গত পাঁচ বছরে অস্ত্রের বাণিজ্য কয়েকগুণ বেড়েছে ইউরোপে। সিপরির নতুন রিপোর্ট প্রকাশ।
বিজ্ঞাপন
স্টকহোম ইন্টারন্যশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (সিপরি) গত পাঁচ বছরের অস্ত্র ব্যবসা নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। এই পাঁচ বছরের মধ্যে প্রায় দুই বছর করোনার ভয়াবহতা দেখেছে পৃথিবী। লকডাউন হয়েছে একের পর এক দেশে। সিপরির রিপোর্ট বলছে, এই সময়কালে বিশ্বের অস্ত্র ব্যবসা চার দশমিক ছয় শতাংশ কমলেও ইউরোপের ব্যবসা বেড়েছে প্রায় ১৯ শতাংশ। এর থেকেই বোঝায় যায়, গত পাঁচ বছরে ইউরোপে রাজনৈতিক উত্তেজনা কী পরিমাণ বেড়েছে।
যুদ্ধ করতে ইউক্রেনে পাড়ি জমানো বিদেশিদের কথা
প্রাণ বাঁচাতে লাখো ইউক্রেনীয় যখন দেশ ছাড়ছেন, তখন অনেক বিদেশি যাচ্ছেন রাশিয়ার বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরতে৷ ছবিঘরে জানুন তাদের কথা....
ছবি: Kai Pfaffenbach/REUTERS
জেলেনস্কির আহ্বান
গত সপ্তাহে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদোমির জেলেনস্কি বিশ্ববাসীকে বলেন, ‘‘আপনারা ইউক্রেনের পাশে থেকে রাশিয়ার যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে লড়াই করুন৷’ পরে’ জেলেনস্কি দাবি করেন, তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে অনেক দেশের মানুষই যুদ্ধে অংশ নিতে ইউক্রেনে আসছেন৷ এ পর্যন্ত ১৬ হাজার বিদেশি যুদ্ধে অংশ নিতে চেয়েছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি৷ ১৬ হাজারের মধ্যে কতজন ইউক্রেনে পৌঁছেছেন তা তিনি জানাননি৷
ছবি: REUTERS
যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইউক্রেনে
এক সময় যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়নে বিভিন্ন পণ্য সরবরাহের দায়িত্বে ছিলেন মাইকেল ফারকল৷ সম্প্রতি রোমে প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করার সময় জানতে পারেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বিদেশিদের যুদ্ধে অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন৷ তারপরই ইটালি থেকে ইউক্রেনে চলে এসেছেন ২৯ বছর বয়সি তরুণ৷ মাইকেল জানিয়েছেন, অস্ত্র হাতে নেবেন না, তার লক্ষ্য যুদ্ধেক্ষেত্রে প্যারামেডিক, অর্থাৎ স্বাস্থ্যসেবার করা৷
ছবি: Kai Pfaffenbach/REUTERS
কারা আসছেন?
বিদেশ থেকে আসা ২০ জনের সঙ্গে কথা বলেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স৷ তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ নেয়ার উপযুক্ত যারা এসেছেন, তাদের বড় একটা অংশই ইরাক বা আফগানিস্তান যুদ্ধে অংশ নেয়া যোদ্ধা৷ নিজের দেশের সরকার এখন আর তাদের অভিজ্ঞতার মূল্যায়ন করে না বলে মনে হয়েছে ইউক্রেন যুদ্ধ দক্ষতা প্রমাণের বড় একটা সুযোগ৷ সে কারণেই নিজের দেশ থেকে ইউক্রেনে ছুটে এসেছেন৷
ছবি: Kai Pfaffenbach/REUTERS
আনাড়িদের ভিড়
এক সময় ব্রিটেনের সেনাবাহিনীতে কাজ করতেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমন এক ব্যক্তি রয়টার্সকে জানান, জেলেনস্কির আহ্বানে সাড়া দিয়ে যারা ইউক্রেনে আসছেন, তাদের অনেকেই যুদ্ধের ময়দানে বিশেষ কোনো কাজে আসবেন না৷ তার মতে, তারা এত অনভিজ্ঞ এবং অদক্ষ যে তাদের শুধু ‘বুলেট কুড়ানোর’ কাজে লাগাতে হবে৷
