অস্ট্রেলিয়ার সরকারের বিরুদ্ধে ‘চুরি যাওয়া প্রজন্মের' মামলা
২৯ এপ্রিল ২০২১
অস্ট্রেলিয়ার ৮০০ আদিবাসী ও তাদের বংশধররা সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন৷ পূর্বপুরুষ ও তাদের সঙ্গে হওয়া অবিচারের ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন তারা৷
বিজ্ঞাপন
১৯৭০ এর দশক পর্যন্ত অন্তর্ভুক্তি নীতির অধীনে অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসী শিশুদের তাদের বাড়ি থেকে নিয়ে শ্বেতাঙ্গ পরিবারে বড় করার বিধান চালু ছিল৷ কয়েক হাজার আদিবাসী এবং টরেস স্ট্রেইট দ্বীপপুঞ্জের বাসিন্দা এমন নীতির শিকার হয়েছেন৷ তারা পরিচিত ‘স্টোলেন জেনারেশন' বা চুরি যাওয়া প্রজন্ম হিসেবে৷ এই ভুক্তভোগীরা কখনও সরকারের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ পাননি৷
মামলায় বাদী হওয়া ৮০০ জনকেও শিশুকালে তাদের পরিবার থেকে জোরপূর্বক বিচ্ছিন্ন করা হয়৷ আইনী প্রতিষ্ঠান শাইন লইয়ার্স বুধবার তাদের পক্ষে এই মামলাটি করেছে৷ আরো কয়েক হাজার ভুক্তভোগী ভবিষ্যতে এই মামলায় যুক্ত হতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ প্রতিষ্ঠানটি পরামর্শক ট্রিস্টান গ্যাভেন বলেন, ‘‘স্বীকৃতি ব্যতিত তাদের ভবিষ্যতের উন্নয়ন সম্ভব নয়৷''
দেশে দেশে আদিবাসী উচ্ছেদ
পর্যটন, প্রকৃতি সংরক্ষণ ইত্যাদি নানা কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আদিবাসীদের তাদের বসবাসের জায়গা থেকে উচ্ছেদ করা হয়৷ ছবিঘরে থাকছে এমন কয়েকটি আদিবাসী গোষ্ঠীর কথা৷
ছবি: Mary Evans Picture Library/dpa/picture alliance
মাসাই
পর্যটকদের প্রিয় তাঞ্জানিয়ার সেরেনগেটি জাতীয় উদ্যানসহ অন্যান্য পার্ক গড়ে তুলতে প্রায়ই মাসাই গোষ্ঠীদের উচ্ছেদের মুখে পড়তে হয়৷ ২০০৯ সালে এমন এক ঘটনায় মাসাইদের দুশর বেশি ঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল৷ প্রায় তিন হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছিল৷
ছবি: Getty Images/AFP/C. De Souza
বাইগা
পর্যটন ও বাঘ রক্ষার কারণ দেখিয়ে ‘জঙ্গল বুক’খ্যাত ভারতের কানহা টাইগার রিজার্ভ থেকে বাইগাসহ অন্যান্য আদিবাসী গোষ্ঠীর হাজার হাজার মানুষকে উচ্ছেদ করা হয়েছে৷ যদিও তারা বাঘ শিকার করত না, বরং বনের প্রাণীদের সঙ্গেই বসবাস করত তারা৷
ক্যামেরুনের এনকি জাতীয় উদ্যানের কাছে বাকা আদিবাসীরা বাস করেন৷ বনে তারা শিকার করে এবং মাছ ধরে জীবিকা চালাত৷ কিন্তু বন সংরক্ষণের নামে তাদের এখন বনে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না৷
ছবি: picture-alliance/WILDLIFE/M.Harvey
হুমং
থাইল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলে ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাস করত হুমং ও কারেন আদিবাসীরা৷ ঐ এলাকায় জাতীয় উদ্যান গড়ে তোলা এবং কিছু এলাকাকে সংরক্ষিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা দেয়ায় আদিবাসীরা এখন সেখানকার ‘অবৈধ বাসিন্দা’ হয়ে গেছেন৷
