অস্ত্র বাড়ানোর কারণ অ্যামেরিকা, কিম জং উনের সাফাই
১২ অক্টোবর ২০২১
কোরিয়ার সমস্যার জন্য অ্যামেরিকাকেই দায়ী করলেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন। তার দাবি, তিনি যে অস্ত্রসম্ভার বাড়াচ্ছেন, তা প্রতিরোধকের কাজ করবে।
বিজ্ঞাপন
কিমের অভিযোগ, উত্তর কোরিয়ার প্রতি শত্রুতার নীতি নিয়ে চলেছে অ্যামেরিকা। তাই নিজের দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্যই তিনি সমরসম্ভার বাড়াচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
কিমের দাবি, অ্যামেরিকাই সব সমস্যার মূলে। তারা পিয়ংইয়ংয়ের সঙ্গে শত্রুতার নীতি নিয়ে চলেছে। তার দাবি, ''আমরা কারো সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাই না। আমরা যুদ্ধ না করার পক্ষে। কিন্তু দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য প্রতিরোধক গড়ে তুলছি মাত্র।'' কিম একটা প্রতিরক্ষা প্রদর্শনী দেখতে গিয়ে এই কথা বলেন। সেখানে উত্তর কোরিয়ার তৈরি সুপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রও প্রদর্শন করা হচ্ছে।
বাইডেন প্রশাসন অবশ্য দাবি করেছে, উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে তারা কোনো শত্রুতার নীতি নিয়ে চলছে না। কিমের বক্তব্য, ''অ্যামেরিকার মানুষ কি বাইডেন প্রশাসনের এই দাবি মানেন?''
উত্তর কোরিয়াকে কাবু করতে জাতিসংঘের কিছু ‘অস্ত্র’
পারমাণবিক অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার কোনো তোয়াক্কাই করছে না উত্তর কোরিয়া৷ দেশটির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান রয়েছে তাই জাতিসংঘেরও৷ দেখা যাক, কত রকমের নিষেধাজ্ঞার বেড়াজালে আটকা পড়েছে উত্তর কোরিয়া৷
ছবি: Reuters/S. Sagolj
কয়লা এবং লোহার ওপর নিষেধাজ্ঞা
২০১৭ সালের আগস্ট মাসে উত্তর কোরিয়ার ওপর সব ধরনের কয়লা, লোহা এবং লোহার আকরিক আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জাতিসংঘ৷ওপরের ছবিতে উত্তর কোরিয়ার সীমান্ত সংলগ্ন ড্যানডং শহরের লিয়াওনিং গ্রিনল্যান্ড এনার্জি কয়লাখনি৷ খনিটি অবশ্য চীনের৷
ছবি: Reuters/B. Goh
মুদ্রায় নিষেধাজ্ঞা
বিদেশে কোনো ব্যাংক খুলতে পারে না উত্তর কোরিয়া৷ এমনকি জাতিসংঘের কোনো সদস্য দেশ যাতে পিয়ংইয়ংয়ের জন্য লাভজনক কোনো আর্থিক লেনদেন বা চুক্তিতে না যায়, নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে সে বিষয়টিও নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছে জাতিসংঘ৷ জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞায় বলা হয়েছে, কোনো দেশের নাগরিক যদি উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে এমন কোনো ব্যবসায়িক যোগাযোগ স্থাপন করে, তাহলে সংশ্লিষ্ট দেশটিকে অবশ্যই ওই নাগরিককে বহিষ্কার করতে হবে৷
ছবি: Mark Ralston/AFP/Getty Images
জাহাজ চলাচল
ছবির এই জাহাজটি উত্তর কোরিয়ার৷ ২০১৬ সালের মার্চে ফিলিপাইন্সে এটিকে থামানো হয়৷ উত্তর কোরিয়ার কোনো জাহাজে পণ্য পরিবহনও নিষিদ্ধ করেছে জাতিসংঘ৷ এমনকি পিয়ংইয়ংযে নিজেদের জাহাজে অন্য দেশের পতাকা লাগিয়ে কাজ চালাবে, সেই পথও বন্ধ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Dumaguing
আকাশেও নিষেধাজ্ঞা
উত্তর কোরিয়ার জাতীয় এয়ারলাইন্স ‘এয়ার কোরিও’ অবশ্য পুরোপুরি নিষিদ্ধ নয়৷ এখনো তাদের বিমান রাশিয়া আর চীনে যাওয়া-আসা করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Yonhap
জ্বালানিতেও...
