চীনে বসবাসরত উইগুর মুসলমানদের উপর নজরদারি করতে অ্যাপ ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, এইচআরডাব্লিউ৷ শিনচিয়াং রাজ্যে বসবাসরত উইগুরদের মতো অন্যান্য মুসলমানদের উপরও চীন নজর রাখছে বলে অভিযোগ৷
বিজ্ঞাপন
‘ইন্টিগ্রেটেড জয়েন্ট অপারেশনস প্লাটফর্ম’ বা আইজেওপি নামে পরিচিত এক পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থার মাধ্যমে চীনের শিনচিয়াংয়ে বসবাসরত মুসলমানদের বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহের কথা আগেই জানিয়েছিল এইচআরডাব্লিউ৷ সেই সময় মানবাধিকার সংস্থাটি জানিয়েছিল, সরকার বিভিন্ন সূত্র থেকে এসব তথ্য সংগ্রহ করে৷ এর মধ্যে আছে ফেসিয়াল-রিকগনিশন ক্যামেরা, ওয়াইফাই স্নিফার্স (এর মাধ্যমে চেকপয়েন্ট দিয়ে পার হওয়ার সময় মানুষের কাছে থাকা মোবাইলের সব তথ্য সংগ্রহ করা হয়), পুলিশি চেকপয়েন্ট, ব্যাংকিং তথ্য এবং বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা৷
তবে এবার এইচআরডাব্লিউ জানিয়েছে, আইজেওপি ব্যবস্থার সঙ্গে এবার একটি অ্যাপ যুক্ত করেছে চীন৷ এই অ্যাপের সাহায্যে মানুষের ৩৬ ধরনের আচরণের তথ্য সংগ্রহ করা হয়৷ যেমন, প্রতিবেশীর সঙ্গে বেশি না মেশা, বাড়িতে ঢোকার সময় পেছনের দরজা ব্যবহার করা, স্মার্টফোন ব্যবহার না করা, ‘উৎসাহী হয়ে’ মসজিদে দান করা, বিদ্যুতের ‘অস্বাভাবিক’ ব্যবহার ইত্যাদি৷
এছাড়া এই অ্যাপ সরকারি কর্মকর্তাদের এমন মানুষজনের ব্যাপারে সতর্ক করে, যাদের পরিচিত কেউ নতুন মোবাইল নম্বর নিয়েছেন, কিংবা এমন মানুষজনের পরিচিত, যারা বিদেশে গিয়ে ৩০ দিনের মধ্যে দেশে ফেরেননি৷
হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, ভিপিএন-এর মতো চীনের বাইরে নির্মিত ৫১টি ইন্টারনেট টুলসের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে, যেগুলো ব্যবহারের জন্যও উইগুরসহ অন্যান্য মুসলমানদের চীনে আটক করা হয় বলে জানিয়েছে এইচআরডাব্লিউ৷
সংস্থাটি চীনের ঐ অ্যাপ-এর একটি কপি সংগ্রহ করে ‘কিউর৫৩’ নামে জার্মানির একটি সাইবার সিকিউরিটি কোম্পানিকে তার নকশা ও তথ্য পরীক্ষা করতে দিয়েছিল৷ এভাবেই অ্যাপ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারে এইচআরডাব্লিউ৷
জেডএইচ/এসিবি (এএফপি, ডিপিএ)
২০১৬ সালের ছবিঘরটি দেখুন...
যে মুসলিমদের পছন্দ করে চীন
চীনে প্রায় ২ কোটি ৩০ লাখ মুসলমানের বাস৷ উইগুর মুসলিমদের উপর নিপীড়নের কথা অনেকেই জানেন৷ কিন্তু আরেক মুসলিম গোষ্ঠীর প্রতি সরকারের সুনজর আছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Reynolds
হুই মুসলিম
বর্তমানে চীনে মুসলিম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় ২ কোটি ৩০ লাখ৷ এর মধ্যে হুই মুসলিমদের সংখ্যা এক কোটির বেশি৷ আর যে মুসলিম গোষ্ঠী সরকারের নিপীড়নের শিকার সেই উইগুরদের সংখ্যা এক কোটির কিছু কম৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Wong
উইগুরদের জন্য বিধিনিষেধ
বিভিন্নভাবে তাদের উপর নিপীড়ন চালায় চীনা সরকার৷ রোজা রাখা ও নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে মাঝেমধ্যে উইগুরদের জন্য বিধিনিষেধ জারি করা হয়৷
ছবি: Getty Images
কিন্তু হুইদের জন্য আলাদা নিয়ম
একই দেশে থেকে উইগুররা যখন ঠিকমতো ধর্ম পালন করতে পারেন না সেখানে হুই মুসলিমদের কোনো বাধার মুখে পড়তে হয় না৷ উপরের ছবিটিই তার প্রমাণ৷ চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংকে হুই মুসলিমদের সঙ্গে একটি মসজিদে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/ZUMA Press/J. Peng
কী কারণ?
উইগুররা স্বাধীনতা চান, হুইদের সেই আগ্রহ নেই৷ উইগুররা প্রথম ভাষা হিসেবে মান্দারিন ব্যবহার করেন না, হুইরা করেন৷ সর্বোপরি হুইদের সংস্কৃতির সঙ্গে চীনা সংস্কৃতির কিছুটা মিল আছে৷
ছবি: picture-alliance/ dpa
সবচেয়ে বড় মসজিদ
দেখছেন চীনের সবচেয়ে বড় মসজিদ৷ নাম ‘গ্রেট মস্ক অফ চিয়ান’৷ কিন্তু দেখতে কি মসজিদের মতো লাগছে, নাকি চীনের কোনো ভবন মনে হচ্ছে? তাহলেই বুঝুন হুইদের মসজিদেও কেমন চীনা সংস্কৃতির ছাপ আছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/A. Far
আছে বাণিজ্যিক কারণও
মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে ব্যবসা বাড়াতে আগ্রহী চীন৷ আর তার জন্য আরবি জানা মানুষ প্রয়োজন৷ আরব ব্যবসায়ীদের আকৃষ্ট করতে নিংচিয়া রাজ্যের ইনচুয়ান শহরে একটি ইসলামিক থিম পার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে৷ ঐ শহরের রাস্তায় আরবিতে দিকনির্দেশনার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ নিংচিয়া রাজ্যে অনেক হুই বাস করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Weiken
হুই কারা?
প্রায় ১,২০০ বছর আগে আরব, পারস্য আর মঙ্গোলিয়া থেকে মুসলিম ব্যবসায়ীরা চীনে গিয়েছিলেন৷ সেখানে তাঁদের অনেকে হান চাইনিজদের বিয়ে করেন৷ সেভাবেই হুই গোষ্ঠীর সৃষ্টি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Reynolds
যেখানে বাস তাঁদের
আগে নিংচিয়া রাজ্যের কথা বলা হয়েছে৷ এছাড়া উত্তরাঞ্চলীয় আরও কয়েকটি রাজ্যেও হুইরা বাস করেন৷ এছাড়া বেইজিং, সাংহাই সহ বড় বড় শহরেও অনেক হুই থাকেন৷