শনিবার নরওয়ের এক মসজিদে সম্ভাব্য সন্ত্রাসী হামলা প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে৷ ঈদুল আজহার ঠিক আগে এমন ঘটনাকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে সে দেশের প্রশাসন৷ সন্দেহভাজন ব্যক্তি এখনো মুখ খোলেনি৷
বিজ্ঞাপন
শনিবার নরওয়ের রাজধানী অসলোর আল-নুর ইসলামি সেন্টার মসজিদে বেশ কয়েকবার গুলি চালানো হয়েছে এবং বেশ কয়েকটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে৷ তবে সৌভাগ্যবশত হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি৷ তা সত্ত্বেও এই ঘটনাকে নরওয়ের কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে৷ মসজিদে ৬৫ বছর বয়সি মহম্মদ রফিক নামে এক ব্যক্তি বল প্রয়োগ করে আততায়ীকে ঠিক সময়ে কাবু করে ফেলায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেই ছিল৷ তিনি ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়েছেন৷
নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী এর্না সলবার্গ ঘটনাস্থলের কাছে একটি হোটেলে গিয়ে সংহতি দেখান৷ তিনি বলেন, এমন ঘটনা একেবারেই কাম্য নয়৷ তাঁর মতে, নরওয়ে নিরাপদ জায়গা থাকা উচিত৷ প্রধানমন্ত্রী পরে মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্যকে নিয়ে অসলোর একটি মসজিদে যান৷ নরওয়ের অনেক মানুষ বিভিন্ন মসজিদে গিয়ে সংহতি দেখানোয় তিনি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন৷
ঈদুল আজহার সপ্তাহান্তে ঘটনাটিকে পুলিশ ‘সন্ত্রাসবাদের প্রচেষ্টা' হিসেবে বিবেচনা করছে৷ তবে আটক সন্দেহভাজন ব্যক্তি এখনো পর্যন্ত তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে মুখ খোলেনি৷ তার বিরুদ্ধে হত্যার প্রচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে৷ রবিবার রাতে পুলিশের এক কর্মকর্তা এ কথা জানিয়েছেন৷ তবে তার পরিচয় এখনো জানায়নি পুলিশ৷ পুলিশের ধারণা, সে একাই এই ষড়যন্ত্র চালিয়েছে৷
শনিবার অসলোর মসজিদের হামলা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারতো বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ পুলিশ জানিয়েছে, ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সি নরওয়েজিয়ান ওই ব্যক্তি চরম দক্ষিণপন্থি ভাবধারায় দীক্ষিত৷ ইন্টারনেটে কার্যকলাপের কারণে তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছিল৷ সংবাদ মাধ্যমের একাংশের সূত্র অনুযায়ী, শনিবার হামলার কিছুক্ষণ আগে সে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে হামলার প্রশংসা করে দুটি পোস্ট করেছিল৷ সে নাৎসি জার্মানির সমর্থক হিসেবে পরিচিত নরওয়ের রাজনীতিক ভিডকুন কিসলিং-এর সমর্থক৷ ভিডকুন অভিবাসনেরও ঘোর বিরোধী৷
আটক ব্যক্তির বাসায় ১৭ বছর বয়সি এক তরুণীর মৃতদেহ উদ্ধার হবার পর তার বিরুদ্ধে সেই হত্যাকাণ্ডের অভিযোগও আনা হয়েছে৷ সেই নারী অভিযুক্তের সৎ বোন ছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে৷
