‘অ্যামনিয়োটিক স্যাক' অনেকটা থলির মতো৷ এটা থাকে গর্ভবতী নারীর গর্ভাশয়ে, যেখানে শিশু নিরাপদে লালিত হয়৷ সাধারণত বাচ্চা জন্মের সময়, গর্ভাশয়ের মধ্যে থেকে যায় এই স্যাকটি৷ কিন্তু তার ব্যতিক্রমও আছে৷ ভিডিওটা দেখলেই বুঝতে পারবেন৷
বিজ্ঞাপন
হাসপাতালে শিশুর জন্ম দিচ্ছেন এক মা...৷ দীর্ঘ প্রসবযন্ত্রণার পর মাতৃগর্ভ থেকে অবশেষে বেরিয়ে আসে নবজাতক৷ কিন্তু এ কি! জরায়ুর থেকে বেরোনোর পরেও যে সে পাতলা আস্তরণে ঢাকা, থলথলে অ্যামনিয়োটিক স্যাকে বন্দি!
মায়ের পেট থেকে বেরিয়ে এলেও তখনও ভূমিষ্ঠ হয়নি শিশুটি৷ তবে পাতলা আস্তরণের মধ্যে থেকেই দেখা যাচ্ছে শিশুটির খুদে হাত-পা৷ হাত-পা নাড়ছে সে৷ পানি ভর্তি স্যাকটির তাপমাত্রা তখনও স্বাভাবিক, সে জন্যই হয়ত নিজের জন্ম নিয়ে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই তার৷ ওদিকে, কীভাবে অ্যামনিয়োটিক স্যাকের পর্দা ফাটিয়ে বাইরে তাকে বের করা যায়, তা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করছেন ডাক্তাররা৷ স্যাক কেটে বের করে আনলে শিশুটি শ্বাস নিতে পারবে তো? বাঁচবে তো? গর্ভাশয় থেকে অ্যামনিয়োটিক স্যাক নিয়ে জন্মের ঘটনা যে ঘটে ৮০ হাজারের মধ্যে মাত্র একবার! তাই পরীক্ষা বেশ কঠিন৷
শেষ পর্যন্ত অবশ্য জীবনেরই জয় হয়৷ স্যাকটা কাটার সঙ্গে সঙ্গেই কেঁদে ওঠে বাচ্চাটা, সুস্থ-স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নেয়৷ ভিডিওটি দেখলে আপনার চোখের সামনেও ফুটে উঠবে অবিশ্বাস্য এই ঘটনা৷ দেখে বলুন তো, এমন ‘মেডিক্যাল মিরাকেল' আর দেখেছেন?
ডিজি/এসিবি
হবু মায়েদের জন্য ১৩টি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ
‘মা’ ডাক শোনার স্বপ্ন প্রতিটি নারীর আর একজন নারী হয়ত পূর্ণতা পান মাতৃত্বেই৷ কিন্তু মা হতে যে দশ মাসের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়! এই পথকে সহজ করা এবং সুস্থ সন্তানের জন্ম দেওয়ার কিছু সহজ উপায় নিয়েই এই ছবিঘরে৷
ছবি: DW
হবু মায়ের অনুভূতি
‘মা’ – এটি একটি মাত্র শব্দ, যার সাথে মিশে আছে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা৷ সন্তানের কাছ থেকে কিছু পাওয়ার আশা না করেই সন্তানকে মা পরম যত্নে বড় করে তোলেন, সেই গর্ভাবস্থা থেকেই৷ পৃথিবীতে একমাত্র মা-ই জানেন সন্তানকে গর্ভে ধারণ করার কষ্ট, ধৈর্য আর আনন্দের অনুভূতিটুকু৷
ছবি: imago/CTK Photo
স্বামী ও পরিবারের অন্যান্যদের সহযোগিতা
