শরীর সচল থাকলে চিন্তা নেই, কিন্তু শরীরে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অসাড় বা অচল হয়ে পড়লে চরম হতাশা জাগতে পারে৷ বৈজ্ঞানিকরা এবার কৃত্রিম পদ্ধতিতে অসাড় হাতকে আবার সচল করার ক্ষেত্রে কিছু সাফল্য পেয়েছেন৷
বিজ্ঞাপন
শরীরের উপর ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলার অভিজ্ঞতা মোটেই সুখকর নয়৷ কিন্তু থাকলে সেটা মেনে নিতে হয়৷ আল্সহাইমারের রোগী রোলেঞ্জো রসি সেই কষ্টে ভুগছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘গত ৫-৬ বছরে ধীরে ধীরে আমি বাঁ হাত তোলার ক্ষমতা হারিয়েছি৷ এখন সারা শরীর অবশ হয়ে পড়ছে৷ এখনো সব পেশি নাড়াতে পারছি বটে, কিন্তু খুবই দুর্বল হয়ে পড়ছি৷''
আন্দ্রেয়া নিউটা-র মাল্টিপল স্কেলেরোসিস আছে৷ প্রায় ২০ বছর ধরে তিনি হুইলচেয়ার ব্যবহার করছেন৷ ইটালির মিলান শহরের কাছে এক হাসপাতালে তিনি নিউরোমাসকিউলার রি-এডুকেশন চিকিৎসা করাচ্ছেন৷ তিনি নতুন ধরনের এক নিউরোপ্রস্থেসিস পরীক্ষা করতে রাজি হয়েছেন৷ এক ইউরোপীয় গবেষণা প্রকল্পের আওতায় এই পদ্ধতি সৃষ্টি করা হয়েছে৷ আন্দ্রেয়া বলেন, ‘‘আমি নিশ্চিত ছিলাম, যে ডান হাতে কোনো সমস্যা নেই৷ কিন্তু জানতে পারলাম আমার সেই ধারণা ভুল ছিল৷ মুন্ডুস প্রকল্পের আওতায় আমি ছোট ছোট মুভমেন্টের মাধ্যমে উন্নতি করতে শিখেছি৷''
এই প্রকল্প মানুষকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ, স্বাধীনতা ও আত্মমর্যাদা ফিরিয়ে দেবার আশা রাখে৷ সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, এই প্রযুক্তি রোগীর প্রয়োজন অনুযায়ী নিজেকে মানিয়ে নেয়৷ নিউরোলজিস্ট ফ্রাংকো মলটেনি বলেন, ‘‘মুন্ডুস বেশ গুরুত্বপূর্ণ এক পরীক্ষা৷ কারণ এর মাধ্যমে আমরা রোগীর সমস্যার গভীরে যেতে পারি৷ স্বাস্থ্য পরিষেবার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এই রোগীরা মূল স্রোতের বাইরের হতে পারেন, কারণ তাঁদের সংখ্যা কম৷ কিন্তু এই রোগীদের সমস্যার সমাধানসূত্র লক্ষ লক্ষ রোগীর কাজে লাগতে পারে৷''
মাংসপেশীর জোর বাড়ান, সারাজীবন সুস্থ থাকুন
একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীরের ওজনের শতকরা ৪০ভাগই মাংসপেশী এবং মাংসপেশীর সাহায্য ছাড়া শরীরের কোনো অঙ্গ নাড়ানো সম্ভব নয়, তাই সুস্থ থাকতে হলে মাংসপেশী শক্ত করতে হবে, জেনে নিন কিভাবে৷
মাংসপেশী শরীরকে হাঁটাচলায় সাহায্য করে এবং শরীরটাকে ধরে রাখে৷ অর্থাৎ শরীর মাংসপেশীর উপর ভর করে চলে৷ একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীরে শতকরা ৪০ ভাগ মাংসপেশী রয়েছে৷ এবং শরীরের যে কোনো ব্যথায় মাংসপেশী তার অস্তিত্ব জানিয়ে দেয়৷ শক্ত মাংসপেশী শুধু খেলোয়াড়দের নয়, সকলেরই প্রয়োজন৷ যার যত্ন নিতে হয় ছোটবেলা থেকে শুরু করে সারাজীবন৷
শক্ত মাসলের জন্য কী প্রয়োজন?
