২০২২ সালের মধ্যে সারা বিশ্ব থেকে এক বার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যাগ নিশ্চিহ্ন করার ঘোষণা দিয়েছে জাতিসংঘ৷ কিন্তু এ ঘোষণা কার্যকরের পদক্ষেপ নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সুপারমার্কেটগুলো পড়েছে মহাবিপদে৷
বিজ্ঞাপন
জাতিসংঘ ২০২২ সালের মধ্যে সারা বিশ্ব থেকে এক বার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যাগ নিশ্চিহ্ন করার যে ঘোষণা দিয়েছে, অন্তত ৬০টি দেশে তা কার্যকর করার চেষ্টা শুরু হয়েছে৷ কুইন্সল্যান্ড, ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া, সাউদার্ন অস্ট্রেলিয়া, তাসমানিয়া, অস্ট্রেলিয়ান ক্যাপিটেল টেরিটরি বা এসিটি এবং নর্দার্ন টেরিটরি – সব মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়ার খুব বড় একটা অংশেই সুপারমার্কেটগুলো একযোগে নিষিদ্ধ করেছে এক বার ব্যাবহারোপযোগী প্লাস্টিকের ব্যাগ৷ কিন্তু ক্রেতাদের মাঝে প্রতিক্রিয়াটা হয়েছে ভয়াবহ৷
একক ব্যবহার্য প্লাস্টিকের বিকল্প
ইউরোপিয়ান কমিশন ‘ডিসপোজেবল’ প্লাস্টিকের বস্তু নিষিদ্ধ করতে উদ্যোগী৷ তা বলে কি প্লাস্টিকের প্লেট, চামচ, স্ট্র ব্যবহার করবেন না? বরং বিকল্প বস্তুগুলির দিকে নজর রাখুন৷
লক্ষ লক্ষ প্লাস্টিকের স্ট্র বর্জ্য হিসেবে পড়ে থাকে৷ সমুদ্র এবং স্থলভাগে এগুলি স্তূপাকারে জমা হয়৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাই প্লাস্টিকের বর্জ্য কমাতে স্ট্রয়ের মতো একক ব্যবহার্য প্লাসটিক বন্ধ করতে চায়৷ কিন্তু যাঁরা স্ট্র ছাড়া থাকতে পারবেন না, তাঁ#দের কী হবে? পরিবেশ বান্ধব স্ট্র রয়েছে না তাদের জন্য! ছবিতে বিশ্ব রেকর্ড সৃষ্টিকারী মার্কো হর্ট ২৫৯ টি স্ট্র মুখে!
ছবি: AP
নয়া উপায় কী?
সমুদ্রের জলজীবেরা প্রায়ই প্লাস্টিকের স্ট্র খেয়ে নেয়৷ তাই যাতে সমুদ্রে স্ট্র জমা না হয়, তাই স্ট্র খেয়ে ফেলাই ভালো৷ ‘ওয়াইস ফুড’ নামে একটি জার্মান স্টার্ট আপ সংস্থা এমনই ভোজ্য স্ট্র বানিয়েছে৷ আপেলের রস বের করার পর তার ছিবড়ে দিয়ে তারা তৈরি করেছে এই অভিনব স্ট্র৷ প্লাস্টিকের দূষণ রোধ করতে ধাতু, কাঁচ বা বাঁশের তৈরি স্ট্র ব্যবহার করা যেতেই পারে৷
ছবি: Wisefood
একে কি চামচবিদ্ধ বলে?
