অবশেষে তিন বছর বয়সি সন্তানের মুখ দেখলেন সাদাম আবদুসসালামু নামের এক উইগুর যুবক৷ চীনের জিনজিয়াং থেকে গত বৃহস্পতিবার অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে পৌঁছান তার স্ত্রী ও সন্তান৷ ঐ নারী ও তার সন্তানের পাসপোর্ট আটকে রাখা হয়েছিল৷
বিজ্ঞাপন
সিডনি বিমানবন্দরে পুরো পরিবারের সঙ্গে তোলা ছবি টুইটারে পোস্ট করেন সাদাম৷ সেখানে তিনি অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যারিজ পেইন ও মানবাধিকার কর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন৷ ‘‘সবাই খুব কষ্ট করেছেন আমাদের এক করার জন্য,'' লেখেন তিনি৷
২০১৭ সালে জিনজিয়াং প্রদেশে চীনা কর্তৃপক্ষ সাদামের স্ত্রী নাদিলা উমায়ের ও তার পুত্র লুফতির পাসপোর্ট জব্দ করে৷ বিষয়টি অস্ট্রেলিয়ায় ব্যাপক সমালোচিত হয়৷ সরব হয়ে ওঠে মানবাধিকার সংস্থাগুলো৷ এর কারণ সাদাম অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক৷ তিনি দশ বছর আগে অস্ট্রেলিয়ায় পড়তে এসেছিলেন এবং পরে নাগরিকত্ব পান৷
২০১৬ সালে জিনজিয়াংয়ে ফেরত গিয়ে উমায়েরকে বিয়ে করেন সাদাম৷ জিনজিয়াংয়ে তাদের পুত্র সন্তানের জন্ম হয়৷ কিন্তু তাদের অস্ট্রেলিয়ায় আনতে পারছিলেন না সাদাম৷ তিনি অস্ট্রেলিয়ান সরকারের কাছে আবেদন করলে ২০১৯ সালে উফতিকেও নাগরিকত্ব দেয় অস্ট্রেলিয়া৷
পরিবারকে আনতে অস্ট্রেলিয়া সরকারের সহযোগিতা চান সাদাম৷ গত ফেব্রুয়ারিতে এবিসি টেলিভিশনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে অস্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত চীনের ডেপুটি হেড অফ মিশন দাবি করেন, উমায়ের জিনজিয়াং ছাড়তে চাইছেন না৷
এরপর উমায়ের টুইটারে একটি ছবি পোস্ট করেন৷ সেখানে লেখা ছিল, ‘আমি যেতে চাই এবং আমার স্বামীর সঙ্গে থাকতে চাই৷'
জুলাই মাসে অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেইন আনুষ্ঠানিকভাবে অস্ট্রেলিয়ায় চীনের অ্যাম্বেসিকে অনুরোধ জানান যেন উমায়েরকে চীন থেকে অস্ট্রেলিয়ায় আসতে দেয়া হয়৷
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এই পরিবারের আইনজীবী মাইকেল ব্র্যাডলি নিশ্চিত করেন, তিন বছর বয়সি লুফতি ও তার মা দুই সপ্তাহ আগে চীন ছেড়ে অস্ট্রেলিয়ায় আসে এবং দুই সপ্তাহ কোয়ারান্টিনে থাকার পর সিডনির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়৷
চীনের বিরুদ্ধে উইগুর মুসলিমদের ওপর পদ্ধতিগত মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিপুল অভিযোগ রয়েছে৷ জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলসহ বিশ্বের সব মানবাধিকার সংস্থা উইগুর মুসলিমদের প্রতি চীনের আচরণের বরাবরই সমালোচনা করে আসছে৷
জেডএ/জেডএইচ (ডিপিএ)
মুসলিমদের শিবির যেভাবে চালায় চীন
চীনের শিনজিয়াং রাজ্যে মুসলমানদের ‘পুনরায় শিক্ষিত’ করতে অনেকগুলো ক্যাম্প পরিচালনা করা হয়৷ এই প্রশিক্ষণ ‘ঐচ্ছিক’ বলে দাবি করে সরকার৷ কিন্তু প্রকাশিত নথি বলছে অন্য কথা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP Photo/File
নির্দেশনা
চীনের শিনজিয়াং রাজ্যের বিভিন্ন ক্যাম্পে প্রায় দশ লাখ মুসলমান বন্দি রয়েছেন৷ এসব ক্যাম্প কীভাবে পরিচালিত হবে, সে বিষয়ে ২০১৭ সালে একটি নির্দেশনা দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ৷ রবিবার ১৭টি গণমাধ্যমে একযোগে সেটি প্রকাশিত হয়েছে৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র ‘ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস’ আইসিআইজে-কে এই নির্দেশনাটি দিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP Photo/File
স্বেচ্ছায় নয়, বাধ্য করা হয়
চীন সরকারের দাবি, এসব ক্যাম্পে মুসলমানরা স্বেচ্ছায় প্রশিক্ষণ নিতে যান৷ কিন্তু প্রকাশিত নির্দেশনা বলছে, ক্যাম্পে বন্দিদের প্রথমে আদর্শ ও আচরণগত প্রশিক্ষণ দেয়ার মাধ্যমে তাঁদের মনোজগতে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা হয়৷ এরপর অন্য জায়গায় তাঁদের জন্য কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Z. Shuai
নিরাপত্তা ব্যবস্থা
বন্দিদের কেউ যেন পালাতে না পারেন সেজন্য ২৪ ঘণ্টাই তাঁদের নজরে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে ক্যাম্প কর্মীদের৷ এমনকি টয়লেটে যাওয়ার সময়ও তাঁদের নজরে রাখতে বলা হয়েছে৷ এছাড়া নিরাপত্তা টাওয়ার নির্মাণ, ডাবল-লক দরজা, অ্যালার্ম ও প্রবেশ দরজাসহ সব জায়গায় ভিডিও নজরদারির ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. Baker
বন্ধুত্ব করা নিষেধ
বন্দিদের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলার ব্যাপারে ক্যাম্পের কর্মীদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে৷ এছাড়া গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে কর্মীরা মোবাইল ফোন কিংবা ক্যামেরা নিয়ে ক্যাম্পে ঢুকতে পারেন না৷
ছবি: Reuters/T. Peter
ক্যাম্পের বাসিন্দা যাঁরা
মূলত উইগুর মুসলমান৷ এছাড়া কাজাখসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মুসলমানদেরও এসব ক্যাম্পে রাখা হয়েছে৷ ছবিতে একটি শ্রেণিকক্ষ দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শুরুর কথা
বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে প্রায় বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন উইগুর সম্প্রদায়ের মানুষ৷ ২০০৯ সালে শিনজিয়াং-এর রাজধানী উরুমকিতে বিক্ষোভে প্রায় ২০০ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন৷ এরপর ২০১৪ সালে উইগুর বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ছুরি হামলায় ২৯ জন নিহত হন৷ এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে মুসলমানদের জন্য ক্যাম্প চালু করে চীন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অস্বীকার
প্রকাশিত নথির তথ্য ঠিক নয় বলে দাবি করেছেন চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গেং শুয়াং৷ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে চীনের লড়াইকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করায় গণমাধ্যমের সমালোচনা করেন তিনি৷