নানাবিধ মানবিক সংকট ও অসঙ্গতি উপেক্ষা করে আজ (সোমবার) বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উদযাপিত হলো বাংলাদেশে৷দিবসটি উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থানে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো৷
বিজ্ঞাপন
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন৷ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও দিবসটি উপলক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন৷
বালাদেশ মানবাধিকার ফেডারেশন (বিএইচআরএফ) দিবসটি উপলক্ষে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সকাল ১০টায় এক মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করে৷ এতে বক্তারা মানবাধিকার রক্ষায় গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধের আহ্বান জানান৷
এদিকে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন প্রকাশিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের পরিসংখ্যানে দেখা যায় চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে ২৪১টি৷ এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে হত্যা ১৫২, ধর্ষণ ১৭, শিশু ধর্ষণ ২০, নারীর প্রতি সহিংস যৌন নির্যাতন, পারিবারিক সহিংসতা, অ্যাসিড নিক্ষেপ ইত্যাদি ২৮, শিশু হত্যা ১০, শিশু নির্যাতন ০২, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ০৩, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শাস্তি ২০, নিখোঁজ ০১, অপহরণ ০২, শ্রমিক মৃত্যু ১৮, বন্দুকযুদ্ধে নিহত ২৭৷
ফেব্রুয়ারি মাসে হত্যা ৮৯, ধর্ষণ ১৬, শিশু ধর্ষণ ১০, নারীর প্রতি সহিংসতা ১৪, যৌন নির্যাতন, পারিবারিক সহিংসতা, অ্যাসিড নিক্ষেপ ইত্যাদি ২৮, শিশু হত্যা ১৭, শিশু নির্যাতন ০৩, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ০২, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শাস্তি ০২, গুম ০১, নিখোঁজ ০৬, অপহরণ ০১, শ্রমিক মৃত্যু ১৯, বন্দুকযুদ্ধে নিহত ০৫৷
এ প্রসঙ্গে মানবাধিকার কর্মী নূর খান ডয়েচে ভেলে বাংলা বিভাগকে বলেন, ‘‘এই মুহুর্তে এক কথায় বললে মানবাধিকার পরিস্থিতি বিভীষিকাময়৷ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, রাজনৈ্তিক নীপিড়ণ, মিথ্যা মামলায় হয়রানি প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে৷ পাশাপাশি নিত্যনতুন কৌশলে মানুষের অধিকার হরণ করা হচ্ছে৷ নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশেরহয়রানিমূলক কর্মকাণ্ডও বেড়েছে৷’’
‘‘শুধু এই ২০১৮ সালের শেষ দিকে মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানের নামে প্রায় ৩০০ মানুষকে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়েছে৷ গ্রেফতার হয়েছে কয়েক হাজার রাজনৈতিক কর্মী৷ মাদক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত অনেককেই গ্রেফতার করা হয়েছে এবং কারাবন্দি আছে৷’’
তিনি আরো জানান, ‘‘দুর্ভাগ্যজনক হলেও এটাই সত্যি যে, বিশেষ ক্ষমতা আইনের যেসব ধারা বিলুপ্ত হওয়ার কথা ছিল, সেগুলো ব্যবহার করে গুম, নির্বিবাদে গ্রেফতার, খুনের ঘটনা ঘটেই চলেছে৷’’
তিনি আরো উল্লেখ করেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও ভয়ের সংস্কৃ্তি মিলেমিশে পরিস্থিতিকে বিভীষিকাময় করে তুলছে৷
এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পরামর্শ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ সরকারকে দৃ্শ্যমান কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়ে আসছি৷ এর মধ্যে একটি হলো বিশ্বাসযোগ্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রকৃত তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে হবে৷’’ বিচারহীনতার সংস্কৃ্তি থেকে বের হয়ে আসতে হলে এর বিকল্প নেই বলেও মনে করেন তিনি৷
