সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রি নিয়ে তদন্ত করছিলেন৷ আর তাতেই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়াচডগ এর ইন্সপেক্টর জেনারেল স্টিভ লিনিককে বরখাস্ত হতে হয়েছে বলে দাবি এক ডেমোক্রেটিক নেতার৷
বিজ্ঞাপন
গত সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প অনেকটা হুট করেই মন্ত্রণালয়ের ‘ওয়াচডগ' প্রধান লিনিককে বরখাস্ত করেন৷ তাকে বরাখাস্তের কারণ জানানো হয়নি৷ আর তাতেই সন্দেহ দানা বাঁধতে থাকে৷
গত বছর যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবের কাছে মোটা অংকের অস্ত্র বিক্রি করে৷ সঠিক নিয়ম মেনে ওই অস্ত্র বিক্রি হয়নি এবং লিনিক সেটা নিয়েই তদন্ত করছিলেন বলে সোমবার জানান মার্কিন কংগ্রেসের এক ডেমোক্রেট নেতা৷
এরআগে ডেমোক্রেটিক নেতারা অবশ্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওকে নিয়ে তদন্ত শুরুর কারণে লিনিককে বরখাস্ত হতে হয়েছে বলেও সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন৷
হাউজ ফরেইন অ্যাফেয়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান এলিয়ট অ্যাঙ্গেল বলেন, সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রির ঘটনা নিয়ে শুরু হওয়া তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই লিনিককে বরখাস্ত করায় তিনি উদ্বিগ্ন৷
যুদ্ধক্ষেত্রে অস্ত্র ব্যবহারের সুযোগ হ্রাসে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে অস্ত্র বিক্রির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস থেকে একটি পর্যালোচনা নীতি বেঁধে দেওয়া হয়েছে৷ ওই নীতি এড়িয়ে অস্ত্র বিক্রির জন্য পম্পেও গত বছর মে মাসে ফেডারেল আইনের এমন একটি প্রভিশন আহ্বান করেছিলেন যেটার ব্যবহার খুব বিরল৷
বিশ্বে সামরিক ব্যয়ে ভারত এখন তৃতীয়
সুইডেনের ‘স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইন্সটিটিউট’ বা সিপ্রি ২০২১ সালে সামরিক খাতে বিভিন্ন দেশের খরচের তথ্য প্রকাশ করেছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
ভারত তৃতীয়
২০২১ সালে ভারতের সামরিক ব্যয় ছিল ৭৬ দশমিক ৬ বিলিয়ন, যা বিশ্বে তৃতীয় সর্বোচ্চ। ২০২০ সাল থেকে এই ব্যয় শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছে এবং ২০১২ সালের তুলনায় বেড়েছে প্রায় ৩৩ শতাংশ।
ছবি: picture alliance/AP Photo/C. Anand
শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্র ২০২১ সালে সামরিক খাতে খরচ করেছে ৮০১ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২০ সালের তুলনায় ১ দশমিক ৪ শতাংশ কম। প্রতিবেদন মতে, ২০১২ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র সামরিক গবেষণা ও উন্নয়নে খরচ বাড়িয়েছে ২৪ শতাংশ এবং অস্ত্র কেনায় খরচ কমিয়েছে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ।