অনেকেই মনে করেন ‘মাসল’ থাকে কেবল ছেলেদের বা বডি-বিল্ডারদের, যা মোটেই ঠিক নয়৷ প্রতিটি মানুষকেই সুস্থ এবং শক্ত থাকার জন্য মাসল শক্ত থাকার জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত খাবার হাঁটাচলা ও নিয়মিত কিছুটা ব্যায়াম৷ মাংসপেশী শরীরকে উত্তাপ দিতেও সাহায্য করে৷ শক্তির বেশিরভাগই আমরা পাই খাবার থেকে, যা মাংসপেশীকে গরম রাখে আর এই মাংসপেশী গরম রাখে আমাদের পুরো শরীরকে৷
ছবি: Colourbox
যেসব খাবার মাংসপেশীকে সুস্থ ও শক্ত করে
শর্করা ও প্রোটিন যুক্ত খাবার৷ যেমন চাল, আলু , মুরগি ও কম চর্বির গরুর মাংস, ডিম, দুধ, বাদাম, আঁশযুক্ত খাবার, মাছের তেল, অলিভ অয়েল, ফ্যাটি অ্যাসিড, বিভিন্ন দানাযুক্ত রুটি, আদা, ডাল, ব্রকোলি, বিট ইত্যাদি৷
ছবি: picture alliance/C. Mohr
মাংসপেশীর জন্য আদা
আদাকে নতুন করে চেনাবার প্রয়োজন নেই৷ এর গুণের কথা সবাই জানি৷ আদা মাংসপেশীর টিস্যুগুলোকে শক্ত ও ফিট রাখে এবং মাসলের ভেতর রক্তসঞ্চলনে সহায়তা করে থাকে৷
ছবি: Fotolia/kostrez
কিডনি বিন্স বা রাজমা
মাসলের আরেক প্রয়োজনীয় খাবার কিডনি বিন্স আর এই বিন্সের সাথে যদি কিছিটা ভুট্টা মিশিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে এতে প্রোটিনের মাত্রা বা গুণাগুণ বেড়ে যায় অনেক বেশি৷
ছবি: CIAT
ব্রকোলি
এই সবজিটিতে রয়েছে প্রচুর পটাশিয়াম৷ এছাড়া এই মিনারেলটি যে কোনো ব্যায়াম করতে মাংসপেশীর শক্তি যোগায় এবং মাংসপেশীকে সংক্রমণ থেকে দূরে রাখে৷
ছবি: Fotolia/Mariusz Blach
সাদা দই
সাদা দই পেটের জন্য খুবই উপকারী, এ কথা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না৷ সাদা দইয়ে থাকা ল্যাকটিক অ্যাসিড ব্যাকটেরিয়া হজমে সাহায্য করে৷ এর ফলে পেট বা অন্ত্র গুরুত্বপূর্ণ পেশীর পুষ্টি ভালোভাবে গ্রহণ করে হজমের সমস্যা দূর করে৷
ছবি: Fotolia/FOOD-pictures
কলিজা
গরুর বাচ্চা বা বাছুর বা খাসির কলিজা ভিটামিন ‘বি ৫’-এর উৎস এবং কলিজাতে রয়েছে মাংসপেশীর জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Str
পেস্তাবাদাম
এই বাদামে রয়েছে অপেক্ষাকৃত কম ফ্যাট ও কম ক্যালোরি৷ তবে এতে পটাশিয়ামের পরিমাণ অন্যান্য বাদামের তুলনায় অনেক বেশি৷ যে কারণে মাংসপেশী অনেকক্ষণ ধরে সক্রিয় থাকে৷ তাছাড়াও এই সবুজ রঙের বাদামে আছে যথেষ্ট প্রোটিন৷
ছবি: Fotolia/Dionisvera
ব্যায়ামের বিকল্প নেই
সুস্থ থাকার জন্য হাঁটা-চলা বা ব্যায়ামের বিকল্প নেই৷ শক্ত মাসল বা বডি-বিল্ডার হওয়ার জন্য নয়, সুস্থ থেকে দীর্ঘজীবী হওয়ার জন্য মেয়ে-পুরুষ সকলেই নিয়মিত হাঁটুন এবং হালকা ব্যায়াম করুন৷ ব্যায়াম বা হাঁটার কারণে মাংশপেশী সচল থাকে তা বন্ধ করে দিলে নার্ভের উপর চাপ পড়ার ফলে মাংসপেশীতে ব্যথা হয়৷
