1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে ইংল্যান্ডের বিদায়

রাহেনুর ইসলাম
৪ নভেম্বর ২০২৩

বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়ে এসে গ্রুপ পর্বেই বাদ পড়ল ইংল্যান্ড৷ ৩৩ রানে হেরে বাংলাদেশের পর দ্বিতীয় দল হিসাবে সেমিফাইনালের লড়াই থেকে ছিটকে পড়েল জস বাটলারের দল৷

Indien ICC-Cricket-WM-Spiel Australien v England
ছবি: Mahesh Kumar A./AP/picture alliance

ইংল্যান্ড এবার খাঁচাবন্দী সিংহ৷ ছয় ম্যাচ শেষে বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা ছিল পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে৷ আজ চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৩৩ রানে হেরে তলিয়ে গেল আরও অতলে৷ বাংলাদেশের পর দ্বিতীয় দল হিসাবে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল থেকে ছিটকে গেল ইংল্যান্ড৷

চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়াকে সামনে পেলে জেগে উঠে ইংলিশ অহমিকা৷ ম্যাচের আগের দিন সেটা স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন বেন স্টোকস৷  তারা লড়াইও করেছে ঠিক৷ তবে জয়ের জন্য যথেষ্ট ছিল না সেটা৷ অস্ট্রেলিয়ার ২৮৬ রানের জবাবে প্রথম বলেই উইকেট হারানো ইংল্যান্ড অলআউট ২৫৩ রানে৷ অ্যাডাম জাম্পার শিকার ৩ উইকেট৷ এবারের বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ১৯ উইকেট এখন এই লেগ স্পিনারের৷

শুরুতে ধাক্কা খেলেও প্রবল দাপটে ঘুরে দাঁড়ানো অস্ট্রেলিয়া এ নিয়ে জিতল টানা পাঁচ ম্যাচ৷ সাত ম্যাচ শেষে ১০ পয়েন্ট নিয়ে সেমিফাইনালে একটা পা দিয়ে রেখেছে তারা৷ ইংল্যান্ডের সেমিফাইনাল খেলার অঙ্ক ছিল শুধু কাগজে কলমে৷ আজকের হারে শেষ হল সেটাও৷

সাত ম্যাচে তাদের পয়েন্ট ২৷ বাংলাদেরশরও পয়েন্ট ২৷ তবে নেট রান রেটে পিছিয়ে থাকায় ইংল্যান্ড ১০ ও বাংলাদেশ আছে ৯ নম্বরে৷ এই দুই দলের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলার সম্ভাবনাও ঝুলছে অনিশ্চয়তার সূতোয়৷

২৮৬ রানের জবাবে ইংল্যান্ড উইকেট হারায় প্রথম বলেই৷ মিচেল স্টার্কের লেগ সাইডের বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে উইকেটরক্ষক জশ ইংলিশকে ক্যাচ দেন জনি বেয়ারস্টো৷ ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ওপেনার হিসাবে বিশ্বকাপে প্রথম বলে আউট হলেন তিনি৷ বেয়ারস্টোর আগে ১৯৯২ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম বলে আউট হয়েছিলেন গ্রাহাম গুচ৷

ছন্দ হারানো জো রুট ১ রানে জীবন পেয়েছিলেন কভারে মার্কাস স্টোয়নিস ক্যাচ ছাড়লে৷ তবে এটা কাজে লাগাতে পারেননি৷ ১৩ রানে স্টার্কের বলেই উইকেটের পেছনে জশ ইংলিশকে ক্যাচ দেন তিনি৷ কেউ আপিল না করলেও মার্নাস লাবুশানের চাওয়ায় রিভিউ নিয়ে উইকেটটা পায় অস্ট্রেলিয়া৷২০১৯ বিশ্বকাপের পর এ নিয়ে ১৯ ইনিংসে ১২ বারই প্রথম ১০ ওভারে আউট হলেন রুট৷

দ্রুত দুই উইকেট হারানোর পর হাল ধরেন বেন স্টোকস ও ডেভিড মালান৷ তৃতীয় উইকেটে দুজন গড়েন ৮৪ রানের জুটি৷ কিন্তু ফিফটির পর ইনিংসটা বড় করতে পারেননি মালান৷ প্যাট কামিন্সের অফস্টাম্পের বাইরের বল তাড়া করতে যেয়ে লং লেগে ধরা পড়েন ট্রাভিস হেডের হাতে৷ শেষ হয় ৬৪ বলে ৪ বাউন্ডারি ১ ছক্কায় ৫০ রানের ইনিংসটির৷

ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচে ৩ উইকেট অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডাম জাম্পা৷ এবারের বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ১৯ উইকেট এখন এই লেগ স্পিনারের৷ছবি: Ajit Solanki/AP/picture alliance

চোটের জন্য শুরুতে বেঞ্চে বসা বেন স্টোকস একাদশে ফিরলেও এতদিন মেলে ধরতে পারেননি নিজেকে৷ তাঁর আগের তিনটি ইনিংস ০, ৪৩ ও ৫৷ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে তিনটি সিংহের প্রতীক বুকে চেপে খেলার গর্বের কথা সতীর্থদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন স্টোকস৷ সেই তিনি আজ বিপর্যয়ের মুখে ৬৪ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচে রেখেছিলেন ইংল্যান্ডকে৷

গত বছর জুলাইয়ে ওয়ানডে থেকে অবসরের পর স্টোকস ফিরেছেন মাস দুয়েক আগে৷ প্রথম সিরিজে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওভালে খেলেছিলেন ১২৪ বলে ১৮২ রানের ইনিংস, যা তাঁর ক্যারিয়ার সেরা৷ আজকের ৯০ বলে ২ বাউন্ডারি ৩ ছক্কার ইনিংসটিতেও জাত চিনিয়েছেন নিজের৷ অ্যাডাম জাম্পার বলে সুইপ করতে যেয়ে শর্ট ফাইন লেগে মার্কাস স্টোয়নিসকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি৷

এর আগে অধিনায়ক জস বাটলার (৭ বলে ১) বিলিয়েই দিয়ে এসেছেন নিজের উইকেট৷ অ্যাডাম জাম্পার বল ডাউন দ্য উইকেটে এসে ক্যাচ তুলে দেন লংঅফে ক্যামেরন গ্রিনকে৷ ৩০ ওভার শেষে ইংল্যান্ডের রান ছিল ৪ উইকেটে ১২৮৷ শেষ ২০ ওভারে দরকার ছিল ১৫৯৷ জয়ের জন্য তাই মহাকাব্যিক কিছু একটা করতে হত কাউকে৷ স্টোকস চেষ্টা করলেও পারেননি৷ তিনি আউট হওয়ার পর কেউ হাল ধরতে পারেননি আর৷ মঈন আলির ৪২ ও ক্রিস ওকসের ৩২ রানের ইনিংসটা হারের ব্যবধানই কমিয়েছে শুধু৷

অস্ট্রেলিয়ার জন্য বড় ধাক্বা ছিল ফর্মের তুঙ্গে থাকা গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও মিচেল মার্শকে না পাওয়া৷ ম্যাক্সওয়েল পড়েছেন ইনজুরিতে৷ আর ব্যক্তিগত কাজে দেশে ফিরে গেছেন মার্শ৷ হুট করে ১৩ জনের দল হয়ে যাওয়ায় বিশ্বকাপে খেলোয়াড় বাড়ানোর পরামর্শ দেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স৷ ‘‘অবশ্যই দুই মাসের এই টুর্নামেন্টে ১৫ জনের বেশি খেলোয়াড় থাকা উচিত (ফুটবলে যেমন থাকে ২৬ জন)৷ কেউ ইনজুরিতে পড়লে আমরা তো অন্য দল থেকে ক্রিকেটার নিতে পারি না৷'' কামিন্সের এই আবেদন পৌঁছাবে কি আইসিসির কর্তাদের কানে?

মর্যাদার ম্যাচটিতে দ্বিতীয় ওভারে ট্রাভিস হেডকে ফেরান ওকস৷ ১০ বলে ১১ করা হেড স্লিপে ক্যাচ দেন জো রুটকে৷ চোট কাটিয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে একটাই ম্যাচ খেলেছিলেন হেড৷ ১০৯ রানের ইনিংসে হয়েছিলেন ম্যাচ সেরা৷ তবে আজ ব্যাট হাসেনি তার৷

রান পাননি ডেভিড ওয়ার্নারও৷ এই ওপেনারের সর্বশেষ ৩টি ইনিংস ৮১, ১০৪ ও ১৬৩৷ তবে আজ ওকসের বলে মিডউইকেটে ডেভিড উইলিকে ক্যাচ দেন ১৫ করে৷ ষষ্ঠ ওভারে ওকসের দ্বিতীয় বলটা মেরেছিলেন ছক্কা৷ কিন্তু স্লোয়ার অফ কাটার চতুর্থ বলে একই শট খেলতে গিয়ে তুলে দেন আকাশে৷ মিডউইকেটে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে ক্যাচটা নেন উইলি৷

