ইসরায়েলের নির্বাচনের ফলাফল এখনো প্রকাশিত না হলেও সমীক্ষা অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বড় ধাক্কা খেয়েছেন৷ সরকার গড়তে ব্যর্থ হলে দুর্নীতির অভিযোগে তাঁকে শাস্তি ভোগ করতে হতে পারে৷
বিজ্ঞাপন
এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বেনইয়ামিন ‘বিবি' নেতানিয়াহু৷ এই সময়কালে ইসরায়েলের মানুষকে নিরাপত্তা নিয়ে প্রায় কোনো দুশ্চিন্তা করতে হয় নি৷ আত্মঘাতী হামলা স্বাভাবিক জীবনযাত্রা স্তব্ধ করে দেয় নি৷ কিন্তু অন্যদিকে চরম বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছেন এই নেতা৷ তাঁর ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও প্রতারণাসহ একাধিক মারাত্মক অভিযোগ উঠেছে, সেগুলির ভিত্তিতে তদন্তও চলছে৷ ক্ষমতা হারালে ও সংসদ সদস্য হিসেবে রক্ষাকবচ উঠে গেলে বিবির বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে৷
এই অবস্থায় নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে নির্বাচনকেই হাতিয়ার করেছিলেন বিবি৷ গত এপ্রিল মাসে নির্বাচনে কোনোরকমে জিতে জোট সরকার গঠনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি৷ কিন্তু সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় আবার নির্বাচন আয়োজন করতে হয়েছে৷ মঙ্গলবার ইসরায়েলের মানুষ আবার ভোট দিয়েছেন৷ এখনো ফলাফল জানা না গেলেও বিভিন্ন সমীক্ষা অনুযায়ী এবারও নেতানিয়াহুর পক্ষে ক্ষমতায় টিকে থাকা কঠিন হবে৷ সরকারি ফলাফল জানতে এক সপ্তাহের বেশি সময় লাগতে পারে৷ তবে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের এক দিন আগেই স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যেতে পারে৷
এবারের নির্বাচনে বিবির প্রধান প্রতিপক্ষ সামরিক বাহিনীর প্রাক্তন প্রধান ও মধ্যপন্থি ‘নীল ও সাদা' দলের নেতা বেনি গানৎস৷ দুজনের মধ্যে কেউই জয়ের দাবি করতে পারছেন না৷ মঙ্গলবার রাতে লিকুদ দলের সদর দপ্তরে বিবি নেতানিয়াহুকে কিছুটা বিমর্ষ দেখাচ্ছিল৷ অন্যদিকে গানৎস আত্মবিশ্বাসে ভরপুর ছিলেন৷ শেষ পর্যন্ত যে দলই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাক না কেন, জোট গড়তে অন্যান্য দলের সমর্থনের প্রয়োজন হবে৷ ধর্মীয় ভবাদর্শে উদ্বুদ্ধ ও ধর্মনিরপক্ষ দলগুলির মতিগতির উপর সেই জোটগঠন অনেকটাই নির্ভর করবে৷ ধর্মভিত্তিক দলগুলি নেতানিয়াহু ও ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলি গানৎস-এর প্রতি সমর্থন জানাতে পারে৷ তবে সরকার গড়ার উদ্যোগ আবার বিফল হলে জাতীয় ঐক্য সরকার গঠনের সম্ভাবনাও রয়েছে৷ তবে সে ক্ষেত্রে নেতানিয়াহুর পক্ষে প্রধানমন্ত্রী থাকা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷
পশ্চিম তীরে একসময় শুধু ফিলিস্তিনি মুসলমানরাই ছিলেন৷ তবে ১৯৬৭ সালে তা দখল করে সেখানে ইহুদিদের বসতি গড়তে শুরু করে ইসরায়েল৷ এখন দু’ পক্ষেরই দাবি, ‘‘এই ভূমি আমাদের৷’’ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Reuters/R. Sawafta
