শরীরের জয়েন্টে জ্বালাপোড়া, হাত পা ফুলে যাওয়া নড়াচড়ায় অসুবিধা এগুলো হলো রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস রোগের লক্ষণ৷ এটি একটি অটো-ইমিউন অসুখ৷ অর্থাৎ শরীরের প্রতিরোধ শক্তি নিজেকেই আক্রমণ করে বসে৷
বিজ্ঞাপন
ইমিউন সিস্টেম দ্বারা কানেকটিভ টিসু নষ্ট হয়ে গেলে আর্থ্রাইটিস বা বাত দেখা দিতে পারে৷ জার্মানিতে ৮০০,০০০ – অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার এক শতাংশ মানুষ এই রোগের শিকার৷
মাক্স প্লাঙ্ক ইন্সটিটিউটের ইমিউন বায়োলজির গবেষকরা এমন একটি বিষয় আবিষ্কার করেছেন, যা আর্থ্রাইটিস তথা অটো-ইমিউন অসুখবিসুখের ধরনধারণ বুঝতে সহায়তা করে৷
উত্তেজক সংকেত থেকে প্রতিক্রিয়া
মলিকিউল জীববিজ্ঞানী মিশায়েল রেট-এর পরিচালনায় গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন যে, উত্তেজক সংকেত পেলে দেহের সেল বা কোষে দ্রুত প্রতিক্রিয়া হয়৷ আর এ থেকে রোগব্যাধি হতে পারে৷
শ্বেত রক্তকণিকার অন্তর্গত বি-লিম্ফোজাইটেন বা বি-সেলে পিটিপি১বি নামের প্রোটিনের অভাব ঘটলে এমন হয়ে থাকে৷ এই প্রোটিন দুর্বল বা কম পরিমাণে থাকলে শরীরের প্রতিরোধী শক্তিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয় এবং সুস্থ টিসুকে আঘাত হানে৷
‘‘আশ্চর্যের ব্যাপার হলো বি-সেল-এর এখানে বড় ভূমিকা রয়েছে৷ এর আগে আমরা মনে করেছিলাম এটি সক্রিয় হলে অ্যান্টিবডি প্রস্তুত করে৷ এখন আমরা বের করেছি এটি ইমিউন সিস্টেমেও শক্তিশালী এক ভূমিকা রাখে৷''
বি-সেলকে এক ধরনের গেটকিপার বলা যায়৷ এটি শক্তিশালী থাকলে বিষাক্ত সংকেতের বিস্তৃতি রোধ করে৷ এইভাবে এটি দেহকে নিজের সেলকে আক্রমণ করা থেকে প্রতিহত করে৷ যেভাবে আর্থ্রাইটিসের মতো রোগ দেখা দেয়৷ এই প্রোটিনের কর্মকাণ্ড বের করা একটা বিশেষ আবিষ্কার৷ কিন্তু তা থেকে আর্থ্রাইটিসকে নিরাময় করা এখন পর্যন্ত সম্ভব নয়৷ এজন্য এই প্রোটিনকে কৃত্রিমভাবে উদ্দীপ্ত করতে হবে, যে পদ্ধতি এখন পর্যন্ত বের হয়নি৷
হাড় শক্ত রাখতে ব্যায়ামের বিকল্প নেই
জার্মানিতে হাড় নরম হয়ে যাওয়ার সমস্যায় ভুগছেন আনুমানিক ৭,৮ মিলিয়ন মানুষ৷ অথচ হাড় শক্ত রাখতে নিয়মিত শরীর চর্চা বা বিশেষ ধরণের ব্যায়াম বড় ভূমিকা পালন করতে পারে৷
ছবি: Fotolia/mangostock
হাড়ের ক্ষয়
প্রায়ই শোনা যায় বয়স বাড়ার সাথে সাথে হাড়ের নানা সমস্যা ও ব্যথা শুরু হয়৷ কিন্তু কেন এটা হয় – তা নিয়ে হয়ত অনেকেই ভাবেন না৷ অস্টিওপোরোসিস বা হাড় নরম হয়ে যাওয়ার সমস্যায় জার্মানিতে ভুগছেন প্রায় ৭,৮ মিলিয়ন মানুষ৷ এই সমস্যা কেন হয় বা এর থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় কী?
