‘গুপ্তচরবৃত্তি’র অভিযোগে প্রযুক্তিসংস্থা এনএসও গ্রুপের রপ্তানি লাইসেন্স বাতিলের অনুমতি চেয়েছিল মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৷ কিন্তু ইসরায়েলের একটি আদালতে সেই আবেদন খারিজ হয়েছে৷
এনএসও গ্রুপের একটি কার্যালয়ছবি: picture-alliance/AP Photo/D. Cheslow
বিজ্ঞাপন
বিভিন্ন মানবাধিকার কর্মীদের ওপর নজরদারি ও তথ্যপাচার করার একাধিক অভিযোগ উঠেছে প্রযুক্তিসংস্থা এনএসও গ্রুপের বিরুদ্ধে৷ একই অভিযোগ নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালতেও হোয়াটসাপের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়৷ মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও একই অভিযোগে তেল আবিবের একটি আদালতে এনএসও গ্রুপের রপ্তানি লাইসেন্স বাতিল করবার আর্জি জানায়৷
এর কারণ, এনএসও গ্রুপের পেগাসাস নামের প্রযুক্তিটি, যার সাহায্যে ব্যবহারকারীর অজান্তেই মোবাইল ফোনের ক্যামেরাও মাইক্রোফোন চালু করে ফোন-ব্যবহারকারীর তথ্য নিতে পারে৷ এর ফলে হাতের মুঠোয় থাকা ফোন সহজেই হয়ে ওঠে নজরদারি পণ্য৷
করোনায় মানুষের চলাফেরায় গুগলের নজরদারি
করোনার সময় মানুষ কোথায় কোথায় যাচ্ছেন? তার হিসেব করেছে গুগল৷ সম্প্রতি একটি ‘কমিউনিটি মোবিলিটি রিপোর্ট’ প্রকাশ করেছে তারা, যেখানে উঠে এসেছে বিভিন্ন দেশের তথ্য৷ আছে বাংলাদেশেরও৷
ছবি: Getty Images/J. Sullivan
কমিউনিটি মোবিলিটি রিপোর্ট
কেনাকাটা ও বিনোদন, মুদি দোকান ও ফার্মেসি, পার্ক, বাস-ট্রেন স্টেশন, কর্মক্ষেত্র এবং বাসায় মানুষের যাতায়ত ও অবস্থানে কতটা পরিবর্তন ঘটেছে সেই তথ্য বের করেছে গুগল৷ এজন্য বিভিন্ন ডিভাইস ব্যবহারকারীদের লোকেশন ডেটা ব্যবহার করেছে তারা৷ সবশেষ ডেটাকে তুলনা করা হয়েছে ফেব্রুয়ারির সঙ্গে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Da Qing
বিনোদন, কেনাকাটায় ভাটা
রেস্তোরাঁ, ক্যাফে, শপিং সেন্টার, থিম পার্ক, জাদুঘর, লাইব্রেরি এবং মুভি থিয়েটারগুলো রয়েছে এই ক্যাটাগরিতে৷ ফেব্রুয়ারির শেষ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত এসব জায়গায় বাংলাদেশের মানুষের যাতায়ত বা গতিশীলতা ৭৬ ভাগ কমেছে৷ ভারতে কমেছে ৮০ ভাগ, নেপালে ৭৭ ভাগ আর পাকিস্তানে ৬৫ ভাগ৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
দোকানে যাতায়ত কমেছে অর্ধেক
নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার, খাদ্য গুদাম, কৃষি বাজার, ওষুধের দোকানে বাংলাদেশের মানুষের যাতায়ত আগের চেয়ে ৫৫ ভাগ কমে গেছে৷ একই হারে কমেছে ভারতেও৷ নেপালে কমেছে ৬৮ ভাগ, পাকিস্তানে ৪৭ ভাগ৷
ছবি: DW/H. U. R. Swapan
পার্কে বেড়ানো কমেছে
জাতীয় উদ্যান, সমুদ্র সৈকত, নগর চত্বর, কিংবা পার্কগুলোতে যাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন মানুষ৷ এপ্রিলে এসে ফেব্রুয়ারির তুলনায় তা কমেছে ৩৪ ভাগ৷ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে নেপালে ৫৫ ভাগ, ভারতে ৫২ ভাগ, পাকিস্তানে পার্কে বেড়ানোর প্রবণতা কমেছে ৩৬ ভাগ৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
যোগাযোগ কমেছে তিন চতুর্থাংশ
বাংলাদেশে বাস, রেল স্টেশনের মত যোগাযোগ কেন্দ্রগুলোতে মানুষের গতিশীলতা ৭২ ভাগ কমে গেছে৷ প্রায় একই হারে কমেছে ভারত ও নেপালেও৷ তবে পাকিস্তানে এই হার হ্রাস পেয়েছে ৫৫ ভাগ৷
ছবি: DW/H. U. R. Swapan
কাজে যাচ্ছে না মানুষ!
