ইয়েনা বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে সংক্রমণ মোকাবিলায় পদক্ষেপের সাফল্য দেখা যাচ্ছে৷ তবে জীবাণুর প্রতিরোধ ক্ষমতা বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে থেকে যাচ্ছে৷ অ্যান্টিবায়োটিক ছাড়া অন্য কীভাবে তা মোকাবিলা করা যায়, ভাবনা-চিন্তা শুরু হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
ইয়েনা বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে আইসিইউ-এর রোগীরা অত্যন্ত দুর্বল, তাই তাদের জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি৷ সংক্রমণ বিশেষজ্ঞ ডা. মাটিয়াস প্লেৎস এ বিষয়ে সবচেয়ে বেশি সচেতন৷ তিনি বলেন, ‘‘কাজ শেষ হলে অ্যান্টিবায়োটিক বন্ধ করে দিতে হয়৷ এ বিষয়ে আমরা বিশেষ নজর রাখি৷ ডাক্তারদের জন্য এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত কঠিন, কারণ তাঁরা রোগীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে চান৷ কিন্তু সর্বোচ্চ নিরাপত্তা সবসময় ভালো নয়, কারণ রোগীরা পরে মাল্টিরেজিস্টেন্ট প্যাথোজেনের কারণে মারাত্মক সংক্রমণের শিকার হতে পারেন৷ তাই রোগী সম্পর্কে ঠান্ডা মাথায় যুক্তি খাটিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত৷ বেডের পাশে দাঁড়ানো ডাক্তারের জন্য সেটা উপলব্ধি করা প্রায়ই কঠিন হয়৷'’ মাটিয়াস প্লেৎস রোগীর চিকিৎসা সম্পর্কে এক সহকর্মীর সঙ্গে কথা বলেছেন৷ চিকিৎসার মেয়াদ ও অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োগ স্থির করতে হবে৷ দ্রুত নতুন অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন পড়েছে৷ কিন্তু তা তৈরির কাজ বেশ কঠিন ও ব্যয়বহুল৷ নতুন অ্যান্টিবায়োটিক বাজারে আসতে ১০ বছর সময় লাগতে পারে৷ ততদিন পর্যন্ত ডাক্তার ও নার্সরা যত দ্রুত সম্ভব জানতে চান, রোগীরা মাল্টিরেজিস্টেন্ট প্যাথোজেন হাসপাতালে নিয়ে আসছেন কিনা৷
কিছুদিন হলো, ইয়েনা বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে রোগীদের ভর্তি করার আগে এমআরএসএ জীবাণু পরীক্ষা চালু হয়েছে৷ এই প্যাথোজেন সাধারণত ত্বক, নাক অথবা গলায় বাসা বাঁধে এবং মেথিসিলিন অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্ট হিসেবে পরিচিত৷ হাইজিন বিশেষজ্ঞ কনি গ্যোলিৎস বলেন, ‘‘বিশেষ করে যে সব রোগীর ক্ষেত্রে অপারেশনের পরিকল্পনা রয়েছে, যারা বেশিদিন হাসপাতালে সময় কাটাবেন, তাদের ক্ষেত্রে এই জীবাণুর ঝুঁকি দূর করা অত্যন্ত জরুরি৷ তা না হলে ক্ষতে সংক্রমণ বা অন্যান্য রোগ হতে পারে৷ স্যাম্পল পাঠিয়ে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ফলাফল জানা যায়৷ তখন স্থির হয়, রোগীকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হবে কি না৷''