এই প্রণালীর মধ্যে এক্সোস্কেলেটন নামের এক স্তর রয়েছে, যার কাজ হলো হাতের ওজন সামলানো৷ সেইসঙ্গে সেই সব রোগীর জন্য ইলেকট্রিক স্পন্দনের ব্যবস্থা রয়েছে, যাঁদের আর পেশিসঞ্চালন ঘটে না৷ ইলেকট্রো সিমুলেশনের মাধ্যমে তাঁরা হাত মুঠো করতে পারেন৷ বিভিন্ন প্রণালী রোগীর ইচ্ছা বিশ্লেষণ করতে পারে৷ কখনো পেশি সক্রিয় করে তোলা হয়, কখনো রোগীর চোখের দিকে ক্যামেরা ফোকাস করা হয়৷ মুন্ডুস প্রকল্পের ম্যানেজার আলেসান্দ্রা পেডরোচি বলেন, ‘‘উপরিভাগের ইলেকট্রোডের মাধ্যমে ইলেকট্রোম্যাগনেটিক সিগনাল গ্রহণ করা হয়৷ সিগনালের এক ফিল্টার ব্যবস্থার মাধ্যমে হাতের পেশিগুলিতে কতটা স্পন্দন পাঠানো হলো, তা সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষা করা যায়৷ এভাবে রোগীর ইচ্ছা অনুযায়ী হাত নাড়াচাড়া করা সম্ভব৷''
এখনো পর্যন্ত শুধু ডান হাতের জন্য এক প্রোটোটাইপ তৈরি করা হয়েছে৷ লোরেঞ্জোর ডান হাতে এখনো কিছুটা সাড় রয়েছে৷ কিন্তু বাঁ হাত পুরোপুরি অসাড়৷ তবে অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে তিনি এই প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়েও সহায়তা করতে চান৷ রোলেঞ্জো রসি বলেন, ‘‘যেদিন বাঁ হাতের প্রোটোটাইপ প্রস্তুত হয়ে যাবে, আমি আবার স্বেচ্ছায় সব পরীক্ষায় অংশ নেবো৷ তখন হয়তো সম্পূর্ণ অসাড় হাতের সঙ্গে প্রায় অসাড় হাতের মধ্যে স্পষ্টভাবে তুলনা করতে পারবো৷ হয়তো এমন তুলনা ভালই হবে এবং সেই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ইঞ্জিনিয়ার ও ডাক্তাররা ভবিষ্যতে এই প্রকল্প চালিয়ে যেতে পারবেন৷''
হাতে গ্লাস ধরে কিছু পান করা, চুল আঁচড়ানো অথবা সুইচ টিপে আলো জ্বালানোর মতো সামান্য অথচ গুরুত্বপূর্ণ কাজের ক্ষমতা অদূর ভবিষ্যতে সেই সব মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে, যাঁদের সেই প্রয়োজন রয়েছে৷
স্টেফান গাবেল্ট/এসবি
হাড় শক্ত রাখতে ব্যায়ামের বিকল্প নেই
জার্মানিতে হাড় নরম হয়ে যাওয়ার সমস্যায় ভুগছেন আনুমানিক ৭,৮ মিলিয়ন মানুষ৷ অথচ হাড় শক্ত রাখতে নিয়মিত শরীর চর্চা বা বিশেষ ধরণের ব্যায়াম বড় ভূমিকা পালন করতে পারে৷
ছবি: Fotolia/mangostock
হাড়ের ক্ষয়
প্রায়ই শোনা যায় বয়স বাড়ার সাথে সাথে হাড়ের নানা সমস্যা ও ব্যথা শুরু হয়৷ কিন্তু কেন এটা হয় – তা নিয়ে হয়ত অনেকেই ভাবেন না৷ অস্টিওপোরোসিস বা হাড় নরম হয়ে যাওয়ার সমস্যায় জার্মানিতে ভুগছেন প্রায় ৭,৮ মিলিয়ন মানুষ৷ এই সমস্যা কেন হয় বা এর থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় কী?
