দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম ব্যক্তির চিকিৎসা না করে, নানা ভুয়ো খরচের হিসেব দিয়ে বিল বাড়াতে ব্যস্ত ছিল কলকাতার অ্যাপোলো হাসপাতাল৷ হ্যাঁ, এমনটাই প্রমাণ হলো তদন্তে৷
বিজ্ঞাপন
পথ দুর্ঘটনায় আহত সঞ্জয় রায়ের চিকিৎসায় গাফিলতি এবং পরিণতিতে সঞ্জয় রায়ের অকালমৃত্যুর ঘটনায় কলকাতার অ্যাপোলো হাসপাতালের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে৷ শুধু চিকিৎসায় গাফিলতিই নয়, রাজ্য সরকারের তৈরি করা তদন্ত কমিটি প্রমাণ পেয়েছে যে, ভুয়ো বিল তৈরি করে সঞ্জয় রায়ের চিকিৎসার খরচ বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে৷ এই অভিযোগ শুরু থেকেই করছিলেন মৃত সঞ্জয় রায়ের স্ত্রী৷
প্রমাণিত হয়েছে যে, সঞ্জয় রায়ের মূল চোট-আঘাতের চিকিৎসা না করে, কেবল হাসপাতালের বিল বাড়াতেই তৎপর ছিলেন কয়েকজন চিকিৎসক এবং চিকিৎসা কর্মী৷ যে বিপুল অঙ্কের বিল না মেটাতে পারায় সরকারি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে জায়গা পাওয়া সত্ত্বেও সঞ্জয় রায়কে নিয়ে যেতে পারেনি তাঁর পরিবার৷ নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারটির হাতে যথেষ্ট নগদ টাকা না থাকায় তাদের কার্যত বাধ্য করা হয় সামান্য আর্থিক সঞ্চয়ের সার্টিফিকেট জমা রেখে, তবেই সঞ্জয় রায়কে অন্যত্র নিয়ে যেতে৷ অথচ অ্যাপোলো হাসপাতালে সঞ্জয়ের চিকিৎসার প্রয়োজনে একাধিক দামি পরীক্ষার উল্লেখ করে মোটা অঙ্কের খরচ লেখা হয়েছে, যেসব পরীক্ষা আদৌ হয়নি৷ এরকমই একটি পরীক্ষার খরচ ধরা হয়েছে ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা৷ এ সব জালিয়াতিই ধরা পড়েছে তদন্তে৷
বিশ্বের সেরা ১৫টি হাসপাতাল
ব়্যাংকিং অনুযায়ী বিশ্বের সেরা ১৫টি হাসপাতালের নাম প্রকাশ করেছে ব়্যাংকিং ওয়েব অফ হসপিটালস৷ সেখানে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের হাসপাতালগুলোরই জয়জয়কার৷ দেখুন তালিকাটি...
রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের তদন্ত কমিটি নির্দিষ্টভাবে অভিযুক্ত চিকিৎসক, সেবিকা, ও হাসপাতালের বিলিং সেকশনের কর্মীদের চিহ্নিত করেছে, যাঁরা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন এই জালিয়াতিতে৷ এর আগেই অবশ্য অ্যাপোলো হাসপাতালের চিকিৎসক ও প্রশাসনিক কর্তাদের স্থানীয় থানায় ডেকে একপ্রস্থ জেরা করা হয়েছিল৷ শুক্রবার রাজ্য সচিবালয় নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর টেবিলে তদন্ত রিপোর্ট জমা পড়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে ফের অ্যাপোলোর কয়েকজন কর্তাব্যক্তিকে ডেকে পাঠানো হয়৷ ওদিকে মুখ্যমন্ত্রী উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক ডাকেন, অভিযুক্ত চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী এবং হাসপাতালের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সেই সিদ্ধান্ত নিতে৷ সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কলকাতার পুলিশ কমিশনারও৷
এদিকে এরই পাশাপাশি দু'টি নামি ওষুধ কোম্পানির বিরুদ্ধে মেয়াদ ফুরনো ওষুধ নতুন মোড়কে বিক্রি করার অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে পশ্চিমবঙ্গে৷ খোঁজ মিলেছে সেই মুদ্রণ সংস্থার, যারা পুরনো, বাতিলযোগ্য ওষুধের নতুন মোড়ক ছাপার কাজ করত৷ পুলিশ জানতে পেরেছে, বেলুড়ের একটি ছোট অফিসঘরে গত ৭-৮ বছর ধরে এই জালিয়াতি চলছিল৷ অভিযুক্ত ওই দুই ওষুধ কোম্পানি ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের এবং ভিন রাজ্যের বেশ কিছু স্টকিস্ট এবং ডিস্ট্রিবিউটরও এই জাল ওষুধের ব্যবসায় সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিল বলে প্রমাণিত হয়েছে৷ এই ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে রাজ্যজুড়ে৷ প্রত্যেকে প্রশ্ন তুলেছেন, যে ওষুধ সংস্থা বহু মানুষের জীবন নিয়ে ব্যবসা করেছে, তাদের কেন গণহত্যার দায়ে শাস্তি হবে না?