গর্ভবতী মায়েদের শরীরে হরমন পরিবর্তনের কারণে এ সময়ে তাঁদের অনেকেই কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে থাকে৷ আর এ কথাটি স্বামীসহ পরিবারের সকলকেই মনে রাখতে হবে৷ তাঁকে খুশি রাখার চেষ্টা করতে হবে, কারণ এতে পরিবারের অনাগত সদস্যটিরই মঙ্গল৷ শারীরিক এবং মানসিকভাবে মা সুস্থ থাকলে তার প্রভাব যে পড়ে শিশুটির ওপরও৷
ছবি: fotolia/diegoa8024
হবু মায়ের দিনের শুরু
‘‘সকালে উঠেই কুসুম গরম পানিতে গোসল সেরে নিন৷ তারপর পুরো শরীরে আস্তে আস্তে অলিভ অয়েল মাসাজ করে নিন৷ অন্য তেলও অবশ্য মালিশ করা যেতে পারে, তবে অলিভ অয়েলে সন্তান জন্মের পর সাধারণত পেটে আর কোনো দাগ থকে না৷’’ এমনটাই বলেন জার্মান ধাত্রী হাইকে শোয়ার্ৎস৷
ছবি: Fotolia/Subbotina Anna
সুন্দর ত্বক
গর্ভকালীন সময়ে শরীরে হরমনের পরিবর্তনের কারণে হবু মায়ের ত্বকেও দেখা দেয় নানা সমস্যা, বিশেষকরে মুখমণ্ডলে৷ তাই সপ্তাহে একবার ‘মাস্ক’ ব্যবহার করতে পারেন৷ যেমন একটি পাকা অ্যাভোকাডোর সাথে দু’চামচ ছানা মিশিয়ে চোখ ছাড়া পুরো মুখে লাগিয়ে দশ মিনিট পর গরম পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন৷ তারপর ভালো কোনো ‘সানস্ক্রিন’ লাগিয়ে ফেলুন৷
ছবি: Fotolia/studiovespa
গর্ভকালীন হালকা ব্যায়াম
ঘরের মেঝেতে পা মুড়ে বসুন এবং হতের তালু সামনে নিয়ে বুকের কাছে রাখুন৷ খুবই মনোযোগ দিয়ে আস্তে আস্তে গভীরভাবে নাক দিয়ে নিঃশ্বাস নিন এবং পেটে থেকে নিঃশ্বাস ছাড়ুন আর ভাবুন – ‘‘এই নিঃশ্বাসের মধ্য দিয়ে আমার সন্তানের সাথে যোগাযোগ হচ্ছে৷’’ ব্যায়াম কোনো গ্রুপের সাথে করতে পারলে আরো ভালো লাগবে৷
ছবি: Fotolia/Robert Kneschke
হালকা খাবার
এই সময়টাতে অনেকেরই সকালে বেশ খারাপ লাগে বা বমিভাব হয়৷ তাই এক কাপ ভেষজ চা পান করতে পারেন সাথে একটা টোস্ট বা বিস্কুট৷ ধাত্রী হাইকে বলেন, ‘‘এ সময় অনেকেই সকালে গরম নাস্তা পছন্দ করেন৷ আসলে নিজের যা ভালো লাগে সেটাই খাবেন৷ তবে লক্ষ্য রাখবেন যে, সেই খাবার যেন ফাইবার বা আঁশযুক্ত হয়৷ এছাড়া তার সঙ্গে অবশ্যই ফল খেতে ভুলবেন না৷’’
পানি
একজন সুস্থ গর্ভবতীর দিনে কম পক্ষে দেড় থেকে দুই লিটার পানি পান করা উচিত৷ তাই মাঝে মাঝেই অল্প অল্প পানি পান করে নেবেন৷ এতে শরীরটা সারা দিন ঝরঝরে লাগবে এবং রক্ত ঘনও হয়ে যাবে না৷
ছবি: Fotolia/photo 5000
চুলের যত্ন
