অস্ত্ররপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্রের 'পৌষ মাস', চীনের 'সর্বনাশ'
১৪ মার্চ ২০২৩
চার বছর পর আবার প্রকাশিত হয়েছে স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট (সিপ্রি)-র প্রতিবেদন। সেখানে দেখা গেছে অস্ত্র রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্রের ভীষণ উন্নতি, উল্টোদিকে চোখে পড়েছে চীনের অবনতি।
বিজ্ঞাপন
করোনা মহামারির কারণে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের অর্থনীতিই পড়েছিল সংকটে। তার মাঝেই শুরু হয় ইউক্রেন যুদ্ধ। তার প্রভাবও পড়ে অর্থনীতিতে। জ্বালানি সংকট ওঠে চরমে, মুদ্রাস্ফীতির চাপে অনেক দেশেই জনজীবনে নামে বিপর্যয়। সেই বিপর্যয়ের সবচেয়ে বড় দৃষ্টান্ত শ্রীলংকা।
অন্য কোনো দেশের অবস্থা এত খারাপ না হলেও ২০১৮ থেকে ২০২২ -এই সময়ে অস্ত্র ক্রয়ে অর্থ বরাদ্দ বিশ্বের বেশিরভাগ দেশই বাড়াতে পারেনি। ফলে ওই চার বছরে সারা বিশ্বে অস্ত্র আমদানি কমেছে। তবে এসব ক্ষেত্রে ইউরোপের বেশিরভাগ দেশই ব্যতিক্রম। সিপ্রির প্রতিবেদন বলছে, ওই সময়ে ইউরোপের দেশগুলোতে অস্ত্র আমদানি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। সিপ্রির প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউরোপের দেশগুলোতে অস্ত্র আমদানি বৃদ্ধির প্রধান কারণ ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা। এই হামলার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র রপ্তানি অনেকটা বেড়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে ইউক্রেনের অস্ত্র-সম্ভার
পশ্চিমা দেশগুলির সহযোগিতায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়ছে ইউক্রেন। কী কী অস্ত্র আছে ইউক্রেনের হাতে?
ছবি: Sergey Kohl/Zoonar/IMAGO
সাহায্যের পরিমাণ
সাহায্যের নিরিখে সবচেয়ে বেশি অর্থ খরচ করেছে অ্যামেরিকা। আট দশমিক ৭৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সাহায্য পাঠিয়েছে। পোল্যান্ড দিয়েছে এক দশমিক ৮৩ বিলিয়ন। যুক্তরাজ্যের সাহায্যের পরিমাণ এক দশমিক ৩৬ বিলিয়ন। জার্মানি খরচ করেছে শূন্য দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার।
ছবি: Yasuyoshi chiba/AFP
হাইমারস রকেট
অ্যামেরিকা ইউক্রেনকে হাইমারস রকেট লঞ্চার সিস্টেম দিয়েছে। প্রায় একডজন হাইমারস দিয়েছে অ্যামেরিকা। এই রকেট সিস্টেমের সাহায্যে ৮০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ চালানো যায়। ঘণ্টায় ৮৫ কিলোমিটার বেগে লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছায় এই রকেট। রাশিয়ার হাতে এত ভালো রকেট সিস্টেম নেই বলে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য। রাশিয়া বিএম-৩০ দূরপাল্লার রকেট ব্যবহার করছে। যার ৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারে।
ছবি: Gabrielle Quire/abaca/picture alliance
হাউইৎজারের ব্যবহার
চলতি বছরে অস্ট্রেলিয়া, ক্যানাডা এবং অ্যামেরিকা পৃথকভাবে মোট ১০০টি হাউইৎজার দিয়েছে ইউক্রেনের সেনাকে। এম৭৭৭ হাউইৎজারের সঙ্গে ১৫৫ মিলিমিটারের তিন লাখ রাউন্ড কার্তুজ দেওয়া হয়েছে। রাশিয়ার সবচেয়ে ভালো হাউইৎজারের সমকক্ষ এই এম৭৭৭।
ছবি: AP Photo/Efrem Lukatsky/picture alliance
ট্যাঙ্ক ধ্বংসকারী অস্ত্র
