চাঁদের বুকে মানুষ নামার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে পৃথিবীর উপগ্রহটিকে ঘিরে নতুন করে উৎসাহ দেখা যাচ্ছে৷ তবে অ্যাপোলো অভিযানের অন্য অনেক সাফল্যের খবর সবার জানা নেই৷
বিজ্ঞাপন
অ্যাপোলো অভিযানে মহাকাশচারীরা শুধু চাঁদের মাটিতে পতাকা বসাননি৷ প্রথম চন্দ্রযাত্রীদের সঙ্গে অনেক বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতিও ছিল৷ সময় কম থাকলেও তাঁরা বেশ কয়েকটি পরীক্ষার জন্য চাঁদের বুকে যন্ত্রপাতি বসিয়েছিলেন৷ যেমন একটি রিফ্লেকটর৷ পরে চাঁদের উপর এমন আরও দু'টি রিফ্লেকটর বসানো হয়েছিল৷
পৃথিবী থেকে সেগুলির উপর লেজার পাল্স বা স্পন্দন নিক্ষেপ করা হয়৷ এই প্রক্রিয়ার ফলে যুগান্তকারী তথ্য পাওয়া গিয়েছিল৷ গ্রহ ভূতত্ত্ববিদ হিসেবে প্রোফেসর রাল্ফ ইয়াউমান বলেন, ‘‘এখনো সেগুলি অক্ষত রয়েছে৷ অর্থাৎ পৃথিবী ও চাঁদের গতি অত্যন্ত নিখুঁতভাবে পরিমাপ করা সম্ভব হচ্ছে৷ সেই তথ্য থেকে আমরা জানতে পেরেছি, যে চাঁদ ধীরে ধীরে পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাচ্ছে৷''
মাস ছয়েক পর চাঁদের উপর দ্বিতীয়বার মানুষের আগমনের সময় গবেষণা আরও গতি পেল৷ অবতরণের প্রত্যেকটি জায়গায় মহাকাশচারীরা একাধিক জিও-ফিজিকাল পরিমাপ যন্ত্র বসিয়েছেন৷ তার মধ্যে কয়েকটি চার বছর পর্যন্ত পৃথিবীতে তথ্য পাঠিয়েছে৷ তবে সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটেনি৷
মহাকাশচারীদের বেঢপ পোশাকের কারণে গবেষণার সুযোগ সীমিত রাখতে হয়েছে৷ তা সত্ত্বেও বিশেষজ্ঞদের মতে, এর ফলে মানবজাতির বৈজ্ঞানিক জ্ঞান বিপুল মাত্রায় বেড়ে গেছে৷ মহাকাশচারীরা চাঁদের মাটিতে কৃত্রিমভাবে যে কম্পন সৃষ্টি করেছেন, বিজ্ঞানীরা সঙ্গে সঙ্গে তা পরিমাপ করতে পেরেছেন৷ এভাবে তাঁরা চাঁদের গঠন সম্পর্কে আরও জানার চেষ্টা করেন৷ অন্য যন্ত্রপাতির মাধ্যমে চাঁদের নিজস্ব ভূকম্পন ধরা পড়েছে৷ সে যুগে এই আবিষ্কার ছিল সত্যি বিস্ময়কর৷
অ্যাপোলো অভিযানের অনেক অজানা সাফল্য
03:46
১৯৭২ সালের এপ্রিল মাসে মহাকাশচারীরা চাঁদের বুকে দাঁড়িয়ে জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চা করেছেন৷ বিশেষ অতি বেগুনি রশ্মি ক্যামেরার মাধ্যমে তাঁরা পৃথিবী ও বিভিন্ন নক্ষত্রের ছবি তোলেন৷ প্রায় প্রত্যেকটি অ্যাপোলো অভিযানেই তথাকথিত সৌর বাতাস নিয়ে গবেষণা চালানো হয়৷ পৃথিবীর বুকে এমন বৈদ্যুতিক চার্জে ভরা কণা দেখা যায় না৷ প্রো. ইয়াউমান বলেন, ‘‘শুধু হাইড্রোজেন প্রোটন ও হিলিয়াম খুঁজে পাওয়া যায়নি৷ সৌর বাতাসের মধ্যে আরও অনেক পরমাণু পাওয়া গেছে৷ এর ফলে সূর্য সম্পর্কে আরও অনেক তথ্য জানা গেছে৷ এমন প্রাথমিক পর্যায়েও সূর্যের কার্যকলাপ আরও ভালো করে বোঝা গেছে৷''
১৯৭০ সালে মহাকাশচারীরা চাঁদে গাড়ির মতো যানও নিয়ে আসেন৷ এর মাধ্যমে তাঁরা অবতরণের জায়গা থেকে দূরে গিয়ে পাথরের আরও উন্নত নমুনা সংগ্রহ করতে সক্ষম হন৷ পৃথিবীতে কনট্রোল সেন্টারের পাশের একটি ঘরে বসে বিজ্ঞানীরা এই ঘটনার সরাসরি সম্প্রচার দেখেছিলেন৷ সেই যুগে এমন প্রযুক্তির প্রয়োগ সত্যি অভিনব ঘটনা ছিল৷
চাঁদের সাতটি মজার তথ্য
পঞ্চাশ বছর আগে চাঁদে যাওয়ার পর থেকে তা নিয়ে বেরিয়ে এসেছে বহু মজার তথ্য৷ পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ সম্পর্কে এমন সাত তথ্য জেনে নিন ছবিঘরে৷
ছবি: Reuters/J. Ernst
ছোটো হয়ে যাচ্ছে চাঁদ!
