অনলাইন জায়ান্ট অ্যামাজন মাসখানেক আগে লন্ডনে একটি সুপারমার্কেট চালু করেছে৷ নাম ‘অ্যামাজন ফ্রেশ’৷ সেখানে বাজার করতে গিয়েছিলেন ডয়চে ভেলের মারি সিনা৷ তার কাছে এটা সুপারমার্কেট ছাড়াও সায়েন্স ফিকশনের একটি অংশ মনে হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
মার্কেটে ঢোকার সময় ক্রেতাকে তার স্মার্টফোনে থাকা অ্যামাজন অ্যাপ দিয়ে একটি কিউআর কোড স্ক্যান করতে হয়৷ তারপর যা পছন্দ, তা নিয়ে বের হয়ে যাওয়া যায়৷ সেটি কেনার জন্য ক্রেতাকে লাইনে দাঁড়াতে হয় না৷ টাকা বা কার্ড বের করে পেমেন্ট করতে হয়না৷ কারণ স্ক্যান করে বাজারে ঢোকার পর ক্রেতা তাক থেকে যা নেবেন, সেটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে অ্যাপের ভার্চুয়াল কার্টে যুক্ত হয়ে যায়৷ ক্রেতা মার্কেট থেকে বের হওয়ার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে অ্যাপ থেকে টাকা কেটে রাখা হয়৷
২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ‘অ্যামাজন গো' নামে এমন সুপারমার্কেট চালু হয়েছিল৷ সেদেশে এমন ২০টি স্টোর রয়েছে৷ একই প্রযুক্তি চালু করে পশ্চিম লন্ডনের ইলিং এলাকায় ইউরোপের প্রথম ক্যাশিয়ারহীন সুপারমার্কেট চালু করেছে অ্যামাজন৷
করোনা যাদের টাকার পাহাড়
করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ মহাসংকটে৷ তবে এই পরিস্থিতিতেও কেউ হয়েছেন বিলিয়নিয়ার, আবার কেউ এগিয়ে চলেছেন বিলিয়নিয়ার থেকে ট্রিলিয়নিয়ার হওয়ার পথে৷ তাদের নিয়েই এ ছবিঘর...
ছবি: Dennis Tan Tine/Star Max//AP/picture alliance
যিনি হবেন প্রথম ট্রিলিয়নিয়ার
অ্যামাজনের মালিক জেফ বেজোস আগে থেকেই বিশ্বের সেরা ধনী৷ তবে করোনা সংকটের সময় তার কোম্পানির ব্যবসা এত ফুলে-ফেঁপে উঠেছে যে এই ধারা চলতে থাকলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বিশ্বের প্রথম ট্রিলিয়নিয়ার হবেন তিনি৷ ফোর্বস ম্যাগাজিনের তথ্য অনুযায়ী, এ মুহূর্তে বেজোসের মোট সম্পদের দাম ১৯৩ বিলিয়ন ডলার (১৬১ বিলিয়ন ইউরো)৷
ছবি: Pawan Sharma/AFP/Getty Images
মাস্কের পোয়াবারো
বৈদ্যুতিক গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান টেসলা মোটরসের সিইও এলন মাস্কেরও এখন পোয়াবারো৷দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম নেয়া এই অ্যামেরিকান উদ্যোক্তা সম্প্রতি বিশ্বের সবচেয়ে ধনীদের তালিকায় বিল গেটসকে পিছনে ফেলেছেন৷ এলন মাস্কের মোট সম্পদের দাম এখন ১৩২ বিলিয়ন ডলার৷
ছবি: Getty Images/M. Hitij
রাতারাতি বিলিয়নিয়ার ইউয়ান