২০১৭ সালের ডিসেম্বরে জাতিসংঘের আরোপ করা নিষেধাজ্ঞার পর থেকে জ্বালানি আমদানিতেও কঠোর বিধিনিষেধের আওতায় উত্তর কোরিয়া৷ ফলে জনজীবনেও এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে৷ নিষেধাজ্ঞার কারণে বছরে মাত্র ৪০ লক্ষ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল আমদানি করতে পারে উত্তর কোরিয়া৷ তাই সে দেশের নাগরিকদের প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম ডিজেল এবং কেরোসিন পেয়েই খুশি থাকতে হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Ralston
বিদেশে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং স্থাবর সম্পত্তি
উত্তর কোরিয়ার কূটনীতিকদের ওপরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জাতিসংঘ৷ জার্মানিসহ এখনো হাতে গোনা যে কয়েকটি দেশে উত্তর কোরিয়ার দূতাবাস আছে, সেখানে উত্তর কোরীয় কূটনীতিকরা চাইলেও একটার বেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন না৷ দেশের বাইরে দূতাবাস ছাড়া আর কোনো কাজে ঘর ভাড়াও করতে পারে না উত্তর কোরিয়া৷
ছবি: picture alliance/dpa/S.Schaubitzer
সামরিক প্রশিক্ষণ
কোনো দেশ উত্তর কোরিয়ার সামরিক বাহিনী, পুলিশ, বা আধা সামরিক বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিতে পারে না৷ এ বিষয়েও রয়েছে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা৷
ছবি: Reuters/S. Sagolj
কিম জং উনের মূর্তি
উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের আবক্ষ মূর্তি দেখতে বা পছন্দের কোনো জায়গায় রাখতে চান? তা জাতিসংঘের একেবারেই কাম্য নয়৷ তাই উত্তর কোরিয়ার ওপর যে কোনো ধরনের মূর্তি বিক্রিতেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জাতিসংঘ৷
ছবি: picture alliance/dpa/robertharding
8 ছবি1 | 8
ইন্টার কন্টিনেন্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইল(আইসিবিএম)-এর সামনে দাঁড়িয়ে কিম এই মন্তব্য করেছেন। গত বছর সামরিক প্যারেডে আইসিবিএম প্রথমবার দেখানো হয়।
অস্ত্র প্রতিযোগিতা
দুই কোরিয়াই এখন উন্নত মানের অস্ত্র তৈরি করছে বা কিনছে। তার মধ্যে ছোট পাল্লার ব্যালেস্টিক মিসাইল আছে। উত্তর কোরিয়া তাদের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তারা প্রধান পরমাণু রিঅ্যাকটারের সম্প্রসারণও করছে। পরমাণু বোমা বানানোর কাজে তা লাগানো হতে পারে।
অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়া সাবমেরিন লঞ্চড ব্যালেস্টিক মিসাইলের পরীক্ষা করেছে। তারা অ্যামেরিকা ও তার বন্ধু দেশগুলির কাছ থেকে এফ ৩৫ স্টিলথ যুদ্ধবিমানও কিনেছে।
কিম জং উনের রহস্যময়ী বোন সম্পর্কে যা জানেন না
উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ পরিষদের বিকল্প সদস্য হয়েছেন কিম জং উনের বোন কিম ইয়ো জং৷ দেশের সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী পরিষদের সদস্য হলেন উত্তর কোরিয়ার নেতার বোন৷ জং উনের এই রহস্যময়ী বোন সম্পর্কে কতটা জানেন আপনি?