টাইমলাইন: উগ্র-ডানপন্থিদের সন্ত্রাসী হামলা
গত দশ বছরে উগ্র-ডানপন্থিদের অসংখ্য হামলা করেছে৷ এর মধ্যে কয়েকটি বড় ঘটনার দিকে ফিরে তাকিয়েছে ডয়চে ভেলে৷
ছবি: picture-alliance/empics/PA Wire/D. Lawson
জার্মানি ২০০৯: ড্রেসডেন কোর্টে নারীকে ছুরিকাঘাত
২০০৯ সালের ১ জুলাই, ড্রেসডেনের জেলা জজ আদালতে মারওয়া এল-শেরবিনি নামের নারীকে ছুরির আঘাতে হত্যা করা হয়৷ ঐ নারী ছিলেন একজন ফার্মাসিস্ট৷ স্বামী ও ছেলে সন্তান নিয়ে ড্রেসডেনে থাকতেন৷ ২৮ বছর বয়সি এক রাশিয়ান-জার্মানের বিরুদ্ধে কোর্টে কটূক্তির অভিযোগের সাক্ষ্য দেয়ায়, যুবক হামলা চালান৷ ঐ যুবক মারওয়াকে ‘সন্ত্রাসী’ ও ‘উগ্র মুসলিম’ বলে গাল দিয়েছিলেন৷ মারওয়া জার্মানিতে ইসলামবিদ্বেষের প্রথম হত্যার শিকার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Hiekel
নরওয়ে ২০১১: ব্রাইভিকের গণহত্যা
২০১১ সালের ২২ জুলাই অ্যান্ডার্স বেহরিং ব্রাইভিক নামের এক উগ্র ডানপন্থি যুবক একাই দু’টি ঘটনায় ৭৭ জনকে হত্যা করেন৷ তিনি প্রথমে অসলোর সরকারি ভবনে বোমা বিস্ফোরণ করেন এবং এরপর উটোয়া দ্বীপে নিরীহ তরুণদের এক সামার ক্যাম্পে গিয়ে গুলিবর্ষণ করেন৷ হামলার আগে তিনি একটি ইশতাহার প্রকাশ করেন৷ সেখানে তিনি সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও ‘ইউরোপের ইসলামীকরণ’-এর নিন্দা করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Berit
যুক্তরাষ্ট্র ২০১৫: চ্যাপেল হিল শ্যুটিং
২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ৪৬ বছর বয়সি এক ব্যক্তি প্রতিবেশী তিন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে গুলি করে হত্যা করেন৷ নিহতরা হলেন দেয়াহ বারাকাত, তাঁর স্ত্রী ইউসর আবু-সালহা ও তাঁর বোন রাজান আবু-সালহা৷ হামলাকারী হত্যাকাণ্ডের আগে নিজেকে একটি সংঘবদ্ধ ধর্মের বিরোধী বলে উল্লেখ করেন৷ এই হত্যাকাণ্ডে অনলাইনে ব্যাপক ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ দেখা যায়৷ টুইটারে #MuslimLivesMatter নামে হ্যাশট্যাগ জনপ্রিয় হয়৷
২০১৫ সালের ১৭ জুন যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ক্যারোলাইনার চার্লেস্টনে এমানুয়েল আফ্রিকান মেথডিস্ট এপিস্কোপাল চার্চে এক শ্বেতাঙ্গ দক্ষিণপন্থি গুলিবর্ষণ শুরু করেন৷ এটি যুক্তরাষ্ট্রে কালোদের সবচেয়ে পুরোনো চার্চ৷ গুলিতে নয়জন নিরীহ আফ্রিকান-অ্যামেরিকান মারা যান৷ এর মধ্যে একজন যাজকও ছিলেন৷ ২১ বছর বয়সি সেই হত্যাকারীকে রাষ্ট্রীয়ভাবে বিদ্বেষমূলক অপরাধে দণ্ডিত করা হয় এবং মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়৷
ছবি: Getty Images/J. Raedle
জার্মানি ২০১৬: মিউনিখে গুলি
২০১৬ সালের ২২ জুলাই মিউনিখের ১৮ বছর বয়সি এক তরুণ একটি শপিং মলে ঢুকে গুলি করা শুরু করেন৷ এতে ১০ জন নিহত ও ৩৬ জন আহত হন৷ নিহতদের মধ্যে ঐ হামলাকারীও ছিলেন৷ হামলাকারী একজন ইরানি বংশোদ্ভুত জার্মান নাগরিক ছিলেন৷ পুলিশ জানায়, হামলাকারী বর্ণবাদী মন্তব্য করছিলেন৷ তিনি অভিবাসীদের উপর প্রতিশোধ নিতে চাইছিলেন৷
