দীর্ঘদিন ব্যাঙ এবং সাপের মতো উভচর ও সরিসৃপ প্রাণীদের নিয়ে কাজ করছেন জার্মান গবেষক রাফায়েল আর্নস্ট। সম্প্রতি তিনি এবং তার টিম অ্যামাজনের জঙ্গলে আবিষ্কার করেছেন জোমবি ব্যাঙের। ডিডাব্লিউকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন নতুন প্রজাতির ব্যাঙ আবিষ্কারের গল্প।
উনিশ শতকের দৈনন্দিন জীবনের কিছু ছবি নিয়ে এক অভিনব জাদুঘর৷ সুইজারল্যান্ডের ব্যাঙের জাদুঘরে ইতিহাসের সাথে মিলেছে এই উভচর প্রাণী৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
ছবি: Reuters/D. Balibouseসুইজারল্যান্ডের এস্তাভাইয়ে লে লাক শহরে রয়েছে এক আশ্চর্য জাদুঘর৷ উনিশ শতকে সেখানকার স্থানীয় মানুষদের জীবন কেমন ছিল, তা তুলে ধরতেই ফ্রাসোঁয়া পেরিয়ে তৈরি করেছেন এই জাদুঘর৷ কিন্তু মজার বিষয়, সেখানে নেই কোনো মানুষের মূর্তি৷ মানুষের বদলে রয়েছে ১০৮টি তুলোভরা ব্যাঙ! ব্যাঙদের এই ছবিতে দেখুন কীভাবে সে সময়ে বিলিয়ার্ডস খেলা হতো৷
ছবি: Reuters/D. Balibouseউনিশ শতকের শহুরে বাবুদের ছেড়ে এই ব্যাঙদের দেখুন! কীভাবে তখনকার নেতারা টেবিল কাঁপাতেন, তারই এক ঝলক এই ছবিতে৷
ছবি: Reuters/D. Balibouseদুশ’ বছর আগে ঘোড়ায় চেপে ঘুরে বেড়াতেন সে সময়ের উচ্চবিত্ত ব্যক্তিরা৷ এই জাদুঘরে ঘোড়ার বদলে কাঠবেড়ালির পিঠে চাপানো হলো ব্যাঙদের দর্শকদের সেই সময়ে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে৷
ছবি: Reuters/D. Balibouseব্যাঙ বলে কি তার লেখাপড়া করতে নেই? ওপরের ছবিতে তেমনই এক ব্যাঙ পুরোনো দিনের পালকের কলমে লিখতে ব্যস্ত৷
ছবি: Reuters/D. Balibouseউনিশ শতকের স্কুলের পরিবেশ ফুটিয়ে তুলতে এই জাদুঘরে রয়েছে ব্যাঙদের ক্লাসঘরের অভিনব প্রতিরূপ৷ তারই ছবি ওপরে দেওয়া৷
ছবি: Reuters/D. Balibouseদুশ’ বছর আগে পরিবারের সদস্যরা সবাই একসাথে বসে খেতেন৷ বর্তমান জীবনে সময়ের অভাব দেখা দেওয়ায় তা আর তেমন হয়ে ওঠে না৷ ওপরের ছবিতে দেখুন ব্যাঙদের গোটা পরিবারকে একসাথে খাওয়ার টেবিলে৷
ছবি: Reuters/D. Balibouseদৈনন্দিন জীবনে লেগেই থাকে টুকটাক খুনসুটি৷ দুশ’ বছর আগে সুইজারল্যান্ডেও এমনই হতো তা আঁচ করা যেতে পারে এই জাদুঘরের মূর্তিগুলি থেকে৷ ওপরের ছবিতে দেখা যাচ্ছে এমনই এক পরিবারের দৃশ্য৷
ছবি: Reuters/D. Balibouseসুইজারল্যান্ডের এস্তাভাইয়ে লে লাক শহরে এই জাদুঘর তৈরি হয় ১৮৫০ সাল নাগাদ৷ ব্যাঙ ও অন্যান্য উভচর প্রাণীর প্রতি বিশেষ আকর্ষণ থাকার কারণে প্রতিদিন হাঁটতে যাওয়ার রাস্তা থেকে মৃত ব্যাঙ কুড়োতেন এই জাদুঘরের স্রষ্টা ফ্রাসোঁয়া পেরিয়ে৷ প্রিয় এই প্রাণীর মাধ্যমেই স্থানীয় ইতিহাসকে ধরতে চেয়ে এই জাদুঘর তৈরি করেন তিনি৷
ছবি: Reuters/D. Balibouse নতুন প্রজাতির এই ব্যাঙের গায়ের রং গাঢ় কমলা। তার উপর ছোট ছোট স্পট আছে। রাতের দিকে এই ধরনের ব্যাঙ অ্যাক্টিভ হয়ে ওঠে। মাটির তলায় গর্ত করে থাকে এই ধরনের ব্যাঙ। রাফায়েল জানিয়েছেন, সন্ধের পর জঙ্গলে ঢুকে তারা বৃষ্টির অপেক্ষা করতেন। বৃষ্টি শুরু হলেই খালি হাতে তারা গর্ত বানানোর কাজ শুরু করতেন। গোটা শরীর ভরে যেত মাটিতে। গর্ত খোড়ার ওই আওয়াজের সঙ্গে তারা অপেক্ষা করতেন কখন ব্যাঙের ডাক শোনা যাবে। আওয়াজ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শব্দ অনুসরণ করে তারা ব্যাঙের পিছনে ছুটতেন। আগেই তারা নতুন প্রজাতির ব্যাঙের আওয়াজ পেয়েছিলেন। কিন্তু চোখে দেখতে পাননি। গর্ত করতে শুরু করার পরেই প্রথম তারা জোম্বি ব্যাঙের সন্ধান পান।
জোম্বি কিন্তু জোম্বি নয়
রাফায়েল জানিয়েছেন, নামে জোম্বি থাকলেও আসলে নতুন প্রজাতির এই ব্যাঙ আচরণে ভয়ংকর নয়। তা সত্ত্বেও তারা এই নাম দিয়েছেন কারণ, মাটিতে গর্ত করার সময় গবেষকদের জোম্বির মতো দেখতে লাগত। স্বভাবে নতুন প্রজাতির এই ব্যাঙ অত্যন্ত ভালো। তবে খুব সতর্ক না হলে তাকে দেখতে পাওয়া মুশকিল। দ্রুত এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চলে যেতে পারে ব্যাঙটি। আর গায়ের রঙের জন্য মাটির সঙ্গে মিশে যায়।
প্রায় দুই বছর ধরে অ্যামাজনের জঙ্গলে পড়ে থেকে নতুন এই ব্যাঙ আবিষ্কার করেছেন রাফায়েল। আরও দুইটি নতুন প্রজাতির ব্যাঙ আগেই আবিষ্কার করেছিলেন তিনি। তবে সাম্প্রতিক আবিষ্কারটি গুরুত্বপূর্ণ। রাফায়েল জানিয়েছেন, অ্যামাজনের জঙ্গল দ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জঙ্গল কেটে ফেলা হচ্ছে। নতুন প্রজাতির ব্যাঙটি কার্যত অবলুপ্তির পথে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে একে আর বাঁচানো যাবে না।
ইসাবেলা মার্টেল/এসজি