ইউক্রেনের হাতে এখন পাঁচ হাজার ট্যাঙ্ক ধ্বংসকারী অস্ত্র আছে। কাঁধে নিয়ে এই অস্ত্র চালাতে হয়। অ্যামেরিকা এবং ইউরোপের একাধিক দেশ ইউক্রেনকে এই অস্ত্র দিয়েছে। এর সাহায্যে ২২ থেকে ৮৭৫ গজের মধ্যে থাকা ট্যাঙ্ক ধ্বংস করা যায়। জার্মানি ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে এই অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণও দিয়েছে। যুদ্ধে এই অস্ত্র ইউক্রেনকে বহু জায়গায় জয় পেতে সাহায্য করেছে।
ছবি: Andrew Chittock/StockTrek Images/IMAGO
ট্যাঙ্কের পরিমাণ
পোল্যান্ড এবং চেক রিপাবলিক ইউক্রেনকে মোট ২৩০টি ট্যাঙ্ক দিয়েছে। টি-৭২এম১ ট্যাঙ্কের ওজন ৪৬ টন। তিনজন ভিতরে বসতে পারেন। ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার বেগে দৌড়তে পারে এই ট্যাঙ্ক। আঘাত হানতে পারে চার কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে। এছাড়াও যুক্তরাজ্যের চ্যালেঞ্জার-২ ট্যাঙ্ক এবং ইউক্রেনের পুরনো টি-৭২ ট্যাঙ্কও তাদের কাছে আছে।
ছবি: Inna Varenytsia/AP/picture alliance
ড্রোনের ব্যবহার
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে প্রচুর ড্রোনের ব্যবহার হচ্ছে। ইউক্রেনকে বেশ কিছু ড্রোন বিক্রি করেছে তুরস্ক। যার সাহায্যে ইউক্রেন নজরদারি করছে, আবার আক্রমণও চালাচ্ছে। তুরস্কের বায়রাকটার টিবি-২ ড্রোন ২৫ হাজার ফুট পর্যন্ত উড়তে পারে। ৩০০ কিলোমিটার পাড়ি দিতে পারে। ছুটতে পারে ২২০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায়। ৪এমএএম-এল লেজার গাইডেড বোমা নিয়ে যেতে পারে এই ড্রোন।
ছবি: PETRAS MALUKA/AFP/Getty Images
এয়ার ডিফেন্স
সম্প্রতি জার্মানি ইউক্রেনকে একটি আইআরআইএস-টি এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম পাঠিয়েছে। আরো তিনটি কিছুদিনের মধ্যেই পাঠানোর কথা। অত্যাধুনিক এই অস্ত্র রাশিয়ার হাতে নেই। এছাড়াও অ্যামেরিকার কাছ থেকে তারা এনএএসএএমএস সারফেস টু এয়ার মিসাইল সিস্টেম পেয়েছে। স্লোভাকিয়া এস-৩০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম দিয়েছে। এস-৩০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ৯০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত কাজ করতে পারে। ২০০ কিলোমিটার দূরের মিসাইল ট্র্যাক করতে পারে।
ছবি: Diehl Defence
7 ছবি1 | 7
যুক্তরাষ্ট্রআরন্যাটোরপোয়াবারো
২০১৩ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে সারা বিশ্বে যে পরিমাণ অস্ত্র বিক্রি হয়েছিল, ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সেই তুলনায় শতকরা পাঁচ ভাগ অস্ত্র কম বিক্রি হয়েছে। কিন্তু সারা বিশ্বের চিত্র যা-ই হোক, ইউরোপের দেশগুলো কিন্তু এমন সংকটের সময়ও অস্ত্র আমদানি বাড়িয়েছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি এ অঞ্চলে বেড়েছে ৪৭ ভাগ, ন্যাটোর বেড়েছে আরো বেশি - ৬৫ ভাগ।
যুক্তরাষ্ট্রেরবাণিজ্যকৌশল
রাশিয়া হামলা শুরু করার আগ পর্যন্ত মূলত দেশে তৈরি অস্ত্রের ওপরই নির্ভরশীল ছিল ইউক্রেন। দেশীয় অস্ত্র ছাড়া সোভিয়েত ইউনিয়ন আমলের কিছু পুরোনো অস্ত্রও ছিল তাদের। তবে যুদ্ধ শুরুর পর বাধ্য হয়েই অস্ত্র সংগ্রহে তৎপর হতে হয় ইউক্রেনকে। তাই ২০২২ সালে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র আমদানি করা দেশের তালিকায় তারা এখন ১৪ নম্বরে।
ইউক্রেন অবশ্য নতুন এবং অত্যাধুনিক অস্ত্র পায়নি। অন্য দেশের অব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্রই সাহায্য হিসেবে পেয়েছে তারা। এমনকি পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে বহুবার আধুনিক যুদ্ধবিমান চেয়েও পাননি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি।
ইউক্রেন যুদ্ধ: পরমাণু যুদ্ধ কি আসন্ন!
