অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তাদের বাৎসরিক প্রতিবেদনে উদ্বাস্তু ও শরণার্থীদের বর্ধিত ঝুঁকির বিষয়ে অভিযোগ করেছে৷ বিভিন্ন দেশের সরকার মানবাধিকারের পরিবর্তে নিজ নিজ দেশের সীমান্ত রক্ষার উপরেই বেশি জোর দেন, বলছে অ্যামনেস্টি৷
বিজ্ঞাপন
সংস্থাটি বলছে, লক্ষ লক্ষ মানুষ সংঘাত ও নিপীড়নের হাত থেকে বাঁচবার প্রচেষ্টায় কিংবা কর্মসংস্থানের আশায় দেশ ছাড়ছেন এবং সেই সঙ্গে বাড়ছে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা৷ ‘‘সংঘাতের পরিস্থিতিগুলির সঠিক সমাধান না হওয়ার ফলে বিশ্বব্যাপী এক সর্বহারা শ্রেণি সৃষ্টি হচ্ছে,'' বলেছেন অ্যামনেস্টির সাধারণ সম্পাদক সলিল শেট্টি৷ এক্ষেত্রে তিনি সিরিয়া, মালি, সুদান, কঙ্গো ও উত্তর কোরিয়ার উদাহরণ দেন৷
শেট্টি বিশেষ করে সিরিয়া সংঘাতে আন্তর্জাতিক নিষ্ক্রিয়তার সমালোচনা করেন৷ ‘‘যারা সংঘাত থেকে পালাচ্ছে, তাদের অধিকার সুরক্ষার কোনো ব্যবস্থাই নেই,'' বলেছেন শেট্টি৷ ‘‘বহু দেশের সরকার অভিবাসন নিয়ন্ত্রণের নামে মানবাধিকার ভঙ্গ করছেন - বৈধ সীমান্ত নিয়ন্ত্রণের মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছেন৷''
কেন খুন হয়েছেন সাগর, রুনি?
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার এবং মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের তিন বছর পূর্ণ হয়েছে৷ কিন্তু আজও নিহতের পরিবার, শুভানুধ্যায়ী আর সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের মানুষ জানতে পারলো না, কেন এই হত্যাকাণ্ড? এই বিষয়ে ছবিঘর দেখুন এখানে:
ছবি: DW
সেই কালোরাত
২০১২ সালের এগারোই ফেব্রুয়ারি৷ সেদিন খুব ভোরবেলা জানা গিয়েছিল, ঢাকায় নিজের ভাড়া বাসায় খুন হয়েছেন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার এবং মেহেরুন রুনি৷ একই ফ্ল্যাটে থাকলেও প্রাণে বেঁচে যান তাদের একমাত্র শিশুপুত্র মেঘ৷
ছবি: dapd
সাগর সরওয়ার
দেশি-বিদেশি একাধিক গণমাধ্যমে কাজ করার পর ২০১১ সালে মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক হিসেবে কাজ শুরু করেন সাগর সরওয়ার (ডানে)৷ সর্বশেষ সেই টেলিভিশন চ্যানেলেই কাজ করেছেন তিনি৷ ২০১২ সালের দশই ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে কাজ থেকে বাসায় ফেরার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই খুন হন সাগর৷
ছবি: DW
মেহেরুন রুনি
একাধিক দৈনিকে কাজ করার পর কয়েক বছর আগে টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন বাংলায় কাজ শুরু করেন মেহেরুন রুনি (বামে)৷ মাঝে স্বামীর সঙ্গে বছর দেড়েক জার্মানিতে কাটিয়েছেন তিনি৷ এরপর ২০১১ সালে আবারো ফিরে যান নিজের কর্মস্থলে৷
ছবি: DW
৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার!