একবার ব্যবহার করার পরেই বহু জিনিস আমরা ফেলে দিই৷ এমন কত চামচ, ছুরি আর কাঁটাচামচ যে ফেলে দিই, তার সংখ্যা বলা যাবে না৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন এসব বন্ধ করতে চলেছে৷ যাত্রাপথে আমরা ধাতব চামচ ব্যবহার করতে পারি না৷ সে জন্যই দরকার ভোজ্য চামচ, যা ব্যবহারের পর খেয়ে ফেলা যায়৷ একটি ভারতীয় স্টার্ট আপ সংস্থা জোয়ার নির্মিত এমনই এক কাঁটাচামচ তৈরি করেছে, যা ভোজ্য৷ একটি মার্কিন কোম্পানিও আলু দিয়ে এমন জিনিস তৈরি করেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Scholz
কিছুই পড়ে থাকবে না
চামচের পরে আসি প্লাস্টিকের প্লেটের কথায়৷ ইতিমধ্যে ইইউ প্লাস্টিকের প্লেট নিষিদ্ধ করার পথে৷ তাই এবার ভোজ্য প্লেটের ভাবনা! পোল্যান্ডের একটি সংস্থা এবার তুষ থেকে প্লেট তৈরি করেছে৷ আর প্লেট যদি না খেতে পারেন, তাহলে চিন্তা নেই৷ প্লেটটি জৈব বস্তু দিয়ে তৈরি এবং বায়োডিগ্রেডেবল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Reszko
কাপ বাদ দিন
ইইউ রেস্তোরাঁ, ক্যাফেগুলিতেও প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ে যথেষ্ট মুখর৷ একবার চুমুকের পর কত কাপ যে ফেলে দেওয়া হয়, তা বলা বাহুল্য! তাই সে দিকেও জৈব উপাদানে তৈরি কাপের কথা ভাবা হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/empics/D. Thompson
এটা প্লাস্টিক নয়
ভুট্টা শ্বেতসার দিয়ে বায়োপ্লাস্টিক তৈরি হয়েছে৷ এটা দেখতে কাপের মতোই এবং হাতে ধরলে অনেকটা পেট্রোলিয়ামজাত কাপের মতো মনে হবে৷ এটা বায়োডিগ্রেডেবল বা মাটিতে মিশে যায় সহজেই৷
ছবি: Avani-Eco
পুনর্ব্যবহার
প্লাস্ট্কি কাপ পুনর্ব্যবহার করে নানরকম বস্তু তৈরি করা এসব ক্ষেত্রে ভালো উপায়৷ কিন্তু রাস্তাঘাটে বেরোলে নিজের কফিপাত্রটি পাবেন কোথায়? বার্লিন শহরে রাস্তাঘাটে ইদানীং সামান্য টাকায় পুনর্ব্যবহৃত বস্তু দ্বারা তৈরি কফিপাত্র পাওয়া যাচ্ছে৷ পরবর্তী স্থানে সেটা অন্য কাউন্টারে ফিরিয়ে দিলেই হলো! .
ছবি: justswapit
কান পরিষ্কার আর সমুদ্রে আবর্জনা!
কান পরিষ্কার রাখার ‘বাড’ দেখতে ছোট হলেও প্লাস্টিকজাত বস্তু হিসেবে এটাও বেশ দূষণ ছড়ায়৷ জিনিসটিকে সামুদ্রিক প্রাণীরা মাঝে মাঝে খেয়েও ফেলে৷ তাই প্লাস্টিক মুক্ত ‘বাড’ তৈরিতে বাঁশ বা কাগজ ব্যবহার করা যেতেই পারে৷ তবে কান পরিষ্কার করতে তোয়ালেও ব্যবহার যেতে পারে৷
ছবি: picture alliance/dpa/Wildlife Photographer of the Year /J. Hofman
8 ছবি1 | 8
শপ, ডিস্ট্রিবিউটিভ অ্যান্ড অ্যালায়েড এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন তাদের ১৩২ সদস্যের মাঝে একটি সমীক্ষা চালিয়েছে৷ সেই সমীক্ষা থেকেই বেরিয়ে এসেছে ভয়াবহ চিত্র৷ ১৩২ জনের মধ্যে ৫৭ জন সদস্যই জানিয়েছেন, প্লাস্টিকের ওই ব্যাগ নিষিদ্ধ করায় তারা নিপীড়নের শিকার হয়েছেন৷ অনেক জায়গাতেই এতদিন যেই ব্যাগ বিনা পয়সায় দেয়া হতো তা একেবারে নিষিদ্ধ শুনে ক্রেতারা চটে গিয়ে সদ্য কেনা পণ্য ছড়িয়ে-ছিটিয়ে সুপারমার্কেটে ফেলে চ্যাচামেচি শুরু করেছেন৷ কোথাও কোথাও ক্ষুব্ধ ক্রেতারা চড়াও হয়েছেন সুপারমার্কেটের কর্মীদের ওপর৷
সেরকমই এক ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে দোকানদার এবং পরিবেশকদের সংগঠনের সহকারী সচিব বেন হ্যারি বলেন, ‘‘সেদিন এক পুরুষ ক্রেতা সেল্ফ সার্ভিস এলাকায় গিয়ে এক নারী কর্মীর উদ্দেশ্যে অশোভনভাবে চিৎকার শুরু করেন৷ ওই কর্মী তখন এগিয়ে এসে লোকটিকে সৌজন্য হিসেবে কয়েকটি ব্যাগ দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন৷ তারপর লোকটি ভুল করে একই জিনিস দু'বার স্ক্যান করে ফেলে৷ ভুলটা দেখে ওই নারী কর্মী তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে যান৷ লোকটি তখন আরো চটে গিয়ে নারী কর্মীর গলা চেপে ধরে৷''
প্লাস্টিক দূর করছে যে শহর
05:12
অনেক জায়গায় ক্রেতারা প্রাস্টিকের ব্যাগ না পেয়ে সুপারমার্কেটের কর্মীদের ‘অর্থলোভী' বলে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, কোথাও কোথাও অশ্রাব্য গালাগালও করছেন তারা৷ কেউ কেউ আবার আগের ব্যবহার করা ব্যাগে বমি, ময়লা-আবর্জনা ভরে এনে ছুড়ে মারছেন সুপারমার্কেটের কর্মীদের দিকে৷