কোনো ইনফেকশনে কষ্ট পাচ্ছেন? তাও যদি হয় ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশান বা ইউটিআই-এর মতো কষ্টদায়ক ইনফেকশন? অনেকেই এই ইনফেকশনের জন্য ডাক্তারের কাছ থেকে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ পেয়ে থাকেন৷

তিন থেকে পাঁচদিন ওষুধ খেলেই ঠিক হয়ে যাবেন, এমনই জাদু এই অ্যান্টিবায়োটিকের৷ কিন্তু এই অ্যান্টিবায়োটিক না থাকলে রোগের সংক্রমণ ছড়িয়ে যেতে পারে কিডনি বা রক্তেও৷

সঠিক সময়ে অ্যান্টিবায়োটিক না খেলে এমন বিপদ হতে পারে৷

অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ করতে পারে যে জীবাণু

অ্যান্টিবায়োটিক ছাড়া দুনিয়া কোনো ভয়ের সিনেমার মতো শুনতে লাগলেও আসলে তা বাস্তব৷ 

কোনো জীবাণুকে ঠেকাতে যে অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি করা হয়েছে, জীবাণুরা এখন সেই অ্যান্টিবায়োটিককেও প্রতিরোধ করতে পারছে৷

অ্যান্টিবায়োটিকের কাজ, একটি নির্দিষ্ট জীবাণুকে নির্জীব করা৷ কিন্তু সম্ভাবনা থেকেই যায় যে জীবাণু তাতে না মরে বরং অ্যান্টিবায়োটিককে রোধ করবার ক্ষমতা নিজের মধ্যে সৃষ্টি করে নেয়৷

শুধু তাই নয়, সংখ্যায় কয়েক গুণ বেড়ে গিয়ে অ্যান্টিবায়োটিককে ঠেকানোর ক্ষমতাও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জীবাণুর মধ্যে ছড়িয়ে দেয়৷

কিন্তু সব ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা এতে প্রশ্নবিদ্ধ হবে, এমনটা নয়৷

কতটা অকার্যকর হবে কোনো অ্যান্টিবায়োটিক?

ল্যানসেট পত্রিকায় প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র জানায় যে ২০১৯ সালে, অ্যান্টিবায়োটিকরোধী জীবাণু সংক্রমণের কারণে বিশ্বের প্রায় ১২ লাখ ৭০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন৷

এই ধরনের সংক্রমণ ইউরোপে প্রতি বছর ৬ লাখ ৭০ হাজারেরও বেশি, জানাচ্ছে ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল৷ এই একই কারণে ইউরোপে মারা যান ৩৩ হাজার মানুষ৷

ফলে অ্যান্টিবায়োটিকের নির্ভরযোগ্যতার দিকে প্রশ্ন তুলছেন বিজ্ঞানী ও ডাক্তাররা৷

যুক্তরাজ্যের ওয়ারিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্রিস ডাওসন কয়েক দশক ধরে জীবাণুদের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ে কাজ করছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘তারা একটা সময়ে কাজ করা বন্ধ করে দেবে৷ ফলে আমাদের বিকল্প খুঁজতেই হবে৷ আমাদের আর কোন উপায় নেই৷''

যেভাবে গড়ে ওঠে এই প্রতিরোধ ক্ষমতা

ডাক্তারেরা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি অ্যান্টিবায়োটিকের পরামর্শ দেন বলে অ্যান্টিবায়োটিকের সংস্পর্শে খুব ঘন ঘন আসে জীবাণুরা৷

অন্যদিকে, শরীর একটু ভালো লাগতে শুরু হলেই রোগীরা নিজে থেকে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেন, পুরো কোর্স শেষ না করেই৷

তাতে শরীর ভারো লাগলেও শরীরের ভেতরের সংক্রমণ বা ইনফেকশন পুরোপুরি সারে না৷ আর পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিবায়োটিক না খাওয়ায় জীবাণুও মরে না৷ অল্প মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিকের সাথে আস্তে আস্তে মানিয়ে নিতে শিখে যায় জীবাণু৷ 

বেশ কিছু দেশে, ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ বিক্রি হয়, যা এই ওষুধের ভুল ব্যবহার বাড়ায়৷

কৃষিখাতেও ব্যাপকহারে ব্যবহৃত হয় অ্যান্টিবায়োটিক৷ পোকামাকড় তাড়াতে ফল বা সবজির গায়ে স্প্রে করা হয় বা মাংস উৎপাদনের সময়েও ব্যবহার করা হয় অ্যান্টিবায়োটিক৷

এতে করে আমাদের খাবারের সাথেও মিশে যায় স্বল্পমাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক, যা আরো সাহায্য করে বিভিন্ন জীবাণুকে৷

যেমন হবে ভবিষ্যতের ওষুধ

অ্যান্টিবায়োটিকরোধী জীবাণুকেও জয় করতে পারবে এমন ওষুধ তৈরি করতে প্রয়োজন গবেষণা, যার জন্য প্রয়োজন বিনিয়োগ৷ কিন্তু এই দিকে সেভাবে এখনও বিনিয়োগ নেই বলে বেশ কিছু বিজ্ঞানীরা গবেষণার এই ধারা থেকে সরে আসছেন৷

অধ্যাপক ক্রিস ডাওসন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা শুধু অ্যান্টিবায়োটিককেই হারাচ্ছি না, যে গবেষকেরা তা আবিষ্কার করেছেন, তাদেরকেও হারিয়ে ফেলছি৷''

২০২০ সালে এই বিষয়ে গবেষণার জন্য মোট বিনিয়োগের মূল্য ছিল দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কিছু বেশি৷ ২০২২ সালে তা ছিল ১ দশমিক দুই বিলিয়ন ডলার৷ ২০২৩ সালে, বিনিয়োগ কমে দাঁড়াচ্ছে প্রায় ৬৬৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার৷

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিনিয়োগের নিম্নমুখী যাত্রা কোনো মতেই সমাধান নয়৷

ডাওসনের মতে, অ্যান্টিবায়োটিকরোধী জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই ‘গোটা বিশ্বজুড়ে নৈতিক প্রাধান্য' পাওয়ার যোগ্যতা রাখে৷

কার্লা ব্লাইকার/এসএস