রবিবার অস্ট্রিয়ায় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷ ভোটারদের মন পেতে প্রার্থীরা মুসলিমবিরোধী বক্তব্যকে পুঁজি করছেন৷ শুধু চরম ডানপন্থি দলই নয়, মূলধারার একটি দলও এতে অংশ নিচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
অস্ট্রিয়ার বর্তমান জোট সরকারের একটি দল ‘অস্ট্রিয়ান পিপলস পার্টি' বা ওভিপি৷ অন্যটি ‘সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি অফ অস্ট্রিয়া' বা এসপিও৷ এই দুই দলের মধ্যে ওভিপি দলের প্রধান ৩১ বছর বয়সি সেবাস্টিয়ান কুরৎস বলেছেন, তিনি দেশের সীমান্ত আরো সুরক্ষিত করতে চান, রাজনৈতিক ইসলামের বিরুদ্ধে লড়তে চান আর অভিবাসীর সংখ্যা সীমিত করতে চান৷
কুরৎসের এই চাওয়াগুলো অনেকটা চরম ডানপন্থি দল ‘ফ্রিডম পার্টি অফ অস্ট্রিয়া' বা এফপিও-র চাওয়ার সঙ্গে মিলে যাচ্ছে৷ তাই এফপিও মনে করছে, কুরৎস তাদের ইস্যুগুলো চুরি করেছে৷ কারণ, এফপিও দল চায় ইসলামাইজেশন বা ইসলামিকরণ বন্ধ করতে৷
শরণার্থী সংকটের কিছু আইকনিক ছবি
ইউরোপে ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে বিপুল সংখ্যক অভিবাসী প্রবেশের ছবি গোটা বিশ্বে ছড়িয়েছে এবং মানুষের মতামত সৃষ্টিতে প্রভাব বিস্তার করেছে৷ অভিবাসন এবং অভিবাসনের ফলে সৃষ্ট ভোগান্তির এত ছবি আগে দেখেনি বিশ্ব৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/E. Morenatti
লক্ষ্য: টিকে থাকা
অনিশ্চিত যাত্রার ধকল সামলাতে হয় শারীরিক এবং মানসিকভাবে৷ ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে গৃহযুদ্ধ থেকে বাঁচতে হাজার হাজার সিরীয় নাগরিক তুরস্ক হয়ে গ্রিসে জড়ো হয়েছেন৷ সে দেশের তিনটি দ্বীপে এখনো দশ হাজারের মতো শরণার্থী বসবাস করছেন৷ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাস অবধি ছয় হাজার নতুন শরণার্থী এসেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Messinis
পায়ে হেঁটে ইউরোপে
২০১৫ এবং ২০১৬ সালে এক মিলিয়নের বেশি মানুষ গ্রিস ও তুরস্ক থেকে পশ্চিম ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করেছে৷ ম্যাসিডোনিয়া, সার্বিয়া, হাঙ্গেরি, অর্থাৎ বলকান রুট ব্যবহার করে তাদের এই যাত্রার অধিকাংশই ছিল পায়ে হেঁটে৷ অভিবাসীদের এই যাত্রা বন্ধ হয়ে যায়, যখন রুটটি আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয় এবং কয়েকটি দেশ সীমান্তে বেড়া দিয়ে দেয়৷
ছবি: Getty Images/J. Mitchell
বৈশ্বিক আতঙ্ক
এই ছবিটি গোটা বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছে৷ তিন বছর বয়সি সিরীয় শিশু আয়লান কুর্দির মরদেহ তুরস্কে সমুদ্রতটে ভেসে ওঠে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে৷ ছবিটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে এবং শরণার্থী সংকটের প্রতীকে পরিণত হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/DHA
বিশৃঙ্খলা এবং হতাশা
শেষ সময়ের ভিড়৷ ইউরোপে প্রবেশের রাস্তা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে শুনে ক্রোয়েশিয়াতে এভাবে ট্রেনে এবং বাসে উঠতে দেখা যায় অসংখ্য শরণার্থীকে৷ ২০১৫ সালের অক্টোবরে হাঙ্গেরি সীমান্ত বন্ধ করে দেয় এবং শরণার্থীদের জন্য কন্টেইনার ক্যাম্প তৈরি করে৷
ছবি: Getty Images/J. J. Mitchell
বিবেকবর্জিত সাংবাদিকতা
হাঙ্গেরির এক সাংবাদিক এক শরণার্থীকে ল্যাং মেরে ফেলে দেয়ার ভিডিও নিয়ে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে সমালোচনার ঝড় ওঠে৷ সার্বিয়ার সীমান্ত সংলগ্ন হাঙ্গেরির একটি এলাকার সেই ঘটনায় আলোচিত সাংবাদিকের চাকুরি চলে যায়৷
ছবি: Reuters/M. Djurica
উন্মুক্ত সীমান্ত নয়
