প্রবীণ নাগরিকদের চতুর্থ টিকা দেয়ার কথা ঘোষণা করলো অস্ট্রেলিয়া৷ ৬৫ বছরের বেশি বয়স এমন ব্যক্তিদের এপ্রিল মাস থেকে চতুর্থ টিকা দেবে এই দেশ৷ ওমিক্রনের নতুন একটি প্রজাতির সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা৷
বিজ্ঞাপন
৬৫ বছরের বেশি বয়সিদের চতুর্থ টিকা দেয়া হবে৷ এছাড়া আদিবাসীদের মধ্যে যাদের বয়স ৫০ বছরের বেশি বয়স, তাদেরও চতুর্থ টিকা দেয়া হবে৷ যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এবং যারা কেয়ার হোমে থাকেন, তাদের ক্ষেত্রেও চতুর্থ টিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া প্রশাসন৷
গত ছয় সপ্তাহ ধরে জার্মানি, ফ্রান্স, সুইডেন এবং ইংল্যান্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রবীণ নাগরিক এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এমন ব্যক্তিদের জন্য চতুর্থ টিকার প্রস্তাবনা রেখেছিল৷ এদিকে গত কয়েকদিন ধরে অস্ট্রেলিয়ায় দৈনিক করোনা সংক্রমণ ৫০ হাজারেরও বেশি৷ ওমিক্রনের অন্য একটি প্রজাতি আরো বেশি সংক্রামক, তাই সংক্রমণ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ৷
অস্ট্রেলিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী গ্রেগ হান্ট জানিয়েছেন, চৌঠা এপ্রিল থেকে অতিরিক্ত ডোজ মিলবে৷ অন্তত চার মাস আগে তৃতীয় ডোজ পেয়েছেন এমন ব্যক্তিরা চতুর্থ টিকা পাবেন৷ মাসদুয়েক পরই অস্ট্রেলিয়ায় শীত আসতে চলেছে৷ এই প্রেক্ষিতে এপ্রিল থেকে টিকা দেয়ার কথা ভেবেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়৷ হান্ট বলেন, ‘‘বুস্টার সর্বোচ্চ সুরক্ষা দিতে সক্ষম৷ দীর্ঘদিন কোভিডের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে পারে এটি৷’’ এছাড়া যেসব ব্যক্তি অস্ট্রেলিয়ায় আসছেন, তাদের আর এবার থেকে নেগেটিভ কোভিড রিপোর্ট দেখাতে হবে না৷ তবে অস্ট্রেলিয়ায় আগতদের টিকা নেয়া এবং মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক৷
অস্ট্রেলিয়ার টিকা সংক্রান্ত কর্তৃপক্ষ এটিএজিআই জানিয়েছে, মডার্না এবং ফাইজারের বুস্টার দেয়া হবে৷ তবে একটি বিবৃতিতে এ-ও বলা হয়েছে, চতুর্থ ডোজের গুরুত্ব কতটা, তার এখনও যথেষ্ট প্রমাণ নেই৷ নিউ সাউথ ওয়েলসের কিরবি ইনস্টিটিউট অফ দ্য ইউনিভার্সিটির জৈব নিরাপত্তা প্রকল্পের প্রধান রাইনা ম্যাকক্লিনটাইরে চতুর্থ ডোজকে স্বাগত জানিয়েছেন৷ ৫০ বছরের উপরে বয়স এমন সব ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই ডোজের প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি৷
রাইনার কথায়, ‘‘একাধিক সংক্রামক রোগের ক্ষেত্রে গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ইমিউনোসেনেসেন্স’ নামে একটি প্রক্রিয়া রয়েছে, এর ফলে ৫০ বছরের উপরে বয়স হলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দ্রুত কমতে থাকে৷ কোভিডও একই নিয়ম মেনে চলে৷’’ তিনি অস্ট্রেলিয়ানদের তৃতীয়, চতুর্থ টিকা নিতে উৎসাহ দিচ্ছেন৷ তার বক্তব্য, ‘‘এটা কোনো সাধারণ ফ্লু নয়৷ কোভিড পরবর্তী ক্ষেত্রেও স্বাস্থ্যে নানাভাবে প্রভাব ফেলছে৷ কারো ক্ষেত্রে মস্তিষ্কে সংক্রমণ, কারো বা হৃদরোগ কিংবা ফুসফুসের অসুখও হয়েছে৷ অনেকের ক্ষেত্রে ডায়াবেটিসের শঙ্কা বেড়েছে৷’’ মহামারির গোটা সময়জুড়ে এখনও পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ায় করোনায় পাঁচ হাজার ৮২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে৷
আরকেসি/এসিবি (এএফপি)
সোমবারের ছবিঘরটি দেখুন...
