1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অসাধু ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যবস্থা অকার্যকর: আলম

১০ মার্চ ২০২৩

বাংলাদেশে প্রতিদিনই বাড়ছে নিত্যপণ্যের মূল্য৷ কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ দেখা যাচ্ছে না৷ সামনে রমজান৷ দেশের মানুষের জন্য কতটা স্বস্তির হবে রমজানের বাজার? সরকারি উদ্যোগগুলো কী কোন কাজে আসছে?

কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম৷
কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম৷ছবি: Privat

এসব বিষয় নিয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সিনিয়র সহ-সভাপতি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রকৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম৷

ডয়চে ভেলে : দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আপনারা কি করছেন?

অধ্যাপক ড. শামসুল আলম : আমরা একটা ক্যাম্পেইন করছি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের জন্য৷ সেটা সিলেটে শেষ হয়েছে৷ ঢাকা থেকে আমাদের প্রতিনিধিরা বড় শহরগুলোতে যাচ্ছেন৷ ব্যবসায়ীদের উপর চাপ সৃষ্টি এবং সরকারকে সক্রিয় করতে তারা প্রচারণা চালাচ্ছেন৷ শুধু রমজানকেকেন্দ্র করে নয়, সব সময়ের জন্য ভোক্তা আন্দোলন গড়ে উঠুক সেই চেষ্টা ক্যাব চালাচ্ছে৷ ব্যবসায়ীরা তো ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছেন৷ এখন যেমন বয়লার মুরগির দাম বেড়ে গেছে৷ রমজানকে সামনে রেখে যেমন ব্যবসায়ীরা মূল্য বৃদ্ধির জন্য তৎপর হয়, সে কারণে রমজানকে সামনে রেখে আমাদের তৎপরতাও সেভাবে বাড়িয়েছি৷ সামগ্রিকভাবে বলতে গেলে, আমরা মুক্তবাজার অর্থনীতির কথা বলি৷ কিন্তু আসলে বাজার মুক্ত নয়৷ আমাদের বাজার ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে৷ তারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়াতে পারে৷ সরকার ভোক্তাদের জিম্মি অবস্থা থেকে মুক্ত করতে যে পদক্ষেপগুলো নিচ্ছে সেটা আসলে খুচরা বাজারে৷ মৃল্য বৃদ্ধিতে খুচরা ব্যবসায়ীদের প্রভাব ততবেশি নয়, যতবেশি পাইকারী ব্যবসায়ী, আমদানিকারক বা সাপ্লাই চেইনে৷ সেই জায়গায় খুব বেশি হাত দেওয়া যাচ্ছে না৷

‘যুদ্ধটাকে অজুহাত হিসেবে দেখানো হচ্ছে’

This browser does not support the audio element.

সরকার কি আপনাদের কথা শুনছে?

সরকারের মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বা ভোক্তা অধিদপ্তর ক্যাবের প্রচারণায় মোটামুটি অংশ নেয় বা সুযোগ দেয়৷ ক্যাব সেখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷ খাদ্যের ক্ষেত্রে খাদ্য মূল্য নিয়ন্ত্রণের কথা মূলত খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের৷ সেখানে ক্যাবের ভূমিকা অস্পষ্ট৷ বিশেষ করে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সেখানে ক্যাবকে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয় না৷ বিইআরসির শুনানিতে ক্যাব আগে অংশগ্রহণ করতো৷ কিন্তু সরকার এখন বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম নির্ধারণের ক্ষমতা মন্ত্রণালয়ের হাতে দিয়ে দিয়েছে৷ জ্বালানির মতো একটা পণ্যের ক্ষেত্রে ভোক্তাদের মতামতকে এভাবে রুদ্ধ করে দেওয়া মূলত মূল্যবৃদ্ধিকে প্রশ্রয় দেওয়ারই নামান্তর৷ কারণ এই পণ্যটির মূল্য বাড়লে সব পণ্যেরই মূল্য বেড়ে যাবে৷

দ্রব্যের দাম কমাতে সরকারের যেটা করণীয়, সরকার কি সেটা করছে?

সরকারের প্রথম করণীয় বাজারে প্রতিযোগিতা তৈরি করা৷ সেই প্রতিযোগিতা তৈরি করার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান আছে, কিন্তু প্রতিযোগিতা নেই৷ দ্বিতীয়ত, মূল্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ভোক্তা আন্দোলনে সরকারকে সক্রিয় হতে হবে৷ ভোক্তা আর ব্যবসায়ী দু'জনের স্বার্থ একসঙ্গে কোনোভাবেই সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে না বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষে৷ এ নিয়ে আমরা চিঠিও দিয়েছি৷ এ কারণেই আমরা ভোক্তা অধিকার মন্ত্রণালয় চাই৷ সেটা যদি সম্ভব না হয় তাহলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পাশাপাশি মন্ত্রণালয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ বিভাগ চাই৷ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনেই দুটো বিভাগ হতে পারে৷ অথবা সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনেও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ বিভাগ হতে পারে৷ ব্যবসায়ীদের স্বার্থ বা ব্যবসা সুরক্ষা দেওয়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মৌলিক কাজ৷ অসাধু ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করাও তাদের কাজ৷ ফলে উভয় শ্রেণির স্বার্থ সংরক্ষণ করা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয়৷

বৈশ্বিক বাজারের কথা বলে বাংলাদেশের দাম বাড়ানো হচ্ছে? আসলেই কি বাংলাদেশের দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য বৈশ্বিক কারণ দায়ী?