২০১৬ সালের মার্চে বলকান রুট আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করে দেয়ার পর সীমান্তগুলোতে আরো আবেগপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়৷ হাজার হাজার শরণার্থী বিভিন্ন সীমান্তে আটকা পড়ে এবং তাদের সঙ্গে বর্বর আচরণের খবর পাওয়া যায় বিভিন্ন স্থান থেকে৷ অনেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এভাবে সীমান্ত পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করে৷
ধুলা এবং রক্তে ঢাকা এক শিশু৷ পাঁচবছর বয়সি ওমরানের এই ছবিটি প্রকাশ হয় ২০১৬ সালে৷ আয়লান কুর্দির ছবির মতো এই ছবিটিও গোটা বিশ্বকে আরেকবার নাড়িয়ে দেয়৷ সিরীয়ায় গৃহযুদ্ধ কতটা বিভৎস পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে এবং সিরীয়রা কতটা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে, তার এক প্রতীক হয়ে ওঠে ছবিটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Aleppo Media Center
অজানা নতুন ঠিকানা
গ্রিক-ম্যাসিডোনিয়া সীমান্তের ইডোমিনিতে নিজের মেয়েকে কোলে নিয়ে বৃষ্টির মধ্যে রাস্তায় হাঁটছেন এক সিরীয় নাগরিক৷ ইউরোপে তাঁর পরিবার নিরাপদ থাকবে, এমনটাই প্রত্যাশা ছিল তাঁর৷ ডাবলিন রেগুলেশন অনুযায়ী, একজন শরণার্থী প্রথম ইউরোপের যে দেশে প্রবেশ করেন, সে দেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করতে হবে৷ ফলে যারা আরো ভেতরে প্রবেশ করেছিলেন, তাদের অনেককে ফেরত পাঠানো হয়েছে৷
ছবি: Reuters/Y. Behrakis
সহযোগিতার আশা
বিপুল সংখ্যক শরণার্থী প্রবেশের কারণে জার্মানি অভিবাসন নীতি আরো কড়া করে ফেললেও এখনো শরণার্থীদের প্রথম পছন্দ জার্মানি৷ ইউরোপের আর কোনো দেশ জার্মানির মতো এত বিপুল সংখ্যক শরণার্থী নেয়নি৷ ২০১৫ সালে সঙ্কট শুরুর পর থেকে দেশটি ১২ লক্ষ শরণার্থী নিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Hoppe
ভূমধ্যসাগরে ডুবে মরা
ইউরোপে শরণার্থী প্রবেশের সংখ্যা চলতি বছর কমেছে, তবে থেমে যায়নি৷ বরং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে ডুবে মরছে অনেকে৷ বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা এবং সরকারের হিসেব অনুযায়ী, চলতি বছর এখন অবধি সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে মারা গেছে প্রায় দু’হাজার মানুষ৷ গতবছর এই সংখ্যা ছিল ৫ হাজার৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/E. Morenatti
10 ছবি1 | 10
সবশেষ জরিপ বলছে, ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় ওভিপি দলের প্রধান কুরৎস এগিয়ে আছেন৷ তিনি অনেক চরম ডানপন্থি সমর্থকদের দলে টানতে সমর্থ হয়েছেন৷
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে অস্ট্রিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিযুক্ত হন কুরৎস৷ তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ২৭৷
অতীতে অস্ট্রিয়ায় নির্বাচনি প্রচারণায় কর, অর্থনীতি, শিক্ষা এসব বিষয় প্রাধান্য পেলেও এবারের নির্বাচনে সেগুলো পেছনের সারির বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয়েছে৷ এবার প্রাধান্য পাচ্ছে অভিবাসন, শরণার্থী, ইসলামাইজেশন বিষয়গুলো৷
নির্বাচনি প্রচারণায় ওভিপি এবং এফপিও দলের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন রাজধানী ভিয়েনায় বসবাসরত ইরানি সমাজকর্মী মোহাম্মদ আমিনি৷ তিনি অভিযোগ করেন, রাজনীতিবিদরা বছর তিনেক ধরে আসা শরণার্থীদের সঙ্গে ইসলামিকরণের সংযোগ করছেন৷ কিন্তু সেটি ঠিক নয়৷ কারণ, ইসলামিকরণের সঙ্গে সেই সব মানুষ যুক্ত, যারা বহু বছর ধরে অস্ট্রিয়ায় আছেন এবং চাকরি, সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন৷ ‘‘পপুলিস্টদের সবসময় একটা ইস্যু দরকার৷ এখন সেটা ইসলাম,'' বলেন তিনি৷