১১ ফেব্রুয়ারি ভোররাতে এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তারের প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন৷ বলাবাহুল্য, সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি৷
ছবি: DW
সাংবাদিকদের আন্দোলন
বাংলাদেশের বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের মধ্যে মতের অমিল থাকলেও সাগর-রুনি ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনের ঘোষণা প্রদান করে সব সংগঠন৷ খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে গত এক বছরে বেশ কয়েকটি প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছে বিভিন্ন সংগঠন৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ
সাংবাদিক দম্পতি হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে এবং খুনিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে গর্জে ওঠে বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত বাঙালিরা৷ জার্মানিসহ কয়েকটি দেশে খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়৷ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনও খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিবৃতি প্রকাশ করেছে৷
ছবি: DW
ব্লগারদের প্রতিরোধ
সাংবাদিক সংগঠনগুলোর আন্দোলনের পাশাপাশি ব্লগাররা এই দম্পতি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে রাজপথে নামে৷ গত বছর এই ইস্যুতে ব্লগ ‘ব্ল্যাক আউট’ পালন করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ব্লগ৷ সামহয়্যার ইন ব্লগে এখনো রয়েছে হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ব্যানার৷
ছবি: DW
রিপোটার্স উইদাআউট বর্ডার্স
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে রাজপথে ব্লগারদের সক্রিয় আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকাসহ বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম ইত্যাদি ইস্যুতে ব্লগ লিখে ডয়চে ভেলের দ্য বব্স প্রতিযোগিতার রিপোটার্স উইদাআউট বর্ডার্স অ্যাওয়ার্ড জয় করে আবু সুফিয়ানের বাংলা ব্লগ৷ ছবিতে আন্দোলনরত আবু সুফিয়ান৷
ছবি: DW
নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নাটকীয় ঘোষণা
গত অক্টোবর মাসে নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডে ‘জড়িত’ আটজনকে চিহ্নিত করে সাতজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানান৷ বাকি একজনকে গ্রেপ্তার করা হয় গত সপ্তাহে৷ ব়্যাব গ্রেপ্তারকৃতদের বলছে ‘সন্দেহভাজন’৷ আর পরিবার মনে করছে, এদেরকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে কার্যত ‘জজ মিয়া’ নাটক সাজানো হচ্ছে৷
আন্তর্জাতিক তদন্ত চান পরিবার
সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ডের এক বছর হলেও তদন্তে কোনো অগ্রগতি নেই৷ ধরা পড়েনি মূল অপরাধীরা৷ তাই তাদের পরিবার এখন আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি করেছেন৷ রুনির ভাই নওশের রোমান জানিয়েছেন, তারা (ব়্যাব) তদন্তের চেয়ে হয়রানি করতে বেশি উৎসাহী৷ সাগর রুনির একমাত্র সন্তান মেঘের নিরাপত্তাও প্রত্যাহার করা হয়েছে৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
জজ মিয়া নাটক চান না সাগরের মা
সাগরের মা সালেহা মনির এখনও কাঁদেন৷ তাঁর দাবি হচ্ছে, প্রকৃত অপরাধীদের ধরতে হবে৷ এক বছর পর দারোয়ান এনামুলকে গ্রেফতার তাঁর কাছে জজ মিয়া নাটক ছাড়া কিছুই নয়৷ তাঁর মতে, এক বছরে নানা টালবাহানা করে প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করার চেষ্টা চলছে৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
11 ছবি1 | 11
অ্যামনেস্টির রিপোর্টে ২০১২ সালের কিছু ঘটনার উদাহরণ দেওয়া হয়েছে: আফ্রিকা থেকে ইউরোপ অভিমুখী শরণার্থীদের ডুবন্ত নৌকাকে ইটালির উপকূল থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে কেননা ইউরোপীয় রাষ্ট্রসমূহের কাছে সীমান্ত রক্ষাই অগ্রাধিকার পেয়ে থাকে৷ ইউরোপীয় কমিশন অবশ্য এর জবাবে বলেছে, ইউরোপ সারা বিশ্বের রাজনৈতিক প্রার্থীদের ৩০ শতাংশকে আশ্রয় দিয়ে থাকে৷
অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে গ্রিসের নতুন অভিবাসন আইনের কড়াকড়ির সমালোচনা করা হয়েছে৷ বলা হয়েছে, গ্রিস এবং ইটালি, দু'টি দেশেই অভিবাসী ও রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের সঙ্গে নির্মম আচরণ করা হয়, যার কারণ হিসেবে অ্যামনেস্টির সাধারণ সম্পাদক সলিল শেট্টি হালের অর্থনৈতিক সংকটের কথা বলেছেন৷
অভিবাসনের ফলে আরেক ধরনের মানবাধিকার ভঙ্গের উদাহরণ হলো উপসাগরীয় দেশগুলি৷ এই সব দেশে বিদেশ থেকে আগত কর্মীদের দুরবস্থার কথা বলা হয়েছে অ্যামনেস্টির রিপোর্টে৷ যে সব দেশের সরকারদের বিরুদ্ধে বহিরাগত গৃহকর্মীদের অধিকার রক্ষায় ব্যর্থতার অভিযোগ করা হয়েছে, সেগুলির মধ্যে রয়েছে হংকং, জর্ডান,লেবানন ও কুয়েত৷