বৈশ্বিক কারণের সঙ্গে ডলারের মূল্য নিয়ন্ত্রণে না থাকা একটা কারণ৷ এটার পাশাপাশি সাপ্লাই চেইনে কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় ব্যবসায়ীরা এসব অজুহাতে নিজেদের মতো করে পণ্যের মূল্য ঠিক করছে৷ বাজারে যদি প্রতিযোগিতা থাকত বা সরকারের কোন রেগুলেশন থাকত তাহলে ব্যবসায়ীদের পক্ষে সেটা করা কঠিন হতো৷ এক্ষেত্রে আমি এলপিজি পণ্যের কথা বলতে পারি৷ অসাধু ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে প্রকৃতপক্ষে সরকারের ব্যবস্থা অকার্যকর৷

পণ্যের দাম বৃদ্ধির পেছনে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ কতোটা দায়ী?

এই যুদ্ধটাকে অজুহাত হিসেবে দেখানো হচ্ছে৷ যুদ্ধের কারণে যে সংকট হচ্ছে সেটা একমোডেট করা হচ্ছে৷ তারপরও কেন ব্যবসায়ীরা বেশি মূল্য নিচ্ছে? আমরা কেন তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না৷ কোনো জায়গাতে ভোক্তাদের প্রবেশাধিকার নেই৷ তাদের কাছে কোন তথ্য নেই৷ আমদানি পণ্যের ক্ষেত্রেও পাচ্ছে না, দেশে উৎপাদিত হচ্ছে এমন পণ্যের ক্ষেত্রেও পাচ্ছে না৷ ব্যবসায়ীদের মূল্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো অকার্যকর হয়ে যাচ্ছে৷

সামনে রমজান৷ ইতিমধ্যে অনেক পণ্যের দাম বেড়েছে৷ দ্রব্যমূল্য নিয়ে রমজানে কতটা স্বস্তিতে থাকবে দেশের মানুষ?

আমার ধারণা হৈ চৈ হলে ব্যবসায়ীরা যতটা মূল্য বৃদ্ধি করতো, ততটা হবে না৷ তবে মূল্যবৃদ্ধি ঠেকানো যাবে বলে আমার মনে হয় না৷ সাপ্লাই এবং ডিমান্ড সেই জায়গাটাও আমাদের দেখার বিষয় আছে৷ ব্যবসায়িরা যে নিজেরা সংকট তৈরি করেন এমন উদাহরণ তো বহু আছে৷ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানে এমন অনেক ঘটনা ধরা পড়েছে৷ সয়াবিন তেল, আলুর ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি৷ রমজানে তো কিছু পণ্যের বেশি চাহিদা তৈরি হয়৷ এটা তো সত্যি৷ সেখানে ব্যবসায়ীরা সংকট তৈরি করে বেশি মুনাফা নিয়ে যাবে না সেই আশঙ্কার জায়গা থেকে আমরা বের হতে পারছি না৷

টিসিবি বা খাদ্য অধিদপ্তর যে পণ্যগুলো কম দামে সরবরাহ করে তা কী পর্যাপ্ত?

পর্যাপ্ত করে না৷ শহর এলাকায় কিছুটা দৃশ্যমান৷ যেভাবে এটা করা হয় সেটা ভোক্তাবান্ধব নয়৷ ট্রাক সেল পদ্ধতিতে যেটা করা হয় সেটার আরও বেশি আধুনিকায়ন করা যেতে পারত৷ এটা আরও পর্যাপ্ত করার দরকার ছিল৷ সেফটি নেটের আওতায় দরিদ্রদের আনার যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সেটা ভালো উদ্যোগ৷ কিন্তু এটা একপেশে হয়ে যাচ্ছে৷ সামগ্রিক হচ্ছে না৷ লোক নির্ধারণের ক্ষেত্রেও এটা সমতা ভিত্তিতে হচ্ছে না৷ ফলে এখানেও বৈষম্য তৈরি হচ্ছে৷ সেই জায়গাটাতেও নজর দেওয়া জরুরি বলে আমরা মনে করি৷

রমজানের বাজার নিয়ে সরকারের যে পদক্ষেপ তাতে কি আপনারা সন্তুষ্ট?

সাপ্লাই চেইনে যে ব্যয় বৃদ্ধি পায়, সেই ব্যয় বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ না করে খুচরা বাজারে হৈ চৈ করে মূল্য বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে খুব একটা কাজে আসে বলে আমরা মনে করি না৷ সাপ্লাই চেইনে সবচেয়ে বেশি নজরদারি প্রয়োজন৷ এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অপরাধী চক্রকে সনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক সাজা দেওয়া দরকার৷ ভেজাল ও খাদ্যপণ্য নিয়ে কারচুপি বড় ধরনের অপরাধ৷ সমাজকে সুরক্ষার জন্যও এটা প্রয়োজন৷

সরকারও তো তিন দফা বিদ্যুতের মূল্য বাড়ালো৷ পাশাপাশি দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি, তাতে মানুষ আসলে কার কাছে প্রতিকার চাইতে যাবে?

এককথায় ধর্মভীরু মানুষদের কথাই আমি পুনরাবৃত্তি করতে চাই, বিধাতার কাছে বা আল্লাহর কাছে বা ঈশ্বরের কাছে বা ভগবানের কাছে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