জার্মানি থেকে বিদেশে অস্ত্র রপ্তানি করা সহজ নয়: সরকারি অনুমোদন লাগে৷ জার্মান সংবিধানে অস্ত্র বিক্রির চেয়ে মানবাধিকার রক্ষা ও সংঘাত সমাধানকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে৷ তাই উভয়সংকটে জার্মান অস্ত্র শিল্প ও জার্মান সরকার৷
বিজ্ঞাপন
অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের মতো জার্মান সরকারও আজ বহু বছর যাবৎ অস্ত্র ক্রয় কমিয়ে আসছেন: বাজেট কমানো হয়েছে, অর্ডার বাতিল করা হচ্ছে৷ এর ফলে জার্মান অস্ত্র নির্মাতারা আর সরকারি কনট্র্যাক্টের উপর নির্ভর করতে ভরসা পাচ্ছেন না৷ ট্যাংক কিংবা নৌযানের মতো ভারী অস্ত্রশস্ত্র কেনার খদ্দের কম, তাই জার্মান অস্ত্র নির্মাতারা যেমন একদিকে ‘টেকনোলজি' বিক্রির উপর জোর দিয়েছেন, অন্যদিকে তারা নতুন অস্ত্র প্রণালীর বিকাশ ও সে'সংক্রান্ত গবেষণার অর্থসংস্থান করেছেন বিদেশে অস্ত্র বিক্রি করে – এক কথায় অস্ত্র রপ্তানি৷
জার্মান অস্ত্র নির্মাতাদের মধ্যে ব্যবসায়িক দিক থেকে সবচেয়ে সফল হলো বাভারিয়ার ছোট ছোট স্পেশালিস্ট কোম্পানিগুলি, যারা নানা ধরনের ‘প্রিসিজন উইপন' তৈরি – এবং রপ্তানি করে থাকে৷ এভাবেই বেশ চলছিল৷ বাদ সাধল নতুন জোট সরকার এসে৷ সরকারের ছোট তরফ এসপিডি চায় জার্মানি থেকে অস্ত্র রপ্তানি আরো কঠিন এবং সীমিত করতে৷ ‘মৃত্যু নিয়ে ব্যবসা' চলতে দিতে চায় না সামাজিক গণতন্ত্রীরা৷
কিন্তু ব্যবসা ছাড়া অস্ত্র শিল্প বাঁচবে কি করে? জার্মান অস্ত্র শিল্পের এক লাখ চাকুরিই বা বাঁচবে কি করে? এক্ষেত্রে অস্ত্র শিল্পের শ্রমিক ও তাদের প্রতিনিধিরা – যাঁরা কিনা এসপিডি-র সমর্থক – এবং অস্ত্র শিল্পের মালিকপক্ষ, দু'দলই একমত৷ এসপিডি প্রধান, জার্মান অর্থনীতি মন্ত্রী তথা ভাইস চ্যান্সেলর সিগমার গাব্রিয়েলের কুইক্সোটিক কাণ্ডকারখানা তাঁকে (দক্ষিণ) জার্মানিতে আরো জনপ্রিয় করে তোলেনি৷ সরকার কি অস্ত্র রপ্তানি একেবারেই বন্ধ করে দিতে চান? এই প্রশ্ন উঠেছে৷ সেক্ষেত্রে যে শুধু অনেক মানুষের চাকরি যাবে, এমন নয়, তার চেয়েও বড় কথা: জার্মানির নিজস্ব প্রতিরক্ষার প্রয়োজনেই কি অস্ত্র শিল্পের বিকাশ অব্যাহত রাখা প্রয়োজন নয়?
ইরাকে জিহাদিবিরোধী যুদ্ধ
চরমপন্থি ইসলামি সংগঠন আইএস-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলছে ইরাকে৷ সন্ত্রাসবাদী এ সংগঠনটির সিরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশেও তৎপরতা রয়েছে৷ দেখুন ইরাকে আইএস-বিরোধী যুদ্ধ সংশ্লিষ্ট কিছু ছবি৷
ছবি: Reuters
টিকরিট পুনরুদ্ধারের চেষ্টা
সুন্নিদের সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া (আইসিস) উত্তর ও দক্ষিণ ইরাকের কিছু অংশ দখল করে নিয়েছে৷ বাগদাদ থেকে ১৪০ কিলোমিটার দূরের শহর টিকরিটও এখন তাদের দখলে৷ সে এলাকায় ইরাক সরকারের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারের জন্য আইসিস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়ছে সেনাবাহিনী৷
ছবি: Reuters
মধ্যপ্রাচ্যে কর্তৃত্ব চায় আইসিস
আন্তর্জাতিক ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার সঙ্গে আইসিস-এর একসময় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল৷ ২০০৬ থেকে ২০০৭-এর দিকে ইরাকে যখন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ লড়াই চলছে তখনই আইসিস-এর জন্ম৷ সংগঠনটির লক্ষ্য সিরিয়া, ইরাক, লেবানন, ফিলিস্তিন এবং জর্ডান মিলিয়ে বেশ বড় একটা অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা৷ ইরাকে নুসরা ফ্রন্টসহ বেশ কিছু সংগঠন তাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
বিদ্রোহীদের পাশে যুক্তরাষ্ট্র
সিরিয়ায় বাশার আল আসাদ আর ইরাকে নুরি আল মালিকির সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত বিদ্রোহীদের মধ্যে মধ্যপন্থি এবং মৌলবাদী সংগঠনের কর্মী রয়েছে৷ সিরিয়ায় ন্যাশনাল কোয়ালিশনের মতো কিছু মধ্যপন্থি সংগঠনকে সমর্থন দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র৷ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ওবামা বিদ্রোহীদের একাংশকে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের আর্থিক সহায়তা দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখছেন৷