জীবাণুমুক্ত থাকার ১৩টি উপায়
আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে রয়েছে নানা জীবাণু, যা আমরা হয়ত লক্ষ্যই করি না৷ এ সবই কি মানুষের অসুস্থ হয়ে পড়ার একটা বড় কারণ? একটু সচেতন হয়ে কিভাবে এই সব জীবাণু থেকে নিজেকে দূরে রেখে সুস্থ থাকবেন – তারই কিছু উপায় পাবেন এখানে৷
ছবি: vsurkov/Fotolia
হাত ধোয়া
গাড়ি, রিক্সা, কোনো কিছুর দরজা বা হ্যান্ডেল সাধারণত আমরা হাত দিয়েই ধরি৷ অথচ সেগুলোতে কতজন হাত দিয়েছে, তার কোনো ঠিক নেই৷ তার ওপর বাতাসেও ছড়িয়ে নানা জীবাণু৷ তাই বাইরে থেকে এসে প্রথমেই খুব ভালো করে হাত ধুয়ে ফেলা প্রয়োজন৷ তা না হলে বাইরের জীবাণুগুলো খুব সহজেই ঢুকে পড়তে পারে আপনার শরীরে৷
ছবি: bilderbox
কম্পিউটার
আজকের দিনে প্রায় সব জায়গাতেই রয়েছে কম্পিউটারের ব্যবহার৷ চাকরির প্রয়োজনে যাঁদের ভিন্ন ভিন্ন কম্পিউটার ব্যবহার করতে হয়, তাঁদের জন্য পরামর্শ – কাজ শুরুর আগে হাত দুটো ‘হ্যান্ড স্যানিটাইজার’ দিয়ে মুছে নেবেন এবং কাজ শেষ হওয়ার পর ঐ একই পদ্ধতিতে হাত পরিষ্কার করে ফেলবেন৷ এছাড়া বাড়িতে ঢুকেও প্রথম কাজ হতে হবে ভালো করে হাত মুখ ধুয়ে ফেলা৷
ছবি: Fotolia/fotek
রান্নাঘর
রান্নাঘরেই লুকিয়ে থাকতে পারে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জীবাণু৷ কাঁচা মাংস কাটার পর সেই কাটিং বোর্ডে অন্য কিছু কাটাকাটি করা হলে, যা তার সংস্পর্শে আসবে, তাতেই মাংসের জীবাণু ছড়িয়ে পড়তে পারে৷ তাই কাঁচা মাছ, মাংস কাটার জন্য আলাদা বোর্ড ব্যবহার করুন৷ আর তা ব্যবহারের পর বোর্ড, ছুড়ি, দা এবং অবশ্যই হাত দুটো ভালো করে ধুয়ে ফেলুন৷ এছাড়া রান্নাঘরের কাঁচা আবর্জনা পরিষ্কার করুন প্রতিদিন৷
ছবি: Fotolia/industrieblick
বাথরুম
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় বেশিরভাগ বাড়িতেই বসার ঘর কিংবা শোবার ঘর যতটা পরিষ্কার বা সুন্দর করে সাজানো থাকে, রান্নাঘর বা বাথরুমের ক্ষেত্রে কিন্তু তেমনটা দেখা যায় না৷ অথচ বাথরুম এবং রান্নাঘরই হচ্ছে জীবাণু ছড়ানোর ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা৷ তাই বাথরুম সব সময় শুকনো এবং পরিষ্কার রাখুন৷ তার সঙ্গে ব্যবহৃত টয়লেট পেপার বা কসমেটিক পেপার সহ সব ময়লা নিয়মিত সরিয়ে ফেলুন৷
ছবি: Fotolia/Pixelwolf
ব্যবহৃত যে কোনো ব্রাশ
