ইটালির কারখানায় অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানোর জন্য অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা তৈরি হচ্ছিল। তা রপ্তানি করতে দেয়নি ইটালির সরকার।
বিজ্ঞাপন
অস্ট্রেলিয়ার জন্য তৈরি কোভিড ভ্যাকসিন আটকে দিল ইটালি। ইটালিকে সমর্থন করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এর ফলে অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি দুই লাখ ৫০ হাজার করোনা ভ্যাকসিন পেল না অস্ট্রেলিয়া।
বৃহস্পতিবার ইটালির সদ্য নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, দেশের কারখানায় তৈরি হওয়া অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছিল। কিন্তু সরকার তা রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এর কারণ, অ্যাস্ট্রাজেনেকা ইউরোপীয় ইউনিয়নকে যে পরিমাণ টিকা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল, তার অর্ধেক টিকা এখনো পর্যন্ত দিতে পেরেছে। শুধু তাই নয়, সম্প্রতি অ্যাস্ট্রাজেনেকা জানিয়েছে, বছরের দ্বিতীয় কোয়ার্টারে মোট টিকার অর্ধেকের বেশি তারা দিতে পারবে না। এর কারণ, যে পরিমাণ কাঁচা মাল প্রয়োজন ছিল, তা সংগ্রহ করা যায়নি।
প্রশ্ন-উত্তরে করোনার টিকা
করোনার টিকা কি হালাল, শিশু ও গর্ভবতীরা কি টিকা নিতে পারবে, টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কি, কতদিন স্বাস্থ্য়বিধি মানতে হবে- এমন সব প্রশ্নের উত্তর থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: Leon Neal/Getty Images
কতগুলো টিকা অনুমোদন পেয়েছে
ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন বায়োনটেক-ফাইজার, মডার্না ও অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা, এই তিন টিকার অনুমোদন দিয়েছে৷ এর বাইরে রাশিয়া স্পুটনিক ৫ ও চীন সিনোভ্যাক টিকার অনুমোদন দিয়েছে৷
ছবি: Sven Hoppe/dpa/picture alliance
পার্থক্য
বায়োনটেক-ফাইজার ও মডার্নার টিকা হচ্ছে এমআরএনএ টিকা৷ মডার্নার টিকা ঘরের রেফ্রিজারেটরে সর্বোচ্চ ৩০ দিন পর্যন্ত রাখা যায়৷ বায়োনটেক-ফাইজারের টিকার মতো মডার্নার টিকাকে পরিবহনের সময় মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখতে হয় না৷ আর অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাটি ভেক্টর ভাইরাস টিকা, যা সাধারণ রেফ্রিজারেটরে রাখা যায়৷
ছবি: ULMER Pressebildagentur/picture alliance
দ্বিতীয় ডোজে অন্য টিকা?
তিনটি টিকার ক্ষেত্রেই দুটো করে ডোজ দিতে হয় এবং ডোজ দুটো একই টিকার হতে হবে৷ কারণ দুই ডোজে দুই ধরনের টিকা নিলে কী হতে পারে সে বিষয়ে এখনও কোনো তথ্য নেই৷
ছবি: TASR/dpa/picture alliance
করোনা হলেও টিকা নিতে হবে?
হ্যাঁ, নেয়া ভালো৷ কারণ একবার সংক্রমিত হলে পরে আর হবে না, এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই৷
ছবি: Abdesslam Mirdass/Hans Lucas/imago images
কী অবস্থায় টিকা নেয়া যাবেনা?
করোনায় আক্রান্ত অবস্থায় এবং সাধারণ সর্দি, কাশি ও জ্বর থাকলে সেই সময় টিকা নেয়া যাবে না৷ কোয়ারান্টিনে থাকার সময়ও টিকা নেয়া যাবে না৷ যাদের কোনো বিষয়ে অ্যালার্জি আছে তাদের বেশিরভাগই টিকা নিতে পারবেন৷
ছবি: Markus Schreiber/AP Photo/picture alliance
শিশুদের টিকা?
