অস্ট্রেলিয়ায় ছুটির পর অফিসের ইমেল, ফোন অগ্রাহ্য করার অধিকার
২৬ আগস্ট ২০২৪
ছুটির দিনে আপনার বস আপনাকে ইমেল করছেন? বা কাজ শেষ হবার পরেও কাজের মেসেজ থেকে মুক্তি নেই? অস্ট্রেলিয়ায় কর্মীরা এখন এমন চল থেকেও মুক্তি পেতে চলেছেন৷
বিজ্ঞাপন
সোমবার চালু হওয়া এই নতুন আইন বলছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কাজের সময়ের বাইরে পাঠানো ইমেল না পড়লে বা ফোন না ধরলে সেই কর্মীকে কোনো শাস্তি দেওয়া যাবে না৷
এই আইনের সমর্থকদের মতে, কাজের ফোন বা ইমেল যেভাবে কারো ব্যক্তিগত সময়ে ব্যাঘাত ঘটায়, তার বিরুদ্ধে একটা কড়া বার্তা দেবে৷ করোনা অতিমারির সময়ে সবচেয়ে বেশি ঘেঁটে যায় ঘর ও কাজের স্থলের মধ্যের সীমানা৷ এই ধারাটি বিশেষ করে তার পর থেকে আরো গতি পেয়েছে৷
অস্ট্রেলিয়ার সুইনবার্ন প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর জন হপকিন্স বলেন, ‘‘ডিজিটাল প্রযুক্তি আসার আগে এমন কোনো অনধিকার চর্চা ছিলনা৷ মানুষ কাজ শেষ করে বাসায় যেতেন আর পরের দিন কাজে ফেরা পর্যন্ত কোনো যোগাযোগ থাকত না৷ কিন্তু এখন, ইমেল, মেসেজ, ফোন কল সবই আসতে থাকে কাজ শেষ হবার বহু পরেও, এমনকি ছুটির দিনেও৷’’
পিতৃত্বকালীন সর্বোচ্চ ছুটি দেয়া ১২ দেশ
ছবিঘরে পিতৃত্বকালীন সর্বোচ্চ ছুটি দেয়া দশটি দেশের কথা থাকছে৷ এতে ওইসিডির ২০১৮ সালের তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/A. Young-joon
লুক্সেমবার্গ
ইউরোপের ছোট্ট এই দেশে নতুন বাবাদের জন্য পিতৃত্বকালীন ছুটি বরাদ্দ আছে ১৯.৩ সপ্তাহ৷ এই সময় তাঁরা ১৩.৬ সপ্তাহের সমান বেতন পান৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
পর্তুগাল
ছুটি পাওয়া যায় ২২.৩ সপ্তাহের৷ তবে বেতন পান সাড়ে ১২ সপ্তাহের সমান৷
স্ক্যান্ডিনেভিয়ার এই দেশে নতুন বাবাদের জন্য ছুটি বরাদ্দ ১৪.৩ সপ্তাহের৷ এই সময় তাঁরা ১০.৮ সপ্তাহের সমান বেতন পান৷
ছবি: Imago Images/imagebroker/M. Weber
নরওয়ে
১০ সপ্তাহ ছুটি দিয়ে ৯.৪ সপ্তাহের সমান বেতন দেয়া হয় নতুন বাবাদের৷
ছবি: Fotolia/nanisimova
আইসল্যান্ড
১৩ সপ্তাহ ছুটি নিতে পারেন বাবারা৷ পান ৮.৯ সপ্তাহের বেতন৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/M. Lohmann
অস্ট্রিয়া
ইউরোপের এই দেশটিতে নতুন বাবারা ৮.৭ সপ্তাহের ছুটি কাটিয়ে ৬.৬ সপ্তাহের সমান বেতন পান৷
ছবি: Imago/viennaslide
ফিনল্যান্ড
বর্তমানে ৯ সপ্তাহের ছুটির বিপরীতে ৫.৭ সপ্তাহের সমান বেতন দেয়া হয়৷ তবে সম্প্রতি নতুন বাবাদের বেতনসহ সাত মাস ছুটি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে৷
ছবি: Tuomas Uusheimo
জার্মানি
৮.৭ সপ্তাহ ছুটি কাটিয়ে ৫.৭ সপ্তাহের সমান বেতন পান নতুন বাবারা৷
ছবি: Getty Images/S. Gallup
ফ্রান্স
এই দেশটিতে ছুটি নেয়া যায় অনেকদিনের, ২৮ সপ্তাহ! তবে এর বিপরীতে বেতন দেয়া হয় মাত্র ৫.৪ সপ্তাহের সমান৷
ছবি: Getty Images
বেলজিয়াম
ফ্রান্সের মতো বেলজিয়ামেও ছুটি নেয়ার সুযোগ বেশি (১৯.৩ সপ্তাহ)৷ কিন্তু বেতন পাওয়া যায় মাত্র পাঁচ সপ্তাহের সমান৷
ছবি: picture-alliance/W. G. Allgoewer
জাপান