ছবি: picture-alliance/A. Widak
চীন দ্বিতীয়
তালিকায় দ্বিতীয় শীর্ষ দেশ চীন ২০২১ সালে সামরিক খাতে খরচ করেছে ২৯৩ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ৪ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি।
ছবি: Reuters
চতুর্থ যুক্তরাজ্য
তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে থাকা যুক্তরাজ্য গত বছর সামরিক খাতে খরচ করেছে ৬৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২০ সালের তুলনায় ৩ শতাংশ কম।
ছবি: picture-alliance/dpa/dpaweb
পঞ্চম রাশিয়া
পঞ্চম অবস্থানে থাকা রাশিয়া ২০২১ সালে সামরিক খাতে খরচ করেছে ৬৫ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ২ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি। সেসময় রাশিয়া প্রতিবেশী ইউক্রেনের সীমান্তে সামরিক স্থাপনা তৈরি করছিল বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
ছবি: picture-alliance/TASS/A. Demianchuk
ছয় নেমে গেছে সৌদি আরব
আগের তালিকায় তিন নম্বরে ছিল সৌদি আরব৷ ২০১৯ সালে ১৬ শতাংশ ব্যয় কমিয়েছে দেশটি৷ গতবছর দেশটি ৬১.৯ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে৷ ইয়েমেনে সামরিক অভিযান ও ইরানের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে সৌদি আরবের সামরিক ব্যয় কমানোতে বিস্মিত হয়েছেন বিশ্লেষকরা৷
ছবি: Getty Images/AFP/F. Nureldine
শীর্ষ পাঁচেই ৬২ শতাংশ
সিপ্রি বলছে, ২০১৯ সালে সামরিক খাতে বৈশ্বিক খরচ ছিল ১৯১৭ বিলিয়ন ডলার৷ এর মধ্যে ৬২ শতাংশই করেছে শীর্ষ পাঁচটি দেশ৷
ছবি: Reuters/J. Lee
প্রবৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি
২০১৯ সালে ২০১৮ সালের তুলনায় সামরিক ব্যয় বেড়েছে ৩.৬ শতাংশ৷ এটি ২০১০ সালের পর কোনো এক বছরে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধির হার৷
ছবি: Getty Images/S. Gallup
ইইউতে প্রথম ফ্রান্স, বিশ্বে সপ্তম
২০১৯ সালে ফ্রান্স ৫০.১ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে, যা দেশটির জিডিপির ১.৯ শতাংশ৷ ২০১৮ সালে তাদের ব্যয় ছিল ৫১.৪ বিলিয়ন ডলার৷
ছবি: Reuters/G. Fuentes
অষ্টম-এ জার্মানি
২০১৯ সালে জিডিপির ১.৩৮ শতাংশ ব্যয় করেছে জার্মানি, সংখ্যার হিসেবে যা ৪৯.৩ বিলিয়ন ডলার৷ ২০১৮ সালে ছিল ৪৬.৫ বিলিয়ন৷ অর্থাৎ, জার্মানির ব্যয় বেড়েছে ১০ শতাংশ, যা সিপ্রির তালিকার শীর্ষ ১৫টি খরুচে দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ৷ রাশিয়ার কাছ থেকে হুমকি বাড়া এর একটি কারণ বলে মনে করছেন সিপ্রির বিশ্লেষকরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Skolimowska
শীর্ষ দশে এশিয়ার আরো দুই দেশ
সিপ্রির তালিকায় শীর্ষ ১০ খরুচে দেশের তালিকায় নয় ও দশ নম্বরে যথাক্রমে আছে জাপান (৪৭.৬ বলিয়ন ডলার) ও সাউথ কোরিয়া (৪৩.৯ বিলিয়ন ডলার)৷
ছবি: AP
বাংলাদেশ
