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন ইভেন্ট সরাসরি সম্প্রচার করবে।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে বিশ্বের অনেক দেশই যখন রীতিমতো যুদ্ধ করছিল পূর্ব এশিয়ার দেশ জাপান তা বেশ ভালভাবেই সামাল দিয়েছে। তবে দেশটিতে টিকা প্রদাননের হার ছিল কম। আর দেশের কিছু কিছু অঞ্চলের স্বাস্থ্যব্যবস্থা অনেকটা ভেংগে পড়েছিল।
এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য বিশেজ্ঞরা অলম্পিক আয়োজনের বিপক্ষে মত দেয়। গত শুক্রবার স্বাস্থ্য বিশেজ্ঞদের পক্ষ থেকে বলা হয়, স্টেডিয়ামে দর্শক পবেশ করতে না দেওয়াই হতে পারে সবচেয়ে কম ঝুঁকিপূর্ণ উপায়।
রাজধানী টোকিওর কেইও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য গবেষক হারুকা সাকামোতো বলেন, "অনেক লোক খেলা দেখতে আসবে শুধু সে বিষয়েই আমি উদ্বিগ্ন নই। আমি আরো উদ্বিগ্ন এ কারণে যে, জনগণ করোনা বিষয়ে প্রয়োজনীয় সঠিক আচরণ নাও করতে পারে।"
করোনার সময়ে অলিম্পিক আয়োজনের বিপক্ষে দেশটির অনেকেই। জাপানের টেলিভিশন চ্যানেল আসাহি নিউজ নেটওয়ার্কের এক গবেষণায় শতকরা ৬৫ভাগ লোক অলিম্পিক আয়োজন স্থগিত রাখার বা বাতিল করার পক্ষে মত দেন। আর শতকরা ৭০ভাগ মনে করেন করোনার জন্য প্রয়োজনীয় সতর্কতা মেনে অলিম্পিক আয়োজন সম্ভব হবে না।
করোনা কেড়েছে তার অলিম্পিক স্বপ্ন
স্বপ্ন পূরণের জন্য ভালো চাকরিটা ছেড়েছিলেন৷ সপ্তাহে ছয়দিন অনুশীলন করেছেন টানা এক বছর৷ তবু টোকিও অলিম্পিকে অংশ নেয়া হচ্ছে না আরিসার৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Kim Kyung-Hoon/REUTERS
জাপান-সেরা আরিসা
২০১৯ সালে জাপানের জাতীয় বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপে মেয়েদের মিডল ওয়েট বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন আরিসা সুবাতা৷ দেশসেরা হয়ে ভেবেছিলেন, নিজেকে আরো তৈরি করে টোকিও অলিম্পিকে অংশ নেবেন৷
ছবি: Kim Kyung-Hoon/REUTERS
করোনাকে জয়ের মরিয়া চেষ্টা
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ায় ২০২০ সালে টোকিও অলিম্পিক হতে পারেনি৷ কিন্তু আসর এক বছর পিছিয়ে যাওয়ায় আরিসার কোনো সমস্যা হবার কথা নয়৷ দেশসেরা তিনি, সুতরাং ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে বড় আসরে নিজের ভালো সম্ভাবনাই দেখছিলেন৷ সম্ভাবনা আরো উজ্জল করতে অনুশীলনে জোর দিয়েছিলেন প্রচণ্ড৷ তাতে করোনা তো কাছে আসেইনি, পারফর্ম্যান্সেও দেখা যাচ্ছিল উন্নতির ধারা৷
ছবি: Kim Kyung-Hoon/REUTERS
স্বপ্ন ধরতে চাকরি ছাড়া
২৭ বছর বয়সি আরিসা পেশায় নার্স৷ টোকিওর অন্যতম সেরা হাসপাতালে চাকরি করতেন৷ শুধু রোববার ছাড়া সপ্তাহের বাকি ছয়দিন সবচেয়ে বেশি প্রশিক্ষণের সময় বের করতে সেই চাকরিটা দিলেন ছেড়ে৷ ছোট একটা ক্লিনিকে চাকরি নিয়ে শতভাগ একাগ্রতা নিয়েই শুরু করলেন অলিম্পিকের পথে স্বপ্নযাত্রা৷
ছবি: Kim Kyung-Hoon/REUTERS
স্বপ্নের মৃত্যু
আগামী জুনে বাছাইপর্ব হবে, সেখানে উতরে গেলেই নিজের দেশের আয়োজনে অংশ নেয়া নিশ্চিত৷ কাজটা কঠিন, তবে অসম্ভব মনে হচ্ছিল না মোটেই৷ কিন্তু হঠাৎ আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কাউন্সিল (আইওসি)-র ঘোষণা- যথেষ্ট সময় না থাকায় কোনো বাছাইপর্ব হবে না, সর্বশেষ র্যাঙ্কিং অনুযায়ী যারা এগিয়ে, এবার শুধু তারাই পাবেন অলিম্পিক মাতানোর সুযোগ৷ আরিসার অলিম্পিক-স্বপ্নের সমাধি হলো সেখানেই৷
ছবি: Kim Kyung-Hoon/REUTERS
স্বপ্ন দেখা কঠিন
২০১৯ সালে দেশসেরা হলেও ২০১৭ সালের র্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে থাকায় টোকিও অলিম্পিকে অংশ নেয়া হবে না৷ এমন দুর্ভাগ্য মানতে বড় কষ্ট হচ্ছে আরিসার৷ তবে বাস্তবতা মেনেই হতাশার কথা শোনালেন তিনি, ‘‘টানা এক বছর কঠোর অনুশীলন করেছি৷ তারপরও অংশ নিতে পারবো না জেনে আমি ভীষণ হতাশ৷’’ আরিসা জানেন, তিন বছর পর বয়স ত্রিশ ছাড়াবে, তখন প্যারিস অলিম্পিকে অংশ নেয়া তার জন্য প্রায় অসম্ভব৷