করোনার সময়ে ভীষণ কাজে লাগছে জুম অ্যাপ৷অনলাইন ক্লাস, ইন্টারভিউ, টকশোসহ নানা ধরনের অনুষ্ঠান হচ্ছে এই অ্যাপের সহায়তায়৷ জুম অ্যাপের মালিক এরিক ইউয়ানের মোট সম্পদের দাম এখন ১৯ বিলিয়ন ডলার৷হ্যাঁ, জেফ বেজোসের ১৯৩ বিলিয়ন এবং এলন মাস্কের ১৩২ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় তা খুবই কম, কারণ চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পাড়ি জমানো ইউয়ানের জুম পুরোপুরি বাণিজ্যিকভাবে যাত্রা শুরু করেছে ২০১৯ সালে, অর্থাৎ মাত্র এক বছর আগে৷
ছবি: Kena Betancur/Getty Images
ফোলিকে করোনার ‘উপহার’
করোনার এই সময়ে স্বাস্থ্যহানির ঝুঁকি এড়াবেন কী করে? কেন ব্যায়াম করুন, ইনডোর সাইকেল চালান! করোনা সংকট শুরুর পর থেকে অনেকেই তা করছেন৷ আর তাই ইনডোর সাইকেল তৈরির প্রতিষ্ঠান পেলোটনের শেয়ার বিক্রি তিনগুণ বেড়ে গেছে৷ সেই সুবাদে রাতারাতি বিলিয়নিয়ার হয়ে গেছেন পেলোটনের সিইও জন ফোলি৷
ছবি: Mark Lennihan/AP Photo/picture alliance
এক জার্মানের ক্যানাডা ‘জয়’
কোবলেন্ৎসে জন্ম নেয়া টোবিয়াস ল্যুটকে জার্মানি থেকে ক্যানাডায় গিয়েছেন ২০০২ সালে৷তখন মাত্র ২১ বছর বয়সে বাড়ির গ্যারেজে শুরু করেছিলেন ঘরে বসে অর্থ উপার্জনের চেষ্টা৷ তার প্রতিষ্ঠান শপিফাই করোনা সংকটে হাজার হাজার মানুষকে অনলাইন দোকান খুলতে সহায়তা করেছে৷ ফলে ক্যানাডার ‘মোস্ট ভ্যালুয়েবল এন্টারপ্রাইজ’ হয়ে গেছে শপিফাই এবং ফোলির মোট সম্পদের দাম দাঁড়িয়েছে নয় বিলিয়ন ডলার৷
ছবি: Wikipedia/Union Eleven
ভ্যাকসিন কপাল খুলেছে যার
জার্মান প্রতিষ্ঠান বায়োনটেকের প্রধান নির্বাহী উগুর সাহিনের সম্পদের দাম রাতারাতিই বেড়ে দুই দশমিক চার বিলিয়ন ডলার হয়ে গেছে৷ কেন এমন হলো? কারণ, বায়োনটেকের উদ্ভাবন করা ভ্যাকসিন৷
ছবি: BIONTECH/AFP
হ্যালোফ্রেশ খোলা আছে তাই
করোনার কারণে জার্মানির সব রেস্তোরাঁ যখন বন্ধ, তখন টাটকা খাবার পৌঁছে দিতে শুরু করে হ্যালোফ্রেশ৷বার্লিনভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা এরিক রিশটারেরও কপাল খুলে যায় তাতে৷ এই কয়েকমাসেই তিনি নাকি বিলিয়নিয়ার হওয়ার দ্বারপ্রান্তে৷
ছবি: Bernd Kammerer/picture-alliance
সবচেয়ে ধনী নারী
জেফ বেজোসের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হলেও অ্যামাজনের শেয়ার ছাড়েননি ম্যাকেঞ্জি স্কট৷ সে কারণেই বেজোসের সাবেক স্ত্রী এখন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারী৷ তার সম্পদের দাম ৭২ বিলিয়ন ডলার৷ করোনা একদিকে অ্যামাজনের মালিক, বিশ্বের সবচেয়ে ধনী জেফ বেজোসকে আরো ধনী করেছে, অন্যদিকে তার সাবেক স্ত্রী-কেও দিয়েছি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারী হওয়ার সুযোগ৷
