অস্ট্রিয়ার পাহাড়ে ফ্রিরাইডিং আরও জনপ্রিয় হচ্ছে
২৫ মার্চ ২০১৫আলপ্স পর্বতের কিৎসব্যুয়েল স্কিয়িং-এর সবচেয়ে জনপ্রিয় এলাকাগুলির মধ্যে একটি৷ উইন্টার স্পোর্টস অনুরাগীরা এখানে এসে মূল ট্র্যাকের বাইরেও স্কি বা স্নোবোর্ড-এ করে উপত্যকায় নেমে যেতে পছন্দ করেন৷
অস্ট্রিয়ার মার্টিন ভিংকলার শিশু বয়স থেকেই এমন খোলা পরিবেশে স্কি করতে ভালোবাসেন৷ এখন তিনি সেরা ‘ফ্রিরাইডার'-দের অন্যতম৷ মার্টিন বলেন, ‘‘এমন খোলা পরিবেশে যা খুশি করা চলে৷ আজকাল সমাজে এমন সুযোগ আর কোথায় পাওয়া যায়! সে কারণেই এর রোমাঞ্চই আলাদা৷ প্রত্যেকেই নিজের খেয়ালখুশি মতো ঘোরাফেরা করতে পারে, প্রকৃতির নিয়ম ছাড়া অন্য কিছুর তোয়াক্কা করতে হয় না৷''
‘ফ্রিরাইড সপ্তাহ' উপলক্ষ্যে আয়োজিত বিভিন্ন কর্মশালায় মার্টিন ভিংকলার তাঁর উৎসাহ ও জ্ঞান বাকিদের সঙ্গে ভাগ করে নেন৷ আজ তিনি অভিজ্ঞ কিছু ফ্রিরাইডার-দের সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন৷ শুধু সবচেয়ে সুন্দর নয়, সবচেয়ে নিরাপদ রুট কীভাবে বাছাই করতে হয়, সেটা তিনি শেখাচ্ছেন৷ সেখানকার প্রাণী ও উদ্ভিদ জগতের ক্ষতি এড়ানোর পদ্ধতিও তিনি বলে দিচ্ছেন৷
পাহাড়-পর্বত সম্পর্কে শ্রদ্ধাবোধ মার্টিন ভিংকলার-এর জন্য অত্যন্ত জরুরি৷ এমনকি তাঁর মতো পেশাদারি স্কিয়ার-এর পক্ষেও বরফের মতিগতি বোঝা সবসময়ে সহজ নয়৷ যে কোনো সময় তুষারধ্বস নামার আশঙ্কা থাকে৷ মার্টিন বলেন, ‘‘এই ঝুঁকি কখনো পুরোপুরি এড়ানো যায় না৷ তাই জরুরি অবস্থার জন্য সরঞ্জাম সব সময়ে কাছে রাখতে হয়৷''
এর মধ্যে রয়েছে একটি ইলেকট্রনিক ডিটেক্টর৷ এর মাধ্যমে বরফের নীচে চাপা পড়া মানুষের মোটামুটি অবস্থান জানা যায়৷ তবে বরফ সরিয়ে তাকে মুক্ত করার আগে এই ডিভাইসের মাধ্যমে তার সঠিক অবস্থান নির্ণয় করতে হয়৷ বিশেষভাবে জরুরি হলো পিঠের রুকস্যাক, যা ফোলানো যায়৷ এটা থাকলে বরফের ধস নামলেও বরফের উপরেই টিকে থাকা যায়৷ গত কয়েক বছরেই কিৎসব্যুয়েল ফ্রিরাইডার-দের পীঠস্থান হয়ে উঠেছে৷
অস্ট্রিয়ার মাটিয়াস মায়ার ও মাটিয়াস হাউনহোল্ডার ‘ফ্রিরাইড উইকস'-এর উদ্যোক্তা৷ স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাঁরা ফ্রিরাইড পর্যটন বিপণনের কনসেপ্ট তৈরি করেছেন৷ ইতোমধ্যে এখানকার অতিথিদের প্রায় ৩০ শতাংশই ফ্রিরাইডার৷ মার্টিন ভিংকলার ফ্রিরাইডিং-এর ইতিহাস ও বিবর্তন নিয়ে বক্তৃতাও দেন৷
৩৬ বছর বয়স্ক এই ফ্রিরাইডার নিজের তৈরি চলচ্চিত্রও দেখান৷ তরুণ বয়সে অনেক আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেবার পর ২০০৬ সাল থেকে তিনি ছবি তৈরির কাজে মন দিয়েছেন৷ স্পনসরদের জন্য এটা অত্যন্ত জরুরি৷ এমন সব ছবির জন্য তিনি আলাস্কার পাহাড় বা আর্জেন্টিনার আগ্নেয়গিরিতে পাড়ি দেন৷
মার্টিন ভিংকলার ‘ফ্রিরাইড সপ্তাহ' চলাকালীন চলচ্চিত্র প্রতিযোগিতার জুরিমণ্ডলীর সদস্য৷ এই সব চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে ফ্রিরাইডিং-এর সময় তোলা চমকপ্রদ ছবিই গুরুত্ব পায়৷ অস্ট্রিয়ার ফাবিয়ান লেঞ্চ গাছপালার মধ্য দিয়ে তোলা ছবির জন্য পুরুষ বিভাগের পুরস্কার পেলেন৷ অস্ট্রিয়ার ফ্রিরাইডার ফাবিয়ান লেঞ্চ বলেন, ‘‘উপরে থাকতেই সন্দেহ হচ্ছিলো৷ দু'মিনিট দাঁড়িয়ে ভাবলাম এগোনো উচিত হবে কিনা৷ তারপর মনে হলো, এগিয়ে যাওয়াই উচিত৷ একবার দৌড় শুরু করলে আর ফিরে তাকানোর প্রশ্ন ওঠে না৷ তখন পুরো মনোযোগ দিয়ে শুধু এগিয়ে যেতে হয়৷ আজ সন্ধ্যায় কী করতে হবে, এমন সব কথা মনে আসে না৷ এটাই স্কিয়িং বা ফ্রিরাইডিং-এর সবচেয়ে সুন্দর দিক – স্কি করো, সুস্থ থাকো, জীবনটা উপভোগ করো৷''
সৃজনশীলতা, প্রকৃতির সান্নিধ্যে আসা এবং মুক্তি বা স্বাধীনতার অনুভূতি – এগুলিই ফ্রিরাইডিং-এর রোমাঞ্চের রহস্য৷ এতেই বোঝা যায়, যথেষ্ট ঝুঁকি সত্ত্বেও আরও বেশি করে তরুণ-তরুণী কেন এর স্বাদ নিতে এগিয়ে আসছে৷