বাংলাদেশে ২৭ মার্চ থেকে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে৷ এর প্রভাবে ফেব্রুয়ারির তুলনায় এপ্রিলে কর্মক্ষেত্রে মানুষের গতিশীলতা ৫৮ ভাগ কম ছিল৷ ৪৮ থেকে ৬৪ ভাগ গতিশীলতা কমেছে ভারত, পাকিস্তান, নেপালেও৷
ছবি: DW/H. U. R. Swapan
বাসায় থাকার প্রবণতা বেড়েছে
ছুটি আর বিধিনিষেধে মানুষের ঘরে সময় কাটানোর প্রবণতা বেড়েছে৷ গৃহস্থলে থাকার হার এই এক মাসে ২৫ ভাগ বেড়েছে৷ এক্ষেত্রে ৩০ ভাগ বেড়েছে ভারতে, ১৯ ভাগ পাকিস্তানে আর ২১ ভাগ নেপালে৷
ছবি: Shib Sankar Rabidas
গতিশীলতা ব্যাপক কমেছে ইউরোপে
ইউরোপের কোভিড ১৯ এ বেশি আক্রান্ত দেশগুলোতে মানুষের গতিশীলতা ব্যাপক হারে কমেছে৷ স্পেন, ইটালি, ফান্সে দোকান ও বিনোদন কেন্দ্রে যাতায়ত হ্রাস পেয়েছে ৮৬ থেকে ৯০ ভাগ৷ এসব দেশের মানুষ এমনকি পার্কে ভ্রমণও আগের চেয়ে আশিভাগ কমিয়ে দিয়েছেন৷
ছবি: Imago Images/Zuma Wire
যুক্তরাষ্ট্রে জীবনযাত্রা বদলেছে কম!
পৃথিবীতে করোনা আক্রান্ত দেশগুলোর মধ্যে সবার উপরে যুক্তরাষ্ট্র৷ কিন্তু সংক্রমণে উপরের দিকে থাকা দেশগুলোর তুলনায় তাদের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন কমই ঘটেছে৷ ফেব্রুয়ারির তুলনায় এপ্রিলে ৪৫ ভাগ কমেছে কেনাকাটা বিনোদন কেন্দ্রে যাওয়া, পার্কে যাতায়ত কমেছে ১৬ ভাগ৷ আর যোগাযোগ কেন্দ্রগুলোতে মানুষের চলাচল ছিল আগের চেয়ে ৪৯ ভাগ কম৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP/M. Dwyer
পার্ক ভ্রমণ বেড়েছে জার্মানিতে
জার্মানিতে প্রায় দেড় লাখ মানুষ করোনায় আক্রান্ত৷ লকডাউন করা না হলেও দেশটিতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে রয়েছে বিধিনিষেধ৷ মানুষ এই সময়ে দোকান, বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে যাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু কমাননি পার্ক ভ্রমণ৷ বরং ফেব্রুয়ারির তুলনায় ৩৫ ভাগ বেড়েছে৷ নর্থ রাইন ওয়েস্টফালিয়া রাজ্যের বাসিন্দারা এমনকি আগের চেয়েও ৭৭ ভাগ বেশি সময় কাটাচ্ছেন পার্কগুলোতে৷
ছবি: Reuters/A. Hilse
10 ছবি1 | 10
কিন্তু সোমবার মামলার শুনানিতে এই আর্জি খারিজ করে দেন বিচারক রেচেল বারকাই৷ তিনি জানান, কোনো মানবাধিকার কর্মীর ফোন ব্যবহার করে তার ওপর নজরদারি চালানোর প্রমাণ পাওয়া যায়নি৷
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রযুক্তি বিষয়ক সহ-পরিচালক ডানা ইংলেটন এই ঘোষণাকে লজ্জাজনক আখ্যা দেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এই শুনানি বিশ্বজুড়ে মানুষকে বিপদের ঝুঁকিতে ফেলবে৷ এই পণ্য এনএসও গ্রুপ সারা বিশ্বের মানবাধিকারবিরোধী শক্তিদের কাছে বিক্রি করতে পারবে৷’’
‘সৌদি আরব থেকে মেক্সিকো’ সব দেশের মানবাধিকারবিরোধীদের শক্তি বাড়াবে এই পণ্য, বলছেন তারা৷
বহু দিন ধরেই সক্রিয় এনএসও গ্রুপ
গত মাসেই অ্যামনেস্টি দাবি করে, মরক্কোর সাংবাদিক ওমার রাডির বিরুদ্ধে এনএসও'র এই প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়েছিল৷ কিন্তু এনএসও গ্রুপের পক্ষে এ বিষয়ে কোনো মতামত পাওয়া যায়নি৷ বরং তাদের ব্যবসা এমন অভিযোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানায় তারা৷
২০১৬ সাল থেকেই খবরের শিরোনামে উঠে আসছে এনএসও গ্রুপ৷ আরব আমিরাতের সরকারকে নজরদারি চালানোয় এই সংস্থা সাহায্য করেছিল বলে দাবি অ্যামনেস্টির৷ ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থায় বর্তমানে নিযুক্ত প্রায় ৬০০ জন৷ বিশ্বের বেশ কিছু জায়গায় রয়েছে তাদের কার্যালয়৷