অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, ২০২১ সালে নতুন করে কিছু সংঘাত শুরু হয়েছে, আর অমীমাংসিত সংঘাতগুলো আরো গভীর হয়েছে৷ গতবছর বিশ্বের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে মঙ্গলবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই মন্তব্য করেছে অ্যামনেস্টি৷
বিজ্ঞাপন
‘দ্য স্টেট অফ দ্য ওয়ার্ল্ডস হিউম্যান রাইটস' শিরোনামের প্রতিবেদন বলছে, ‘‘আফগানিস্তান, বুর্কিনা ফাসো, ইথিওপিয়া, ইসরায়েল/ফিলিস্তিন, লিবিয়া, মিয়ানমার ও ইয়েমেনে সংঘাতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও মানবিক আইন অনেকখানি লঙ্ঘিত হয়েছে৷''
মানবাধিকার লঙ্ঘনের মারাত্মক ঘটনায়ও শাস্তি দেয়া থেকে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ বিরত থেকেছে বলে জানিয়েছে অ্যামনেস্টি৷ ‘‘খুব অল্প সংখ্যক ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া এসেছে, খুব অল্প ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতা ছিল৷ এর পরিবর্তে সংঘাত বেড়েছে,'' বলে প্রতিবেদনে বলা হয়৷
অ্যামনেস্টির মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা বিভাগের গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি পরিচালক ফিলিপ লুথ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘২০২১ সালে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গীকার করা হয়েছিল... কিন্তু বাস্তবতা ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত৷''
তিনি বলেন, গতবছর আশা ছিল পুরো বিশ্ব একসঙ্গে সমানভাবে মহামারি থেকে বেরিয়ে আসবে৷ কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, ধনী দেশগুলো টিকা তৈরি ও বিতরণে বাধা তৈরি করেছে৷
অ্যামনেস্টির প্রতিবেদন বলছে, আফ্রিকার ১২০ কোটি অধিবাসীর আট শতাংশেরও কম মানুষ করোনার সব টিকা পেয়েছেন - যা বিশ্বের সব অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে কম৷ আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৪০ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম৷
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ৬০ বছর
৬০ বছর হয়ে গেল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের পথ চলার৷ এক আইনজীবীর উদ্যোগে আত্মপ্রকাশ করার সময়ে ফিরে গিয়ে দেকে আসা যাক সংগঠনটির এই পথ পরিক্রমা৷
ছবি: Getty Images/AFP/L. Neal
ভুলে যাওয়া দুই কয়েদি এবং অ্যামনেস্টি
১৯৬১ সালে দুই ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায় পর্তুগালের স্বৈরাচারি সরকার৷সেই দুজন এবং এভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আরো যারা কারারুদ্ধ আছেন তাদেরও মুক্তির দাবিতে সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে একটি আর্টিকেল লেখেন পিটার বেনেসন৷ ব্রিটিশ আইনজীবী বেনেসনের লেখাটি সারা বিশ্বে আলোড়ন তোলে৷তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৬১ সালের ২৮ মে প্রতিষ্ঠিত হয় অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৷
ছবি: Miguel Riopa/AFP/Getty Images
জীবন রক্ষার লক্ষ্যে
অ্যামনেস্টির প্রথম লক্ষ্য ছিল অহিংস রাজনৈতিক বন্দিদের রক্ষা করা৷তাই সাউথ আফ্রিকার অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা, রাশিয়ার আলেক্সি নাভালনিসহ বিশ্বের অনেক উল্লেখযোগ্য ব্যক্তির পাশেই দাঁড়াতে দেখা গেছে ব্রিটেনভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠনটিকে৷এক সময় বিভিন্ন দেশে নির্যাতন এবং মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধেও প্রতিবাদে সোচ্চার হতে শুরু করে অ্যামনেস্টি৷
ছবি: Getty Images/S. Barbour
নির্যাতনের বিরুদ্ধে