ছবি: Reuters
ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি জানিয়েছেন, কংগ্রেস বিদ্রোহীদের জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব অনুমোদন করলে তা সিরিয়া এবং ইরাকে দেয়া হবে৷ এই বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ, কেননা, ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বড় একটা অংশ যে আইসিস-এর কাছে যাবেনা সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই৷
ছবি: Reuters
কুর্দিরা চায় স্বাধীন কুর্দিস্তান
যুক্তরাষ্ট্র চায় ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি সুন্নি এবং কুর্দিদের অংশিদারিত্বের সরকার গঠন করুন৷ ইরাকের কিছু অংশে কুর্দিদের স্বায়ত্তশাসন রয়েছে৷ কুর্দিরা ‘পেশমেরগা’, অর্থাৎ কুর্দিদের স্বাধিকার আন্দোলনের অংশ হিসেবে আইসিসের বিরুদ্ধে লড়ছে৷ কুর্দিদের মূল লক্ষ্য ইরাকে স্বাধীন কুর্দিস্তান প্রতিষ্ঠা করা৷
ছবি: Reuters
ইরানের ভূমিকা
ইরাকে শিয়া-সুন্নি সংঘাতের মধ্যে জড়াতে চায়না ইরান৷ কিন্তু শিয়া প্রধান দেশ ইরানের সরকার ইরাকের মালিকি সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে বলে ধারণা করা হয়৷ নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, আইসিস-বিরোধী যুদ্ধে মালিকি সরকারকে ড্রোন এবং অন্যান্য সমর উপকরণ দিয়ে সহায়তা করছে ইরান সরকার৷
ছবি: Atta Kanare/AFP/Getty Images
এক হাজারেরও বেশি নিহত
সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের সমর্থন দিচ্ছে সৌদি আরব৷ ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি মনে করেন, আইসিসকেও মদদ দিচ্ছে সৌদি সরকার৷ ইরাকে চলমান সংঘাতে কমপক্ষে এক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে৷ মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ জন্য ইরাক সরকার এবং আইসিস-এর কঠোর সমালোচনা করেছে৷
ছবি: Reuters
বাড়ছে শরণার্থী
আইসিসের হামলা শুরুর পর থেকে ইরাকের বিভিন্ন স্থান থেকে অন্তত ১২ লাখ মানুষ ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন৷ সিরিয়া সংকট শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত আড়াই লাখ সিরীয় স্বায়ত্তশাসিত কুর্দি রাজ্যগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে৷ এখন আইসিসের দখল করে নেয়া শহরগুলো থেকে পালিয়ে ইরাকিরাও আসছে৷ ছবিতে খাজাইর চেকপয়েন্ট অতিক্রম করে কুর্দিদের নিয়ন্ত্রিত শহর এরবিলের দিকে যেতে দেখা যাচ্ছে মসুল থেকে আসা ইরাকিদের৷
ছবি: Getty Images
স্বেচ্ছাসেবীরাও নেমেছে যুদ্ধে
প্রধানমন্ত্রী মালিকি জানিয়েছেন, রাশিয়া আর বেলারুশের কাছ থেকে পুরোনো যুদ্ধ বিমান কিনেছে ইরাক৷ আইসিসের বিরুদ্ধে সেগুলো ব্যবহার করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি৷ বাড়ছে সমরাস্ত্র৷ বাড়ছে যোদ্ধা৷ স্বেচ্ছাসেবীরাও যোগ দিচ্ছেন আইসিস বিরোধী যুদ্ধে৷
ছবি: Reuters
9 ছবি1 | 9
ওদিকে ইরাকে কুর্দ বা কুর্দিরা লড়ছে ইসলামিক স্টেট সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে৷ কুর্দরা চায় জার্মানির কাছ থেকে অস্ত্র৷ তাদের এই দাবি জার্মানিতেও নানা প্রত্যাশিত ও অপ্রত্যাশিত মহল থেকে সমর্থন পেয়েছে: যেমন বাম দল, কিংবা সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী সবুজ দলের রাজনীতিক ইয়শ্কা ফিশার৷ সকলেই নির্দ্বিধায় বলছেন: কুর্দদের অস্ত্র দেওয়া হোক৷
আরেক বিপদ: অস্ত্র রপ্তানি সম্পর্কে জার্মান সরকারের নীতি জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার মতো সুদূরের মিত্রদের মনেও নাকি সন্দেহের সৃষ্টি করেছে, অস্ত্র সরবরাহের ক্ষেত্রে জার্মানিকে নির্ভরযোগ্য সহযোগী হিসেবে গণ্য করা চলে কি না৷ আরো বড় কথা, চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের নিজের দল সিডিইউ-এর কিছু বিধায়ক খোলাখুলিভাবে বলছেন, ‘‘গাব্রিয়েল যা করছেন, তা জার্মানির জাতীয় নিরাপত্তার পক্ষে একটি ঝুঁকি৷''