নতুন বাবা হওয়া উপলক্ষ্যে পুরো এক বছরের (৫২ সপ্তাহ) ছুটি পেতে পারেন জাপানের বাবারা৷ এই সময় তাঁরা ৩০.৪ সপ্তাহ কাজের সমান বেতন পান৷ অথচ ওইসিডি এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী মাত্র তিন শতাংশ বাবা এই সুযোগ নিয়েছিলেন৷ পর্যাপ্ত কর্মীর অভাবে চাকরিদাতারা এই সুযোগ অনেক ক্ষেত্রে দেন না, আবার অনেকে ছুটি নিয়ে চাকরিদাতাদের মনক্ষুন্ন হওয়ার কারণ হতে চান না৷ কাজ বাদ দিয়ে ছুটি নেয়ার বিষয়টিতেও অভ্যস্ত নন দেশটির মানুষ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
দক্ষিণ কোরিয়া
জাপানের চেয়ে এক সপ্তাহ বেশি অর্থাৎ ৫৩ সপ্তাহে ছুটি পেতে পারেন দক্ষিণ কোরিয়ার বাবারা৷ তবে এই সময় তারা ১৫.৪ সপ্তাহের কাজের সমান বেতন পান৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/A. Young-joon
12 ছবি1 | 12
অস্ট্রেলিয়ার পরিস্থিতি
অস্ট্রেলিয়া ইন্সটিটিউট গত বছর একটি জরিপ চালায়, যেখানে দেখা যায় যে ২০২৩ সালে অস্ট্রেলিয়ানরা গড়ে ২৮১ ঘন্টা বাড়তি, বেতনহীন কাজ করেছেন৷ এই কাজের আর্থিক মূল্য দাঁড়ায় ১৩০ বিলিয়স অস্ট্রেলিয়ান ডলারের সমান (৮৮ বিলিয়ন মর্কিন ডলার)৷
ইউরোপ ও ল্যাটিন অ্যামেরিকার কয়েকটি দেশে এমন আইন রয়েছে, এই তালিকায় এবারে যুক্ত হলো অস্ট্রেলিয়াও৷
২০১৭ সালে এমন আইন চালু করে ফ্রান্স৷ ২০১৮ সালে একটি সংস্থাকে এই আইনের আওতায় ৬৬ হাজার ইউরো জরিমানাও দিতে হয় এক কর্মীকে তার ফোন সর্বক্ষণ চালু রাখতে বলায়৷
বিজ্ঞাপন খাতে কর্মরত রেচেল আবদেলনুরের মতে, এই আইন তাকে নিজের জন্য সময় বার করতে সাহায্য করবে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার মতে এমন আইন থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ আমরা এত সময় কাটাই আমাদের ফোনে, সারাক্ষণ ইমেল চেক করতে থাকি৷ আজকাল সত্যিই বিচ্ছিন্ন থাকা খুবই কঠিন৷’’
যে ধরনের কাজের ক্ষেত্রে কোনো বাঁধাধরা সময় থাকে না বা জরুরি পরিস্থিতিতে উর্ধ্বতন কর্মী কাউকে যোগযাযোগ করতে চেষ্টা করলে সেই কর্মী নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে তা ফেরাতে পারেন৷
কোন দাবি যুক্তিযুক্ত এবং কোনটি নয়, তা ঠিক করবে অস্ট্রেলিয়ার ফেয়ার ওয়ার্ক কমিশন সংস্থাটি৷ এই সংস্থাটি প্রতিটি কর্মীর কাজের ধরন, তার ব্যক্তিগত জীবন ও কোন সময়ে ও পরিস্থিতিতে তাকে তার বস যোগাযোগ করেন, এই সব খতিয়ে দেখবে৷
কোনো কর্মীকে এই আইন খেলাপের জন্য ১৯ হাজার অস্টেলিয়ান ডলার পর্যন্ত জরিমানা করতে পারে এই সংস্থা৷ কোনো সংস্থার জন্য জরিমানার পরিমাণ যেতে পারে ৯৪ হাজার অস্টেলিয়ান ডলার পর্যন্তও৷
কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার কিছু উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী সংস্থাদের মতে, এই নিয়ম কর্মী ও তাদের উর্ধ্বতন কর্মীদের জন্যেও অস্পষ্টতা সৃষ্টি করবে৷ এতে কাজে বৈচিত্র্য কমবে ও এতে অর্থনীতির ওপর খারাপ প্রভাব পড়বে, বলে তাদের ধারণা৷
সমালোচনা থাকলেও কর্মীদের বেশ কয়েকটি সংগঠন জানান যে, এই আইন কর্মীদের অধিকার নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে৷
এসএস/এসিবি (রয়টার্স)
অস্ট্রেলিয়ায় গণভোট: আদিবাসীদের স্বীকৃতি কি মিলবে?
