প্রাথমিক স্কুলে মুসলমান মেয়েরা যাতে হিজাব বা অন্য কোনো মাথার কাপড় ব্যবহার করতে না পারে সেই লক্ষ্যে একটি আইন পাস করেছে অস্ট্রিয়া সরকার৷ তবে ইহুদিদের টুপি এবং শিখদের পাগড়ি এই আইনের আওতায় রাখা হয়নি৷
বিজ্ঞাপন
অস্ট্রিয়ার সংসদ প্রাথমিক স্কুলে মুসলমানদের হিজাব বা মাথার কাপড় নিষিদ্ধ করে এক আইন পাস করেছে৷ তবে এই আইনকে বৈষম্যমূলক হিসেবে বিবেচনা করে দেশটির সাংবিধানিক আদালতে সেটিকে চ্যালেঞ্জ করা হতে পারে৷
সংসদে বিলটির পক্ষে ভোট দেন দেশটির ক্ষমতাসীন মধ্য ডানপন্থি দল পিপল'স পার্টি এবং উগ্র ডানপন্থি ফ্রিডম পার্টির সদস্যরা৷ তবে, সংসদে বিরোধী দলের প্রায় সব সদস্য বিলটির বিপক্ষে ভোট দিয়েছিলেন৷
আইনটির লক্ষ্য শুধু মুসলমানরা নয় – এমন ধারণা দিতে সেটিতে লেখা হয়েছে, ‘‘যে-কোনো আদর্শগত বা ধর্মীয় প্রভাবান্বিত পোশাক, যা মাথা ঢেকে রাখার লক্ষ্যে ব্যবহার করা হয়’’ তা নিষিদ্ধ৷
বুরকিনি পরে বিকিনির ম্যাগাজিনে মুসলিম নারী
বিকিনিতে নারীর রূপ ফুটিয়ে তোলার জন্য অ্যামেরিকার বিখ্যাত ‘স্পোর্টস ইলাস্ট্রেটেড’ ম্যাগাজিন৷ ৬৫ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো হিজাব ও বুরকিনি পরা একজনকে মডেল করছে তারা৷
স্পোর্টস ইলাস্ট্রেটেড ম্যাগাজিন
অ্যামেরিকার খেলাধুলা বিষয়ক বিখ্যাত ম্যাগাজিন ‘স্পোর্টস ইলাস্ট্রেটেড’৷ বিকিনিতে নারীকে উপস্থাপনের জন্য যাদের বেশ খ্যাতি রয়েছে৷ ১৯৫৪ সালে প্রথম প্রকাশিত এই ম্যাগাজিনটির বর্তমান গ্রাহক সংখ্যা ত্রিশ লাখের মতো৷ তাদের এবারের বার্ষিক সুইমস্যুট সংখ্যা বের হচ্ছে ৮ মে৷
ছবি: picture-alliance/AP/Invision/E. Agostini
শরণার্থী ক্যাম্প থেকে বিশ্বমঞ্চে
মুসলিম নারী হালিমার জন্ম কেনিয়ার একটি শরণার্থী ক্যাম্পে৷ সাত বছর বয়সে অ্যামেরিকায় পাড়ি জমান তিনি৷ হিজাব পরে ২০১৬ সালের ‘মিস মিনেসোটা ইউএসএ’ আয়োজনে অংশ নিয়ে সংবাদের শিরোনাম হন হালিমা৷ ব্রিটিশ ম্যাগাজিন ভোগ-এর প্রচ্ছদেও স্থান হয়েছে তাঁর৷ হেঁটেছেন নিউ ইয়র্ক ফ্যাশন উইকের ব়্যাম্পে৷
ছবি: picture-alliance/MediaPunch/D. Corredor
‘বুরকিনিতেও ফুটতে পারে সৌন্দর্য’
বুরকিনিকে প্রচ্ছদে জায়গা দেয়ার ক্ষেত্রে পোশাকের চাইতে সৌন্দর্যকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলছে স্পোর্টস ইলাস্ট্রেটেড৷ ‘‘আমরা মনে করি, সৌন্দর্যের ভিত্তি অনেক বিস্তৃত ও বৈষয়িক৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারীরা দেখতে-শুনতে কেমন বা কী পরেছেন, সেটা দিয়ে বিবেচনা করা হয়৷ বুরকিনি কিংবা বিকিনি যা-ই পরুন না কেন, আপনি যদি আত্মপ্রত্যয়ী হন, তাহলে আপনি অবশ্যই অনেক মূল্যবান,’’ বলেছেন সুইমস্যুট সংখ্যার সম্পাদক এমজে ডে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/L. Pitarakis
