অস্ট্রিয়ার আল্পস পর্বতাঞ্চলের টিরোল এলাকা৷ সেখানে যদি একদল মানুষকে হঠাৎ উদ্ভট কাজকর্ম করতে দেখেন: দেয়াল-আরোহণ কিংবা মেগা-দোলনা থেকে ঝাঁপ খাওয়া – তাহলে বুঝবেন, এরিয়া ফর্টিসেভেন-এ এসে পড়েছেন৷
বিজ্ঞাপন
বিষুবরেখার উত্তরে ৪৭ অক্ষাংশে অবস্থান, তাই নাম এরিয়া ফর্টিসেভেন৷ আউটডোর অ্যাকটিভিটি, বা বাইরের খোলামেলায় দৌড়ঝাঁপ বলতে যা বোঝায়, তা করে যারা আনন্দ পান, তাদের জন্যই এই এরিয়া ফর্টিসেভেন৷ সাড়ে ছয় হেক্টর এলাকার পার্কটিতে যে পরিমাণ খেলাধুলার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, সারা বিশ্বে তা তুলনাহীন৷ এরিয়া ফর্টিসেভেন-এর কর্মী ক্রিস্টিয়ান স্ন্যোলার বলেন, ‘‘এটা হল এমন একটা জায়গা, যেখানে পাহাড়ি অঞ্চলে করার মতো যাবতীয় ট্রেন্ডি স্পোর্টগুলি একসঙ্গে পাওয়া যাবে, সেগুলোকে ট্রাই করে দেখার সুযোগ পাওয়া যাবে৷ এই ধারণা থেকেই এরিয়া ফর্টিসেভেন-এর জন্ম৷ এটা এমন একটা জায়গা, যেখানে ধীরে-সুস্থে, তাড়াহুড়ো না করে যাবতীয় ট্রেন্ড স্পোর্টগুলো পরখ করে দেখা যায়৷''
ক্রিস্টিয়ান স্ন্যোলার হলেন পার্কটির মার্কেটিং-এর দায়িত্বে৷ তিনি নিজেই এক্সট্রিম অ্যাথলিট: ক্লাইম্বিং করেন, প্যারাশুট জাম্পিং করেন৷ মে থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে আড়াই লাখ অতিথি এখানে ভিড় করেন৷ তাদের অধিকাংশই পুরুষ ও বয়সে তরুণ৷ এখানে যারা আসেন, তারা জেনেশুনেই চলতি অ্যামিউজমেন্ট পার্কগুলোর কোনো বিকল্প খোঁজেন৷
ক্লাইম্বিং থেকে ব়্যাফটিং
এরিয়া ফর্টিসেভেন'-এর সাতাশ মিটার উচ্চতার ওপেন এয়ার ক্লাইম্বিং সাইট-টি হল ইউরোপে সর্বোচ্চ৷ গোটা ট্যুরটা সম্পূর্ণ করতে বেশ কয়েক ঘণ্টা সময় লাগে - এরিয়া ফর্টিসেভেন-এর অধিকাংশ স্পোর্টের ক্ষেত্রে যা প্রযোজ্য৷
যাটের দশক থেকে আল্পস অঞ্চলে সর্বাধিক জনপ্রিয় গ্রীষ্মকালীন গতিবিধিগুলির মধ্যে পড়ে ব়্যাফটিং৷ এরিয়া ফর্টিসেভেন আউটডোর পার্কে ইন এবং ওয়েটৎস নদী দু'টিতে নিয়মিত ব়্যাফটিং ট্যুর-এর ব্যবস্থা রাখা হয়৷
বাংলার অণুর চোখে দেখুন বিশ্ব
বাংলাদেশের পর্যটক তারেক অণুকে অনেকে ফেসবুক ফ্রেন্ড লিস্ট থেকে ‘মুছে’ দিতে চান৷ কারণ তাঁর বিশ্ব ঘোরার ছবি দেখে দেখে নাকি তাঁদের ‘হিংসা’ হয়! চলুন আমরা সেই অণুর চোখে ক্ষণিকের জন্য বিশ্বটা ঘুরে আসি৷
ছবি: Tareq Onu
পেরুর মাচু পিচু
দক্ষিণ অ্যামেরিকার বেশ কিছু দেশে গেছেন তারেক অণু৷ ছবিটি বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ মাচু পিচুর, পেরুবাসীর কাছে যেটা মিশরের পিরামিডের মতো৷ পঞ্চদশ শতকে ইনকা সাম্রাজ্যের এই নিদর্শনটি ১৯১১ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরা হয়৷