অতিরিক্ত ওষুধ সেবন মৃত্যু পর্যন্ত ডেকে আনতে পারে
বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের ঔষুধ সেবনে মৃত্যু – এরকম খবর প্রায়ই সংবাদের শিরোনাম হতে দেখা যায়৷ ঘুমের ওষুধ, ব্যথা বা অন্য ওষুধ একটা, দুটো করে খেতে শুরু করে অনেকের এক সময় নেশা হয়ে যায়৷ ছবিঘরে পাবেন ওষুধে আসক্তি থেকে ফেরার উপায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. May
নীরব নেশা
ঘুম আসছেনা বা মনটা উতলা, অশান্ত৷ ভয়, উত্তেজনা বা খুব অস্থির লাগছে৷ এসব ক্ষেত্রে অনেকেই মনে করেন, ওষুধ সেবন করলেই সব ঠিক হয়ে যাবে৷ আর এভাবেই শুরু৷ ঘুমের ওষুধ এবং সেডেটিভ অর্থাৎ নিস্তেজ বা শান্ত রাখার ওষুধ অনেকে সেবন করেন এর ভয়াবহ পরিণতির কথা না ভেবেই৷ জার্মানিতে আনুমানিক ১.২ মিলিয়ন মানুষ এসব ওষুধের ওপর নির্ভরশীল৷ এই নেশাকে বলা হয়ে থাকে ‘নীরব আসক্তি’৷
ছবি: picture alliance/Arco Images GmbH
মদ্যপান করার চেয়েও তাড়াতাড়ি নেশা এনে দেয়
‘‘অনেকের ক্ষেত্রেই রোগী এবং ডাক্তার খেয়ালই করেন না যে এসব ওষুধ রোগীকে ৪ থেকে ৬ সপ্তাহের মধ্যেই সেই ওষুধের ওপর নির্ভরশীল করে তোলে৷’’ একথা বলেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ব়্যুডিগার হলৎসবাখ৷ তিনি আরো জানান, কিছু ঘুমের ওষুধ এবং সেডেটিভ মদ্যপান করার চেয়েও বেশি তাড়াতাড়ি আসক্তি বা নেশা এনে দেয়৷
ছবি: Fotolia/Paul Schwarzl
কম ডোজ থেকেও সাবধান !
অনেকে হয়তো দিনে মাত্র একটি ট্যাবলেট সেবন করেন৷ কাজেই বুঝতেই পারেন না যে তারা ধীরে ধীরে ওষুধে আসক্ত হচ্ছেন৷ ওষুধে এক-আধদিন বিরতি দিলেই কেমন যেন শরীর খারাপ বা ঘুমের সমস্যা হয়৷ তখন আবার ওষুধ খেতে হয়৷ এটাই যে আসক্তি, প্রথমে তা বেশিরভাগ মানুষই বোঝেন না৷
ছবি: Fotolia/Yuri Arcurs
ওষুধ সেবনের আগে চারটি বিষয়ে গুরুত্ব দিন
প্রথমত, শুধু স্বাস্থ্যের জন্য খুবই দরকার হলেই ওষুধ খাবেন এবং ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে এবং এর কোনো বিকল্প চিকিৎসা আছে কিনা ডাক্তারের কাছ থেকে জেনে নিন৷ দ্বিতীয়ত, ওষুধ যতটুকু ডোজ দরকার, ঠিক ততটুকুই খাবেন৷ তার চেয়ে একটুও বেশি নয়!
ছবি: Colourbox
পরামর্শ
তৃতীয়ত, ওষুধ অল্প সময়ের জন্য – অর্থাৎ চার সপ্তাহের কম সময় সেবন করুন৷ চতুর্থত, ওষুধ চট করে ছেড়ে না দিয়ে আস্তে আস্তে ওষুধের মাত্রা কমিয়ে দিন৷ তবে অবশ্যই এ নিয়ে ডাক্তারের সাথে কথা বলে৷ পরামর্শ ডা. হলৎসবাখ-এর৷