রবিবার রাত ৮টা ৯ মিনিটে ঠাকুরগাঁও সদর থানায় একটি মোবাইল এসএমএস আসে৷ এতে একটি বাল্যবিয়ে বন্ধে পুলিশের সহায়তা চাওয়া হয়৷ দুই ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে বিয়ে বন্ধ করে দেয় পুলিশ৷
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) চালু করা বাংলাদেশ পুলিশের অ্যাপ ‘বিডি পুলিশ হেল্প লাইন' ব্যবহার করে মোবাইল বার্তাটি পাঠানো হয়৷ ঠাকুরগাঁও সদর থানার ওসি মশিউর রহমান বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সদর থানার বড়গাঁও ইউনিয়নের মধ্যপাড়া গ্রামের ৬ষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীর সঙ্গে একই উপজেলার রুহিয়া এলাকার আবু হোসেনের বিয়ের আয়োজন করা হয়েছিল৷ রাতে বরযাত্রী বিয়ে বাড়িতে গিয়েছিল৷ ‘‘ম্যাসেজটি পাওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিয়ে বাল্য বিবাহটি বন্ধ করা হয়,'' বলে জানান মশিউর রহমান৷
পুলিশের অ্যাপটি বৃহস্পতিবার উদ্বোধন করেন আইজিপি একেএম শহীদুল হক৷ এটি ব্যবহার করে অপরাধ ও অপরাধী সম্পর্কিত যে-কোনো তথ্য সরাসরি সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)-র কাছে পাঠানো যাবে বলে জানান তিনি৷ তথ্যের পাশাপাশি ছবি, ভিডিও ও ভয়েস মেসেজও পাঠানো যাবে৷
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার পাশাপাশি বার্তাটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে যাবে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছেও৷ যেমন মহানগর পুলিশের ক্ষেত্রে এসি, ডিসি, পুলিশ কমিশনার এবং জেলার ক্ষেত্রে সার্কেল সহকারি পুলিশ সুপার, পুলিশ সুপার ও রেঞ্জ পুলিশও এসএমএস পাবেন৷ পুলিশ সদর দপ্তর পুরো বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করবে বলেও জানিয়েছেন পুলিশের আইজিপি৷
পুলিশের এই অ্যাপ চালুর উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন অনেকে৷ গুগলের প্লে স্টোরে এখন পর্যন্ত ৯০ জন রিভিউ লিখেছেন৷ বেশিরভাগই উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন৷ তবে অ্যাপটিতে থাকা কিছু সমস্যার কথাও জানিয়েছেন কেউ কেউ৷ একজন ব্যবহারকারী অ্যাপটির উন্নয়নে একজন পেশাজীবী নিয়োগের প্রস্তাব করেছেন৷ আরেকজন ব্যবহারকারী, ভুল ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে অ্যাপটির অপব্যবহার না করতে সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন৷
ইরানে পুলিশের নজর এড়াতে অ্যাপ
ইরানের নৈতিকতা বিষয়ক পুলিশের নজর এড়াতে ‘গেরশাদ’ নামে অভিনব একটি অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে৷ চলতি বছর ডয়চে ভেলের দ্য বব্স প্রতিযোগিতার একটি বিভাগে ‘জুরি অ্যাওয়ার্ড’ জিতেছে প্রকল্পটি৷
ছবি: DW/Röhl
অ্যাপ তৈরির উদ্দেশ্য
‘গেরশাদ’ নামক অ্যাপটি তৈরির উদ্দেশ্য পুলিশকে এড়িয়ে চলা৷ ইরানের ‘গাশত-ই-এরশাদ’ বা নৈতিকতা পুলিশের কাজ রাস্তায় নারী ও পুরুষরা ‘ঠিক’ পোশাক ও সাজসজ্জা অনুযায়ী বের হয়েছে কি না তা দেখা৷ ব্যতিক্রম হলে ‘অপরাধী’ ধরে শাস্তি দেয়া৷
ছবি: gershad.com
অপরাধের ধরণ
নারীরা যদি স্কার্ফ দিয়ে মাথা না ঢাকেন, তাঁদের চুলের স্টাইল যদি রীতি অনুযায়ী না হয় এবং তাঁরা যদি অতিরিক্ত মেক-আপ নেন তাহলে তাঁদের নৈতিকতা পুলিশের মুখোমুখি হতে হয়৷ ছেলেদের ক্ষেত্রে তাঁরা যদি পশ্চিমা ধাঁচের পোশাক পরেন তাহলেই বিপত্তি ঘটতে পারে৷
ছবি: gershad.com
শাস্তি
‘অপরাধ’ অনুযায়ী শাস্তি দিয়ে থাকে পুলিশ৷ জরিমানা আদায় থেকে শুরু করে সংশোধন কেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে জীবনযাপনের উপর শিক্ষা দেয়া, কারাগারে পাঠানো এমন সব শাস্তি দেয়া হয়ে থাকে৷ গেরশাদ এর পেছনের কারিগররা জানান, ২০১৩ সালে প্রায় ত্রিশ লক্ষ নারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ৷ এর মধ্যে দুই লক্ষের বেশি জনকে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চেয়ে পত্র লিখতে হয়েছে৷ আর জেলে যেতে হয়েছে ১৮ হাজারেরও বেশি নারীকে৷
ছবি: DW
অ্যাপটি যেভাবে কাজ করে
অ্যান্ডরয়েড ফোন যাঁরা ব্যবহার করেন তাঁরা এই অ্যাপটি ব্যবহার করেন৷ অ্যাপের মাধ্যমে শহরের কোন স্থানে নৈতিকতা পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়েছে তা জানা যায়৷ ফলে পথচারীরা সহজেই ঐ পথ এড়িয়ে চলতে পারেন৷
ছবি: https://www.gershad.com
ব্যবহারকারীরাই তথ্য দেন
অ্যাপের ব্যবহারকারীরাই তথ্য দিয়ে জানিয়ে দেন, কোথায় চেকপোস্ট আছে আর কোথা থেকে চেকপোস্ট উঠিয়ে নেয়া হয়েছে৷ অ্যাপের মাধ্যমে পুলিশকে এড়িয়ে বিকল্প পথে যাওয়ার পথও বাতলে দেয়া হয়৷
ছবি: gershad.com
সরকারের নিষেধাজ্ঞা
অ্যাপের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পরপরই ব্যবহারকারীরা এটি তাদের স্মার্টফোনে ডাউনলোড করা শুরু করলে সরকার এটি ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে৷
ছবি: gershad.com
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি
চলতি বছর ডয়চে ভেলের দ্য বব্স প্রতিযোগিতার ‘প্রগতির জন্য প্রযুক্তি’ বিভাগে ‘জুরি অ্যাওয়ার্ড’ জিতেছে প্রকল্পটি৷ তবে অ্যাপটির নির্মাতারা নিজেদের পরিচয় গোপন রাখতে চান৷ দ্য বব্সের ইরানি ভাষার বিচারক গোলনাজ এসফানডিয়ারিকে তাঁরা জানান, ‘‘এই পুরস্কার অ্যাপটির ব্যবহারকারীদের প্রাপ্য৷ এটা নিঃসন্দেহে যারা নৈতিকতা বিষয়ক পুলিশ বাহিনীকে এড়িয়ে চলতে চান, তাদের উপর ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করবে৷’’