১৯৭২ সালের অ্যাপোলোর পর পেরেগ্রিনই হতে পারে চাঁদে অবতরণ করা প্রথম মার্কিন চন্দ্রযান। বেসরকারি মার্কিন মহাকাশ কোম্পানির নেতৃত্বে প্রথম চন্দ্রযাত্রাও এটি।
বিজ্ঞাপন
৫০ বছরেরও বেশি সময় পর চাঁদের উদ্দেশে যাত্রা করা মার্কিন মহাকাশযানটি ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল স্পেস ফোর্স স্টেশন থেকে সোমবার সকালে উৎক্ষেপণ করা হয়।
ভলকান নামের এই মহাকাশযানটি তৈরি করেছে বোয়িং এবং লকহিড মার্টিনের ইউনাইটেড লঞ্চ অ্যালায়েন্স- ইউএলএ। মহাকাশযানে রয়েছে অ্যাস্ট্রোবোটিক টেকনোলজির চন্দ্রযান পেরেগ্রিন।
চাঁদে যান অবতরণকারী প্রথম বেসরকারি সংস্থা হওয়ার লক্ষ্যেই এই মিশন পরিচালনা করছে পিটসবার্গ-ভিত্তিক প্রাইভেট স্পেস রোবোটিক্স ফার্ম ইউএলএ। ভলকানের উৎক্ষেপণের পর লঞ্চ কন্ট্রোল রুম থেকে ইউএলএ মিশনের কর্মকর্তা এরিক মোন্ডা জানান, "সবকিছুই একদম ঠিকঠাক দেখাচ্ছে, একেবারে নিখুঁত৷’’
মিশন সম্পর্কে যা জানা গেছে
উৎক্ষেপণের ৩০ মিনিট পর ইউএলএ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানিয়েছে, ফ্লাইটটি স্থিতিশীল ছিল। যাত্রার প্রথম অংশে ফ্লাইটটি পৃথিবীর চারপাশে প্রদক্ষিণ করেছে।
এক্স-এ শেয়ার করা পোস্টে ইউএলএ জানিয়েছে, "ভারত মহাসাগরের উপরে মহাকাশের একটি সুনির্দিষ্ট বিন্দুতে পৌঁছানোর পর দ্বিতীয় ইঞ্জিন ফায়ার করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।"
এরপরই রকেটের ইঞ্জিনগুলো আবার জ্বলে ওঠে। এবারের পোস্টে ইউএলএ জানায়, প্রাথমিক কক্ষপথ থেকে চাঁদের দিকে পেরেগ্রিন ল্যান্ডারের যাত্রার জন্য রকেট নিক্ষেপ করেছে ভলকান।
সব ঠিকঠাক থাকলে ২৩ ফেব্রুয়ারি চাঁদে নামবে পেরেগ্রিন। ভবিষ্যতে মানুষের চন্দ্রাভিযানের আগে চন্দ্রপৃষ্ঠের তথ্য সংগ্রহ করবে এই চন্দ্রযান।
এডিকে/এসিবি (এপি, রয়টার্স, এএফপি)
চাঁদে নামার এত চেষ্টা কেন?
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পর চতুর্থ দেশ হিসেবে বুধবার চাঁদের মাটি ছুঁয়েছে ভারত৷ কিন্তু বড় মহাকাশ শক্তিগুলো চাঁদে নামতে এত মরিয়া কেন?
