নাইভ পেন্টিং বলতে বোঝায় সহজ, সরল, প্রায় শিশুসুলভ সব ছবি, পেশাদারি চিত্রকলার সঙ্গে যার সম্পর্ক যেমন ধরা শক্ত, তেমন বোঝা শক্ত৷ অথচ সেই চেষ্টাই করেছেন জার্মানির এসেন শহরের ফল্কভাং মিউজিয়ামের দুই পরিচালক৷
ছবি: Fondation Beyeler, Riehen/Basel, Sammlung Beyeler Foto: Robert Bayer, Basel
বিজ্ঞাপন
গৃহকর্মী, ভিক্ষুক আর ক্রীতদাসের ছবির প্রদর্শনী
02:30
This browser does not support the video element.
সেরাফিন লুই আসলে গৃহকর্মী৷ তাহলে তাঁর বিশালাকার ফুলের তোড়াগুলো এই নামি-দামি মিউজিয়ামে এলো কী করে? নিকিফর ক্রুনিচকি হলেন পোল্যান্ডের এক ভিক্ষুক, তার উপর বধির – তাঁর সব জলরঙের ছবি৷ ক্রীতদাস বিল টেলর-এর কাগজ কেটে তৈরি নানা জীবজন্তু৷ অবসরপ্রাপ্ত খনিশ্রমিক এরিক ব্যোডেকার-এর ভাস্কর্য৷
এ সবই এখন দেখতে পাওয়া যাবে জার্মানির এসেন শহরের প্রখ্যাত ফল্কভাং মিউজিয়ামে৷
মিউজিয়াম পরিচালক কাস্পার ক্যোনিশ বললেন, ‘‘আজকাল প্রচুর শিল্পকলা দেখতে পাওয়া যায়, তার মধ্যে বহু মামুলি ও মাঝারি গোছের শিল্পকলাও রয়েছে৷ আমরা এখানে দেখানোর চেষ্টা করেছি যে, যারা চিত্রকর বা শিল্পী হিসেবে প্রথাগত প্রশিক্ষণ পাননি, তাদের মধ্যেও ব্যতিক্রমী ও অসাধারণ শিল্পকলা পাওয়া যেতে পারে৷''
অনধিকারচর্চা?
কাস্পার ক্যোনিশ নিজে শিল্পকলার ইতিহাসবিদ নন; তাই তিনি ফাল্ক ভল্ফ-এর সঙ্গে মিলে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন৷ ভল্ফ বললেন, ‘‘সে-হিসেবে এই প্রদর্শনী বিশেষজ্ঞদের এক্তিয়ারের উপর হস্তক্ষেপ নয়৷ বরং আমরা ‘মডার্ন আর্ট' বলতে যা বুঝি, এই প্রদর্শনী তারই একটা অন্য সংস্করণ৷''
কেননা মডার্ন আর্ট বলতে আজও বোঝায় পাবলো পিকাসো, পল গগাঁ, এমিল নল্ডে, মন্ড্রিয়ান ইত্যাদি নামকরা শিল্পীদের চিত্রকলা৷ অন্যদিকে রয়েছেন তথাকথিত ‘নাইভ পেন্টিং'-এর চিত্রকরেরা৷ যেমন মার্কিন মুলুকের সৌখিন ভাস্কর উইলিয়াম এডমন্ডসন৷ গত শতাব্দীর ত্রিশের দশকে তিনি মফস্বল শহরের মায়াময় আবহ আবিষ্কার করেছিলেন, বলা হয়ে থাকে৷ ফ্রান্সের সেরাফিন লুই এক আর্ট ডিলারের বাড়িতে গৃহকর্মী ছিলেন৷ আর্ট ডিলার ভদ্রলোক সেরাফিনের প্রতিভার আঁচ পেয়ে তাঁকে আঁকতে উৎসাহিত করেন৷ কাস্পার ক্যোনিশ বললেন, ‘‘এ যেন এক পাগল ধার্মিকতা, ফুলগুলো, ফুলের কুঁড়িগুলো, ছবিগুলোতে যেন এক বীভৎস ধর্মভীরুতা লুকিয়ে আছে৷ অবিশ্বাস্য!''