বাড়ছে, বাড়বে ইহুদিদের বসতি
পশ্চিম তীরে ইতিমধ্যে ১২০টি বসতি গড়ে দিয়েছে ইসরায়েল সরকার৷ গত সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের সময়ই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়ানহু বলে রেখেছেন ভবিষ্যতে আরো বসতি গড়া হবে অধিকৃত সেই অঞ্চলে৷
ছবি: Reuters/Peace now
‘এই জায়গা আমাদের বাইবেলেও তা বলা আছে’
মাইকেল নেটসার৷ বয়স ৬৩ বছর৷ ইহুদি এই ব্যক্তি ১৯৮৫ সাল থেকে পশ্চিম তীরের বাসিন্দা৷ পশ্চিম তীর ইসরায়েল বা ইহুদিদের নয় তা তিনি একেবারেই মানতে রাজি নন৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘ইহুদিরা এখানে বাস করতে পারবে না, এ কথাটা খুবই হাস্যকর৷ এটা তো বাইবেলের অংশ৷ আমি প্রশ্ন করতে চাই— আপনার পূর্বপুরুষ বা পূর্বপুরুষের ভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া কি এত সহজ? মোটেই তা নয়৷ ইতিহাসই ইহুদিদের এখানে নিয়ে এসেছে৷ ’’
ছবি: Reuters/R. Zvulun
‘এই ভূমি আমার হুদয় এবং আত্মা’
মুসলিম কৃষক আজমি মুসলেহর সোজা দাবি— এই ভূমি মুসলমানদের৷ তিনি বলেন, ‘‘ওই জায়গাটা আমার হৃদয় এবং আত্মা৷ ওটা আমার পরিবারের হৃদয় এবং আত্মা৷’’ তিনি জানান, এখন যেখানে ইহুদিদের বাস, এক সময় সেখানে তাঁরা চাষবাস করতেন৷
ছবি: Reuters/R. Zvulun
‘নিজেকে সেটলার মনে হয় না আমার’
৬০ বছর বয়সি মাইকের কোভেন-ভোগেল ইহুদি৷ পেশায় আইনজীবী৷ পশ্চিম তীর দখল করে ইসরায়েল সেখানে তাদের জন্য বসতি গড়ে দিলেও নিজেকে আর বহিরাগত মনে হয় না তার৷ তিনি বললেন, ‘‘নিজেকে মোটেই সেটলার মনে হয় না৷’’ তিনি মনে করেন, ইসরায়েল ইহুদিদের জন্য আরো বসতি গড়ে দিলে ভালো হবে৷
ছবি: Reuters/R. Zvulun
‘এই জায়গা ইসরায়েলের জনগণের’
৪৩ বছর বয়সি ইহুদি ইতাই জার মনে করেন, ‘‘এই জায়গা যে ইসরায়েলি জনগণের সে বিষয়ে কোনো প্রশ্নই উঠতে পারে না৷’’
ছবি: Reuters/R. Zvulun
‘অন্য জায়গায় জমি কেনা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়’
ডেভিড হামবার্গারও একজন ইহুদি৷ ইসরায়েলে জমি কিনে বাড়ি তৈরি করা সম্ভব নয় বলে পশ্চিম তীরে বাস করছেন তিনি৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘আমরা আদর্শিক কারণে এখানে আসিনি৷এই জায়গায় না কিনলে অন্য কোথাও জমি কিনে বাড়ি বানানো আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়৷’’
ছবি: Reuters/N. Elias
‘আমাদের মধ্যে শান্তি আসা অসম্ভব’
মোহাম্মদ আওয়াদ একজন ফিলিস্তিনি মুসলমান৷ বয়স ৬৪ বছর৷ তাঁর মতে, পশ্চিম তীরে শান্তি আসার কোনো সম্ভাবনা নেই, ‘‘একটি শান্তিপূর্ণ এলাকা ওরা দখল করে নেয়ার কারণে এই দ্বন্দ্বের সূত্রপাত৷ ফলে এখানে শান্তি আসা অসম্ভব৷আমার জমি কেউ চুরি করে নিয়েছে এটা কেমন করে মেনে নেবো? তার সঙ্গে কিভাবে শান্তিতে বসবাস করবো?’’