ছবি: ISRO via REUTERS
চাঁদের তথ্য
পৃথিবী থেকে তিন লাখ ৮৪ হাজার ৪০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত চাঁদ৷ পৃথিবীর আবহাওয়া, সমুদ্রের ঢেউ সবকিছুর উপর চাঁদের প্রভাব আছে৷ ধারণা করা হয়, সাড়ে ৪০০ কোটি বছর আগে পৃথিবীর সঙ্গে একটি বিশাল কিছুর ধাক্কা লেগে চাঁদ তৈরি হয়েছিল৷ চাঁদে যখন পূর্ণ সূর্য থাকে তখন তাপমাত্রা ১২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস উঠে যায়৷ আর অন্ধকারের সময় তাপমাত্রা মাইনাস ১৭৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে যায়৷
ছবি: MARTIN BERNETTI/AFP
পানি
২০০৮ সালে ভারতের চন্দ্রযান-১ মিশন প্রথম চাঁদে পানির অস্তিত্বের কথা জানিয়েছিল৷ মানুষের জীবনধারণের জন্য পানি গুরুত্বপূর্ণ৷ এছাড়া এটি হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের উৎস- যা রকেটের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে৷
ছবি: NASA/Zuma/picture alliance
হিলিয়াম-৩
হিলিয়ামের একটি আইসোটোপ হচ্ছে হিলিয়াম-৩৷ পৃথিবীতে হিলিয়াম খুব বিরল৷ কিন্তু এই উপাদানটি চাঁদে ১০ লাখ টনের বেশি আছে বলে নাসা জানিয়েছে৷ পরমাণু চুল্লিতে হিলিয়াম-৩ ব্যবহৃত হতে পারে, কিন্তু এটি তেজস্ক্রিয় না হওয়ায় বিপজ্জনক বর্জ্য তৈরি হয় না বলে জানিয়েছে ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি৷
ছবি: RAMI AL SAYED/AFP
রেয়ার আর্থ মেটাল
স্মার্টফোন, কম্পিউটারসহ আধুনিক প্রযুক্তিতে এই উপাদান ব্যবহার করা হয়৷ চাঁদে স্ক্যান্ডিয়াম, ইট্রিয়াম এবং ল্যান্থানাইডসহ অন্যান্য রেয়ার আর্থ মেটাল আছে বলে বোয়িংয়ের এক গবেষণায় জানা গেছে৷
ছবি: Britta Pedersen/dpa/picture alliance
চাঁদ খনন কীভাবে সম্ভব?
বিষয়টি এখনও পুরোপুরি স্পষ্ট নয়৷ খনন করতে হলে চাঁদে কোনো এক ধরনের অবকাঠামো স্থাপন করতে হবে৷ চাঁদের পরিবেশের কথা বিবেচনায় ধারণা করা যায়, খননের বেশিরভাগ কাজটি রোবট দিয়ে করতে হবে৷ আর চাঁদে পানি থাকায় মানুষও হয়ত টানা কয়েকদিন সেখানে থাকতে পারবে৷
ছবি: ingimage/IMAGO
আইন কী বলে?
এই বিষয়টিও স্পষ্ট নয় এবং অনেক ফাঁক আছে৷ জাতিসংঘের ১৯৬০ সালের আউটার স্পেস ট্রিটি বলছে, কোনো দেশ চাঁদের সার্বভৌমত্ব দাবি করতে পারবে না এবং সব দেশের লাভের উদ্দেশ্যে মহাকাশে গবেষণা করা যেতে পারে৷ তবে আইনজীবীরা বলছেন, বেসরকারি কোনো কোম্পানি চাঁদের কোনো একটি অংশের সার্বভৌমত্ব দাবি করতে পারবে কিনা তা স্পষ্ট নয়৷
ছবি: Christian Lehner/PantherMedia/imago images
১৯৭৯ সালের চুক্তি
ঐ সালে সই হওয়া মুন এগ্রিমেন্ট-এ বলা হয়েছে চাঁদের কোনো অংশ ‘কোনো রাষ্ট্র, আন্তর্জাতিক আন্তঃসরকারি বা বেসরকারি সংস্থা, জাতীয় সংস্থা বা বেসরকারি সংস্থা বা কোনো প্রাকৃতিক ব্যক্তির সম্পত্তি হবে না৷’’ তবে বড় কোনো মহাকাশ শক্তি এই চুক্তি অনুমোদন করেনি৷
ছবি: Seung-il Ryu/NurPhoto/picture alliance
যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগ
২০২০ সালে দেশটি আর্টেমিস অ্যাকর্ড ঘোষণা করেছিল৷ উদ্দেশ্য, বিদ্যমান আন্তর্জাতিক মহাকাশ আইন মেনে চাঁদে ‘নিরাপদ অঞ্চল’ গড়ে তোলা৷ কিন্তু চীন ও রাশিয়া এই চুক্তিতে যোগ দেয়নি৷