নিজেদের অস্ত্রভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করতে সাইবার আক্রমণের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে অর্থ আর ক্রিপ্টোকারেন্সি হাতিয়ে নিচ্ছে উত্তর কোরিয়া৷ অভিযোগ রয়েছে এ পর্য্ন্ত দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে তারা৷
বিজ্ঞাপন
দেশটির সাইরবার হামলাগুলো এতটাই সুপরিকল্পিত, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণই মিলছে না৷ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এমন তথ্য দিয়েছে৷
গত ছয় মাস ধরে পিয়ংইয়ংয়ের ওপর আরোপ করা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞাগুলো পর্যবেক্ষণ করে প্রতিবেদন তৈরি করেছেন বিশেষজ্ঞরা৷ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তর কোরিয়া ‘বড় আকারে এবং বুদ্ধিমত্তার' সঙ্গে সাইবার হামলা চালাচ্ছে৷ এখন পর্যন্ত দেশটি দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে বলেও দাবি করেছেন বিশেষজ্ঞরা৷
বিভিন্ন আর্থিক ও ক্রিপ্টোকারেন্সি বিনিময় প্রতিষ্ঠান থেকে এই অর্থ চুরি করা হয়েছে বলেও উল্লেখ রয়েছে প্রতিবেদনে৷ বলা হচ্ছে, ১৭টি দেশে অন্তত ৩৫টি হামলা চালিয়েছে তারা, যা এখন খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷ সরকারি তদারকি কম এবং ব্যাংকিং খাতের ঢিলেঢালা নিয়ন্ত্রণ থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাছাই করে হামলা চালিয়েছে উত্তর কোরিয়া, যাতে কেউ তাঁদের শনাক্ত করতে না পারে৷
জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার কারণে প্রচলিত রাজস্ব উৎস থেকে বঞ্চিত দেশটি৷ এছাড়া কয়লা, লোহা, সিসা, টেক্সটাইল এবং সামুদ্রিক খাদ্য রপ্তানিও নিষিদ্ধ রয়েছে দেশটির৷
‘অবমূল্যায়ন' করা যাবে না
সোমবার ওয়াশিংটনভিত্তিক উত্তর কোরিয়ার থিঙ্কট্যাংক ‘৩৮ নর্থ' তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়া সরকারের সাইবার হামলার সক্ষমতাকে অবমূল্যায়ন করা উচিত হবে না৷ প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, সাইবার হামলাগুলোর তথ্য-উপাত্ত খুঁজে বের করাটাও মুশকিল হবে৷
বিটকয়েন সম্পর্কে যা জানা দরকার
বেশ কিছু দিন ধরেই বিশ্ব গণমাধ্যমে ‘বিটকয়েন’ বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে৷ হঠাৎ করে এই ডিজিটাল মুদ্রার অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এই আলোচনার কারণ৷ কিন্তু বিটকয়েনের ভবিষ্যৎ কী?
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Kalaene
শুরুর কথা
২০০৮ সালে বিশ্বব্যাপী যে আর্থিক মন্দা দেখা দিয়েছিল তার পরের বছর বিটকয়েনের যাত্রা শুরু৷ মন্দার কারণে প্রচলিত মুদ্রাব্যবস্থার প্রতি মানুষের বিশ্বাসে যে ফাটল ধরেছিল তাকে পুঁজি করে ডিজিটাল এই মুদ্রা চালু করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Kalaene
যেন সোনা
বিটকয়েনের স্রষ্টা বা স্রষ্টারা একে সোনার মতোই মূল্যবান হিসেবে দেখতে চেয়েছেন৷ তাই এটি যেন বিশাল পরিমাণে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য সর্বোচ্চ সংখ্যা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে৷ এবং সেটি হচ্ছে দুই কোটি ১০ লক্ষ৷ শুরুতে এক বিটকয়েনের মূল্য এক সেন্টেরও কম ছিল৷ ২০১১ সালে এটি এক ডলার সমমানের হয়৷ পরবর্তীতে দাম বেড়ে গতমাসের মাঝামাঝি সর্বোচ্চ ১৯ হাজার ৮০০ ডলার হয়েছিল৷
ছবি: DW/M. Sevcenko
দাম বাড়া-কমা
তবে শেয়ার মূল্যের মতোই প্রতিক্ষণে বিটকয়েনের মূল্য ওঠানামা করে৷ তবে পার্থক্য হচ্ছে, শেয়ার মূল্যের কমা-বাড়ার ব্যাখ্যা হয়ত বিশেষজ্ঞরা দিতে পারেন, কিন্তু বিটকয়েনের ক্ষেত্রে সেটি এখনও সম্ভব নয়৷
ছবি: Imago/imagebroker/M. Weber
নিয়ন্ত্রণহীন
শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য যেমন নিয়ন্ত্রক সংস্থা আছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য আছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক৷ কিন্তু বিটকয়েনের মতো ডিজিটাল মুদ্রা নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা নেই৷
ছবি: Reuters/D. Ruvic
পরিচয় গোপন
বিটকয়েনের মালিকরা পরিচয় গোপন রেখে লেনদেন করতে পারেন৷ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা কম্পিউটার নেটওয়ার্কে বিটকয়েন তৈরি করা হয়৷ এই মুদ্রা লেনদেনে কোনো খরচ নেই৷
ছবি: Getty Images/D. Kitwood
দেখা যায় না
ডলার, ইউরো বা টাকার মতো এই মুদ্রা দেখা যায় না৷ কারণ এই অর্থ জমা হয় ডিজিটাল ওয়ালেটে৷ ওয়েবসাইটের পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা প্রায় ১,৯০০ বিটকয়েন এটিএম (২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত) থেকেও এটি কেনা যায়৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/J. Arriens
উদ্ভাবক কে?
