২০২১ সাল থেকে নতুন করে বাজছে অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সংগীত৷ আদিবাসীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে পরিবর্তন আনা হয়েছে দেড়শ বছরের পুরানো গানে৷
বিজ্ঞাপন
অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সংগীতের দ্বিতীয় বাক্যটি ছিল ‘আমরা তরুণ ও মুক্ত’৷ পরিবর্তনের ফলে এখন থেকে গাওয়া হবে ‘আমরা এক ও মুক্ত’৷
প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন বলেন, ‘‘জাতি হিসেবে তুলনামূলক নবীন হলেও দেশের ফার্স্ট নেশসনসদের (আদিবাসীদের) সাথে জড়িত আমাদের রয়েছে এক প্রাচীন ইতিহাস৷ এ পরিবর্তনের ফলে তেমন কিছুই হবে না আবার অনেক কিছুই হবে বলে আমি বিশ্বাস করি৷’’
১৭৮৮ সালে প্রথম ব্রিটেনের জাহাজ অস্ট্রেলিয়ার উপকূলে নোঙ্গর করে৷ যার মধ্য দিয়ে পরবর্তীতে নবীন এই রাষ্ট্রের উত্থান ঘটলেও সেখানে আদিবাসীদের বসবাসের ইতিহাস ৬৫ হাজার বছরের৷
আদিবাসীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সংগীতে পরিবর্তন আনার দাবি ছিল অনেক দিন থেকেই৷ কিন্তু ডানপন্থী রাজনীতিকদের বিরোধিতায় এ পরিবর্তন এতদিন সম্ভব হয়নি৷
অস্ট্রেলিয়াতে আদিবাসীরা নানাভাবেই সামাজিক বৈষম্যের শিকার৷ আদিবাসী শিশু মৃত্যুর হার দেশটিতে বাস করা অন্য জাতিগোষ্ঠীর দ্বিগুণ৷ তাছাড়া গত তিন দশকে চারশ' আদিবাসী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক অবস্থায় মারা গেছেন৷
আরআর/এফএস (এএফপি, এপি)
আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি...
দেশাত্মবোধে উজ্জীবিত কোনো গানকে রাষ্ট্র আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিলে জাতীয় সংগীত বলা হয়৷ বিশ্বের প্রতিটি দেশের জাতীয় সংগীতের সঙ্গে আছে সেই দেশের সংগ্রাম, আত্মত্যাগ আর গৌরবগাঁথা৷ আমাদের জাতীয় সংগীতেরও আছে বর্ণাঢ্য অধ্যায়৷
ছবি: Reuters
ইতিহাসের পথ ধরে
এক ডাক হরকরার কণ্ঠে ‘আমি কোথায় পাবো তারে‘ গানটি শুনেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর৷ ফকির লালন সাঁইয়ের ভাবশিষ্য গগন হরকরার গানটি মনে ধরে তাঁর৷ ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে ‘আমার সোনার বাংলা‘সহ বাউল সুরে কিছু গান লেখেন কবি৷ সে বছর ৭ আগস্ট বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে কলকাতার টাউনহলে গানটি প্রথম গাওয়া হয়৷ ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল কুষ্টিয়ার আম্রকাননে বাংলাদেশ সরকার গঠনের সময় গানটিকে জাতীয় সঙ্গীতের মর্যাদা দেয়া হয়।
জাতীয় সংগীতের আদবকেতা
১৯৭৮ সালে জাতীয় সংগীত বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়। বিধিমালা মেনে সঠিক উচ্চারণে ও শুদ্ধ সুরে গাইতে হবে জাতীয় সংগীত৷ গাওয়ার সময় দেখাতে হবে যথাযথ সম্মান৷ জাতীয় সংগীত বাজানো ও জাতীয় পতাকা প্রদর্শনের সময়, সমবেত সকলকে জাতীয় পতাকার দিকে মুখ করে দাঁড়াতে হবে। জাতীয় সংগীত গাইতে হবে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে। এর পুরোটা সব অনুষ্ঠানে গাওয়ার নিয়ম নেই। জাতীয় দিবসে অনুষ্ঠানের শুরু ও শেষের সঙ্গে সঙ্গে পূর্ণ সংগীত বাজাতে হবে।
ছবি: DW/M. Mamun
অবিনশ্বর কবিগুরু