ছবি: Kai Pfaffenbach/REUTERS
অপ্রস্তুত ইউক্রেন
কয়েকজন বিদেশি যোদ্ধা জানান, যুদ্ধের নানা সরঞ্জাম এমনকি অত্যাধুনিক অস্ত্র চালাতে পারেন এম লোক খুঁজতে ‘হ্যাভ গান উইল ট্র্যাভেল’ ধরনের নাম দিয়ে ইতিমধ্যে ফেসবুক আর হোয়াটসঅ্যাপে গ্রুপ খোলা হয়েছে৷ বডি আর্মার, নাইট-ভিশন গগলসের মতো জিনিসও কারো কাছে থাকলে দিয়ে যেতে বলছে গ্রুপগুলো৷ এছাড়া পশ্চিমা দেশগুলো যেসব অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়েছে, সেগুলো চালানোর প্রশিক্ষকও খোঁজা হচ্ছে গ্রুপগুলোর মাধ্যমে৷
ছবি: Emilio Morenatti/AP/picture alliance
অদক্ষরাও গুরুত্বপূর্ণ
লভিভ শহরে বিদেশ থেকে যুদ্ধে অংশ নিতে আসাদের তালিকা প্রণয়ন করেন রোমান শেপেলাক৷ বিদেশি যোদ্ধাদের গ্রহণ করা, তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে যুদ্ধের জন্য তৈরি করার প্রস্তুতি যে ইউক্রেন এখনো গুছিয়ে উঠতে পারেনি রোমান তা স্বীকার করেন৷ তবে তার বিশ্বাস, দ্রুতই সব ঠিক হয়ে যাবে৷ অদক্ষ বিদেশিরা আসছে বলেও হতাশ নন৷ তিনি বলেন, ‘‘তারা যে অন্য দেশের জন্য যুদ্ধ করতে চাইছে- এটাই দারুণ ব্যাপার৷ তারাও খুব গুরুত্বপূর্ণ৷’’
ছবি: Kai Pfaffenbach/REUTERS
6 ছবি1 | 6
সিপরির এই রিপোর্টে ২০১৭ থেকে ২০২১ পর্যন্ত তথ্য আছে। অর্থাৎ, ইউক্রেনে রাশিয়া হামলা চালানোর কিছুদিন আগে পর্যন্ত তথ্য আছে রিপোর্টে। ফলে ধরেই নেওয়া যায়, গত কয়েকমাসে ইউরোপের অস্ত্র ব্যবসা আরো বেড়েছে। রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, ইউরোপে অস্ত্র ব্যবসা বাড়তে শুরু করেছে ২০১৪ সাল থেকে। রাশিয়া ক্রাইমিয়ায় হামলা চালানোর পর একাধিক দেশ সামরিক খাতের বাজেটও অনেকগুণ বাড়িয়ে দেয়।
সিপরির প্রোগ্রাম ডিরেক্টর ইয়ান অ্যান্টনি ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ২০১৪ সালে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর ইউরোপের দেশগুলি অস্ত্রের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে শুরু করে এবং প্রায় প্রতিটি দেশই অস্ত্রখাতে ব্যয় বাড়ায়। রিপোর্টে তার স্পষ্ট প্রতিফলন আছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন, কার কত শক্তি
তীব্র লড়াই শুরু হয়েছে। একনজরে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের সামরিক শক্তি।
ছবি: Carlos Barria/REUTERS
যুদ্ধরত সেনা
ইউক্রেনের হাতে আছে দুই লাখ যুদ্ধরত সেনা। যারা সরাসরি লড়াইয়ে যোগ দিয়েছে। রাশিয়ার হাতে আছে আট লাখ ৫০ হাজার যুদ্ধরত সেনা। যারা যে কোনো সময় লড়াইয়ের ময়দানে নেমে পড়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে। এদেরই একটি অংশ এখন লড়াইয়ের ময়দানে আছে।
ছবি: Efrem Lukatsky/AP Photo/picture alliance
সংরক্ষিত সেনা
ইউক্রেনের হাতে সংরক্ষিত বা রিজার্ভড ব্যাটেলিয়ন আছে আড়াই লাখ। যারা প্রয়োজনে লড়াইয়ের ময়দানে নামবে। রাশিয়ার হাতেও সংরক্ষিত সেনার সংখ্যা আড়াই লাখ।
ছবি: Aris Messinis/AFP
প্যারামিলিটারি বাহিনী
রাশিয়ার প্যারামিলিটারি বাহিনীর সংখ্যা আড়াই লাখ। এর বাইরে স্পেশাল ফোর্স আছে। যারা ইউক্রেন হামলায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। ইউক্রেনের প্যারামিলিটারি বাহিনীর সংখ্যা মাত্র ৫০ হাজার।
