আবার অশান্ত মণিপুর। আবার কুকি ও মেইতেইদের সংঘর্ষ। দুইজন মারা গেছেন এবং সাতজন আহত হয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
কুকি-অধ্যুষিত চূড়াচাঁদপুর ও মেইতেই-প্রধান বিষ্ণুপুরের সীমানায় খইরেনতাক গ্রামে এই ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ দাবি করেছে, নারানসেনার কাছে ওই গ্রামে গুলির লড়াই হয়। তাতেই দুইজন মারা গেছেন। সাতজন আহত হয়েছেন।
দ্রুত পুলিশ, আসাম রাইফেলস এবং কম্যান্ডোরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
ট্রাইবাল লিডার্স ফোরামের দাবি, সকাল দশটা নাগাদ গ্রামে আক্রমণ চালানো হয়। গ্রামরক্ষী বাহিনী মোতায়েন ছিল। তারাও গুলি চালাতে থাকে। গ্রামরক্ষী বাহিনীর একজন মারা যান। এরপরই ওই এলাকাজুড়ে ব্যাপক গুলির লড়াই চলতে থাকে। বেশ কিছুক্ষণ ধরে ওই লড়াই চলে।
এর আগে পাহাড়ের নিচের এলাকায় একজন কৃষককে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। তিনি তখন জমিতে চাষ করছিলেন। তার বুকে গুলি লেগেছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।
মণিপুরে গভীর হচ্ছে বিভাজন
মণিপুরে মে মাসে শুরু হয়েছিল সহিংসতা৷ তিনমাস পর দৃশ্যত সহিংসতা কমলেও পরিস্থিতি এখনো থমথমে৷ এখনো জারি আছে সান্ধ্য আইন৷ ছবিঘরে বিস্তারিত৷
ছবি: DW
সংঘাতের শুরু
মে মাসে মণিপুর হাইকোর্টের রায় মেইতেই গোষ্ঠীকে আদিবাসী হিসাবে মান্যতা দেয়৷ রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায় কুকি গোষ্ঠী৷ দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়, যার রেশ এখনও মণিপুরে বর্তমান৷ মেইতেই সংখ্যাগরিষ্ঠ বিষ্ণুপুর ও কুকি সংখ্যাগরিষ্ঠ চূড়াচান্দপুরের মধ্যে বিভক্ত ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এই রাজ্য৷ দুই গোষ্ঠীর মানুষের মধ্যেই পারস্পরিক অবিশ্বাস এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে৷
ছবি: ADNAN ABIDI/REUTERS
আরো যে যে কারণে দ্বন্দ্ব
মণিপুরের জনসংখ্যার ১৬ শতাংশ কুকি৷ অন্যদিকে, এই রাজ্যের অর্ধেকেরও বেশি বাসিন্দা মেইতেই গোষ্ঠীর৷ কুকিরা বহু দিন ধরেই পৃথক রাজ্যের দাবি জানিয়ে আসছেন৷ এই দাবি ‘খারিজ’ করে এসেছে মেইতেইরা৷ অন্যদিকে কুকিরা মনে করেন, রাজ্যে সরকারি চাকরি বা জমির মালিকানা পাওয়ার ক্ষেত্রে মেইতেইদের আধিপত্য রয়েছে৷ কুকি নেতারা এই অবস্থারও পরিবর্তন চান৷
ছবি: ADNAN ABIDI/REUTERS
মৃত্যু ও উচ্ছেদ
সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, মে মাসে শুরু হওয়া সহিংসতায় অন্তত ১২০জনের মৃত্যু হয়েছে৷ তবে স্থানীয়দের মতে, মৃতের সংখ্যা আরো বেশি৷ সহিংসতার কারণে ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন প্রায় ৫০ হাজার মানুষ৷ মণিপুরের মৈরাঙে চালু হয়েছে একটি ক্যাম্প, সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন মেইতেইরা৷
ছবি: ADNAN ABIDI/REUTERS
অস্ত্রের বাজার মণিপুর
মে মাসে সংঘর্ষ শুরুর পর সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানায়, উন্মত্ত জনতা পুলিশ স্টেশন লুট করে প্রায় তিন হাজার অস্ত্র ও ছয় লাখ গুলি নিয়ে যায়৷ মেইতেই ও কুকি দুই গোষ্ঠীর হাতেই অত্যাধুনিক অস্ত্র রয়েছে বলে জানাচ্ছে এএফপি৷