১৯৭০-এর দশকে বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক বন্দিদের ব্যাপকভাবে নির্যাতন করা হতো৷ বিশেষ করে সামরিক সরকারগুলোর মধ্যেই এ প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যেতো৷ অ্যামনেস্টি সব ধরনের নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে শুরু করে৷এর ফলে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা গড়ে ওঠায় জাতিসংঘও নির্যাতনবিরোধী অবস্থান নেয়৷ জাতিসংঘের এ সংক্রান্ত সনদে স্বাক্ষর করে ১৫০টিরও বেশি দেশ৷
ছবি: Tim Sloan/AFP/Getty Images
যুদ্ধাঞ্চলে তদন্ত
যুদ্ধকে ঘিরে বিভিন্ন দেশে যে নিপীড়ন, নির্যাতন এবং হত্যার ঘটনা ঘটে তা রোখা এবং সে সবের তদন্তেরও উদ্যোগ নেয় অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল্৷সাম্প্রতিক সময়ে সিরিয়া যুদ্ধে রাশিয়া, সিরিয়ার বাহিনি এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত জোট বাহিনীর বিরুদ্ধে ওঠা যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তদন্তেও কাজ করেছে সংগঠনটি৷
ছবি: Delil Souleiman/AFP/Getty Images
অস্ত্র সরবরাহ রোধে উদ্যোগ
যুদ্ধাঞ্চলে যথেচ্ছ অস্ত্রের স্রোত বন্ধেও সচেষ্ট অ্যামনেস্টি৷ আন্তর্জাতিক আইন থাকা সত্ত্বেও অনেক দেশই সে আইন না মেনে বিভিন্ন দেশে প্রচুর অস্ত্র বিক্রি করে৷ সেসব অস্ত্রের একটি অংশ বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধেও ব্যবহার করা হয়৷ রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ বড় বড় সব অস্ত্র রপ্তানিকারী দেশের যুদ্ধাঞ্চলে অস্ত্র সরবরাহের পথ রোধ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে অ্যামনেস্টি৷
ছবি: Chris J Ratcliffe/Getty Images
সবার অধিকার রক্ষা
লিঙ্গবৈষম্য দূর করা, শিশুর অধিকার, এলজিবিটির অধিকার এবং নারীদের আইনসম্মত গর্ভপাতের অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ অনেক বিষয়েই সক্রিয় অ্যামনেস্টি৷
ছবি: Alejandro Pagni/AFP/Getty Images
পুরষ্কার ও স্বীকৃতি
৬০ বছরে অনেক পুরষ্কারও পেয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৷ এর মধ্যে ১৯৭৭ সালে পাওয়া নোবেল শান্তি পুরস্কার এবং ১৯৭৮ সালের জাতিসংঘ মানবাধিকার পুরস্কার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa/W. Kumm
7 ছবি1 | 7
অ্যামনেস্টি বলছে, বিরোধী ও সুশীল সমাজকে দমাতে অনেক দেশের সরকার মহামারিকে কাজে লাগিয়েছে৷ ‘‘কয়েকটি দেশের সরকার বাকস্বাধীনতা সীমিত করতে মহামারিকে ব্যবহার করেছে,'' বলে জানান ফিলিপ লুথ৷
অ্যামনেস্টিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা বলছে, সুশীল সমাজের কাজেও প্রভাব ফেলেছে মহামারি৷ ‘‘বিভিন্ন কৌশলের কারণে অনেক অঞ্চলে সুশীল সমাজের পক্ষে কাজ করা কঠিন হয়ে উঠেছে,'' বলে ডয়চে ভেলেকে জানান দাতা সংস্থা ‘ব্রেড ফর দ্য ওয়ার্ল্ডের' মানবাধিকার ও শান্তি বিভাগের প্রধান জিলকে ফাইফার৷
সরকার ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর অনেক কাজ এখন অনলাইনে হচ্ছে৷ তাই সরকারগুলো এখন অনলাইন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে৷ অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে এমন কয়েকটি উদাহরণ দেয়া হয়েছে৷ যেমন ২০১৯ সালের ৪ আগস্ট থেকে ২০২১ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ইন্টারনেট বন্ধ রাখা, মস্কোতে বিক্ষোভে ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তির ব্যবহার এবং সাংবাদিক, বিরোধী ও মানবাধিকার কর্মীদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের পেগাসাস স্পাইওয়্যার ব্যবহার৷
২০২১ সালে রাশিয়া, ভারত, কলম্বিয়া, সুদান, লেবানন ছাড়াও অন্তত ৭৫টি দেশের মানুষ নিজের ও অন্যের অধিকারের জন্য রাস্তায় নেমেছে বলে জানিয়েছে অ্যামনেস্টি৷