অস্ট্রেলিয়ার রাজনৈতিক ও সামাজিক সিদ্ধান্তে কতটুকু গুরুত্ব পাবে আদিবাসীদের মতামত? শনিবারে আসন্ন এবিষয়ে গণভোট৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
ছবি: JAIMI JOY/Reuters
অনিরাপদ জীবন
টারনা অ্যান্ড্রুজ গ্রামের বাইরে স্কুলের বারান্দায় বসে আছেন৷ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষিকা তিনি, স্কুলের প্রিন্সিপাল হিসাবেও কাজ করেছেন ৩৮ বছর৷১৪ অক্টোবর অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকেরা গণভোটের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেবেন যে আদিবাসী ও টোরেস স্ট্রেটের বাসিন্দাদের কতটুকু অধিকার সংবিধানে দেওয়া হবে৷ টারনার প্রশ্ন, ‘‘আমি যদি ভোট দিই, সরকার কি আমার কথা শুনবে?’’
ছবি: JAIMI JOY/Reuters
ভবিষ্যৎ অস্পষ্ট
অস্ট্রেলিয়ার শহর অ্যালিস স্প্রিংসে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বাস করেন আদিবাসীরা৷ তাদের অনেকের মতে, সেখানে নেই পর্যাপ্ত চাকরি, স্বাস্থ্য পরিষেবা ও ইন্টারনেট সংযোগ৷ অনেক আদিবাসী লিখতে পড়তেও জানেন না৷ শিক্ষা ব্যবস্থাও যথেষ্ট নেই৷
ছবি: JAIMI JOY/Reuters
বদল আনবে ভোট?
এবারের গণভোটের মূল বিষয় সংবিধান বদলে তাতে আদিবাসীদের অধিকার বর্ধিত করা৷ এই লক্ষ্যে নতুন প্রতিষ্ঠান ‘দ্য ভয়েস’ তৈরি করা হবে, যার কাজ হবে সংসদ সদস্যদের আদিবাসীদের বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া৷
ছবি: JAIMI JOY/Reuters
প্রশ্ন, শুধু প্রশ্ন
অবসরপ্রাপ্ত প্যাট্রিক অলিভার তার পরিবারের আরো ১৫জন সদস্যের সাথে এক ছাদের তলায় বাস করেন৷ গণভোটে তার প্রবল অনাস্থা৷ মাত্র দুই মাস আগে এই ভোটের কথা তিনি জানতে পারেন৷ কীভাবে এই গণভোট তার এলাকার ছয়শ আদিবাসীকে সাহায্য করবে, জানতে চান তিনি৷ জমির অধিকার আদিবাসীরা পাবে কি না, সেবিসয়েও তিনি সন্দিহান৷
ছবি: JAIMI JOY/Reuters
বেকার তারুণ্য
গত বছর অ্যালিস স্প্রিংস শিরোনামে উঠে আসে বাড়তে থাকা অপরাধের হারের জন্য৷ স্থানীয়দের কেউ কেউ সম্পত্তির ক্ষতি ও নেশাগ্রস্ত হয়ে মারামারির জন্য দোষারোপ করেন আদিবাসী কিশোরদের৷ জবাবে কর্তৃপক্ষ মদ বিক্রিতে কড়াকড়ি আরোপ করে৷ কিন্তু তাতেও বাড়েনি এই অঞ্চলের তরুণদের জন্য কাজের সুযোগ৷
ছবি: JAIMI JOY/Reuters
নেই কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম
অস্ট্রেলিয়ার জনসংখ্যার প্রায় ৪ শতাংশ ( তিন দশমিক ৮ শতাংশ) আদিবাসী৷ কিন্তু নিউজিল্যান্ড, ক্যানাডা বা অ্যামেরিকার মতো অস্ট্রেলিয়ায় আদিবাসীদের সাথে কর্তৃপক্ষের কোনো রকম বোঝাপড়া এখনও তৈরি হয়নি৷ সরকারি নীতি মেনেই গত শতাব্দীতে আদিবাসীরা তাদের জমি কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেয়৷ আদিবাসীদের মধ্যে লক্ষণীয়ভাবে বেশি দারিদ্র্য, স্বল্প আয়ু, কারাবাসে থাকা ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না পাওয়ার হার৷
ছবি: JAIMI JOY/Reuters
পক্ষ, বিপক্ষ রাজপথে
সরকারের মতে, দ্য ভয়েস-এর মতো পরিকল্পনা আদিবাসীদের মধ্য থেকে সমাধান খুঁজে আনতে সাহায্য করতে পারে৷ ১৭ সেপ্টেম্বর দেশজুড়ে পালিত হয় ‘ইয়েস’ মিছিল, যেখানে অংশগ্রহণ করেন কয়েকশ শ্বেতাঙ্গ সমর্থক৷ বিপরীতে ‘নো’-পক্ষের আয়োজন প্রায় না থাকারই সমান৷
ছবি: JAIMI JOY/Reuters
বিভক্ত জনতা
জরিপ বলছে, বেশিরভাগ ভোটই পড়বে ‘নো’-এর ঘরে৷ এই মনোভাব আদিবাসী শিল্পী ক্যাথি কুলথার্ডেরও৷ অ্যালিস স্প্রিংসের বাসিন্দা ক্যাথির মতে, দ্য ভয়েস প্রতিষ্ঠা হলে সেখানে ‘ইউরোপীয়দের সাথে অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীরা শুধু কথা বলার জন্যেই লড়বে’৷