ইউক্রেনের হাতে সাজোয়া গাড়ি বা আর্মার্ড ভেহিক্যালের সংখ্যা ১২ হাজার ৩০৩। রাশিয়ার হাতে এই ধরনের গাড়ির সংখ্যা ৩০ হাজার ১২২। বস্তুত, সম্পূর্ণ বুলেটপ্রুফ এই গাড়িগুলিতে করেই সেনাবাহিনী যুদ্ধক্ষেত্রে পৌঁছায়। এর সাহায্যে প্রতিপক্ষের উপর আঘাতও হানা যায়।
ইউক্রেনের হাতে ফাইটার জেট বা যুদ্ধবিমান আছে ৬৯টি। রাশিয়ার কাছে সেখানে ফাইটারের সংখ্যা ৭৭২।
ছবি: Erik Romanenko/Tass/imago images
যুদ্ধের হেলিকপ্টার
যুদ্ধ করার মতো হেলিকপ্টার ইউক্রেনের কাছে আছে মাত্র ৩৪টি। রাশিয়ার কাছে সেখানে এই হেলিকপ্টারের সংখ্যা ৫৪৪। ইউক্রেন হামলার প্রথম দিন রাশিয়া এই হেলিকপ্টার প্রচুর পরিমাণে ব্যবহার করেছে। হেলিকপ্টারের সাহায্যে বোমা ফেলা হয়েছে। গুলি চালানো হয়েছে।
ছবি: Efrem Lukatsky/AP Photo/picture alliance
এবং নৌবহর
নৌবহরেও রাশিয়ার থেকে অনেক পিছিয়ে আছে ইউক্রেন। ইউক্রেনের যুদ্ধজাহাজের সংখ্যা ৩৮টি। রাশিয়ার হাতে সেখানে ৬০৫টি যুদ্ধজাহাজ। কৃষ্ণসাগরে যার অনেকগুলিকে স্ট্যান্ডবাই করে রাখা হয়েছে।
ছবি: Iranian Army/AP Photo/picture alliance
পরমাণু শক্তি
ইউক্রেনের হাতে একটিও পরমাণু অস্ত্র নেই। অন্যদিকে রাশিয়া বিশ্বের অন্যতম পরমাণু শক্তিধর দেশ। ছয় হাজার ২৫৫টি পরমাণু অস্ত্র আছে তাদের হাতে।
ছবি: AP Photo/picture-alliance
10 ছবি1 | 10
রাশিয়ার অস্ত্র রপ্তানি কমেছে
গোটা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র বিক্রি করে অ্যামেরিকা। তারপরেই রাশিয়া। কিন্তু রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, গত পাঁচ বছরে রাশিয়ার অস্ত্র বিক্রি কমেছে প্রায় ২৬ শতাংশ। এর সবচেয়ে বড় কারণ ভারত এবং ভিয়েতনাম রাশিয়া থেকে অস্ত্র কেনার পরিমাণ কমিয়েছে। একসময় ভারতের প্রায় সমস্ত অস্ত্র রাশিয়া থেকে আসত। গত কয়েকদশকে ভারত অ্যামেরিকা এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশের থেকেও অস্ত্র কিনতে শুরু করেছে। তা ছায়াপাত করেছে রাশিয়ার অস্ত্রের বাজারে। কিন্তু আগামী কয়েবছরে ভারত আবার রাশিয়ার থেকে ভালো পরিমাণ অস্ত্র কিনতে পারে বলেও সিপরির রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
জার্মানি অস্ত্র বাণিজ্যে বিশ্বের পঞ্চম শক্তি। কিন্তু পাঁচ বছরে তাদের অস্ত্র ব্যবসা কমেছে ১৯ শতাংশ। অ্যামেরিকার ব্যবসা বেড়েছে ১৪ শতাংশ। তবে চোখে পড়ার মতো অস্ত্র ব্যবসা বেড়েছে ফ্রান্সের, ৫৯ শতাংশ।
সিপরির রিপোর্টে স্পষ্টই বলা হচ্ছে, ইউরোপেরঅস্ত্র ব্যবসার সঙ্গে অনেকটাই জড়িয়ে রাশিয়া। গত কয়েকবছরে ইউরোপে রাশিয়ার আগ্রাসন যত বেড়েছে, অস্ত্রখাতে ব্যয়ও বেড়েছে সমানুপাতিক হারে। আগামী কয়েকবছরে এই হার অব্যাহত থাকবে বলেই মনে করা হচ্ছে। ট্রান্স অ্যাটলানটিক সিকিউরিটি রিলেশনেও অস্ত্রের ব্যবসা বেড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। অ্যামেরিকা এই অঞ্চলে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র বেচেছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। যুক্তরাজ্য, নরওয়ে এবং নেদারল্যান্ডস অ্যামেরিকার কাছ থেকে ৭১টি এফ৩৫ যুদ্ধবিমান কিনেছে। ফিনল্যান্ড ৬৪টি এবং পোল্যান্ড ৩২টি এফ৩৫ যুদ্ধবিমানের অর্ডার দিয়েছে।