‘অসাধারণ নারীদের দেশ' ইরান ও নার্গেস মোহাম্মদীর নোবেল জয়
৯ অক্টোবর ২০২৩৫১ বছর বয়সি নার্গেস মোহাম্মদি কয়েক দশক ধরে ইরানে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়ছেন৷ লড়তে গিয়ে অনেক জেল-জুলুমের শিকার হতে হয়েছে তাকে৷ তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে অনেক৷ গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৩ বার্, নানা অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে পাচ বার, দেয়া হয়েছে ৩১ বছরের কারাদণ্ড৷ এখনো তেহরানের ‘কুখ্যাত' এভিন কারাগারে রয়েছেন নার্গেস মোহাম্মদি৷
শুক্রবার নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ীর নাম ঘোষণার সময় নরওয়ের নোবেল কমিটির প্রধান বেরিট রাইস অ্যান্ডারসন বলেন, ‘‘নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও সর্বসাধারণের মুক্তির জন্য দীর্ঘ লড়াই''-এর কারণেই নার্গেস মোহাম্মদিকে এই পুরস্কার দেয়া হলো৷
নার্গেসের স্বামী তাগি রহমানি অনেক বছর ধরে ফ্রান্সে নির্বাসিত৷ সন্তানদের নিয়ে সেখানে থাকেন তিনি৷ স্ত্রী-র নোবেল পুরস্কার জয়ে গর্বিত তাগি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘(এই পুরস্কার) আসলে প্রতিরোধের প্রতি এক ধরনের শ্রদ্ধা৷‘‘ সাংবাদিক তাগি
আরো বলেন, ‘‘পুরস্কারজয়ীর নাম ঘোষণার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে কিন্তু ‘নারী, জীবন, মুক্তি‘ এই স্লোগান দিয়ে৷ ফলে এটা পরিস্কার যে, এই পুরস্কারটা বস্তুত ইরানে যারা নাগরিক মু্ক্তি এবং গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করছেন, তাদের সবার জন্য৷ নার্গেস তো তাদেরই একজন৷''
নার্গেস মোহাম্মদি নোবেল শান্তি পুরস্কার জেতায় ইরানের প্রথম নোবেলজয়ী শিরিন এবাদিও খুশি৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন,
এই পুরস্কার ইরানে লাগাতার মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিশেষ করে নারীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের দিকে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করবে৷
ইরানের প্রথম ব্যক্তি এবং মুসলিম বিশ্বের প্রথম নারী হিসেবে শিরিন এবাদি নোবেল শান্তি পুরস্কার জেতেন ২০০৩ সালে৷
আইনজীবী এবং মানবাধিকারকর্মী এবাদি মনে করেন যোগ্য ব্যক্তির হাতেই উঠেছে ২০২৩-এর নোবেল শান্তি পুরস্কার, ‘‘ এই পুরস্কার তার (নার্গেস) প্রাপ্য৷ মানবাধিকারের জন্য সংগ্রাম করতে গিয়ে তো অনেক বছর কারাগারে কাটাতে হলো তাকে৷''
ইরানের মানবাধিকার বিষয়ক এনজিও ডিফেন্স অব হিউম্যান রাইটস সেন্টার-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা শিরিন এবাদি জানান, নার্গেস একসময় একই এনজিওর হয়ে কাজ করতেন বলে তার সাফল্যে তিনি গর্বিত, ‘‘ ইরানের একই মানবাধিকার বিষয়ক এনজিওর দুই জনের নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়া খুব সম্মানের বিষয়৷''
ইরানের আরেক মানবাধিকার কর্মী মানসুরেহ শোজাই-ও দুই দশকে ইরানের দুই নারীর নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ের বিষয়টিকে খুব তাৎপর্যপূর্ণ মনে করছেন৷ হেগভিত্তিক এই মানবাধিকারকর্মী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘'২০ বছরের ব্যবধানে দুই ইরানি নারীর নোবেল শান্তি পুরস্কার জয় থেকে একটা বিষয় খুব পরিষ্কার হয়ে যায় আর তা হলো, ইরান সত্যিকার অর্থেই অসাধারণ নারীদের দেশ৷''
মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে সাম্প্রতিক সময়ে নির্যাতনের শিকার এবং নির্যাতনের প্রতিবাদে রাস্তায় নামা নারীদের কতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, "নোবেলজয়ীরা, বা যে নারীরা এখনো কারাবন্দি,এখনো যে নারীরা (পুলিশি নির্যাতনে) হাসপাতালে কোমায় রয়েছেন, অথবা যাদের প্রিয়জনেরা এখন কবরে শুয়ে, এমনকি সেই নারীরাও,শিক্ষাক্ষেত্রে নিষিদ্ধ হয়েও যারা রাস্তায় ভিড় করেছেন – এসবে আসলে ২০ বছর আগের নোবেল পুরস্কার যে অনেক সামাজিক এবং নারী আন্দোলনের ভিত্তি তৈরি করেছিল, তা খুব পরিষ্কার৷
ওয়েসলি রান/ এসিবি