সাধাণত গর্ভবতী মায়েদের মাথার চুল তেমনভাবে ঝরে না৷ তবে কারো কারো চুলের আগা শুকিয়ে যায়৷ তাই তাঁরা বেবি শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন, এতে চুল নরম থাকে৷ তাছাড়া চুলকে সুন্দর ও ঝরঝরে রাখতে সপ্তাহে একদিন রান্নাঘর থেকে দুই টেবল চামচ অলিভ অয়েল, দুই চামচ সাদা দই এবং একটি ডিমের কুসুম মিশিয়ে মাথায় দিয়ে দশ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন৷
ছবি: Fotolia/Masson
মুক্ত বাতাস সেবন
‘‘শরীর এবং মনকে সুস্থ রাখতে এবং দুটোর মধ্যে সমতা রক্ষা করতে এই বিশেষ সময়টিতে মুক্ত বাতাস সেবন খুবই জরুরি৷ হাঁটাহাঁটি খুব ভালো, তবে গায়ে জোড় দিয়ে কোনোরকম ব্যায়াম করা উচিত নয়৷ এতে হিতে বিপরিত হতে পারে৷ অন্য ব্যায়াম, অর্থাৎ যাঁরা সাঁতার জানেন তাঁদের জন্য কিছুক্ষণ পানিতে থাকা কোমর এবং পিঠে বেশ আরাম দেয়৷’’ বলেন ধাত্রী হাইকে শোয়ার্ৎস৷
ছবি: imago/emil umdorf
দাঁত ব্রাশ
গর্ভবতী মাকে যেন সব সময় আকর্ষণীয় লাগে, সেজন্য দিনে অন্তত দু’বার দাঁত ব্রাশ করতে হবে, তবে নরম ব্রাশ দিয়ে৷ এ সময় অনেকের মাড়ি নরম হয়ে রক্ত ঝরতে পারে৷ তাই দাঁতের মাড়ি শক্ত রাখতে ক্যামেলিয়া চা দিয়ে কুলি করতে পারেন৷ এছাড়া প্রথম ছয় মাস নিয়মিত দাঁতের ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত বলে জানান ধাত্রী শোয়ার্ৎস৷
ছবি: imago/CHROMORANGE
হোম স্পা
‘‘সন্ধ্যায় বাথটবে কুসুম কুসুম গরম পানি ভর্তি করে তাতে এক গ্লাস দুধ ঢেলে দিন, যা ত্বককে মসৃণ করবে৷ কিছুক্ষণ টবে থাকার পর উঠে গায়ে তেল মালিশও করতে পারেন৷ চাইলে বাথটবে হবু মায়ের সঙ্গী বা কোচ হতে পারেন হবু বাবা৷’’ বলেন হাইকে৷
ছবি: Fotolia/Ariwasabi
পায়ের যত্ন
গর্ভবতী মায়ের জন্য সবচেয়ে বেশি ভারী বোধ হয় তাঁর পা দুটো৷ তাই সকালে বিছানায় শুয়ে থাকা অবস্থাতেই দুই পা খানিকটা উঁচু করে একটু একটু করে ঘোরাবেন৷ এতে রক্তসঞ্চালন ভালো হয়৷ রাতে যদি পা দুটোকে ভারী মনে হয়, তাহলে একটি বাটিতে ঠান্ডা পানি দিয়ে সামান্য লেবুর রস দিন৷ এতে ছোট টাওয়েল ভিজিয়ে পানিটা চিপে উঁচু করা পায়ে দুই মিনিট পেচিয়ে রাখুন৷
ছবি: superfood - Fotolia.com
ডাক্তারি ‘চেকআপ’
বিশেষজ্ঞরা বলেন, পেটের সন্তানটি যেন ভালোভাবে বড় হতে পারে সেজন্য চাই যথেষ্ট সবুজ শাক-সবজি এবং আয়োডিন৷ আরো দরকার আয়রন এবং ক্যালসিয়াম৷ তাই এ সবের কোনোটারই যেন ঘাটতি না থাকে৷ সুতরাং শারীর আর মনের যত্নের পাশাপাশি প্রয়োজন নিয়মিত ডাক্তারি ‘চেকআপ’-ও৷