ছবি: picture alliance/S. Reboredo
সেঙ্গোয়ার
সেঙ্গোয়ার আদিবাসীরা কেনিয়ার এম্বোবুট বনে বাস করেন৷ তবে সংরক্ষণের নামে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ করতে গিয়ে প্রায়ই তাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়, উচ্ছেদ করা হয়৷ হত্যার ঘটনাও ঘটেছে৷ অবশ্য এসব কিছু সেঙ্গোয়ারদের দমিয়ে রাখতে পারেনি৷ তারা সেখানে ফিরে গিয়ে বসবাসের পাশাপাশি বিক্ষোভ, আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে৷
ছবি: DW/S. Wasilwa
সান
পর্যটন ও খনি কোম্পানির কারণে বতসোয়ানার কালাহারি মরুভূমিতে বসবাসকারী সান বা বুশম্যানদের বাড়িঘর পুড়িয়ে, পানি সরবরাহ বন্ধ করে তাদের সেখান থেকে উচ্ছেদ করে দেয়া হয়৷ এমনকি তাদের শিকারও করতে দেয়া হয় না৷
ছবি: Dan Kitwood/Getty Images
ওয়ানিইয়ালা-এত্তো
শ্রীলঙ্কার মাদুরো ওয়া জাতীয় উদ্যান গড়ে তুলতে সেখানে বসবাসকারী ওয়ানিইয়ালা-এত্তো আদিবাসীদের উচ্ছেদ করা হয়েছে৷ তাদের জন্য বনের পাশে ছোট্ট জায়গা দেয়া হয়েছে৷ সেখানে তারা ধান আর সবজির চাষ করে৷ বনে ঢুকতে এখন তাদের অনুমতি নিতে হয়৷ শিকার করতে গেলে গ্রেপ্তার করা হয়৷
ছবি: Mary Evans Picture Library/dpa/picture alliance
প্রতিবাদ
অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের ওয়াঙ্গেন ও জাগালিঙ্গু আদিবাসীরা গত আগস্ট মাসে একটি বহুজাতিক খনি কোম্পানির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তোলে৷ রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে তারা খনি কোম্পানির কর্মকর্তাদের তাদের কর্মস্থলে যেতে বাধা দেয়৷
ছবি: Wangan & Jagalingou Traditional Owners Council
8 ছবি1 | 8
২০০৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী, কেভিন রুড শিশুদের জোরপূর্বক পরিবার থেকে বিচ্ছিন্নের জন্য আদিবাসী গোষ্ঠীর কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন৷ সেসময় তিনি বলেন, অতীতে যে অবিচার হয়েছিল তার পুনরাবৃত্তি আর কখনও হবে না৷ এই ঘটনা মূলত ঘটেছে উনিশ শতক জুড়ে৷ তবে কিছু জায়গায় ১৯৭০ এর দশক পর্যন্ত মিশ্র বর্ণের শিশুদেরও তুলে নেয়া হত৷ ৮৪ বছর বয়সী হেথার অ্যালির সেই স্মৃতি এখনও মনে আছে৷ অস্ট্রেলিয়ার নর্দার্ন টেরিটোরির এই বাসিন্দাকে নয় বছর বয়সে তার মায়ের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছিল৷ ‘‘তারা গোটা একটি প্রজন্মকে এমনভাবে মুছে দিয়েছে, যেন তাদের কোন অস্তিত্বই ছিল না৷ আমি আইনী প্রক্রিয়ায় যোগ দিয়েছি কারণ আমি মনে করি আমাদের কাহিনী প্রকাশ হওয়া উচিত'', বলেন অ্যালি৷