ছবি: DW/K.ZeinEddine
শুধু বয়সই কারণ নয়
হাড় নরম বা ভেঙে যাওয়ার জন্য শুধু বয়স বাড়াই একমাত্র কারণ নয়৷ থাইরয়েড, পেটের ক্রনিক সমস্যা বা পাকস্থলির অসুখের কারণেও হাড় নরম বা ক্ষয় হতে পারে৷ আর পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাওয়া-দাওয়া না করা ও অতিরিক্ত ধূমপান হাড়কে নরম করে৷ তাছাড়া নানা ধরনের ওষুধ-পত্র সেবন থেকেও হাড় নরম হতে পারে৷
ছবি: Gina Sanders/Fotolia
এক্স-রে
হরমোনের বৈষম্যতা জাতীয় অসুখ যেমন হাইপোথাইরয়েড, হাইপারথাইরয়েড এবং ডায়াবেটিস হলেও ধীরে ধীরে অস্টিওপোরোসিস হয়ে থাকে৷ মহিলাদের এস্ট্রোজেন নামের হরমোন হাড়কে মজবুত করতে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷ এক্স-রে বা অন্যান্য পরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগের আক্রমণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়৷
ছবি: picture alliance / Bildagentur-o
ব্যায়াম
হাঁটাহাটি, সাঁতার কাটা এবং সাইকেল চালানো শরীরকে ফিট রাখে, কিন্তু হাঁড় শক্ত রাখায় তেমন কোনো ভূমিকা নেই এগুলির৷ এর জন্য রয়েছে বিশেষ ব্যায়াম, যা ঘরে বসেও করা যায়৷ বলা বাহুল্য, এক্ষেত্রে এমন কিছু করতে হবে যাতে মাংসপেশিতে ভালোভাবে টান লাগে বা চাপ পরে৷ যেমন এক পায়ে দাঁড়িয়ে বেশ কিছুক্ষণ লাফিয়ে লাফিয়ে হাঁটা৷
ছবি: imago/CHROMORANGE
জীবনযাত্রার পরিবর্তন
হাঁড় ঠিক রাখতে এ সব ব্যায়াম যে কোনো বয়সেই শুরু করা যায়৷ ৬০ অথবা ৭০ বছর বয়সও নাকি দেরি নয়, বলেন কোনো কোনো ডাক্তার৷ তবে এর জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে৷ অর্থাৎ, সপ্তাহে কম করে হলেও তিনদিন৷ তবে আগে ডাক্তারের সাথে কথা বলে নেওয়াই ভালো, বললেন হাড় বিশেষজ্ঞ ড. মার্টিন রুঙ্গে৷
ছবি: DW/Eva Usi
সঠিক খাওয়া-দাওয়া
হাড়ের জন্য ভিটামিন ‘ডি’ খুবই জরুরি৷ আর এই ভিটামিন ডি রয়েছে সামুদ্রিক মাছে৷ প্রতিদিন কিছুক্ষণ রোদে হাঁটাহাঁটি করাও দরকার হাড় শক্ত রাখার জন্য৷ তাছাড়াও ভিটামিন এ, সি, কে এবং বি ১২ হাড়কে মজবুত রাখতে সহায়তা করে৷
ছবি: Fotolia/oldline2
দুধ বা দুগ্ধজাতীয় খাবার
দুধ, দই, পনির, চিজ বা অন্যান্য দুগ্ধজাতীয় খাবার রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম যা হাড়ের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন৷ তাছাড়া মিনারেল ওয়াটারেও রয়েছে ক্যালসিয়াম৷ তবে সবকিছুই বুঝে শুনে খাওয়া ভালো৷
ছবি: AP
নিয়মিত ব্যায়াম
হাড়ের সমস্যার কারণে ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারেন না এমন মানুষের সংখ্যা জার্মানিতে প্রায় ১,৫৬ মিলিয়ন, যাঁরা বাড়িতে আত্মীয়, নার্স বা অন্যের সাহায্যে চলাফেরা করেন৷ হাড়কে শক্ত রাখতে বেশি কফি, চিনি, লবন, চিনি মিশ্রিত সফ্ট ড্রিংক এবং মদ্যপান এড়িয়ে চলাই ভালো৷ তবে সব কিছুর পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম যে করতেই হবে!
ছবি: Fotolia/mangostock
8 ছবি1 | 8
প্রতিরোধকমূলক পদার্থ আবিষ্কার করা সহজ
ফার্মাসিউটিক্যাল বা ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলি প্রতিরোধকমূলক বিভিন্ন উপাদান তৈরি করতে পেরেছে৷ কিন্তু প্রোটিনকে রোগীর দেহে উদ্দীপিত করার মতো পদ্ধতি এখনও বের হয়নি৷ কোনো কিছুকে তার কার্যকারিতায় বাধা দেওয়া গবেষকদের জন্য কোনো সমস্যাই নয়৷ কিন্তু প্রোটিনের মতো কোনো কিছুকে শক্তিশালী করা কঠিন কাজ ৷
তাঁরা এক ধরনের ইঁদুর নিয়ে কাজ করতে গিয়ে পিটিপি১বি-প্রোটিন-এর কার্যকর গুণাগুণ আবিষ্কার করেন৷ এই ইঁদুরগুলি আবার অন্য একটি গবেষণাগ্রুপ কালচার করেছিল৷ এই প্রাণীগুলিকে জেনেটিক দিক দিয়ে এমনভাবে পরিবর্তন করা হয়, যার ফলে বিজ্ঞানীরা বি-সেল থেকে পিটিপি১বি-প্রোটিনকে আলাদা করতে পারেন৷
বিজ্ঞানী রেট বলেন,‘‘আমরা ভাবলাম এটা নিয়ে পরীক্ষা করেই দেখা যাক না! আমরা শুধু জিনিসটি পেয়েছিলাম৷ পরে এটি থেকে প্রকল্পটি গড়ে ওঠে৷''