বিস্ফোরক দুই ওপেনারকে হারিয়ে প্রথম ১০ ওভারে ২ উইকেটে ৪৮ করেছিল অস্ট্রেলিয়া৷ স্টিভেন স্মিথ ও মার্নাস লাবুশানে ধাক্কাটা সামলে মনযোগ দেন ইনিংস গড়ায়৷ তৃতীয় উইকেটে দুজন গড়েন ৭৫ রানের জুটি৷ আদিল রশিদের ঘূর্ণিতে ভাঙে জুটিটা৷ কাট করতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে মঈন আলিকে ক্যাচ দেন ৫২ বলে ৪৪ করা স্মিথ৷

এনিয়ে রশিদের বলে ওয়ানডেতে সাতবার আউট হলেন স্মিথ৷ আর কোনো বোলার এই ফরম্যাটে এত বেশিবার আউট করতে পারেননি তাঁকে৷ এবারের বিশ্বকাপে স্মিথ পাঁচবার আউট হয়েছেন স্পিনারদের বলে৷

পরের ওভারে আবারও রশিদের ছোবল৷ এবার তার শিকার জশ ইংলিশ (৩ রান)৷ ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে মঈন আলিকে ক্যাচিং অনুশীলনই যেন করিয়েছেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান৷

বিপর্যয়ের মুখে ৬৪ রানের ইনিংস খেলে ইংল্যান্ডকে ম্যাচে ধরে রাখার চেষ্টা করেন বেন স্টোকস৷ছবি: Mahesh Kumar A./AP/picture alliance

এরপর মার্নাস লাবুশানে ও ক্যামেরন গ্রিনের ৬১ রানের জুটিতে বড় স্কোরের ভিত পেয়েছিল অস্ট্রেলিয়া৷ ৪০ ওভারে স্কোর ছিল ৫ উইকেটে ২২০৷ তবে নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে স্কোরটা ধরা ছোঁয়ার বাইরে যেতে দেননি ইংলিশ বোলাররা৷  শেষ দিকে অ্যাডাম জাম্পার ১৯ বলে ২৯-এ অস্ট্রেলিয়া থামে ২৮৬ রানে৷ শেষ ওভারে ক্রিস ওকস ফেরান জাম্পা ও মিচেল স্টার্ককে৷

এবারের বিশ্বকাপে নিজের সর্বোচ্চ ৭১ রানের ইনিংস খেলে মার্ক উডের বলে এলবিডাব্লিউ হন লাবুশানে৷ ৮৩ বলে ৭ বাউন্ডারিতে সাজিয়েছিলেন ইনিংসটা৷ বিশ্বকাপে এটা তাঁর দ্বিতীয় ফিফটি৷ ৪৭ করা গ্রিনকে বোল্ড করেন ডেভিড উইলি৷ মার্কাস স্টয়নিস চড়াও হলেও বড় করতে পারেননি স্কোরটা৷ ৩২ বলে ৩ বাউন্ডারি ২ ছক্কায় ফেরেন ৩৫ রানে৷ লিয়াম লিভিংস্টোনকে তুলে মারতে যেয়ে ডিপ মিডউইকেটে ক্যাচ দেন জনি বেয়ারস্টোকে৷

গত বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের দেখা হয়েছিল দু'বার৷ লর্ডসে গ্রুপ পর্বে ৪৬ রানে ২ উইকেট নিয়েছিলেন ক্রিস ওকস৷ এরপর এজবাস্টনে সেমিফাইনালে নেন ২০ রানে ৩ উইকেট৷ আজ আহমেদাবাদে সেই ওকস নিয়েছেন ৪ উইকেট৷ ২০১৯ সালে সেমিফাইনালে ওকস ইংল্যান্ডকে জেতালেও পারলেন না আজ৷ উল্টো চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিদায় করে মধুর প্রুতিশোধই নিল অস্ট্রেলিয়া৷

সংক্ষিপ্ত স্কোর

অস্ট্রেলিয়া ৪৯.৩  ওভারে ২৮৬/১০ (লাবুশানে ৭১, গ্রিন ৪৭, স্মিথ ৪৪ ; ওকস ৪/৫৪,রশিদ ২/৩৮)

ইংল্যান্ড ৪৮.১ ওভারে ২৫৩/১০ (স্টোকস ৬৪,মালান ৫০,মঈন ৪২ ; জাম্পা ৩/২১, কামিন্স ২/৪৯)

ফল : অস্ট্রেলিয়া ৩৩ রানে জয়ী

ম্যাচ সেরা : অ্যাডাম জাম্পা

রাহেনুর ইসলাম সাংবাদিক
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