অস্ট্রেলিয়ার কয়েকটি রাজ্যে ভুক্তভোগী আদিবাসীদের জন্য কিছু কর্মসূচী থাকলেও ফেডারেল সরকার বরাবরই ক্ষতিপূরণের বিষয়টি এড়িয়ে গেছে৷ গত বছর সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল এমন কোন উদ্যোগ নেয়ার আইনী বাধ্যবাধকতা সরকারের নেই৷ বুধবারের মামলায় ক্ষতিপূরণ বিষয়টি নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি৷ জুনে মামলার প্রাথমিক শুনানি শুরু হতে পারে৷
পানি বাঁচাতে অস্ট্রেলিয়ায় ১০ হাজার উট হত্যা
পাঁচ দিন ধরে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ায় প্রায় ১০ হাজার উট হত্যা করছে অস্ট্রেলিয়া৷ চলমান দাবানলের কারণে নিজেদের আবাসস্থল ছেড়ে আদিবাসীদের শহরে চলে আসছে উটের দল৷ এ অবস্থা ঠেকাতে নেয়া হয়েছে এ সিদ্ধান্ত৷
ছবি: Imago Images/Nature Picture Library
আদিবাসী এলাকা
দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার এপিওয়াই এলাকাটিতে প্রায় ২,৩০০ আদিবাসীর বাস৷ অস্ট্রেলিয়ায় চলমান দাবানল এখনো শহরটি থেকে বেশ কিছুটা দূরে৷ কিন্তু আগুন যেভাবে ছড়াচ্ছে, তাতে এই এলাকাও বেশিদিন নিরাপদ নয়৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/U. Preuss
কেন এ সিদ্ধান্ত
দাবানলের কারণে উটের পালের স্বাভাবিক বাসস্থানে দেখা দিয়েছে পানির সংকট৷ ফলে বিপুল সংখ্যক উট শহরের দিকে চলে আসছে, আদিবাসীদের পানি এবং খাবারে হামলা চালাচ্ছে৷ কোথাও কোথাও উটের মরদেহ পানি দূষিত করে ফেলছে৷
ছবি: Imago Images/UIG/N. Rains
উটের সংখ্যা
ধারণা করা হয় বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বুনো উটের আবাসস্থল অস্ট্রেলিয়া৷ সঠিক সংখ্যা জানা না থাকলেও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যবর্তী মরু এলাকায় প্রায় ১০ লাখ উট ঘুরে বেড়ায় বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের৷
ছবি: Getty Images/E. Shaw
অস্ট্রেলিয়ায় যেভাবে এলো উট
উট অস্ট্রেলিয়ার প্রাণী না৷ ফলে এ অঞ্চলে উটের কোনো স্বাভাবিক খাবারও নেই৷ একসময় ব্রিটিশ উপনিবেশ ছিল অস্ট্রেলিয়া৷ তখনই আফ্রিকায় ব্রিটিশ উপনিবেশ বর্তমানে স্বঘোষিত সোমালিল্যান্ড থেকে উট সেখানে নিয়ে যাওয়া হয় বলে মনে করা হয়৷ কেউ কেউ ভারত, আফগানিস্তান বা মধ্যপ্রাচ্য থেকে অস্ট্রেলিয়ায় উট নেয়া হয়েছে বলেও মনে করেন৷
ছবি: Imago Images/blickwinkel
কিভাবে চলছে অভিযান
হেলিকপ্টার থেকে স্নাইপার দিয়ে গুলি করে মারা হচ্ছে বুনো উট৷ প্রথম দিনে প্রায় দেড় হাজার উট মারা হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ৷ তবে এ প্রক্রিয়ায় উটকে কোনো কষ্ট দেয়া হচ্ছে না বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের৷ প্রশিক্ষিত স্নাইপারদের সহায়তা করছেন পরিবেশ বিভাগের কর্মকর্তারা৷
ছবি: Imago/B. Xuefei
সোমালিল্যান্ডের ক্ষোভ
অস্ট্রেলিয়ার এমন পদক্ষেপকে ‘নির্মম’ বলে আখ্যা দিয়েছে আফ্রিকার সোমালি উট পালক সমিতি৷ উট হত্যা না করে বরং তাদের যেখান থেকে নেয়া হয়েছিল, সেখানে ফিরিয়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সমিতির চেয়ারম্যান মোস্তাফে কালি দিক৷