রোববার টস জিতে প্রথমে নিউজিল্যান্ডকে ব্যাট করতে পাঠান অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ। আমিরাতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এবার টস জিতলে ম্যাচে সুবিধাজনক অবস্থায় থেকেছে দলগুলি। কারণ, পরের দিকে শিশিরেোর জন্য বল ভিজে যাচ্ছিল এবং ভারি হয়ে যাচ্ছিল। বোলারদের গ্রিপ করতে অসুবিধা হচ্ছিল। পেসাররা সুইং পাচ্ছিলেন না। ফলে টস জিতে কাজের কাজটা করে ফেলেন ফিঞ্চ। প্রথমেই এগিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া।
উইলিয়ামসনের লড়াই
বিশ্বকাপ ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের ইনিংস টেনে নিয়ে যান অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। ৪৮ বলে ৮৫ রান করেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের যথেচ্ছ মেরেছেন, ক্রিকেটীয় শট খেলেছেন। তবে একবার তার ক্যাচ ফসকেছে অস্ট্রেলিয়া। উইলিয়ামসনের দাপুটে ইনিংসের জন্য নিউজিল্যান্ড ২০ ওভারে চার উইকেটে ১৭২ রান তোলে।
অস্ট্রেলিয়ার দাপট
অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস শুরু হওয়ার পর মাত্র পাঁচ রান করে আউট হয়ে যান ফিঞ্চ। কিন্তু তাদের ইনিংসকে টেনে তোলেন ওয়ার্নার এবং মার্শ। ওয়ার্নার ৩৮ বলে ৫৩ রান করেন, আর মার্শ ৫০ বলে ৭৭ রানে অপরাজিত। ম্যাক্সওয়েলও ১৮ বলে ২৮ রান করে নট আউট থাকেন। ১৮ দশমিক পাঁচ ওভারে দুই উইকেট হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া প্রয়োজনীয় রান তুলে নেয়।
নিউজিল্যান্ডের হয়ে সোধি এবার খুবই ভালো বল করেছেন। কিন্তু ফাইনালে তিনি তিন ওভারে ৪০ রান দিয়েছেন। সাউদি তিন ওভার ও পাঁচ বল করে দিয়েছেন ৪৩ রান। একমাত্র বোল্ট ছাড়া কেউ ভালো বল করতে পারেননি। দুইটি উইকেট তিনিই পেয়েছেন।
টুর্নামেন্ট শুরুর আগে অস্ট্রেলিয়াকে সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ন হিসাবে দেখেননি অধিকাংশ বিশেষজ্ঞই। অনেকে ভারতকে ফেভারিট বলেছিলেন। ভারত সেমিফাইনালেউঠতে পারেনি। অস্ট্রেলিয়াও গ্রুপ পর্যায়ে যে সব ম্যাচে দুর্দান্ত খেলেছে, তা নয়। কিন্তু সেমিফাইনাল ও ফাইনালে দেখা গিয়েছে সেই পুরনো দাপুটে অস্ট্রেলিয়াকে, যারা বিপক্ষকে দুরমুশ করে দিয়ে জেতে।
সদ্যসমাপ্ত আইপিএলে একেবারেই ফর্মে ছিলেন না ওয়ার্নার। রান পাননি। তিনিই টুর্নামেন্টে অসাধারণ ইনিংস খেলেছেন। তিন বছর আগে বল বিকৃতির জন্য যাকে নিন্দায় ভরিয়ে দিয়েছিল ক্রিকেট বিশ্ব, সেই ওয়ার্নার এবার অসাধারণ খেলেছেন।
তিন ফাইনালে হার
নিউজিল্যান্ড ২০১৫, ২০১৯, ২০২১ সালের বিশ্বকাপে ফাইনালে উঠল, কিন্তু একবারও জিততে পারল না। কিছুদিন আগে ভারতকে হারিয়ে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছে তারা। কিন্তু টি-টোয়েন্টি চ্যাম্পিয়ান হতে পারল না উইলিয়ামসনের দল।
ম্যাচের পর উইলিয়ামসন বলেন, ''উইকেট ধীরগতির ছিল। ১৭২ রান তোলার পর আমরা ভেবেছিলাম লড়াই করা যাবে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া খুবই ভালো খেলল। ওরা সহজে রান তাড়া করেছে। আমাদের একটুও জায়গা ছাড়েনি।'' তিনি জানিয়েছেন হার থেকে শিক্ষা নেবেন।
পাকিস্তানের স্বপ্নভঙ্গ করে অস্ট্রেলিয়া ফাইনালে
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে গেল পাকিস্তান। এবার বিশ্বকাপ জিততে পারলেন না বাবর আজমরা।
ছবি: Hamad Mohammed/REUTERS
গ্রুপ পর্বে অপরাজিত
গ্রুপ পর্বে অসাধারণ ক্রিকেট উপহার দিয়েছিল পাকিস্তান। ভারত, নিউজিল্যান্ড সহ সবকটি দলকে হেলায় হারিয়েছিল তারা। তখনই মনে করা হচ্ছিল, বাবর আজমের দল বিশ্বকাপ জিতে আমিরাত ছাড়তে পারে। কিন্তু সেমিফাইনালে সেই পাকিস্তানকে হারিয়ে দিল অস্ট্রেলিয়া। উপরের ছবিটি ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের।
ছবি: Aamir Qureshi/Getty Images/AFP
টসে হার