ছবি: DW/K.ZeinEddine
শুধু বয়সই কারণ নয়
হাড় নরম বা ভেঙে যাওয়ার জন্য শুধু বয়স বাড়াই একমাত্র কারণ নয়৷ থাইরয়েড, পেটের ক্রনিক সমস্যা বা পাকস্থলির অসুখের কারণেও হাড় নরম বা ক্ষয় হতে পারে৷ আর পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাওয়া-দাওয়া না করা ও অতিরিক্ত ধূমপান হাড়কে নরম করে৷ তাছাড়া নানা ধরনের ওষুধ-পত্র সেবন থেকেও হাড় নরম হতে পারে৷
ছবি: Gina Sanders/Fotolia
এক্স-রে
হরমোনের বৈষম্যতা জাতীয় অসুখ যেমন হাইপোথাইরয়েড, হাইপারথাইরয়েড এবং ডায়াবেটিস হলেও ধীরে ধীরে অস্টিওপোরোসিস হয়ে থাকে৷ মহিলাদের এস্ট্রোজেন নামের হরমোন হাড়কে মজবুত করতে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷ এক্স-রে বা অন্যান্য পরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগের আক্রমণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়৷
ছবি: picture alliance / Bildagentur-o
ব্যায়াম
হাঁটাহাটি, সাঁতার কাটা এবং সাইকেল চালানো শরীরকে ফিট রাখে, কিন্তু হাঁড় শক্ত রাখায় তেমন কোনো ভূমিকা নেই এগুলির৷ এর জন্য রয়েছে বিশেষ ব্যায়াম, যা ঘরে বসেও করা যায়৷ বলা বাহুল্য, এক্ষেত্রে এমন কিছু করতে হবে যাতে মাংসপেশিতে ভালোভাবে টান লাগে বা চাপ পরে৷ যেমন এক পায়ে দাঁড়িয়ে বেশ কিছুক্ষণ লাফিয়ে লাফিয়ে হাঁটা৷
ছবি: imago/CHROMORANGE
জীবনযাত্রার পরিবর্তন
হাঁড় ঠিক রাখতে এ সব ব্যায়াম যে কোনো বয়সেই শুরু করা যায়৷ ৬০ অথবা ৭০ বছর বয়সও নাকি দেরি নয়, বলেন কোনো কোনো ডাক্তার৷ তবে এর জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে৷ অর্থাৎ, সপ্তাহে কম করে হলেও তিনদিন৷ তবে আগে ডাক্তারের সাথে কথা বলে নেওয়াই ভালো, বললেন হাড় বিশেষজ্ঞ ড. মার্টিন রুঙ্গে৷
ছবি: DW/Eva Usi
সঠিক খাওয়া-দাওয়া
হাড়ের জন্য ভিটামিন ‘ডি’ খুবই জরুরি৷ আর এই ভিটামিন ডি রয়েছে সামুদ্রিক মাছে৷ প্রতিদিন কিছুক্ষণ রোদে হাঁটাহাঁটি করাও দরকার হাড় শক্ত রাখার জন্য৷ তাছাড়াও ভিটামিন এ, সি, কে এবং বি ১২ হাড়কে মজবুত রাখতে সহায়তা করে৷
ছবি: Fotolia/oldline2
দুধ বা দুগ্ধজাতীয় খাবার
দুধ, দই, পনির, চিজ বা অন্যান্য দুগ্ধজাতীয় খাবার রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম যা হাড়ের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন৷ তাছাড়া মিনারেল ওয়াটারেও রয়েছে ক্যালসিয়াম৷ তবে সবকিছুই বুঝে শুনে খাওয়া ভালো৷
ছবি: AP
নিয়মিত ব্যায়াম
হাড়ের সমস্যার কারণে ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারেন না এমন মানুষের সংখ্যা জার্মানিতে প্রায় ১,৫৬ মিলিয়ন, যাঁরা বাড়িতে আত্মীয়, নার্স বা অন্যের সাহায্যে চলাফেরা করেন৷ হাড়কে শক্ত রাখতে বেশি কফি, চিনি, লবন, চিনি মিশ্রিত সফ্ট ড্রিংক এবং মদ্যপান এড়িয়ে চলাই ভালো৷ তবে সব কিছুর পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম যে করতেই হবে!