২০১৯ সালে বাংলাদেশের সামরিক ব্যয় ছিল ৪,৩৫৮ মিলিয়ন ডলার, ২০১৮ সালে যা ছিল প্রায় ৩,৬৯২ মিলিয়ন ডলার৷
ছবি: DW/M. Mamun
12 ছবি1 | 12
অ্যাঙ্গেল বলেন, ‘‘সৌদি আরবের কাছে অস্ত্রের চালান পাঠাতে ট্রাম্প নাটক সাজিয়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিলেন৷ আমার অনুরোধেই লিনিকের দল অস্ত্র বিক্রির ওই ঘটনা নিয়ে তদন্ত করছিল৷
‘‘আমরা এখনো তদন্তে ওই ঘটনার সম্পূর্ণ চিত্র মেলাতে পারিনি৷ কিন্তু তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই যেভাবে মাইক পম্পেওর ইচ্ছায় লিনিককে তার জায়গা থেকে ঠেলে সরিয়ে দেওয়া হলো সেটা সত্যিই উদ্বেগের৷’’
সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে ২০১৩ সালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইন্সপেক্টর জেনারেলের দায়িত্ব পান লিনিক৷
লিনিকের দায়িত্ব পালনের উপর আর আস্থা রাখতে পারছেন না জানিয়ে ট্রাম্প গত শুক্রবার তাকে বরখাস্ত করেন৷ বরখাস্তাদেশে কী কারণে প্রেসিডেন্ট আর আস্থা রাখতে পারছেন না সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি৷ শুধু বলা হয়েছে, আদেশের ৩০ দিনের মধ্যে তা বাস্তবায়িত হবে৷
লিনিক বরখাস্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পম্পেওর দিকে আঙুল তোলেন ডেমোক্রেটরা৷ সোমবার ওয়াশিংটন পোস্টের কাছে লিনিকের বরাখাস্তের পেছনে তার হাত থাকার কথা স্বীকার করেন পম্পেও৷ বলেন, লিনিক পরারাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নানা বৈদেশিক কৌশলের ‘ক্ষতি’ করার চেষ্টা করছিলেন৷ এ কারণেই তিনি লিনিককে বরখাস্ত করার জন্য প্রেসিডেন্টের কাছে সুপরিশ করেছেন৷
একই দিন ট্রাম্প নিজেও পম্পেওর সুপারিশে লিনিককে বরখাস্ত করেছেন বলে জানান৷ হোয়াইট হাউজে তিনি বলেন, ‘‘প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাউকে বরখাস্তের সম্পূর্ণ অধিকার আমার আছে৷ আমি বলেছি, কে তাকে নিয়োগ দিয়েছে? উত্তরে তারা বলেছে, প্রেসিডেন্ট ওবামা৷ আমি বলেছি, দেখো আমি তাকে বরখাস্ত করবো৷’’
এসএনএল/কেএম (রয়টার্স, এপি, এএফপি, ডিপিএ)
গত সেপ্টেম্বরের ছবিঘরটি দেখুন...
সৌদি আরব, ইরান, ইসরায়েল কার শক্তি কেমন?
সৌদি আরবের তেলক্ষেত্রে হামলার পর অস্থির হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি৷ হুতি বিদ্রোহীরা এর দায় নিলেও ইরানকে দায়ী মনে করছে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব৷ এ নিয়ে চলছে হুমকি-পাল্টা হুমকি৷ কিন্তু সামরিক শক্তিমত্তা কার বেশি?
ছবি: picture-alliance/EPA/TSGT
আকাশে সৌদি আরব
সামরিক খাতে সৌদি আরব ২০১৮ সালে ৬ হাজার ৭৬০ কোটি ডলার খরচ করেছে৷ ব্যয়ের দিক থেকে তাদের অবস্থান গোটা বিশ্বে তৃতীয় আর উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে৷ বিশ্বের সামরিক যন্ত্রপাতির সবচেয়ে বড় ক্রেতাও তারা৷ বর্তমানে সৌদির মোট সামরিক সদস্য ২ লাখ ৩০ হাজার৷ আছে ৮৪৮ টি যুদ্ধবিমান, ২৫৪ টি হেলিকপ্টার, ১০৬২ টি ট্যাংক ও ৫৫ টি যুদ্ধ জাহাজ৷ তবে নেই কোনো সাবমেরিন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সমুদ্র আর সৈন্যে ইরান