আমিরাতের উইকেটে টসে জেতাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কারণ, পরের দিকে শিশির পড়ছে। তখন শিশির-ভেজা বল গ্রিপ করতে অসুবিধায় পড়ছেন বোলাররা। গ্রুপ পর্বে ভারত সহ একাধিক ম্যাচে পাকিস্তান টস জিতে প্রথমে বোলিং করেছিল। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া এবার টস জেতে ও পাকিস্তানকে প্রথমে ব্যাট করতে পাঠায়। উপরের ছবিটি রিজওযানের।
ছবি: Hamad Mohammed/REUTERS
কোহলিকে টপকে বাবরের রেকর্ড
পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর আজম ৩৪ বলে ৩৯ রান করেন। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ৬২ ইনিংসে আড়াই হাজার রান করলেন বাবর। তিনি টপকে গেলেন বিরাট কোহলিকে। ভারতের সাবেক অধিনায়ক ৬৮ ইনিংস খেলে আড়াই হাজার রান করেছিলেন। বাবর সবচেয়ে কম ইনিংস খেলে এই রান করলেন।
পাকিস্তানের ইনিংস
পাকিস্তান ২০ ওভারে ১৭৬ রান করে। সবচেয়ে বেশি রান করেন রিজওয়ান। ৫২ বলে ৬৭। ফখর ৩২ বলে ৫৫ রান করে অপরাজিত থাকেন। বাবর আজম করেন ৩৯ রান। ম্যাচের পর বাবর আজম বলেন, তারা রান কম করেননি। কিন্তু ক্যাচ মিসের খেসারত দিয়ে হয়েছে দলকে।
ছবি: Hamad Mohammed/REUTERS
প্রথমেই ধাক্কা
অস্ট্রেলিয়াকে গোড়াতেই ধাক্কা দিতে পেরেছিল পাকিস্তান। শূন্য রানে আউট হয়ে যান ফিঞ্চ। কিন্তু এরপর ডেভিড ওয়ার্নার ও মার্শ হাল ধরেন। উপরের ছবিটি ফিঞ্চের।
ছবি: Getty Images/AFP/S. Khan
ওয়ার্নারের আউট নিয়ে
লেগ স্পিনার শাদাব খানের বলে আউট হন ওয়ার্নার। উইকেটরক্ষক তার ক্যাচ ধরেন। আম্পায়ার আউট দিতেই ক্রিজ ছেড়ে চলে যান ওয়ার্নার। রিভিউ নেননি। কিন্তু পরে দেখা যায়, বল তার ব্যাটেই লাগেনি। তবে তার আগে ৩০ বলে ৪৯ রান করে ইনিংসের ভিতটা তৈরি করে দিয়ে যান তিনি। ওয়ার্নারের ছবিটি ২০১৯ বিশ্বকাপের।
ছবি: Getty Images/D. Rogers
ব্যর্থ স্মিথ ও ম্যাক্সওয়েল
অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিংয়ের দুই বড় ভরসা স্টিভ স্মিথ ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েল রান পাননি। তারা দ্রুত আউট হয়ে ফিরে যান। সেসময় ৯৬ রানে পাঁচ উইকেট পড়ে যায় অস্ট্রেলিয়ার।
ছবি: Hamad Mohammed/REUTERS
ক্যাচ মিস, ম্যাচও
শাহিন আফ্রিদির বলে ম্যাথু ওয়েডের ক্যাচ ফেলেন হাসান আলি। তখন নয় বলে ১৮ রান করতে হত অস্ট্রেলিয়াকে। সেই ক্যাচ মিস করে ম্যাচও মিস করল পাকিস্তান। বাবর আজম বলেছেন, ক্যাচ ফস্কানোর ফলে ম্যাচের রং বদলে গেল। ক্যাচ ধরলে ফল অন্যরকম হতে পারত।
ছবি: Hamad Mohammed/REUTERS
তিন বলে তিন ছয়
পাকিস্তানের এখন সেরা পেসার হলেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। তার বলে পরপর তিনটি ছয় মেরেছেন ওয়েড। শাহিনের ইয়র্কার পর্যন্ত উড়ে গেছে বাইন্ডারির বাইরে। ওয়েডকে যোগ্য সহযোগিতা করেছেন স্টোয়নিস।
ছবি: Hamad Mohammed/REUTERS
ম্যাচ হারার পর
বাবর আজম বলেছেন, তার দল যেভাবে খেলেছে, তিনি তাতে তৃপ্ত। এতদিন দল পরিকল্পনামাফিক খেলেছে। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধেই শুধু খেলতে পারেনি। তবে এই ভুল তারা ভবিষ্যতে শুধরে নেবেন।
ছবি: Hamad Mohammed/REUTERS
ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড
এবার অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড ফাইনাল হবে। দুই দলই ফর্মে আছে। কেন উইলিয়ামসনের নিউজিল্যান্ড ভালো খেলছে। পাকিস্তানকে হারিয়ে অস্ট্রেলিয়ারও আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে। ফলে চিত্তাকর্ষক ফাইনাল ম্যাচ হতে যাচ্ছে আমিরাতের মাঠে।
ছবি: Wikipedia
11 ছবি1 | 11
ব্যাটে বাবর, বলে জাম্পা, বোল্ট
এই বিশ্বকাপে ব্যাটে সব চেয়ে বেশি রান পেযেছেন পাকিস্তানের অধিনাযক বাবর আজম। তিনি ছয় ম্যাচে ৩০৩ রান করেছেন। দ্বিতীয় স্থানে পাকিস্তানের রিজওয়ান, তিনি ছয় ম্যাচে করেছেন ২৮১ রান।
বোলিংয়ে উইকেট নেয়ার নিরিখে এক নম্বরে অস্ট্রেলিয়ার জাম্পা ও নিউজিল্যান্ডের বোল্ট। দুজনেই ১৩টি করে উইকেট পেয়েছেন। ১১টা করে উইকেট নিয়েছেন সাকিব ও হ্যাজেলউড।