টিকাগুলো ১৬ বছর বা তার বেশি বয়সিদের দেয়ার জন্য অনুমোদন পেয়েছে৷ শিশুদের টিকা দেয়ার বিষয়ে গবেষণা চলছে বলে জানিয়েছে জার্মানির রবার্ট কখ ইনস্টিটিউট৷
ছবি: Getty Images/S. Gallup
গর্ভবতীরা টিকা নিতে পারবেন?
‘জার্মান স্ট্যান্ডিং কমিশন অন ভ্য়াকসিনেশন’ বা স্টিকো গর্ভবতীদের টিকা নেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেনা৷ আবার না-ও করছেনা৷ তবে গর্ভবতী মায়েদের মধ্যে যাদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে তারা ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে ঝুঁকি-লাভ বিবেচনা করে টিকা নিতে পারেন বলে জানিয়েছে স্টিকো৷ এদিকে, এমআরএনএ টিকা গর্ভবতী মা ও গর্ভের শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিশ্বাস করেননা বিশেষজ্ঞরা৷ তবে এ বিষয়ে এখন প্রাণীর উপর গবেষণা চলছে৷
টিকা নেয়ার পর তিনদিনের মধ্যে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে৷ যেমন টিকার স্থান ফুলে যাওয়া, মাথাব্য়াথা, জ্বর, দুর্বল লাগা ইত্যাদি৷ তবে দুদিনের মধ্যে এগুলো সেরে যাবার কথা৷
ছবি: Imago Images/M. Eichhammer
অন্য টিকা নিতে কতদিন অপেক্ষা?
ইনফ্লুয়েঞ্জা, হাম, রুবেলা কিংবা টিটেনাসের টিকা নিতে চাইলে করোনার টিকা নেয়ার আগে বা পরে ১৪ দিন অপেক্ষা করার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: imago/blickwinkel
টিকা হালাল?
ফাইজার, মডার্না ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার মুখপাত্ররা টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে নিশ্চিত করেছেন তাদের টিকায় শূকরের কিছু নেই৷
ছবি: Dominic Lipinski/picture-alliance
টিকা নেয়ার পরও হাত ধোঁয়া, মাস্ক পরতে হবে?
টিকা আপনাকে কতদিন রক্ষা করতে পারে সে বিষয়ে এখনও কোনো গবেষণা নেই৷ তাই টিকা নিলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক পরা চালিয়ে যেতে হবে৷
ছবি: Michel Kappeler/REUTERS
11 ছবি1 | 11
করোনাকালেই ইউরোপীয় ইউনিয়নে একটি আইন তৈরি হয়েছে। তাদের জন্য তৈরি টিকার চাহিদা পূরণ না করে কোনো সংস্থা বিদেশে ব্যবসায়িক কারণে টিকা রপ্তানি করতে পারবে না। সেই আইনেই ইটালি অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা আটকেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নও তা সমর্থন করেছে।
ইইউ-র সঙ্গে অ্যাস্ট্রাজেনেকার দীর্ঘদিন ধরেই বিবাদ চলছে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ইইউ-র এক কর্মকর্তা সংবাদসংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, অ্যাস্ট্রাজেনেকা তাদের টিকা না দিয়ে বিদেশে বিক্রি করছে, এমন অভিযোগ তাদের কাছে এসেছে। সে কারণে সংস্থাটির উপর নজর রাখা হচ্ছে। ইটালির ঘটনায় সেই অভিযোগ অনেকটাই মান্যতা পেল। রোমের কারখানাটি অবশ্য জানিয়েছে, অস্ট্রেলিয়ার কাছেও তাদের টিকা পাঠানোর কথা ছিল। সেই মোতাবেক ইটালির সরকারের কাছে একাধিকবার অনুমতি চাওয়া হয়। কিন্তু সরকার অনুমতি দেয়নি।
ডাব্লিউএইচও বার বার অভিযোগ করছে, টিকার সমবন্টন হচ্ছে না। সকলে সমান ভাবে টিকা পাচ্ছে না। ইটালির ঘটনা নতুন করে বিতর্ক তৈরি করে কি না, সেটাই এখন দেখার।