ছবি: ADNAN ABIDI/REUTERS
যা বলছে কর্তৃপক্ষ
রাজ্য পুলিশ ব্যর্থ হওয়ার পর সেনাবাহিনী দায়িত্ব নিলেও মণিপুরে এখনো স্বাভাবিকতা ফেরেনি৷ ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ‘নিরপেক্ষ তদন্তের’ আশ্বাস দিয়েছেন৷ তবে স্থানীয়দের মধ্যে সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে৷ মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে৷
ছবি: ADNAN ABIDI/REUTERS
প্রতিবাদের ঢেউ
সম্প্রতি মণিপুরের দুই নারীকে যৌন হয়রানি করার পর নগ্ন করে হাঁটানোর একটি ভিডিও ভাইরাল হয়৷ মণিপুরসহ সারা ভারতে এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ শুরু হয়৷ প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বসবাসরত কুকি ও মেইতেইরাও৷
ছবি: Rafiq Maqbool/AP Photo/picture alliance
রাজনীতিতে মণিপুর
ভারতের সংসদেও বিরোধীরা ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে ‘নো কনফিডেন্স’ ভোট দেন৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মণিপুরে সংঘর্ষ শুরু দুই মাস পর তা নিয়ে মন্তব্য করলে, সেটাও সমালোচিত হয়৷ মণিপুরের মুখ্যুমন্ত্রী বীরেন সিংহের বিরুদ্ধে বিরোধীদের অভিযোগ- তিনি কুকিবিরোধী পদক্ষেপ নিয়েছেন৷ তার পদত্যাগের দাবিও উঠছে৷ কিন্তু বীরেন সিংহ জানান, তদন্ত চলছে ও প্রকৃত আসামীদের বিচারব্যবস্থার আওতায় আনা হবে৷
ছবি: Biju Boroi/AFP/Getty Images
7 ছবি1 | 7
মণিপুরের পরিস্থিতি
মণিপুরে কুকি এবং মেইতেইদের মধ্যে বিরোধ দেখা দিয়েছে। চার মাস ধরে পরিস্থিতি খুবই উত্তেজনাপূর্ণ। প্রায় ১৫০ মানুষ মারা গেছেন। মেইতেই এলাকায় কুকিদের এবং কুকি এলাকায় মেইতেইদের যে বাড়ি ছিল প্রায় সব জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে।
দুই তরফের হাতেই প্রচুর অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র রয়েছে। প্রায়ই আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণের ঘটনা ঘটছে। পাহাড়ের বিভিন্ন জায়গায় আসাম রাইফেলস ব্যারিকেড করে রেখেছে। তাছাড়া কুকি মেয়েরাও দিনরাত রাস্তায় বসে থেকে প্রহরা দেন।
আবার মেইতেই এলাকায় একই কাজ করেন মেইতেই নারীরা। সেখানেও মণিপুর পুলিশের ব্যারিকেড আছে।
বিধানসভার অধিবেশন
মণিপুর বিধানসভার বাজেট অধিবেশন হয়েছিল ফেব্রুয়ারি-মার্চে। তারপর ৩ মে থেকে কুকি ও মেইতেইদের সংঘর্ষ শুরু হয়। এর মধ্যে বিধানসভার অধিবেশন আর বসেনি। মঙ্গলবার বিধানসভার একদিনের জরুরি অধিবেশন ডাকা হয়েছিল।
রণক্ষেত্র মণিপুর
12:24
অধিবেশন শুরু হতেই কংগ্রেস ও বিজেপি বিধায়কদের মধ্যে তর্কাতর্কি শুরু হয়। প্রবল হট্টগোল হয়। তার মধ্যেই তিনটি প্রস্তাব পাস হয়। একটি প্রস্তাবে বলা হয়, সহিংসতা ছেড়ে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে হবে।
কুকিদের দশজন বিধায়ক আছেন। তারা কেউই অধিবেশনে যোগ দেননি। তারা জানিয়ে দেন, ইম্ফলে আসতে তারা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন। তাই, তারা অধিবেশনে যোগ দিতে পারবেন না। তাছাড়া তারা এই একদিনের অধিবেশনের পক্ষে নয় বলেও জানিয়েছেন।
কংগ্রেসও একই দাবি জানিয়ে বলে, অন্তত পাঁচদিনের অধিবেশন করতে হবে। তবে তাদের দাবি মানা হয়নি।