একটি নতুন আইনের বিরোধিতা করতে গিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় খবর প্রচার বন্ধ করল ফেসবুক। খবর শেয়ার করতে পারবেন না সাধারণ মানুষ।
বিজ্ঞাপন
সোশ্যাল নেটওয়ার্ক আছে, কিন্তু খবর নেই। একুশ শতকের আধুনিক প্রজন্ম এমনটা ভাবতেই পারে না। অথচ ঠিক সে ঘটনাই ঘটেছে অস্ট্রেলিয়ায়। বুধবার সকালে ঘুম থেকে উঠে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকরা ফেসবুক খুলেছেন, কিন্তু সেখানে একটিও খবর দেখতে পাননি তাঁরা। এমনকী, সরকারি এবং জরুরি পরিষেবার পেজগুলিও খালি ছিল। সেখানে কোনোরকম আপডেট দেওয়া ছিল না।
ভুয়া তথ্য বা খবর বুঝব কীভাবে?
গবেষণা বলছে, করোনা ভাইরাস নিয়ে ছড়ানো ভুয়া তথ্যের কারণে ২০২০ সালের প্রথম তিন মাসে বিশ্বে অন্তত ৮০০ জন বা তার চেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছেন৷ ফলে খবর, তথ্য শেয়ারের সময় সতর্ক থাকতে হবে৷ কিন্তু কীভাবে?
ছবি: Facebook
তিনটি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করুন
ভুয়া তথ্য ও খবর দ্রুত খুঁজে পাবার উপায় জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের ফ্যাক্ট-চেকিং ওয়েবসাইট ‘ফুল ফ্যাক্ট’৷ ফেসবুকে কিছু শেয়ারের আগে নিজেকে তিনটি প্রশ্ন করার পরামর্শ দিয়েছে তারা৷
প্রথম প্রশ্ন
খবরটি কে দিয়েছে? প্রথমে নিজেকে এই প্রশ্নটিই করুন৷ সূত্র বিশ্বস্ত না হলে সেটা শেয়ার করবেন না৷ আর সূত্র নতুন হলে তার সম্পর্কে জানার চেষ্টা করুন৷
ছবি: imago images / ZUMA Press
দ্বিতীয় প্রশ্ন
কি যেন নেই? লিংকে ঢুকে পুরো খবরটা পড়ুন৷ ছবি, ব্যবহার করা নম্বর, কারও মন্তব্য এসব খেয়াল করুন৷ অনেক সময় সূত্রের উল্লেখ না করে মন্তব্য ব্যবহার করা হয় কিংবা কনটেক্সট ছাড়াই মন্তব্য দেয়া হয়৷ খবরের সঙ্গে থাকা ছবি কিংবা ভিডিও ভুয়া হতে পারে৷ ভিডিওতে ব্যবহৃত কণ্ঠ পরিবর্তিত থাকতে পারে৷
ছবি: Facebook/G.M. Masud Rana
তৃতীয় প্রশ্ন
খবরটি পড়ার পর আপনি কেমন অনুভব করছেন? যারা ভুয়া খবর ছড়ায় তারা মানুষের অনুভূতি নিয়ে খেলতে চায়৷ তারা জানে আপনাকে রাগিয়ে তুলতে পারলে কিংবা চিন্তিত করতে পারলে আপনি খবরটিতে ক্লিক করবেন৷ তাই শেয়ারের আগে নিজের অনুভূতিটা জানার চেষ্টা করুন৷ ভাল অনুভব করলে শেয়ার করুন৷ আর খটকা লাগলে অন্যান্য সূত্র দেখে যাচাইয়ের চেষ্টা করুন৷ ছবিতে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের শেয়ার করা একটি ভুয়া খবর দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Facebook
ফ্যাক্ট-চেকিং ওয়েবসাইট
ভারতের ফ্যাক্ট-চেকিং ওয়েবসাইট ‘বুম লাইভ’কে বাংলাদেশের ফেসবুক কমিউনিটিতে বিদ্যমান ছবি ও ভিডিওর যথার্থতা পর্যালোচনার দায়িত্ব দিয়েছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ৷ ২০২০ সালের ১৯ এপ্রিল থেকে এই কাজ শুরু হয়েছে৷ www.boombd.com/ ওয়েবসাইটের পাশাপাশি ফেসবুকেও (https://www.facebook.com/Boombangladeshnews) তাদের কাজ দেখা যায়৷
বিডি ফ্যাক্ট চেক
২০১৭ সালে কাজ শুরু করে এই ওয়েবসাইট (https://bdfactcheck.com/)৷ ফেসবুকেও তাদের একটি পাতা (https://www.facebook.com/bdfactcheck/) আছে৷ আলোচনা সভা, সংবাদ সম্মেলন, জনসভা ও গণমাধ্যম থেকে পাওয়া তথ্যের সত্যতা যাচাই করে বিডি ফ্যাক্ট চেক৷ এছাড়া সামাজিক মাধ্যমে যেসব ভুয়া সংবাদ, ছবি কিংবা ভিডিও ভাইরাল হয় সেগুলোরও ফ্যাক্টচেক করে তারা৷