রান্নাঘর, বাথরুম অথবা বাড়ির অন্য কোনো ঘরই বলুন, সেই সব জায়গা পরিষ্কার বা মোছার জন্য ব্যবহার করা ব্রাশটিতে কিন্তু থাকে অসংখ্য জীবাণু৷ তাই ব্রাশগুলো ব্যবহারের পর প্রতিবারই ধুয়ে এবং পানি চিপে ফেলে দিয়ে পরেরবার ব্যবহারের জন্য রেখে দিন৷ এছাড়া মাসে অন্তত একবার পুরনো ব্রাশ ফেলে দিয়ে নতুন ব্রাশ কিনে আনুন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
টুথ ব্রাশ
দাঁত মাজার ব্রাশের ভেতরও জমে থাকতে পারে নানা রকম ব্যাকটেরিয়া৷ তাই সময়মতো, অর্থাৎ মাসে অন্তত একবার টুথব্রাশ পরিবর্তন করা উচিত৷ তা না হলে নিজের ব্রাশের জীবাণুই আবারো নিজেরই ক্ষতি করতে পারে৷ এছাড়া ‘‘প্রতিবার ব্যবহারের পর টুথব্রাশটি গরম পানি দিয়ে ধুয়ে রাখা অত্যন্ত জরুরি৷’’ একথা বলেন কোলন শহরের দাঁত বিশেষজ্ঞ ডা. আইকার৷
ছবি: imago/CTK/CandyBox
ঘরের ভেতরের গাছের পানি
অনেকেই সখ করে ঘরে গাছ লাগিয়ে থাকেন৷ এ সব গাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি দেওয়া হলে, তা জমে জীবাণুর জন্ম হয়, যা কিনা সে’সব জায়গায় বসা মশা, মাছি বা পোকামাকড়ের মাধ্যমে মানুষের শরীরেও ছড়িয়ে পড়তে পারে৷
ছবি: picture alliance/dpa
ইনজেকশনের সিরিঞ্জ
নানা কারণেই মানুষকে ইঞ্জেকশন দিতে হয়৷ তবে ইনজেকশন দেওয়ার আগে অবশ্যই পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত সিরিঞ্জটি নতুন কিনা৷ কারণ সিরিঞ্জটি আগে যে ব্যবহার করেছেন, তাঁর কোনো ছোঁয়াচে রোগ থাকলে এর মধ্য দিয়ে অন্য আরেকজন আক্রান্ত হতে পারেন সহজেই৷ বলা বাহুল্য, এইচআইভি ভাইরাসের মতো বিপজ্জনক ভাইরাসও কিন্তু এভাবে ছড়াতে পারে৷
ছবি: Fotolia
বাতাসে জীবাণু ছড়ায়
সার্দি-কাশি বা হাঁচিতে জীবাণু ছড়ায় – সেকথা কম-বেশি আমরা অনেকেই জানি৷ তাই এ ধরণের রোগীদের থেকে খানিকটা দূরে থাকাই ভালো৷ এ সব অসুখ ছড়ায় সাধারণত, বাস, ট্রেন, মিটিং, মিছিল বা সেই সব জায়গায় যেখানে অনেক মানুষের যাতায়াত৷ যাঁরা শারীরিকভাবে কিছুটা দুর্বল বা যাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাঁরা সহজেই এভাবে আক্রান্ত হয়ে পরতে পারেন৷
ছবি: DW/M. Mamun
পানি
পানির আরেক নাম জীবন৷ পানি পান করা ছাড়াও প্রায় সব কাজেই প্রয়োজন হয় পানির৷ তবে যে কোনো জায়গার পানি পান না করাই ভালো৷ পানি বাহিত রোগের কথা কে না জানে? তাই প্রয়োজনে এক বোতল ফুটন্ত পানি বাড়ি থেকে সাথে নিয়ে বের হন৷ অথবা পথেই ‘মিনারেল ওয়াটার’-এর বোতল কিনে নিন৷ গোসলের সময়ও লক্ষ্য রাখা উচিত যাতে পানি পেটে না চলে যায়৷
ছবি: Fotolia/photo 5000
সতর্কতা