ছবি: Tareq Onu
উত্তর মেরু
বাংলাদেশের আরেক পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হকের সঙ্গে ২০০৭ সালে উত্তর মেরু গিয়েছিলেন তারেক অণু৷ এরপর আর কোনো বাংলাদেশি সেখানে গেছেন কিনা – তা জানেন না অণু৷ ‘‘উত্তর মেরুতে আমরা প্রায় ৬০ ঘণ্টা ছিলাম৷ পুরোটা সময় সূর্য আমাদের সঙ্গেই ছিল৷ কখনো ডুবেনি৷ এটা খুবই স্মরণীয় একটা ব্যাপার, যা আমার সারাজীবন মনে থাকবে৷’’
ছবি: Tareq Onu
ইউরোপের সর্বোচ্চ পর্বত চূড়ায়
৪,৮১০ মিটার উচ্চতার মঁ ব্লঁ-য় আরোহণ করেছেন অণু৷ বিখ্যাত আলপ্স পর্বতমালার মধ্যে মঁ ব্লঁ-ই সবচেয়ে উঁচু৷ ফ্রান্স ও ইটালির সীমান্তে এই পর্বতচূড়াটি অবস্থিত৷
ছবি: Tareq Onu
সাগরতলে অণু
উঁচুতে উঠে চারপাশ যেমন দেখেছেন তেমনি অণু স্নরক্লিং করে সাগরতলের সৌন্দর্য উপভোগ করারও চেষ্টা করেছেন৷
ছবি: Tareq Onu
অন্নপূর্ণা সার্কিটে ট্রেকিং
নেপালের হিমালয়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় ট্রেকিং-এর পথ হচ্ছে অন্নপূর্ণা সার্কিট৷ পুরো ট্রেকিং পথটা প্রায় ১৬০ থেকে ২৩০ কিলোমিটারের মধ্যে৷ সেখানে ঘুরে বেড়িয়েছেন তারেক অণু৷
ছবি: Tareq Onu
সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর
ছবিটা দেখে কি মনে হচ্ছে? কোথাকার ছবি? এটি সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরের ছবি৷ সেখানে নৌকায় তিনদিন ছিলেন অণু৷ অসংখ্যা হাঁসের উপস্থিতি আর হাওরের সৌন্দর্য দেখে পুলকিত হয়েছিলেন তিনি৷
ছবি: Tareq Onu
এমন বৈচিত্র্য বিরল
অণু বলেন, ছোট্ট একটা দেশ যে কী পরিমাণ বৈচিত্র্যময় হতে পারে বাংলাদেশ তার উদাহরণ৷ তাই বাংলাদেশে ঘুরতেই বেশি পছন্দ করেন তারেক৷ সুন্দরবন, ভোলা ও পটুয়াখালির ডুবো চর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে অপরূপ নকশার বাড়িঘর সবই টানে অনুকে৷ ছবিটি সুন্দরবনের৷
ছবি: Tareq Onu
একশোতে একশো মেক্সিকো
ঘোরার ক্ষেত্রে মেক্সিকোকে একশোতে একশো দিয়েছেন অণু৷ সেখানকার প্রকৃতি, পাহাড়, খাবার দাবার, মানুষজন, নিরাপত্তা সবকিছুই চমৎকার বলে জানান তিনি৷ ছবিতে মেক্সিকোর ঐতিহাসিক মায়া সভ্যতার মাঝে অণুকে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Tareq Onu
মান্ডেলার বাড়ি দর্শন
২০১০ সালের বিশ্বকাপ দেখতে দক্ষিণ আফ্রিকায় পাড়ি জমান অণু৷ সেখানে গেছেন অথচ নেলসন ম্যান্ডেলার বাড়িতে যাবেন না তা কি হয়? ‘মান্ডেলা হাউস’ নামের এই বর্তমান জাদুঘরটিতে ১৯৪৬ সাল থেকে ১৯৬২ পর্যন্ত বসবাস করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার জনগণের প্রিয় নেতা ‘মাদিবা’৷
ছবি: Tareq Onu