‘নারীরা, সব কিছুই সম্ভব’
স্পোর্টস ইলাস্ট্রেটেড ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে জায়গা পেয়ে খুবই উচ্ছ্বসিত হালিমা আদেন৷ ‘‘নারীরা, সবকিছুই সম্ভব,’’ নিজের সাফল্যের খবর দিয়ে ইনস্ট্রাগ্রামে লিখেছেন তিনি৷ ‘‘স্পোর্টস ইলাস্ট্রেটেড-এ জায়গা পাওয়া আমার নিজের চেয়ে বড় কিছু৷ এটা আমার সম্প্রদায় ও বিশ্বকে এমন বার্তা দিচ্ছে যে, আমরা যেই পরিবেশ ও অবস্থান থেকে আসি না কেন, আমরা একসঙ্গে আসতে কিংবা যে কোনো উদযাপনে শামিল হতে পারি৷’’
ছবি: picture-alliance/Geisler-Fotopress
4 ছবি1 | 4
তবে বুধবার রাতে সরকারের তরফ থেকে এটাও জানানো হয়েছে যে, শিখদের পাগড়ি বা ইহুদিদের টুপি এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে না, কেননা আইনটিতে এমন মাথার কাপড়ের কথা বলা হয়েছে, যেটি সব চুল বা মাথার অধিকাংশ অংশ ঢেকে রাখে৷ এছাড়া চিকিৎসা সংক্রান্ত কারণে, কিংবা বৃষ্টি ও তুষারপাত থেকে বাঁচতে মাথা ঢেকে রাখতে কোনো বাধা নেই৷
প্রসঙ্গত, নিয়মিত ধর্মচর্চাকারী মুসলমান মেয়েরা সাধারণত বয়ঃসন্ধিকাল থেকে হিজাব বা হেডস্কার্ফ ব্যবহার করতে শুরু করে৷ এবং ক্ষমতাসীন দলের আইনপ্রণেতারা ইতোমধ্যে স্বীকার করেছেন যে, নতুন আইনটি মূলত মুসলমান মেয়েদের জন্যই প্রণয়ন করা হয়েছে৷
পিপল'স পার্টির আইনপ্রণেতা ব়্যুডল্ফ টাশনার ‘‘মেয়েদেরকে নতি স্বীকার করা থেকে মুক্ত করতে’’ এই আইন প্রণয়ন করা হয়েছে৷ আর ফ্রিডম পার্টির শিক্ষা বিষয়ক মুখপাত্র ভেন্ডিল্যান ম্যোলৎসার মনে করেন, এই আইনের মাধ্যমে রাজনৈতিক ইসলামের বিরুদ্ধে একটি বার্তা দেয়া হয়েছে এবং সমাজের মূলধারায় সবাইকে সম্পৃক্ত করাকে উৎসাহিত করা হয়েছে৷
তবে সাবেক সামাজিক গণতন্ত্রী দলের শিক্ষামন্ত্রী সোনিয়া হামার্স্মিড্থ সরকারের বিরুদ্ধে ইন্টিগ্রেশন বা শিক্ষাবিষয়ক প্রকৃত সমস্যা সমাধানের বদলে সংবাদ শিরোনামে যাওয়ার চেষ্টার অভিযোগ এনেছেন৷
উল্লেখ্য, অস্ট্রিয়ার আনুষ্ঠানিক মুসলিম কমিউনিটি অর্গানাইজেশন নতুন আইনটিকে ‘ধ্বংসাত্মক’ এবং শুধুমাত্র ‘মুসলমানদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক’ আখ্যা দিয়ে সেটির বিরুদ্ধে আইনি লড়াই পরিচালনার ঘোষণা দিয়েছে৷
এআই/এসিবি (এএফপি, ডিপিএ)
গতবছরের সেপ্টেম্বরের ছবিঘরটি দেখুন...