বিশ্বে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একমাত্র কবি, যিনি বাংলাদেশ আর ভারত-দুটি দেশের জাতীয় সংগীত রচনা করেছেন৷ ১৯১১ সালে প্রকাশিত ‘জনগণমন অধিনায়ক‘-গানটি মূলত ব্রহ্মসঙ্গীত৷ ১৯৩৭ সালের ২৮ অক্টোবর এটিকে জাতীয় স্বীকৃতি দেয় কংগ্রেস৷ স্বাধীনতার পর গানের প্রথম স্তবকটি ভারতের জাতীয় সঙ্গীতের সম্মাননা পায়। শ্রীলঙ্কার জাতীয় সংগীতের সুর করেছেন রবীন্দ্রনাথ৷ তাঁর অনুপ্রেরণায় ‘শ্রীলঙ্কা মাতা’ গানটি লিখেছেন আনন্দ সামারাকুন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মানব পতাকা
২০১৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর৷ জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে ঠায় দাঁড়িয়ে ২৭ হাজার ১১৭ জন। সবার হাতে একখণ্ড বাংলাদেশ। চারদিকে সবুজ আর মাঝে লাল। লাল-সবুজ মিলেমিশে রূপ নিল একটি জাতীয় পতাকায়। এদিন বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানব পতাকা তৈরি করা হয়৷ ২০১৪ সালের ৪ জানুয়ারি স্বীকৃতি দেয় গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস৷ ঠিক পরের বছর ভারতের চেন্নাইতে ৪৩ হাজার ৮৩০ জন মিলে তৈরি করে মানব পতাকা৷
ছবি: Reuters
মুখে মুখে জাতীয় কবি
জাতীয় কবির নাম বললে, উচ্চারিত হয় কাজী নজরুল ইসলাম৷ কিন্তু সরকারের দলিলপত্রে জাতীয় কবি হিসেবে তাঁর নাম কোথাও নেই। জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় আয়োজনে তাঁকেই জাতীয় কবি হিসেবে অভিহিত করা হয়৷ তবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, জাতীয় আর্কাইভ, নজরুল ইনস্টিটিউট ও বাংলা একাডেমির কোথাও মেলেনি সরকারি কোনো প্রজ্ঞাপন বা অন্য কোনো দলিল৷
ছবি: Harun Ur Rashid Swapan
বিশ্বের প্রাচীন জাতীয় সংগীত
ইতিহাস বলছে, নেদারল্যান্ডের জাতীয় সংগীতই বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন জাতীয় সংগীত৷ ‘ভিলহেলমাস ফান নাসাওয়ে’ শিরোনামের এই গানটি ‘ভিলহেলমাস’ নামেই বেশি পরিচিত৷ যার অর্থ ‘উইলিয়াম’৷ ১৫৭২ সাল থেকে ডাচদের বীরত্বের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে এটি৷ ১৯৩২ সাল থেকে এই গানটিকে দেশটির জাতীয় সংগীতের মর্যাদা দেয়া হয়৷ এর আগে এটি ডাচ জাগরণের প্রতীক৷
ছবি: PATRIK STOLLARZ/AFP/Getty Images
বৈচিত্র্যময় জাতীয় সংগীত
উরুগুয়ের জাতীয় সংগীত বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ৷ এটিতে স্তবক সংখ্যা ১৫৮৷ কলম্বিয়া, সেনেগাল, বেলজিয়াম, ইকুয়েডর-এই দেশগুলোর জাতীয় সংগীত রচয়িতা তাঁদের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অথবা রাষ্ট্রপতি৷ দুনিয়ার সবচেয়ে পুরনো শব্দের সন্ধান পাওয়া যায় জাপানের জাতীয় সংগীতে৷ মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশের জাতীয় সংগীতে নেই কোনো শব্দ৷ শুধু আছে তূর্যনিনাদ৷
ছবি: Reuters/G. Garanich
7 ছবি1 | 7
জাতীয় সংগীতে পরিবর্তন আনা কয়েকটি দেশ
লিঙ্গবৈষম্য থেকে শুরু করে ভাবমূর্তি পরিবর্তন – এ সব নানা কারণে বিভিন্ন দেশ তাদের জাতীয় সংগীতে পরিবর্তন এনেছে৷ সম্প্রতি জার্মানিতেও জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের প্রস্তাব উঠেছে৷
ছবি: Reuters/D. Gray
অস্ট্রেলিয়া
প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের ঘোষণার পর ২০২১ এর ১ জানুয়ারি থেকে অস্ট্রেলিয়ানরা তাঁদের জাতীয় সংগীতের একটি ভিন্ন সংস্করণ গাইবেন৷ জাতীয় সংগীতে অস্ট্রেলিয়াকে আর ‘ইয়াং অ্যান্ড ফ্রি’ হিসেবে অভিহিত করা হবে না৷ আদিবাসীদের সুদীর্ঘ ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রতিফলন ঘটানোর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এই পরিবর্তন৷