বিশ্বকাপ দেখতে জার্মানিতে
২০০৬ সালে জার্মানিতে যখন বিশ্বকাপ হয়েছিল তখন অণুরা কয়েকজন মিলে গাড়িতে করে ফিনল্যান্ড থেকে জার্মানিতে এসেছিলেন৷ ও হ্যাঁ, ২০০২ সাল থেকে ফিনল্যান্ডে থাকেন অণু৷ ছবিতে বার্লিনের বিখ্যাত টিভি টাওয়ার দেখা যাচ্ছে৷ বুঝতেই পারছেন টাওয়ারটিকে কেন ফুটবলের রূপ দেয়া হয়েছে৷
ছবি: Tareq Onu
নরওয়ের ‘ফিয়র্ড’
নরওয়ে মানেই ফিয়র্ড অর্থাৎ লম্বা, সরু ও পর্বতঘেরা উপসাগর বা সামুদ্রিক খাঁড়ি৷ অণুর তোলা এই ছবিতে নরওয়ের একটি ফিয়র্ড দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Tareq Onu
ফিদেল কাস্ত্রোর দেশে
কিউবার প্রতি একটা আলাদা আকর্ষণ থেকেই সেখানে গিয়েছিলেন অণু৷ সেখানকার একটি পরিবেশ বান্ধব ট্যাক্সির ছবি তুলেছেন তিনি৷
ছবি: Tareq Onu
বাদ পড়েনি মারাদোনার দেশও
ফিদেল কাস্ত্রোকে বেশ পছন্দ করেন ফুটবলের কিংবদন্তি মারাদোনা৷ আর্জেন্টিয়ায় গিয়ে অণু দেখেছেন মারাদোনা ‘ফিভার’৷
ছবি: Tareq Onu
13 ছবি1 | 13
ওপেন এয়ার পার্কটিতে ক্রমেই আরো বেশি মানুষ ভিড় করছেন৷ সবাই চান অবসর সময়ে স্পোর্ট, সবাই চান এক্সট্রিম অ্যাথলিট হতে৷ সাইকেল চালানো আর পায়ে হেঁটে বেড়ানো হল সকলের প্রিয় – ছুটি কাটাতে কিংবা দিনের শেষে অফিস থেকে ফিরে৷ কানু জাতীয় ডিঙি চালনা আর ক্লাইম্বিংও ক্রমেই আরো বেশি জনপ্রিয় হচ্ছে৷
অ্যাড্রেনালিন ও অ্যাকশন
মুক্ত বাতাসে খেলাধুলা বা অন্যান্য গতিবিধি আজ আধুনিক জীবনশৈলীর অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ পর্যটন ও অবসরবিনোদন বিশেষজ্ঞ রল্ফ ফ্রাইটাগ বলেন: ‘‘অ্যাকটিভ, মানে সক্রিয়ভাবে কিছু একটা করা আজ খুবই ইতিবাচক৷ আমি সক্রিয় মানেই আমি সুস্থ, আমার জীবন পরিপূর্ণ, আমি মডার্ন৷''
তবে মেগাসুইং বা মেগা-দোলনা থেকে ৩০ মিটার নীচে অ্যাসফাল্টের পার্কিং প্লেস-টির দিকে ঝাঁপ খেতে নিশ্চয় প্রচুর সাহস লাগে৷ অথচ ব্যাপারটা দেখতে যতোটা ঝুঁকিপূর্ণ, বাস্তবে তা নয়৷ ক্রিস্টিয়ান স্ন্যোলার বলেন, ‘‘সকলের চাই অ্যাড্রেনালিন, যতোটা সম্ভব অ্যাকশন৷ এটাই হল আমাদের আজকের সমাজ৷ কিন্তু সেই রোমাঞ্চ ঝুঁকি-শূন্য হতে হবে, তার বিমা থাকতে হবে৷ এই কম্প্রিহেনসিভ কভার ইনশিওরেন্সের মনোবৃত্তি আজ সর্বত্র৷''
গড়ে একজন অতিথি পার্কে তিন দিন কাটান৷ প্রতিটি আকর্ষণ – অর্থাৎ খেলার জন্য ৩০ থেকে ৫০ ইউরো মাশুল৷ তা সত্ত্বেও গ্রাহকরা খুশি বৈ অখুশি নন৷ যিনি সারাদিন অ্যাকটিভ অর্থাৎ সক্রিয় ছিলেন, তিনিও কিন্তু সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে জিরিয়ে নেওয়ার কথা ভাবেন না৷ কেননা এরিয়া ফর্টিসেভেন-এ তখন শুরু হয়ে গেছে পার্টি টাইম!