বিটকয়েনের সৃষ্টিকর্তা হিসেবে সাতোশি নাকামোতো নামে এক ত্রিশোর্ধ্ব জাপানি নাগরিকের নাম জড়িয়ে আছে৷ তবে সাধারণভাবে বিশ্বাস করা হয়, কয়েকজন কম্পিউটার বিজ্ঞানী ডিজিটাল মুদ্রার পেছনের প্রযুক্তিটি তৈরি করেছেন৷ মার্কিন কোম্পানি টেসলা’র প্রধান এলোন মাস্ক-ই (ছবি) আসলে সাতোশি বলে একটি গুজব রয়েছে৷ অবশ্য তিনি তা অস্বীকার করেছেন৷
ছবি: Reuters/AAP/B. Macmahon
সাফল্যের অন্য কারণ
পরিচয় গোপন রেখে বিটকয়েনের লেনদেন করা যায় বলে মানি লন্ডারিংসহ অবৈধ পণ্য কেনাবেচার ক্ষেত্রে এটি ব্যবহৃত হয়৷ এটিও এই মুদ্রার সাফল্যের আরেকটি কারণ বলে মনে করা হয়৷ সাইবার অপরাধীরাও এটি ব্যবহার করে৷ তথাকথিত জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট বা আইএসও বিটকয়েনের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে বলে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/Zuma Press/M. Dairieh
অন্য ডিজিটাল মুদ্রা
বিটকয়েনের সাফল্য অনুপ্রাণিত হয়ে আরও প্রায় এক হাজারের বেশি ডিজিটাল মুদ্রার আবির্ভাব ঘটেছে৷ এর মধ্যে সফল হওয়া কয়েকটি হচ্ছে ইথেরিয়াম, জেডক্যাশ, বিটকয়েন ক্যাশ, রিপল ও লাইটকয়েন৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/J. Arriens
বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করছে
২০১৭ সালের জানুয়ারিতে এক বিটকয়েনের মূল্য ছিল এক হাজার ডলারের সমপরিমাণ৷ ১২ মাস পর ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সেটি হয় সাড়ে ১৯ হাজারের বেশি৷ ফলে শঙ্কা থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে বিটকয়েন আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণে সমর্থ হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/V. Astapkovich
বিটকয়েনের ক্রেতারা ‘বোকা’
আর্থিক প্রতিষ্ঠান জেপিমর্গান চেজ এর প্রধান নির্বাহী জেমি ডিমোন বলেছেন, যাঁরা বিটকয়েন কেনেন তাঁরা ‘বোকা’৷ নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্টিগলিৎসও (ছবি) বিটকয়েন সম্পর্কে সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছেন৷ বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বিখ্যাত বিনিয়োগকারীরা বলেছেন, বিটকয়েনের মালিকরা শেষ পর্যন্ত দুর্যোগে পড়বেন৷
ছবি: World Economic Forum/Benedikt von Loebell
11 ছবি1 | 11
হ্যাকিংয়ের পেছনে কারা?
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশকিছু সাইবার হামলার জন্য উত্তর কোরিয়ার হ্যাকার গ্রুপ ‘লাজারুস'-এর দিকে আঙুল তুলছেন বিশেষজ্ঞরা৷ ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে লাজারুসের সঙ্গে সম্পৃক্ত এক ‘হাই-প্রোফাইল' হ্যাকার নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে খোলা বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার চুরি করে৷
পরের বছর তাইওয়ানের ফার ইস্টার্ন ব্যাংকের কম্পিউটার সিস্টেমে মেলওয়্যার পাঠিয়ে ৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার চুরি করে লাজারুসের আরেক হ্যাকার৷ এর আগে ২০১৪ সালে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সনির সিস্টেম হ্যাক করে তাদের সার্ভারের সব ডেটা মুছে দিয়েছেল লাজারুস চক্র৷ তাতে ক্ষতি হয়েছিল অন্তত ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার৷
সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের আন্তর্জাতিক সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ জেমস লুইস বলেন, ‘‘কিম পরিবারের ব্যয়বহুল অস্ত্র পরীক্ষা আর দেশের অস্ত্রের মজুদ বাড়াতে অপরাধকে উৎসাহিত করছে উত্তর কোরিয়া৷ দেশটি এখন রাষ্ট্র পরিচালিত সাইবার সন্ত্রাসীর কারখানায় পরিণত হয়েছে৷''