গতবছর পহেলা অক্টোবরে অস্ট্রিয়ায় জনসমক্ষে পুরো মুখ ঢেকে চলাফেরার উপর নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত আইন কার্যকর হয়েছিল৷ মূলত মুসলমান নারীদের বোরকা পরা ঠেকাতে এই আইন করা হয়৷ কেমন কাটলো এক বছর?
বিজ্ঞাপন
বোরকার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে সেটি বৈষম্য হিসেবে দেখা হতে পারে, এই আশঙ্কায় অস্ট্রিয়ার তৎকালীন সরকার ‘অ্যান্টি-ফেস-কাভারিং অ্যাক্ট' শীর্ষক একটি নিরপেক্ষ আইন করেছিল৷ এর আওতায় পুরো মুখ ঢাকার বিষয়টি অবৈধ করা হয়৷
আইনটির প্রধান লক্ষ্য মুসলিম নারীরা হলেও অস্ট্রিয়ায় বসবাসকারী ঠিক কতসংখ্যক মুসলিম নারী বোরকা পরেন তার কোনো হিসেব কখনো প্রকাশ করা হয়নি৷ তবে সংখ্যাটি যে খুব বেশি নয়, তা পরবর্তীতে আইন বাস্তবায়নের পরিসংখ্যান থেকে বোঝা গেছে৷
রাজধানী ভিয়েনার পুলিশ বলছে, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে তাঁরা মাত্র ২০ জন আইনভঙ্গকারীকে জরিমানা করেছেন৷ দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পুরো দেশের পরিসংখ্যান দিতে অস্বীকার করেছে৷
ভিয়েনার ভিক্টর আডলার মার্কেটে একটি সসেজ বিক্রির দোকানের মালিক ফেসনা ডুডেক বলছেন, আইন বাস্তবায়নের আগে কয়েকজন বোরকাধারীকে দেখা যেতো, এখন সেটি নেই৷
যেসব দেশে বোরকা নিষিদ্ধ, যেখানে চলেছে আলোচনা
ইউরোপের বেশ কিছু দেশে বোরকা ও নেকাব নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ কিছু কিছু দেশে আবার পুরো মুখ ঢাকা বোরকা নিষিদ্ধ করা নিয়ে চলছে আলাপ-আলোচনা৷ প্রশ্ন উঠেছে, ধর্মীয় স্বাধীনতা না থাকায় এসব অঞ্চলে কি জঙ্গি তৎপরতা বাড়ছে?
ছবি: CLAUDE PARIS/AP/dapd
ফ্রান্স
ফ্রান্স ইউরোপের প্রথম দেশ, যেখানে বোরকা আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়৷ ফ্রান্সে ৫০ লাখ মুসলমানের বাস৷ ২০১১ সালের ১১ এপ্রিল এই আইন কার্যকর হয়৷ বোরকা বা নেকাব পড়লে জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে আইনে৷
ছবি: Getty Images
বেলজিয়াম
২০১১ সালের জুলাইয়ে বেলজিয়ামেও নেকাব নিষিদ্ধ হয়৷ অর্থাৎ কোনো নারী তার পুরো মুখ কাপড়ে ঢেকে রাখতে পারবে না৷
ছবি: AP
নেদারল্যান্ডস
নেদারল্যান্ডসে ২০১৫ সালে আইন করে বোরকা নিষিদ্ধ করা হয়৷ বিশেষ করে জনসমক্ষে, অর্থাৎ স্কুল, হাসপাতাল ইত্যাদির মতো জায়গায বোরকা ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে৷
ছবি: AP
স্পেন
পুরো স্পেনে নয়, বার্সেলোনা শহর কর্তৃপক্ষ সেখানে বোরকা নিষিদ্ধ করেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ব্রিটেন
ব্রিটেনে প্রচুর মুসলিমের বাস, তাই সেখানে কোনো ইসলামি পোশাকের ওপর নিষেধাজ্ঞা নেই৷ তবে স্কুলগুলোতে নির্দিষ্ট পোশাক পরতে হয়৷ ২০০৭ সালে বেশ কয়েকটি মামলার পর স্কুল কর্তৃপক্ষ ঠিক করে, স্কুলে কেউ বোরকা বা নেকাব পরতে পারবে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Jensen
সুইজারল্যান্ড
২০১৩ সালে সুইজারল্যান্ডের ইটালীয় ভাষাভাষীদের এলাকা টিসিনোতে বোরকা নিষিদ্ধের ওপর ভোট হয়৷ নিষিদ্ধ করার পক্ষে পড়ে ৬৫ শতাংশ ভোট৷ এরপর ২৬টি শহরে বোরকা নিষিদ্ধ হয়৷ চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে লুগানো, লোকারনো, মাগাদিনোসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় বোরকা নিষিদ্ধ হয়৷ কেউ জনসমক্ষে বোরকা পড়লে ৯ হাজার ২০০ ইউরো পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে তাঁর৷