ফের ঝাপোরিজ্ঝিয়া পরমাণু কেন্দ্রের সামনে রকেট হামলা রাশিয়ার। আরো অঞ্চল পুনর্দখলের দাবি জেলেনস্কির।
ছবি: REUTERS
রকেট হামলা
বৃহস্পতিবার পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের খুব কাছে রকেট হামলা চালায় রাশিয়া। রকেটের আঘাতে একটি বাড়ি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। দুই জনের মৃত্যু হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে।
ইউক্রেন প্রশাসনের স্থানীয় সূত্র সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে, ভাঙা বাড়ির নীচে এখনো অন্তত পাঁচজন আটকে আছেন বলে মনে করা হচ্ছে। তাদের উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। মৃতদের মধ্যে একজন নারী। অন্যজনের অ্যাম্বুলেন্সে মৃত্যু হয়েছে।
ঝাপোরিজ্ঝিয়া পরমাণু কেন্দ্রটি রাশিয়া দখল করতে চায়। বুধবার এবিষয়ে দেশের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন একটি ডিক্রি জারি করেছিলেন। পরমাণু কেন্দ্রটির সম্পূর্ণ হস্তান্তর চেয়েছিলেন তিনি।
ছবি: REUTERS
ইউক্রেনের বক্তব্য
ইউক্রেন কোনোভাবেই পরমাণু কেন্দ্রটি রাশিয়ার হাতে দিতে প্রস্তুত নয়। বুধবার দেশের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, ইউক্রেন ঝাপোরিজ্ঝিয়া অঞ্চলে আরো তিনটি জায়গা পুনর্দখল করেছে। কোনোভাবেই ঝাপোরিজ্ঝিয়া পরমাণু কেন্দ্র রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া হবে না।
ছবি: Ukrainian Presidency/AP/picture alliance
পরমাণু সংস্থার প্রধান ইউক্রেনে
ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সির প্রধান কিয়েভে গিয়ে জেলেনস্কির সঙ্গে দেখা করেছেন। কীভাবে ইউরোপের সবচেয়ে বড় পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রটিকে রক্ষা করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করেছেন তিনি। জেলেনস্কিকে আশ্বাস দিয়েছেন।
ছবি: Valentyn Ogirenko/REUTERS
রাশিয়ার অধিকারে
যুদ্ধ শুরু হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রটি রাশিয়া দখল করে। তার ভিতর থেকেই তারা লড়াই চালাচ্ছিল। কিন্তু পরমাণু কেন্দ্রটি দখল করলেও কর্মীদের তারা তাড়িয়ে দেয়নি। ইউক্রেনের কর্মীরাই সেখানে কাজ করছিলেন।
ছবি: Alexander Ermochenko/REUTERS
বাইডেনের ভয়
বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, রাশিয়ার সেনা লড়াইয়ে অনেক পিছিয়ে পড়েছে। এবং সে কারণেই তার ভয়, পুটিন যে কোনো সময় পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করতে পারেন। ঠান্ডা লড়াইয়ের পর পরমাণু অস্ত্র নিয়ে এত চিন্তা করতে হয়নি বলে এদিন মন্তব্য করেছেন বাইডেন।
ছবি: picture alliance / Consolidated News Photos
রাশিয়ার অবস্থান
পুটিন আগেই জানিয়ে রেখেছেন, দেশের সার্বভৌমত্ব আঘাত পেলে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করতেও তিনি ভয় পাবেন না।
ছবি: Dmitry Astakhov/Sputnik/REUTERS
ইউক্রেনের অবস্থান
জেলেনস্কি জানিয়েছেন, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের যে জমি দখল হয়েছে, দেশের সেনা তা উদ্ধeর করতেও বদ্ধপরিকর। যার অর্থ ইউক্রেন ক্রাইমিয়া দখলেরও চেষ্টা করবে। পুটিন আগেই জানিয়েছিলেন, ক্রাইমিয়ায় আঘাত হানলে রাশিয়া ফের কিয়েভের অভিমুখে যাত্রা করবে।
ছবি: dpa/APA Images/Zuma/picture alliance
9 ছবি1 | 9
অথচ ইউক্রেন যুদ্ধ চলার সময় যুদ্ধ বিমানসহ অনেক অত্যাধুনিক অস্ত্র কিনেছে কুয়েত, সৌদি আরব, কাতার এবং জাপান। সব অস্ত্রই যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে কিনেছে তারা!
ফ্রান্সেরওবেড়েছে,কমেছেজার্মানিওচীনের
আগের মতো এখনো বিশ্বের সবচেয়ে বড় পাঁচ অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশ যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ফ্রান্স, চীন এবং জার্মানি। গত চার বছরে সার্বিকভাবে ১৪ শতাংশ রপ্তানি বাড়িয়ে সবচেয়ে উপরের জায়গাটি আরো পাকা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এ সময়ে ফ্রান্সের রপ্তানি বৃদ্ধির মাত্রা সত্যিই বিস্ময়কর। গত চার বছরে তাদের অস্ত্ররপ্তানি বেড়েছে শতকরা ৪৪ ভাগ । অন্যদিকে চীনের অস্ত্ররপ্তানি শতকরা ২৩ ভাগ কমেছে। জার্মানিরও রপ্তানি এ সময় কমেছে। সিপ্রির প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগের চার বছরের তুলনায় জার্মানির রপ্তানি শতকরা ৩৫ ভাগ কমেছে।