Fact খুঁজি
এটি বাংলাদেশের আরেকটি ফ্যাক্ট-চেক করা ওয়েবসাইট৷ http://factkhuji.org/ ওয়েবসাইটের পাশাপাশি তাদের একটি ফেসবুক পাতাও (https://www.facebook.com/factkhuji/) আছে৷
সতর্ক হন
করোনা ভাইরাস নিয়ে ছড়ানো ভুয়া তথ্যের কারণে ২০২০ সালের প্রথম তিন মাসেই বিশ্বব্যাপী কমপক্ষে ৮০০ জন বা তার চেয়েও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন বলে ‘অ্যামেরিকান জার্নাল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড হাইজিন’-এ প্রকাশিত এক গবেষণা বলছে৷ ফলে সামাজিক মাধ্যমে খবর বা তথ্য শেয়ারের আগে সবার একটু সতর্ক হওয়া প্রয়োজন৷
ছবি: picture-alliance/ZUMA Wire/SOPA Images/A. K. Sing
8 ছবি1 | 8
দীর্ঘদিন ধরেই অস্ট্রেলিয়ার সরকারের সঙ্গে লড়াই চলছে ফেসবুক এবং গুগলের। অভিযোগ, গত ডিসেম্বরে অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে একটি আইন পাশ হয়েছে। যেখানে সোশ্যাল নেটওয়ার্কে খবরের প্রচার নিয়ে একাধিক বিষয় বলা হয়েছে। পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষে আইনটি নিয়ে এখনো বিতর্ক চলছে। ফেসবুকের বক্তব্য, ওই আইন জারি হলে তাদের পক্ষে তা মানা সম্ভব নয়। গুগলও আইনটির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে। বস্তুত তারই জেরে বুধবার সকাল থেকে ফেসবুক অস্ট্রেলিয়ায় খবর প্রচার বন্ধ করে দেয়। অর্থাৎ, তারা নিজেরাও কোনো খবরের প্রচার করবে না। ফেসবুক ব্যবহারকারীরাও কোনো খবর শেয়ার করতে পারবেন না। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও সরকারি পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা ফেসবুক পেজের মাধ্যমে তাদের খবরাখবর প্রচার করে থাকে। বুধবার সকাল থেকে সেই পেজগুলিও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ফেসবুকের এই কাজে সমস্যায় পড়েছেন অস্ট্রেলিয়ার সাধারণ মানুষ। বহু মানুষ ইদানীং খবরের কাগজ রাখেন না। টেলিভিশনও দেখেন না। তাঁরা সোশ্যাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমেই দিনের সংবাদ দেখে নেন। বুধবার থেকে আচমকাই তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সংস্থা এবং সরকারি স্বাস্থ্য বিভাগ কোভিড পরিস্থিতির আপডেট ফেসবুক পেজে দিত, বুধবার থেকে তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সরকারি দমকল বিভাগের বুশ ফায়ার সংক্রান্ত খবরও বুধবার থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার ট্রেসারার জোস ফ্রাইডেনবার্গ জানিয়েছেন, বুধবার সকালেই ফেসবুকের প্রধান মার্ক সাকারবার্গের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। দ্রুত সমস্যা সমাধানের রাস্তা খোঁজার চেষ্টা হচ্ছে।
তবে অস্ট্রেলিয়ার সাধারণ মানুষ এবং বিরোধী রাজনীতিবিদেরা জানিয়েছেন, যে প্রক্রিয়ায় ফেসবুক আচমকা খবর প্রচার বন্ধ করে দিয়েছে তা অনভিপ্রেত। একদিকে কোভিড, অন্যদিকে বুশ ফায়ারে জর্জরিত অস্ট্রেলিয়া। মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় এ সংক্রান্ত আপডেট দেখেন। কিচ্ছু না জানিয়ে সাধারণ মানুষকে সমস্যায় ফেলা হয়েছে।
গুগল অবশ্য ফেসবুকের রাস্তায় হাঁটেনি। সরকার এবং সংবাদসংস্থাগুলির সঙ্গে তারা আলোচনা চালাচ্ছে। গুগল অবশ্য আগেই জানিয়েছিল, নতুন আইন বলবৎ হলে তাদের পক্ষে অস্ট্রেলিয়ায় থাকা সম্ভব নয়। তে ফেসবুকের মতো চরম সিদ্ধান্ত এখনো নেয়নি তারা।