ছবি: imago/Geisser
ইটালি
ইটালির বেশ কয়েকটি শহরে নেকাব নিষিদ্ধ৷ উত্তর পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর নোভারা কর্তৃপক্ষ সেখানে আইন করে বোরকা নিষিদ্ধ করেছে৷ ৭০-এর দশকেই মুখ ঢেকে রাখা সব ধরনের ইসলামিক পোশাকের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে ইটালি৷
ছবি: picture alliance/dpa/Rolf Haid
অস্ট্রিয়া
দেশটির ক্ষমতাসীন জোট সরকার প্রকাশ্য স্থানে পুরো মুখ ঢাকা নিকাব নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে একমত হয়েছে৷ স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালতে নিকাব পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে একমত হয়েছে সরকারের শরিক দলগুলোও৷ এছাড়া যাঁরা সরকারি চাকরি করেন, তাঁদের মাথায় স্কার্ফ, হিজাব কিংবা অন্যান্য ধর্মীয় প্রতীক পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথাও বিবেচনা করছে সরকার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Roessler
জার্মানি
জার্মানির রক্ষণশীল রাজনীতিকদের মধ্যে বোরকা নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে৷ সিডিইউ দলের একাধিক রাজনীতিক স্কুল, সরকারি অফিস, আদালতকক্ষ ও গাড়ি চালানোর সময় বোরকা ও গোটা মুখ ঢাকা নিকাব পরা নিষিদ্ধ করতে চান৷ সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, প্রায় তিন-চতুর্থাংশ জার্মানও প্রকাশ্যে বোরকাধারী মহিলাদের দেখতে নারাজ৷ এমনকি সম্প্রতি চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলও পুরো মুখ ঢাকা নিকাব নিষিদ্ধ করার পক্ষ তাঁর সায় দিয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Schuh
9 ছবি1 | 9
তবে আইন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ভিয়েনার পুলিশ একবার এক ইলেক্ট্রিক পণ্যের দোকানের কর্মীকে জরিমানা করেছিল৷ কারণ, ঐ কর্মী ‘শার্ক স্যুট' পরে ক্রেতাদের মধ্যে প্রচারপত্র বিতরণ করছিলেন৷ ঘটনাটি সেই সময় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও স্যাটায়ার প্রোগ্রামগুলোতে আলোচিত হয়েছিল৷
এছাড়া রাস্তায় গান করেন এমন শিল্পী, সাইকেল আরোহী যাঁরা মাথার কাপড়টি মুখের উপর একটু বেশিই টেনে দিয়েছিলেন, তাঁরাও ঐ আইনের কারণে পুলিশের হয়রানির শিকার হয়েছেন৷
আরেক আইনের খসড়া
এদিকে, অস্ট্রিয়ার নতুন সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কিন্ডারগার্টেনে হিজাব পরার উপর নিষেধাজ্ঞা জারির প্রস্তাব করেছে৷ যদিও ঐ বয়সের কোনো মেয়ে মাথায় হেডস্কার্ফ পরে কিনা, তার পরিসংখ্যান নেই৷ গত এপ্রিলে যখন এই আইনটি প্রস্তাব করা হয়, তখন দেশটির প্রধান মুসলিম সংগঠন উদ্বেগ জানিয়ে এর প্রতিবাদ করেছিল৷ তাঁরা বলেছিলেন, বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছানোর আগে সাধারণত মুসলিম মেয়েরা হেডস্কার্ফ পরে না৷ তবে সরকারের এই আইন মুসলিম সমাজে অস্থিরতা তৈরি করবে৷ তাঁরা প্রশ্ন তুলেছিলেন, খ্রিষ্টানদের ক্রস আর ইহুদিদের টুপি ‘কিপা'-র ক্ষেত্রে এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না কেন?
উল্লেখ্য, ভিয়েনা ইসলামিক ফেডারেশনের হিসেব অনুযায়ী, অস্ট্রিয়ায় প্রায় ছয় লাখ মুসলমান বাস করেন, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার সাত শতাংশ৷