ছবি: Reuters/D. Gray
জার্মানি
দেশটির সমতা বিষয়ক কমিশনার ক্রিস্টিন রোজে-ম্যোরিং জাতীয় সংগীতে আরও বেশি লিঙ্গ সমতা আনার প্রস্তাব করেছেন৷ তিনি গানের যে অংশে ‘ফাটারলান্ড’ অর্থাৎ ‘পিতৃভূমি’ বলা হচ্ছে, সেখানে ‘হাইমাট’ অর্থাৎ ‘জন্মভূমি’ লেখার প্রস্তাব দিয়েছেন৷ তবে চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলসহ অনেকে মনে করছেন, জাতীয় সংগীতে পরিবর্তন আনার প্রয়োজন নেই৷
ছবি: Getty Images/S. Gallup
অস্ট্রিয়া
২০১২ সালে অস্ট্রিয়ার জাতীয় সংগীতে ‘ছেলেরা’-র জায়গায় ‘মেয়েরা এবং ছেলেরা’ লেখা হয়৷ উদ্দেশ্য লিঙ্গ সমতা আনা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D.l Karmann
ক্যানাডা
উত্তর অ্যামেরিকার এই দেশটিও সম্প্রতি তাদের জাতীয় সংগীতকে আরও লিঙ্গ নিরপেক্ষ করেছে৷ সংগীতের দ্বিতীয় লাইনে ‘তোমার সব ছেলেরা’-র জায়গায় ‘আমরা সবাই’ লেখা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/K. Djansezian
নেপাল
২০০৮ সালে নেপালে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হয়৷ তার আগের বছর নেপালে নতুন একটি গানকে জাতীয় সংগীতের স্বীকৃতি দেয়া হয়৷ ১৯৬২ সালে গ্রহণ করা নেপালের আগের জাতীয় সংগীতে রাজতন্ত্রের প্রশংসা ছিল৷ তাই এতে পরিবর্তন আনা হয়৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
আফগানিস্তান
দেশটিতে বেশ কয়েকবার জাতীয় সংগীতে পরিবর্তন আনা হয়৷ তালেবান শাসনামলে আফগানিস্তানে কোনো জাতীয় সংগীতই ছিল না৷ তালেবানের পতনের পর ২০০২ সালে পুরনো জাতীয় সংগীতকে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল৷ পরে ২০০৬ সালে তৎকালীন কারজাই সরকার সবকিছু নতুন করে শুরু করতে জাতীয় সংগীতও পরিবর্তন করে৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Marai
রুয়ান্ডা
আফ্রিকার এই দেশটির কথা উঠলেই গণহত্যার কথা মনে পড়ে৷ ১৯৯৪ সালে মাত্র একশ দিনের মধ্যে সে দেশে পাঁচ থেকে ১০ লক্ষ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল৷ গণহত্যা পরবর্তী রুয়ান্ডার ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে দেশটি ২০০১ সালে একটি নতুন জাতীয় সংগীত বেছে নেয়৷
ছবি: Carl Court/AFP/Getty Images
দক্ষিণ আফ্রিকা
দেশটি ১৯৯৭ সালে আগের দু’টি জাতীয় সংগীত থেকে কিছু অংশ নিয়ে নতুন একটি জাতীয় সংগীত তৈরি করে৷ আফ্রিকান্স ও ইংরেজি ভাষায় গানটি রচিত৷ তবে আফ্রিকান্স ভাষার অংশটি বর্ণবাদ আমলে ব্যবহৃত জাতীয় সংগীতের অংশ হওয়ায় এর সমালোচনা করেন অনেকে৷ নেলসন ম্যান্ডেলা সেটি রিকনসিলিয়েটরি ব্যবস্থা হিসেবে বর্ণবাদ-পরবর্তী দক্ষিণ আফ্রিকার সংগীত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন৷
ছবি: Reuters/Mike Theiler
রাশিয়া
ভ্লাদিমির পুটিন ২০০০ সালে রুশ প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর ১৯৯০ সালের আগে ব্যবহৃত জাতীয় সংগীত ফিরিয়ে আনেন৷ তবে গানের কথায় কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়৷ ১৯৯০ সালে যে জাতীয় সংগীত গ্রহণ করা হয়েছিল তাতে কোনো কথা না থাকায় আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া অ্যাথলিটরা এর সমালোচনা করেছিলেন৷ তাঁদের বক্তব্য ছিল, কথাবিহীন গান তাঁদের নাকি উদ্বুদ্ধ করতে পারেনি৷