দুই বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় করোনা মহামারিতে চীন
চীনের কয়েকটি শহরে করোনা সংক্রমণ বাড়ায় লকডাউন দেয়া হয়েছে৷ গত দুই বছরের মধ্যে দেশটি সবচেয়ে বড় করোনা মহামারি দেখা দিয়েছে৷
ছবি: picture alliance/AP
ওমিক্রনের প্রভাব
বিশ্বে চীনে প্রথম করোনার প্রকোপ শুরু হলেও লকডাউন, গণহারে করোনা পরীক্ষা, কঠোর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ইত্যাদি ব্যবস্থা নেয়ার মাধ্যমে করোনা নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছিল৷ কিন্তু সম্প্রতি দেশটিতে করোনার ওমিক্রন সংস্করণের প্রভাব দেখা যাচ্ছে৷ ফলে গত দুই বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় করোনা মহামারিতে পড়েছে চীন৷
ছবি: Liau Chung-ren/ZUMA Wire/imago images
প্রথম মৃত্যু
এক বছরেরও বেশি সময় পর গত শনিবার চীনে করোনায় দুজনের মৃত্যু হয় বলে জানানো হয়েছে৷ ২০২০ সালের ৩ জানুয়ারি থেকে এ বছরের ১৮ মার্চ পর্যন্ত আট লাখ ১৮ হাজার ৬১২ জন করোনায় আক্রান্ত হন বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে জানিয়েছে চীন৷ এই সময়ে ১০ হাজার ৬২৫ জন মারা যান৷
ছবি: Tyrone Siu/REUTERS
সংক্রমণ কম হলেও কঠোর সিদ্ধান্ত
রোববার চীনে চার হাজারের বেশি মানুষ নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হন৷ বৈশ্বিক বিবেচনা ও চীনের ১৪০ কোটির বেশি জনসংখ্যা বিচার করলে এই সংখ্যাটি খুবই কম৷ তারপরও করোনার প্রসার ঠেকাতে কঠোর সব সিদ্ধান্ত নিয়েছে চীন৷ ফলে বিভিন্ন শহরের লাখো মানুষ এখন লকডাউনের মধ্যে আছেন৷
ছবি: Shao Rui/Xinhua/AP/dpa/picture alliance
লকডাউনে জিলিন
রোববার চীনের নতুন সংক্রমিতের দুই-তৃতীয়াংশের বাস জিলিন রাজ্যে৷ এই রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর জিলিনের প্রায় ৪৫ লাখ মানুষ সোমবার রাত থেকে তিনদিনের জন্য লকডাউনে থাকবেন৷ জিলিন রাজ্যটি রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার কাছে অবস্থিত৷ উপরের ছবিটি প্রতীকী৷
ছবি: Tao Ming/Xinhua/AP/picture alliance
দুইদিনে একবার বের হওয়ার অনুমতি
জিলিন রাজ্যের রাজধানী চ্যাংচুনে ৯০ লাখ মানুষের বাস৷ ১১ মার্চ থেকে সেই শহরের বাসিন্দারা খাবার কিনতে প্রতি দুই দিনে একবার ঘরের বাইরে বের হতে পারছেন৷ এই নিষেধাজ্ঞা তিন দিনের জন্য আরও কঠোর করা হবে বলে শনিবার শহর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে৷ ১৫ মার্চের ছবিতে চ্যাংচুনের বাসিন্দাদের করোনী পরীক্ষার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Zhao Dandan/IMAGO
শেনজেনে বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে
চীনের কয়েকটি বড় প্রযুক্তি কোম্পানি শেনজেনে অবস্থিত৷ সেখানে প্রায় পৌনে দুই কোটি মানুষ বাস করেন৷ সপ্তাহখানেক আগে সেখানে লকডাউন (ছবি) দেয়া হয়েছিল৷ সোমবার থেকে বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিল হয়েছে৷ গণপরিবহন চলতে দেয়া হচ্ছে৷ কিছু প্রশাসনিক ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু হয়েছে৷
ছবি: picture alliance/AP
সাংহাইয়ে কঠোর ব্যবস্থা
চীনের বাণিজ্যিক কেন্দ্র সাংহাইতে টানা চতুর্থ দিনের মতো উপসর্গহীন করোনার সংক্রমণের সংখ্যা বেড়েছে৷ রোববার সেখানে ২৪ জনের মধ্যে করোনার উপসর্গ দেখা গেছে৷ আর উপসর্গ নেই এমন সংক্রমণ দেখা গেছে ৭৩৪ জনের মধ্যে৷ এই অবস্খায় সেখানে স্কুল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে৷ আবাসিক এলাকায় করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে৷
ছবি: Xinhua/Li Ziheng/picture alliance
সর্বোচ্চ দুই সপ্তাহের লকডাউন
সাংহাইয়ের বিভিন্ন আবাসিক এলাকাগুলো করোনার প্রসার রুখতে নিজেরা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে৷ কিছু এলাকায় মানুষজনকে দুই সপ্তাহ লকডাউনে থাকতে বলা হয়েছে৷ আর কিছু এলাকার মানুষ বলছে, কতদিন তাদের ঘরে থাকতে হবে সেটা জানানো হয়নি৷ ছবিটি প্রতীকী৷