আফ্রিকায় মানবাধিকারের ছবি
এক সময় আফ্রিকাকে বলা হতো ‘অন্ধকার মহাদেশ’৷ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই মহাদেশ সব দিক থেকে অনেক এগোলেও মানবাধিকার পরিস্থিতি এখনো খুব খারাপ৷ ছবিগুলো তারই প্রমাণ৷
ছবি: Adballe Ahmed Mumin
চলমান ছবি
এক রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায় নিকিওয়ে মাসাঙ্গোর৷ চোখ খুলে দেখেন এক লোক তাঁর ওপরে৷ লোকটি বলল, চোখ ঢেকে রাখতে যাতে তাকে চেনা না যায়৷ তারপর সারা রাত ধরে চলল ধর্ষণ৷ দক্ষিণ আফ্রিকার এই নারীর বয়স এখন ৮৭ হয়ে গেলেও সেই রাতের কথা ভোলেননি মাসাঙ্গোর৷ তাঁর এ ছবি তুলেছেন জার্মান ডেভেলপমেন্ট মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডসের ‘আফ্রিকায় মানবাধিকারের ছবি’ ক্যাটাগরির ফাইনালিস্ট লুঙ্গি মবুলওয়ানা৷
ছবি: Lungi Mbulwana
পুলিশের নির্মমতা
পুলিশের পা ধরে রেহাই চাইছেন এক ওকাডা মোটর সাইকেল ট্যাক্সি চালক৷ তাঁকে গ্রেপ্তার করার প্রতিবাদ নগ্ন হয়ে জানিয়ে আরো বড় বিপদ ডেকে এনেছেন তিনি৷ পুলিশ বেধড়ক পেটাতে শুরু করে৷ নাইজেরিয়া সরকার প্রধান সড়কগুলোতে ওকাডা নিষিদ্ধ করার পরও চালাতে যাওয়াই এই তরুণের প্রথম অপরাধ৷ রাস্তায় সরকারের সিদ্ধান্ত কার্যকর করার কাজে ভীষণ কঠোর নাইজেরিয়ার পুলিশ৷
ছবি: Olufemi Ajasa
ইচ্ছা থাকলে শিক্ষা হয়
শিশুগুলো এখন স্কুল থেকে মাকোকোয় ফিরবে নৌকা চালিয়ে৷ ওদের ভাগ্য ভালো, কেননা দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার লেখাপড়া, আর খুব কষ্ট করে হলেও তা তারা করতে পারছে৷ ওদের মতো ভাসমান বস্তির অনেক ছেলেমেয়েই কিন্তু এ সুযোগ পায়না৷
ছবি: Oluyinka Ezekiel Adeparusi
হতভাগ্যের আবেগ
দক্ষিণ আফ্রিকার এই লোকটি ২০ বছরেরও বেশি সময় কাটিয়েছেন কারাগারে৷ সেই কষ্ট আছে, আছে অহঙ্কারও৷ মুখে অনেকগুলো ট্যাটু৷ প্রত্যেকটি ট্যাটু তাঁর দল এবং নিজের মর্যাদার প্রতীক৷ যত জটিলতা, যত দুর্ভোগই থাকুক জীবনে তারপরও সুন্দর কিছু থাকেই- ছবিটি দেখে তা বুঝতে পারছেন নিশ্চয়ই!
ছবি: Theodore Afrika
সড়কে ন্যায়দণ্ড
মোবাইল ফোন চুরি করেছে- এই সন্দেহে একটু আগে মারধর করা হয়েছে তাঁকে৷ গণপিটুনির পর তাঁকে বেঁধে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে৷ তারপর পুলিশ তাঁকে নিয়ে যায় হাসপাতালে৷ স্রেফ সন্দেহের বশে একজনকে নির্বিচারে পেটানোর অপরাধে কাউকেই গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ৷ সুবিচারের মানবাধিকার দক্ষিণ আফ্রিকার রাজধানীতে অনেক মানুষেরই নেই৷
ছবি: Lulama Zenzile
গৃহহারার কান্না
বিলাসবহুল হোটেল তৈরি করার জন্য ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে ঘর৷ আফ্রিকার আরেক দেশ চাদ-এর রাজধানীতে সাত সন্তানের এই মায়ের অসহায়ত্ব প্রকাশ করছে তাঁর অশ্রু৷ এভাবে গৃহহারা করা হয়েছে ৬৭০টি পরিরারকে৷ অথচ ক্ষতিপূরণ হিসেবে একটি পয়সাও দেয়া হয়নি কাউকে৷
ছবি: Salma Khalil Alio
সাংবাদিকের অধিকারের লড়াই
সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার এবং হত্যার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন সোমালিয়ার সাংবাদিকরা৷ আব্দাল্লে আহমেদ মুমিন ছবিটি তুলেছেন ধর্ষিতার সাক্ষাৎকার নেয়ার কারণে এক সাংবাদিককে গ্রেপ্তারের ঘটনার প্রতিবাদ জানানোর সময়৷ ‘আফ্রিকায় মানবাধিকারের ছবি’ ক্যাটাগরিতে এই ছবিও স্থান পেয়েছে৷ প্রতিযোগিতার পৃষ্ঠপোষক ডয়চে ভেলে এবং জার্মানির অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং উন্নয়ন মন্ত্রণালয়৷ বুধবারই বিজয়ীদের হাত পুরষ্কার তুলে দেয়ার কথা৷