ছবি: Getty Images/J. Simon
যুক্তরাজ্য ২০১৭: ফিন্সবুরি পার্ক মসজিদে হামলা
২০১৭ সালের ১৯ জুন, ৪৭ বছর বয়সি এক ব্যক্তি উত্তর লন্ডনের ফিন্সবুরি মসজিদের সামনে ভ্যান চালিয়ে দিয়ে একজনকে হত্যা ও ১০ জনকে আহত করেন৷ আক্রান্তরা সবাই মুসলিম ছিলেন এবং রমজান মাসে তারাবির নামাজ পড়তে যাচ্ছিলেন৷ ইসলামবিদ্বেষী ওই ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/F. Augstein
যুক্তরাষ্ট্র ২০১৭: শার্লটসভিলেতে নব্যনাৎসিদের ওপর গাড়ি হামলা
২০১৭ সালের ১২ আগষ্ট ভার্জিনিয়ার শার্লটসভিলেতে এক শ্বেতাঙ্গ নাগরিক বিরোধী শিবিরে হামলা চালান৷ বিরোধী শিবিরটিও সাদাদের ছিল এবং সেখানে শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠায় শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদী ও নব্য নাৎসিরা জড়ো হন৷ এতে এক নারী নিহত ও অনেকে আহত হন৷
ছবি: Getty Images/AFP/P.J. Richards
ক্যানাডা ২০১৭: কুইবেকে মসজিদে হামলা
২০১৭ সালের জানুয়ারির শেষ দিকে কুইবেকের ইসলামিক কালচারাল সেন্টারে এক বন্দুকধারী সন্ধ্যার দিকে নামাজ পড়ার সময় হামলা চালান৷ এতে ছয় জন নিহত ও এক ডজনেরও বেশি মানুষ আহত হন৷ ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এই হামলাকে জঙ্গি হামলা বলে অভিহিত করেন৷
ছবি: Reuters/M. Belanger
যুক্তরাষ্ট্র ২০১৮: সিনাগগে হামলা
২০১৮ সালের ২৭ অক্টোবর ৪৬ বছর বয়সি এক বন্দুকধারী পিটসবুর্গের ইহুদীদের একটি উপাসনালয়ে হামলা চালান৷ এতে ১১ জন নিহত ও ৭ জন আহত হন৷ হামলাকারী হামলার সময় বারবার ইহুদীবিদ্বেষী মন্তব্য করতে থাকেন৷ মার্কিন ইতিহাসে ইহুদীদের ওপর এটাই সবচেয়ে বড় হামলা৷
ছবি: picture-alliance/AP/M. Rourke
জার্মানি ২০১৯: নববর্ষে বোট্রোপ ও এসেনে হামলা
মধ্যরাতের কিছু পর যখন সবাই নিউইয়ার উদযাপন করছিলেন, তখন ৫০ বছর বয়সি এক ব্যক্তি জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলের দু’টি শহর বোট্রোপ ও এসেনে হামলা চালান৷ তিনি তার গাড়ি উদযাপনরত অভিবাসীদের ওপর চালিয়ে দেন৷ বোট্রোপে গাড়ি উঠিয়ে দেন সিরিয়ান ও আফগান দু’টি পরিবারের সদস্যদের ওপর৷ এতে আট জন আহত হন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Kusch
নিউজিল্যান্ড ২০১৯: ক্রাইস্টচার্চে দুই মসজিদে হামলা
ক্রাইস্টচার্চে দুই মসজিদে জোড়া হামলায় কমপক্ষে ৫০ জন নিহত এবং আরো অনেকে আহত হয়েছেন৷ একে উগ্র ডানপন্থিদের জঙ্গি হামলা বলে চিহ্নিত করেছে কর্তৃপক্ষ৷ বন্দুকধারী ব্যক্তি তার বর্ণবাদী ও ইসলামবিদ্বেষী ইশতাহার অনলাইনে প্রকাশ করেন এবং হামলার ঘটনা লাইভস্ট্রিম করেন৷ কিউই প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডার্ন ঘটনাকে নিউজিল্যান্ডের ‘একটি অন্ধকারতম দিন’ বলে মন্তব্য করেন৷