সামরিক খাতে গত বছর ইরানের ব্যয় ছিল ১ হাজার ৩২০ কোটি ডলার, যা ২০১৭ সালের তুলনায় সাড়ে নয় ভাগ কম৷ অবরোধ আর অর্থনৈতিক মন্দায় গত এক দশকে দেশটির অস্ত্র আমদানির পরিমাণও কমেছে৷ ২০০৯-১৮ সালের মধ্যে তা্দের আমদানিকৃত অস্ত্রের পরিমাণ সৌদি আরবের মাত্র সাড়ে তিনভাগ৷ বর্তমানে দেশটির সামরিক সদস্য আট লাখ ৭৩ হাজার৷ ৫০৯ টি যুদ্ধ বিমান, ১৫৬ টি হেলিকপ্টার, ১৬৩৪ টি ট্যাংক, ৩৯৮ টি নৌযান, ৩৪ টি সাবমেরিনের মালিক তারা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/E. Noroozi
ইসরায়েল নিজেই অস্ত্র তৈরি করে
২০১৮ সালে সামরিক খাতে এক হাজার ৫৯৫ কোটি ডলার ব্যয় করেছে ইসরায়েল৷ দেশটি নিজেই সামরিক অস্ত্র তৈরি করে, তাই তেমন একটা আমদানি করতে হয় না৷ গত বছর সর্বসাকুল্যে ১০৩ কোটি ডলারের অস্ত্র কিনেছে যুক্তরাষ্ট্র আর জার্মানির কাছ থেকে৷ দেশটির সামরিক বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ৬ লাখ ১৫ হাজার৷ তাদের বহরে আছে ৫৯৫ টি যুদ্ধবিমান, ১৪৬ টি হেলিকপ্টার, ২৭৬০ টি ট্যাংক, ৬ টি সাবমেরিন৷
ছবি: Reuters
প্রতাপশালী তুরস্ক
২০১৮ সালে তুরস্কের সামরিক ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৮৯৭ কোটি ডলার৷ এর মধ্যে ১১১ কোটি ডলার খরচ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, স্পেন, ইতালিসহ ৬টি দেশের কাছ থেকে অস্ত্র ক্রয়ে৷ তুরস্কের সামরিক বাহিনীর সদস্য ৭ লাখ ৩৫ হাজার৷ যুদ্ধবিমান আছে ১০৬৭ টি৷ আছে ৪৯২ টি হেলিকপ্টার, ৩২০০ ট্যাংক, ১৯৪ টি যুদ্ধজাহাজ, ১২ টি সাবমেরিন৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Kilic
উপসাগরের ছোট শক্তি কাতার
কাতারের সবশেষ সামরিক ব্যয়ের হিসাবটি ২০১০ সালের৷ সে বছর তাদের বাজেট ছিল ২১৭ কোটি ডলারের৷ দেশটির সামরিক সদস্য সংখ্যা ১২ হাজার৷ আছে ১০০ টি এয়ারক্রাফট, ৪২ টি হেলিকপ্টার, ৯৫ টি ট্যাংক, ৮০ টি যুদ্ধজাহাজ৷
ছবি: Getty Images/AFP/K. Jaafar
পড়ন্ত শক্তির ইরাক
গেল বছর সামরিক বাহিনীর পেছনে প্রায় ৬৩২ কোটি ডলার খরচ করেছে ইরাক৷ এর মধ্যে ১৫৬ কোটি ডলার ব্যয় করেছে অস্ত্র ক্রয়ে৷ তাদের আছে ১ লাখ ৬৫ হাজার সৈন্য, ৩২৭ টি যুদ্ধবিমান, ১৭৯ টি হেলিকপ্টার, ৩০৯ টি ট্যাংক, ৬০ টি যুদ্ধজাহাজ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Abdul Hassan
এবং যুক্তরাষ্ট্র
গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাজেট ছিল ৬৪ হাজার ৮৮০ কোটি ডলারের৷ প্রায় সাড়ে ২১ লাখ সামরিক সদস্যের বিশাল বাহিনী তাদের৷ ১৩,৩৯৮ টি যুদ্ধবিমান, ৫৭৬০টি হেলিকপ্টার, ৬২৮৭টি ট্যাংক, ৪১৫টি যুদ্ধজাহাজ, ৬৮টি সাবমেরিন আছে এই পরাশক্তির বহরে৷