মিয়ানমারের হিজাব পরা এক ব্লগার
নাম উইন লে ফাইয়ু সিন৷ বয়স ১৯৷ রূপচর্চার বিষয়াদি নিয়ে তিনি ব্লগিং করেন৷ হিজাব পরা এই ব্লগার প্রায়ই সমালোচনা ও বৈষম্যের শিকার হন৷
ছবি: Reuters/A. Wang
মুসলিম ব্লগার
পাঁচ কোটি মানুষের দেশ মিয়ানমারে মুসলমান মাত্র পাঁচ শতাংশ৷ অনেকদিন ধরে তাঁরা সেখানে নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন৷ নতুন মসজিদ নির্মাণের অনুমতি পাচ্ছেন না৷ বৌদ্ধ বাড়িওয়ালাদের কাছ থেকে বাসা ভাড়া পেতেও তাঁদের সমস্যা হয়৷ তেমনি এক দেশে ব্লগার হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছেন হিজার পরা তরুণী উইন লে ফাইয়ু সিন৷
ছবি: Reuters/A. Wang
বিষয় রূপচর্চা
এই বিষয়ে ভিডিও ব্লগিং করেন সিন৷ রূপচর্চার নানা বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকেন তিনি৷ ব্লগার হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার পর একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্রও খুলেছেন৷ এখন পর্যন্ত প্রায় ৬০০ জন সেখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছে৷
ছবি: Reuters/A. Wang
যেভাবে শুরু
সিন জানান, হাইস্কুলে পড়াশোনা শেষ করার পর তাঁর ছেলেবন্ধু তাঁকে একদিন মেক-আপের কিছু পণ্য উপহার দিয়েছিল৷ কিন্তু সেগুলো ব্যবহারের নিয়ম তখনো তিনি জানতেন না৷ ফলে গুগলের সহায়তা নিয়ে সেসব বিষয়ে ধারণা নিয়েছিলেন তিনি৷ পরে অন্যদের সাহায্য করতে মেক-আপ বিষয়ে পরামর্শমূলক একটি ভিডিও তৈরি করে ফেসবুকে আপলোড করেছিলেন৷ সেই থেকে শুরু৷
ছবি: Reuters/A. Wang
অনুসারী বাড়ছে
সিনের ফেসবুক পাতায়ও অনুসারীর সংখ্য প্রায় ছয় হাজার৷ এবং তা দিন দিন বাড়ছে৷ সম্প্রতি রূপচর্চা বিষয়ক পণ্যের এক অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন তিনি৷ রূপচর্চা নিয়ে ব্লগ করা অন্য ব্লগাররাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন৷ ঐ অনুষ্ঠানে হিজাব পরা ও সারা শরীর ঢাকা সিনের পোশাক আলোচিত হয়েছিল৷
ছবি: Reuters/A. Wang
‘হিজাব চাবির মতো’
হিজাব পরা নিয়ে সিনের কোনো সংকোচ নেই৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের আল্লাহ আমার জন্য অনেক রাস্তা খুলে দিয়েছেন৷ হিজাব আমার কাছে চাবির মতো৷ এটা ব্যবহার করে আমি যেখানে ইচ্ছা যেতে পারি, যা ইচ্ছা করতে পারি৷’’
ছবি: Reuters/A. Wang
সমালোচনা
ফেসবুকে অনেক সমালোচনামূলক মন্তব্য পান তিনি৷ কারণ, রক্ষণশীল মুসলমানদের কাছে মেক-আপ বিষয়টি ট্যাবু হিসেবে বিবেচিত৷ কিন্তু সিন এসব সমালোচনার জবাব দেন না৷ কারণ, এটা তাঁর কাছে শুধু সময়ের অপচয় মনে হয়৷ ‘‘আমার অনেক কাজ,’’ বলেন তিনি৷ ছবিতে সিনকে (ডানে) অন্য ব্লগারদের সঙ্গে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters/A. Wang
বৈষম্যের শিকার
একবার এক বৌদ্ধ নারী যখন জানতে পারেন সিন একজন মুসলিম, তখন তিনি তাঁর (সিন) রূপচর্চার ক্লাস থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন৷ ছবিতে সিনকে পাঠদান শেষে বাড়ি ফিরতে দেখা যাচ্ছে৷