ছবি: Dennis Tan Tine/Star Max//AP/picture alliance
8 ছবি1 | 8
ডয়চেভেলেরমারিসিনারঅভিজ্ঞতা
প্রথম দেখায় এটা আমার কাছে লন্ডনের যে-কোনো ছোট সুপারমার্কেটের মতো মনে হয়েছে৷ কিন্তু ছাদের দিকে তাকালে পার্থক্যটা চোখে পড়ে৷ ক্যামেরা আর সেন্সর দিয়ে স্টোরের প্রতিটি ইঞ্চির উপর নজর রাখা হচ্ছে৷
যে পণ্যগুলো আমি আমার অ্যামাজন ফ্রেশ ব্যাগে রাখছি সেটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভার্চুয়াল কার্টে যোগ হয়ে যাচ্ছে৷ আমি কিছু নেয়ার সময় ক্যামেরাগুলোর দিকে তাকিয়ে ছিলাম, এই আশায় যে, নব্বইয়ের দশকে সাই-ফাই মুভিতে যেমনটা দেখা যেত তেমনিভাবে আমার প্রতিটা নড়াচড়ার সঙ্গে হয়ত কিছু ক্যামেরাও নড়াচড়া করবে৷ কিন্তু তা হয়নি৷
ক্রেতারা তাক থেকে কী তুলছেন বা নিচ্ছেন সেটা কম্পিউটার ভিশন, ডেপথ সেন্সর ও মেশিন লার্নিং প্রযুক্তি নজর রাখছে৷
এই সুপারমার্কেট থেকে সংগ্রহ করা ক্রেতার ব্যক্তিগত তথ্য ৩০ দিন পর্যন্ত অ্যাপে সংরক্ষণ করা হবে বলে অঙ্গীকার করেছে অ্যামাজন৷
অবশ্য যুক্তরাজ্যের ক্রেতা অধিকার সংগঠনগুলো অ্যামাজনের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহের এই বিষয়টির সমালোচনা করছে৷ ওপেন রাইটস গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক জিম কিলক বলছেন, ‘‘আমাদের আরও তথ্য জানতে হবে এটা (অ্যাপে তথ্য সংরক্ষণের বিষয়টি) দিয়ে আসলে বাস্তবে কী বোঝায়৷''
লকডাউনে কেনাকাটা
01:25
লন্ডনে সুপারমার্কেট চালুর সঙ্গে অ্যামাজন নিজ ব্র্যান্ডের কিছু পণ্যও চালু করেছে৷ যেমন অ্যামাজন আলুর ভর্তা, অ্যামাজন কিওরড হ্যাম, অ্যামাজন হলুদ গোলাপ ইত্যাদি৷
অ্যামাজনের সুপারমার্কেটের পানীয় সেকশনে গিয়ে দুজন মানুষের দেখা পেয়ে আমি অবাক হয়েছিলাম৷ একটি ওয়াইনের বোতল নেয়ার পর ঐ দুজনের একজন আমার বয়স নিশ্চিত হতে পরিচয়পত্র দেখতে চেয়েছিল৷
বাজার শেষে বের হওয়ার সময় আমার মনে হয়েছিল হয়ত কোনো অ্যালার্ম বেজে উঠবে৷ কিন্তু তা হয়নি৷ আরেক ক্রেতা ডিয়ানা স্পার্কস বলছিলেন, ‘‘এটা কেমন যেন অদ্ভুত মনে হয়েছিল৷ আমার নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছিল, মনে হচ্ছিল আমি কিছু চুরি করেছি৷''
মার্কেটে থাকা কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে তারা স্টোরে এত ক্যামেরার উপস্থিতিতে বিচলিত নন৷ যেমন এলিজাবেথ বেলুর বলছিলেন, ‘‘আমি জানি লন্ডনে আপনি যেখানেই যান, সেখানেই ক্যামেরা আছে৷ তাই আমি আর এ নিয়ে ভাবিনা৷'' বেলুর বাজার করে অবাকই হয়েছেন৷ বলছেন, ‘‘এটা দ্রুত ও সুবিধাজনক এক পন্থা৷ বাজারে ঢুকে ব্যাগে কিছু তুলে বের হয়ে যেতে পারেন৷ আপনাকে কোনো লাইনে অপেক্ষা করতে হয় না৷''