সিরিয়া ছেড়ে তাঁরা পালানোর চেষ্টা করেছিলেন ইউরোপে। কিন্তু তুরস্কের সীমান্তে আটকে পড়েছেন। নিজেদের অসহায় বার্তা রেকর্ড করেছেন উদ্বাস্তুরা।
বিজ্ঞাপন
তাঁদের যাওয়ার কোনও জায়গা নেই। ঘরে থাকলে বোমার আঘাতে মৃত্যু অবধারিত। আর পালাতে গেলে আটকে পড়তে হবে তুরস্কের সীমান্তে। সহায় সম্বলহীন সিরিয়ার ইডলিবের সাধারণ মানুষদের ভিডিও ভাইরাল হয়ে গিয়েছে সোশ্যাল নেটওয়ার্কে।
সিরিয়ায় কে, কার বিরুদ্ধে লড়ছে?
২০১১ সাল থেকে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ চলছে৷ মাঝে আইএস-এর কারণে সেই যুদ্ধে বিদেশি শক্তিও ঢুকে পড়েছে৷ কে আসলে কার বিরুদ্ধে লড়ছে?
ছবি: picture alliance/abaca/A. Al-Bushy
যুদ্ধ যেন শেষই হচ্ছে না
২০১১ সালে আরব বসন্তের ঢেউ লেগে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছিল৷ সেই সময় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ বেশ কয়েকটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর কাছে দেশের একটি বড় অংশের নিয়ন্ত্রণ হারান৷ এরপর সেই যুদ্ধে একসময় বিদেশি শক্তিও ঢুকে পড়ে৷
ছবি: picture alliance/abaca/A. Al-Bushy
আসাদের সমর্থক
সিরিয়ার সেনাবাহিনী ‘সিরিয়ান আরব আর্মি’ বা এসএএ পুরো দেশের নিয়ন্ত্রণ আসাদের কাছে ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে৷ এছাড়াও ‘ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোর্স’সহ আসাদের সমর্থক কয়েকটি বাহিনী এবং রাশিয়া ও ইরান আসাদকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Syrian Presidency
তুরস্কের ভূমিকা
ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগী দেশ ছিল তুরস্ক৷ এছাড়া আসাদবিরোধী বিদ্রোহীদেরও সমর্থন দিয়ে আসছে দেশটি৷ তবে কুর্দিদের সহায়তা করা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-তুরস্ক সম্পর্কে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, কারণ সিরিয়ার কুর্দিদের সঙ্গে তুরস্কের ‘কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি’ পিকেকে-র সম্পর্ক রয়েছে বলে তুরস্কের অভিযোগ৷ ১৯৮৪ সাল থেকে তুর্কি সরকারের সঙ্গে সশস্ত্র সংঘাতে জড়িয়ে আছে পিকেক৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/L. Pitarakis
রাশিয়ার ভূমিকা
২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সিরিয়ার যুদ্ধে অংশ নিচ্ছে রাশিয়া৷ অবশ্য তারও আগে থেকে সিরিয়ার সেনাবাহিনীকে অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করে আসছিল দেশটি৷ রাশিয়ার আকাশ হামলায় সিরিয়ার বহু সাধারণ নাগরিক নিহত হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অভিযোগ রয়েছে৷ রাশিয়ার কারণে যুদ্ধের ঢেউ এখন আসাদের অনুকূলে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Tass/M. Metzel
আইএস-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ
২০১৪ সালের শেষ দিকে আইএস-সব অন্যান্য সন্ত্রাসী সংগঠনকে লক্ষ্য করে আকাশ হামলা শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোট৷ জার্মানিসহ প্রায় ৫০টি দেশ রয়েছে সেই জোটে৷ আইএসবিরোধী এই জোটের কারণে সিরিয়ায় আইএস-এর পরাজয় হয়েছে৷ জোটকে সহায়তা করেছে কুর্দি ও আরব মিলিশিয়াদের সমন্বয়ে গঠিত ‘সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস’ এসডিএফ৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/A.Brandon
বিদ্রোহীদের কথা
‘ফ্রি সিরিয়ান আর্মি’র মতো নন-জিহাদি গোষ্ঠীগুলো আসাদের পদত্যাগ চাইছে৷ এরপর একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচনেরও দাবি আছে তাদের৷ তবে বেশ কয়েকটি পরাজয়ের পর এই সংগঠনের অনেক সদস্য কট্টরপন্থি জঙ্গি সংগঠনগুলোতে যোগ দিয়েছেন বলে জানা গেছে৷
ছবি: Reuters
ইরানের সমর্থন
গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে দামেস্ককে কৌশলগত ও সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে ইরান৷ ইরানের সমর্থনপ্রাপ্ত লেবাননের শিয়া গোষ্ঠী হেজবোল্লাহও আসাদ সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে৷
ছবি: Atta Kenare/AFP/Getty Images
7 ছবি1 | 7
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আসাদ রাশিয়ার সাহায্যে দীর্ঘ দিন ধরে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছেন সরকার বিরোধীদের উপর। ইডলিবে সরকার বিরোধীদের হত্যা করার জন্য একের পর এক বিমান হামলা চালানো হচ্ছে। কার্যত মৃত্যু নগরীতে পরিণত হয়েছে ইডলিব। গত কয়েক বছরে সিরিয়ার ওই অঞ্চল থেকে বহু মানুষ তুরস্ক হয়ে ইউরোপে পালিয়ে এসেছেন আশ্রয়ের খোঁজে। কিন্তু এখন তুরস্কও সিরিয়ার উদ্বাস্তুদের জন্য তাদের সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। এই অবস্থায় হাজার হাজার মানুষ এসে জড়ো হয়েছেন তুরস্ক সীমান্তে। তাঁদের দাবি, তুরস্ক রাস্তা খুলে দিলে তাঁরা ইউরোপে ঢুকে পড়বেন। তাঁদের লক্ষ্য বার্লিনে পৌঁছনো। অসহায় মানুষরা আর কিছু করতে না পেরে, নিজেদের বার্তা ভিডিও-র মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছেন।
গত দু'মাস ধরে ইডলিবে লাগাতার বোম ফেলছে রুশ এবং আসাদের সৈন্য। সিরিয়ার মানচিত্রে ইডলিবই শেষ জায়গা যেখানে সরকার বিরোধীরা এখনও শক্ত ঘাঁটি তৈরি করে রেখেছে। তাদের শাস্তি দিতেই সাধারণ মানুষের ঘর বাড়িও বোমায় উড়িয়ে দিচ্ছে সরকারপক্ষ। হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন। অ্যামেরিকা, ইউরোপের বহু দেশ আসাদের এই কাজের সমালোচনা করছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও পিছু হটছে না আসাদ সরকার। রাশিয়াও আসাদকে পূর্ণ সহযোগিতা করছে। এই পরিস্থিতিতে পালানো ছাড়া আর কোনও উপায় নেই সাধারণ সিরিয়াবাসীর। সূত্র জানাচ্ছে, গোটা ইডলিবে আর একটিও চিকিৎসা কেন্দ্র অবশিষ্ট নেই। সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকার ন্যূনতম রসদও আর সেখানে নেই। কিন্তু মানুষ পালিয়ে যাবেন কোথায়? পালানোরও পথ নেই।