প্রদর্শনীর কেন্দ্রে স্বভাবতই অঁরি রুসো, যাঁকে ফরাসি চিত্রকর ‘নাইভ’ বা সরল চিত্রকলার প্রাণপুরুষ বলা চলে৷ স্বয়ং পিকাসো তরুণ বয়সে রুসো-র ভক্ত ছিলেন৷
উদ্বাস্তুরা যখন ছবি আঁকেন
কেনিয়ার কাকুম্বা আর দাবাব রিফিউজি ক্যাম্পের শিল্পীরা রাজধানী নাইরোবিতে একটি প্রদর্শনী করেছেন৷ তিনদিনব্যাপী প্রদর্শনীর উপজীব্য হলো, উদ্বাস্তুদের স্মৃতি ও ব্যথা-বেদনা৷
ছবি: DW/J. Shimanyula
পালানো ছাড়া পথ ছিল না
রাস্তার ধারে দুই নারী, সাথে বাড়ি থেকে আনা একটি ছোট্ট কুকুর৷ গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে যুদ্ধ ও সংঘাতের মুখে পড়ে ঘর ছেড়ে পালিয়েছেন এঁরা৷ অন্যান্য উদ্বাস্তু শিল্পীদের মতো আলফা মকাঙ্গি মুকাঙ্গালা-র চিত্রকলার ভিত্তিও তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা৷
ছবি: DW/J. Shimanyula
ধর্ষণ একটি অস্ত্র
শিল্পী স্টেফেনাল টাকিই দক্ষিণ সুদানের নুয়ের উপজাতির মানুষ৷ আফ্রিকার তরুণতম রাষ্ট্রটিতে যে সংঘাত চলেছে, তার নির্মমতা কল্পনাকে ছাড়িয়ে গেছে৷ টাকিই কাকুমা উদ্বাস্তু শিবিরে আছেন ১৯৯২ সাল যাবৎ৷ তাঁর ছবিতে যুদ্ধের বিভীষিকা সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায় – সৈন্যরা কিভাবে ধর্ষণকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে৷
ছবি: DW/J. Shimanyula
উদ্বাস্তু শিবিরে যে সব শিল্পীর বাস
৩৩ বছর বয়সি খাদিজা হুসেন জমা ছয় সন্তানের জননী৷ কাকুমা রেফিউজি ক্যাম্পে আছেন গত ২৪ বছর ধরে৷ এই সোমালি তরুণীও অন্যান্য মহিলা উদ্বাস্তুদের মতো ছবি আঁকায় স্বান্তনা খুঁজে পেয়েছেন৷ নাইরোবির প্রদর্শনীতে নিজেদের আঁকা ছবি দেখাচ্ছেন সোমালিয়া, ইথিওপিয়া, ইরিট্রিয়া, রুয়ান্ডা, বুরুন্ডি ও কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র থেকে আসা ৬০ জন শিল্পী, ইউএনএইচসিআর-এর আমন্ত্রণে৷
ছবি: DW/J. Shimanyula
সংঘাতের মাঝখানে বেঁচে থাকা
কঙ্গোর আলফা মকাঙ্গি মুকাঙ্গালা গ্রামীণ জীবনের শান্তিপূর্ণ দিকগুলো নিয়েও ছবি আঁকেন – এখানে যেমন গ্রামবাসীরা সন্ধ্যায় ঢোলকের তালে তালে নাচছেন৷ কিন্তু মুকাঙ্গালার অধিকাংশ ছবিতে সেই আদিম ভীতির ছাপ, সারা দেশকে যা ছেয়ে রেখেছে: মানুষে মানুষ মারছে, একদিকে সরকারি সেনা, অন্যদিকে বিদ্রোহী ও বিরোধী দলগুলির সমর্থকদের মধ্যে যুদ্ধ চলেছে৷
ছবি: DW/J. Shimanyula
গাঁ উজাড়
আলফা মকাঙ্গি মুকাঙ্গালা-র আরো একটি ছবি: কঙ্গোর কোনো একটি গ্রামের এক শান্তিপূর্ণ দৃশ্য৷ গ্রামটি যেন পরিত্যক্ত, জনশূন্য৷ সবাই যেন গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছেন৷ সত্যিই তো: ২০১৪ সাল যাবৎ কঙ্গো থেকে পলাতক মানুষদের সংখ্যা সাতাশ লাখ, বলছে ইউএনএইচসিআর৷
ছবি: DW/J. Shimanyula
সুন্দর জীবনের স্বপ্ন
এক মহিলা বাচ্চাকে বুকে বেঁধে পানি নিয়ে যাচ্ছেন গাঁয়ের পথে৷ ইথিওপিয়ার শিল্পী ত্রিকু ফেকেলে বলেন, তিনি নাকি বহু সময় কাটান শান্তির জন্য প্রার্থনায়৷ ছবিতে যে গ্রামটিকে দেখা যাচ্ছে, তা ত্রিকু-র নিজের গ্রাম, দক্ষিণ ইথিওপিয়ায় অবস্থিত৷ ত্রিকু এই গ্রাম ছাড়েন এক দশকের বেশি আগে৷