‘অল্প প্রয়োজনীয় প্রকল্পে শ্রীলঙ্কার মতো বিপর্যয় হতে পারে’
২০ মে ২০২২‘ডয়চে ভেলে খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়’ ইউটিউব টকশোতে দুই অর্থনীতিবিদের কাছে প্রশ্ন ছিল বাংলাদেশের মেগা প্রকল্প নিয়ে৷ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মইনুল ইসলাম মনে করেন পদ্মা সেতু বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে৷ কিন্তু এই সেতুর দিয়ে যশোর থেকে পায়রা বন্দর পর্যন্ত ৪০ কোটি টাকার রেল লিংক প্রকল্প বোঝা হয়ে দাঁড়াবে, যার ২১ হাজার কোটি ঋণ চীনের৷
তিনি বলেন, ‘‘পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে যখন সড়ক যাতায়াত চালু হয়ে যাবে তখন পায়রা, যশোর ও মংলায় মালামাল পরিবহণের ক্ষেত্রে এই রেললাইনের যে তুলনামূলক খরচ সেটা কোনদিন সড়ক যোগাযোগের সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক হবে না৷’’
একইভাবে তিনি চিন্তিত চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত বিসিএমআই অর্থনৈতিক করিডোরের অংশ হিসেবে নেয়া রেললাইন প্রকল্প নিয়ে, যা মিয়ানমার হয়ে চীনের কুনমিং পর্যন্ত যাওয়ার কথা৷ তার মতে, ভারত সরে যাওয়ায় এই প্রকল্প বেশ কয়েক বছর ঠিকমতো ব্যবহার হবে না৷ যার কারণে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণের ব্যয় তোলাও কঠিন হবে৷ অন্যদিকে রাশিয়ার বারশো কোটি টাকার ঋণে মোট এক লক্ষ ১৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পও বাংলাদেশের জন্য বড় বোঝা হয়ে থাকবে বলে উল্লেখ করেন তিনি৷
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘‘স্বল্প প্রয়োজনীয় প্রকল্প নেয়ার যে একটা প্রবণতা যেখানে ঢাকা-চট্টগ্রাম বুলেট ট্রেনের কথা শুনছি, দ্বিতীয় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের কথা শুনছি, শরীয়তপুরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের কথা শুনছি, নোয়াখালী বিমান বন্দরের কথা শুনছি এবং ঢাকাকে ঢাকার বাইরে অন্য জায়গায় স্থানান্তরের কথা শুনছি, এইসব প্রকল্প বর্তমান পর্যায়ে গ্রহণের কোনো প্রয়োজন নেই৷ এইভাবে যদি অল্প প্রয়োজনীয় প্রকল্প নেয়ার একটা প্রবণতার ইচ্ছা পেয়ে বসে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশেও শ্রীলঙ্কার মতো কয়েক বছরের মধ্যে বিপর্যয় হতে পারে৷’’
তবে তার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন ইউএনডিপির কান্ট্রি ইকনোমিস্ট ড. নাজনীন আহমেদ৷ তার মতে, শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতির জন্য শুধু মেগা প্রকল্প দায়ী নয়৷ দেশটির এই পরিস্থিতির পেছনে আরো অনেক কারণ আছে৷ এক্ষেত্রে বাংলাদেশ যেসব পরিকল্পনা নিয়েছে এবং দেশের উৎপাদনশীলতা যদি বাড়ে তাহলে দেশের অর্থনীতিতে সমস্যা হবে না৷
তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘‘যে কোনো প্রকল্পের কস্ট বেনিফিট অ্যানালাইসিসে রিটার্ন কী আসবে আগামীতে সেই বিশ্লেষণ যথাযথভাবে হওয়া দরকার৷ ...এই মুহূর্তে কোভিডের পরে তা পুনর্মূল্যায়ন করা দরকার৷’’
কোভিড পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব নিয়েও আলোচনা করেন এই দুই অর্থনীতিবিদ৷ আমদানি বেড়ে যাওয়ায় তৈরি হওয়া বাণিজ্যিক ঘাটতি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন অধ্যাপক মুইনুল ইসলাম৷ তিনি মনে করেন গত আট মাসে যেভাবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে সেটি অব্যাহত থাকলে তা বিপদজনক স্তরে যেতে বেশিদিন লাগবে না৷
তবে ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আগে থেকে আমদানি ব্যয় বাড়ছিল৷ কোভিডের ধাক্কা কাটিয়ে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় কাঁচামাল আমদানি বৃদ্ধিও এক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে৷’’ তার মতে সার্বিকভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন যেই পর্যায়ে রয়েছে তাতে আতঙ্কিত হওয়ার মতো পরিস্থিতি এখনও তৈরি হয়নি৷
তিনি বলেন, ‘‘আমার মনে হয়ে আতঙ্কিত করার মাধ্যমে আমরা প্রত্যেকটা মানুষের বিনিয়োগকে চিন্তার জায়গায় ফেলে দিচ্ছি৷ ঐ অবস্থা এখনও আসেনি৷...রিজার্ভ চলে যাওয়া নিয়ে এই মুহূর্তে এতটা ভাবার কিছু নেই৷ বাংলাদেশে অর্থনীতির রেসিলিয়্যান্সের (সহনশীলতা) উপরে একটু্ আমাদের আস্থা থাকা উচিত৷’’
এফএস/এআই