নাসার গবেষণা বলছে, ক্রমান্বয়ে উত্তাপ হারাচ্ছে চাঁদ৷ এ কারণে চাঁদের উপরিভাগ আঙ্গুর থেকে কিশমিশের রূপ ধারণ করছে৷ শুধু তাই নয়, চাঁদের ভেতরের অংশও সঙ্কুচিত হচ্ছে ক্রমান্বয়ে৷ কয়েক লাখ বছর ধরে এটি দাঁড়িয়েছে ৫০ মিটারে৷
ছবি: picture-alliance/Arco Images/B. Lamm
কীভাবে উড়েছিল অ্যামেরিকার পতাকা?
ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকরা বলে থাকেন, চাঁদে পা রাখার ঘটনা ছিল ভুয়া৷ চাঁদের পরে কোনো একটি মঞ্চে অভিনয় করেছিলেন নাইল আর্মস্ট্রং ও বাজ অলড্রিন৷ কারণ, অলড্রিনের রাখা অ্যামেরিকার পতাকা উড়তেছিল, অথচ মহাশূন্যে তা উড়ার কথা না৷ তবে, পতাকা ওড়ার কারণ হিসাবে নাসা বলছে, বাজ অলড্রিন পতাকার দণ্ড নাড়ানোয় অমন দেখা গিয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot/Neil A. Armstrong
চরম গরম, হঠাৎ ঠাণ্ডা
তাপমাত্রার উঠানামায় আমাদের নাভিশ্বাস উঠে, তা ঠিক৷ কিন্তু এই উঠানামা চাঁদের তুলনায় কিছু্ই না৷ কারণ, চাঁদের গায়ে যখন সূর্যের তাপ পড়ে, তখন এর তাপমাত্রা ১২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠে৷ আবার সূর্যের আলো সরলেই মাইনাস ১৫৩ ডিগ্রি পর্যন্ত নেমে যায় তাপমাত্রা৷
ছবি: picture alliance/dpa/S. Kahnert
চাঁদের বুড়ি
চাঁদের বয়স যত, চাঁদে মানুষ বা বুড়ি আছে এমন রূপকতার বয়সও তত৷ অনেকেই পূর্ণ চন্দ্রের মধ্যে একজন মানুষের মুখ দেখতে পান৷ অনেকে বলেন, পাপ করার কারণে ওই ব্যক্তিকে গ্রাস করেছে চাঁদ৷ চাঁদের বুড়ির গল্পতো কতো শুনতে হয় আমাদের! আর যুদ্ধাপরাধী সাঈদীকে চাঁদে দেখা গেছে, বাংলাদেশে এমন গুজব রটার বয়সওতো বেশিদিন হয়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Rumpenhorst
দূরে সরে যায় চাঁদ
প্রতিবছর চার সেন্টিমিটার করে পৃথিবী থেকে দূরে সরে যায় চাঁদ৷ দূরে সরে গেলে আমাদের কাছে সেটাকে ছোটো দেখায়৷ এভাবে ৫৫০ মিলিয়ন বছর পরে এটাকে সবচেয়ে ছোটো দেখা যাবে৷ এরপর আর কোনো পূর্ণ সূর্যগ্রহণ হবে না৷
ছবি: Reuters/J. Ernst
চাঁদকে পরোয়া করে না নেকড়ে
সিনেমার দৃশ্যের কথা মনে পড়ে? যেখানে চাঁদের দিকে নেকড়ের ভীতিকর গর্জনে শেষ হয় হরর সিনেমা৷ কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে পূর্ণ জোৎস্না হলেও নেকড়ের কিছু যায় আসে না৷ এমনকি তারা সেদিকে তাকিয়ে গর্জনও দেয় না৷ তবে, রাতে নেকডের গর্জনের কারণে আমাদের পূর্বপুরুষরা দুটোর সংযোগ ঘটিয়েছেন হয়ত৷
ছবি: Imago/Anka Agency International/G. Lacz
চন্দ্রারোহী সবাই অ্যামেরিকান পুরুষ
এখন পর্যন্ত ১২ জন মানুষ চাঁদে হেঁটেছেন৷ নানান পেশা থেকে আসলেও কিছু ক্ষেত্রে মিল রয়েছে তাঁদের৷ মিলগুলো হচ্ছে- তারা সবাই অ্যামেরিকান, সবাই সাদা এবং সবাই পুরুষ৷ অ্যামেরিকানের বাইরে কিংবা নারীদের চাঁদে যাওয়ার জন্য আরো অনেক সময় অপেক্ষা করতে হবে বোধহয়৷