জীবাণু সম্পর্কে শিশুদের ছোটবেলা থেকেই সতর্ক করে দেওয়া উচিত৷ বিশেষ করে, অন্য কোথাও টয়লেট ব্যবহারের পর অবশ্যই হাত ধোয়া উচিত, সেই ছোট থেকেই৷ বাইরের খাবারের ব্যাপারেও ভলোভাবে সতর্ক হওয়ার কথা শিশুদের বুঝিয়ে বলতে হবে৷ আর সতর্ক না হলে তার ফল যে ভয়ংকর হতে পারে – সেটারও একটা ধারণা দেয়া উচিত সেই ছোটবেলাতেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রাস্তার খাবার
রাস্তা বা ফুটপাথে মজার মজার লোভনীয় খাবারের দোকানগুলো আমাদের কেমন যেন হাতছনি দিয়ে ডাকে৷ তাই না? কিন্তু খাবারগুলো লোভনীয় হলেও এ সব থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকা উচিত৷ বাইরে খোলা অবস্থায় রাখা খাবারগুলোয় মাছি, ধুলোবালি পড়ে৷ অনেকক্ষণ আগে কেটে রাখা ফল বা সালাদ তো একেবারেই খাওয়া উচিত নয়৷ তবে ফুটন্ত বা রান্না করা খাবার গরম অবস্থায় খাওয়া যেতে পারে৷
ছবি: dapd
ভ্রমণ
অনেককেই দেখা যায় ভ্রমণ বা বেড়ানোর পর ফিরে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন৷ এর কারণ নিয়ে কি কেউ খুব বেশি মাথা ঘামায়? জায়গা, পরিবেশ, খাবার সবই তো ছিল ভিন্ন৷ বিশেষ করে দূরে কোথাও গেলে তা এ কথা বেশ ভালোভাবেই টের পাওয়া যায়৷ কাজেই বেড়াতে গেলে ছোট থেকে বড় সবারই বিশেষভাবে সতর্ক থাকা উচিত৷
ছবি: vsurkov/Fotolia
13 ছবি1 | 13
তবে এমারজেন্সির সময় এমন পরীক্ষার সময় থাকে না৷ তাছাড়া এখনো জার্মানির হাসপাতালগুলোতে এই মানদণ্ড বাধ্যতামূলক হয় নি৷ টহলের কাজ শেষ৷ নতুন এই কনসেপ্ট চালু করে মাটিয়াস প্লেৎস ও তাঁর সহকর্মীরা হাতেনাতে ফল পেতে শুরু করেছেন৷ রেজিস্টেন্সের ঘটনা ও তার ফলে সংক্রমণের প্রবণতা কমছে৷ ফলে রোগীদের লাভ হচ্ছে৷ তা সত্ত্বেও জীবাণু এখনো ডাক্তারদের জন্য চ্যালেঞ্জ থেকে যাচ্ছে৷
মাটিয়াস প্লেৎস বলেন, ‘‘ইনফেকশোলজি বা সংক্রমণ বিদ্যার বিশেষত্ব হলো, সম্পর্কটা শুধু শুধু রোগী, রোগ ও ওষুধের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই৷ এটা একটা ত্রিকোণ সম্পর্ক – রোগী, প্যাথোজেন ও সংক্রমণ মোকাবিলার ওষুধের মধ্যে৷ এর মধ্যে প্যাথোজেন রেজিস্টেন্স জিন পেয়ে বা অন্যভাবে সবচেয়ে দ্রুত পরিবর্তিত হয়৷ তাই সংক্রমণজনিত রোগের চিকিৎসাও প্রতি বছর বদলাতে হয়, রেজিস্টেন্স অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া নির্ধারিত হয়৷ চিকিৎসাবিদ্যার অন্যান্য ক্ষেত্রে এমনটা দেখা যায় না৷''
ডাক্তার ও গবেষকরা এর মধ্যেই অ্যান্টিবায়োটিক-পরবর্তী যুগের কথা বলতে শুরু করে দিয়েছেন৷ কারণ জীবাণু যে রেজিস্টেন্স গড়ে তুলছে, আজকের জ্ঞান দিয়ে তা বন্ধ করা সম্ভব নয়৷