ছবি: picture-alliance/dpa/Jiji Press/M. Matsutani
বোনদের ধারাবাহিকতা
দেশটির প্রয়াত নেতা কিম জং ইল ক্ষমতায় থাকাকালীন নিজের বোন কিম কিয়ং হি কে এই পদে অভিষিক্ত করেছিলেন৷ আর জং উনের বোন কিম ইয়ো-জং তার ফুপুর স্থলাভিষিক্ত হয়ে দেশটির ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর বিকল্প সদস্য হলেন৷ তাঁর ফুফুরও বেশ প্রভাব ছিল পলিটব্যুরোতে৷
ছবি: picture alliance/dpa/Jiji Press
পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্য
কিম জং ইল এর সাত সন্তানের মধ্যে ইয়ো জং কনিষ্ঠ এবং জং উনের ছোট বোন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Jiji Press/M. Matsutani
পড়ালেখা
কিম ইয়ো জং এর পড়ালেখার শুরু বাড়িতে থেকে৷ পরে ভাই জং উনের সঙ্গে সুইজারল্যান্ডের রাজধানী বার্নের কাছে একটি স্কুলে পড়ালেখা করেছেন৷ এরপর উত্তর কোরিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেন তিনি৷ এর অল্প কিছুদিন পর পশ্চিম ইউরোপে গিয়ে কয়েকটি কোর্স করেন৷
ছবি: picture-alliance/Kyodo
রাজনীতিতে প্রথম অংশগ্রহণ
কিম ইয়ো জংকে প্রথম দেখা যায় ২০১০ সালে ওয়ার্কার্স পার্টির তৃতীয় সম্মেলনে৷ সেখানে তাঁকে বাবার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Yonhap/North Korean Central TV
২০১২ সাল থেকে গুরুত্বপূর্ণ পদে
২০১২ সালে জাতীয় প্রতিরক্ষা কমিশনের অধীনে কিম জং উনের সফরের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন তিনি৷ ২০১৪ সালের অক্টোবরে কিম জং উনের চিকিৎসা চলাকালীন রাষ্ট্রক্ষমতা তাঁর হাতে ছিল বলে জানা যায়৷ একই বছরের নভেম্বরে ইয়ো জংকে ওয়ার্কার্স পার্টির প্রচারণা ও আন্দোলন বিভাগের উপ-পরিচালক পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Ahn Young-joon
কালো তালিকাভুক্ত
২০১৭ সালের জানুয়ারিতে উত্তর কোরিয়ায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ২৮ বছর বয়সি ইয়োকে উত্তর কোরিয়ার আরও কয়েকজন কর্মকর্তাসহ কালো তালিকাভুক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Ahn Young-joon
6 ছবি1 | 6
দক্ষিণ কোরিয়ায় অ্যামেরিকার ২৮ হাজার ৫০০ সেনা মোতায়েন করা আছে। উত্তর কোরিয়ার আগ্রাসন ঠেকানোর জন্য তাদের রাখা হয়েছে বলে দাবি। গত অগাস্টে দক্ষিণ কোরিয়া ও অ্যামেরিকা যৌথ সেনা মহড়াও করেছে। কিম বলেছেন, এই মহড়া আসলে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি।
সম্পর্কের উন্নতি হয়নি
২০১৮ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেন কিম। কিন্তু সম্পর্ক ভালো করার সেই প্রয়াস এক বছরের মধ্যে মুখ থুবড়ে পড়ে। অ্যামেরিকা জানিয়েছে, তারা উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক স্তরে আলোচনা শুরু করতে আগ্রহী, কিন্তু উত্তর কোরিয়া জানিয়েছে, আলোচনার পূর্বশর্ত হলো, তাদের বিরুদ্ধে সব নিষেধাজ্ঞা আগে তুলে নিতে হবে। সেই সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়াকে সামরিক সাহায্য দেয়া বন্ধ করতে হবে।