অ্যামেরিকাকে ছাড়াই যৌথ সামরিক বাহিনী গড়তে চায় ইইউ
১৬ নভেম্বর ২০২১
প্রয়োজনে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়া বিভিন্ন সংকট সামলাতে একটি যৌথ সামরিক বাহিনী গড়তে আলোচনা করছেন ইইউ সদস্য দেশগুলোর পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রীরা৷ ২০২৫ সালের মধ্যে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার সদস্যের এই বাহিনী গড়তে চায় ইইউ৷
বিজ্ঞাপন
এ লক্ষ্যে ২৮ পৃষ্ঠার একটি খসড়া তৈরি করেছেন ইইউর পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান জোসেপ বরেল৷ ইইউ মন্ত্রীরা সোমবার সন্ধ্যায় ব্রাসেলসে এই খসড়া নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা করেছেন৷ মঙ্গলবারও আলোচনা চলবে৷ আগামী মার্চের মধ্যে খসড়াটি চূড়ান্ত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে৷
‘ইইউ ব়্যাপিড ডিপ্লয়মেন্ট ক্যাপাসিটি' নামের এই বাহিনীতে ইইউর ২৭ সদস্য রাষ্ট্রের সবার অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক থাকবে না৷ তবে এই বাহিনী মোতায়েন করতে ঐকমত্যের প্রয়োজন হবে৷
ইইউ নেতারা দুই দশক আগে ৫০-৬০ হাজার সদস্যের একটি শক্তিশালী বাহিনী গঠন করতে একমত হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি৷
খসড়ায় বলা হয়, ‘‘সামরিক সংকট ব্যবস্থাপনার কাজ করতে আমাদের আরও ক্ষিপ্রতা, শক্তিসামর্থ্য ও নমনীয়তা প্রয়োজন৷''
‘স্ট্র্যাটেজিক কম্পাস' নামের এই খসড়ায় আরও বলা হয়, ‘‘আসন্ন হুমকি মোকাবিলা এবং উদ্ধার বা স্থানান্তর মিশন বা প্রতিকূল পরিবেশে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার মতো সংকট মোকাবিলায় আমাদের দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার সামর্থ্য থাকতে হবে৷''
জার্মানির ন্যাটো মিশন
ন্যাটোতে পশ্চিম জার্মানির অন্তর্ভূক্তির পর থেকে ট্রান্স-আটলান্টিক জোটের বিভিন্ন অভিযানে অংশ নিয়েছে বার্লিন৷ আর ১৯৯০ সাল থেকে জার্মানির সেনাবাহিনী বুন্ডেসভেয়ার নিজেদের ‘আওতাভুক্ত নয়’, এমন জায়গায়ও কাজ করেছে৷
ছবি: S. Gallup/Getty Images
ন্যাটোতে জার্মানির ভূমিকা
তৎকালীন পশ্চিম জার্মানি ১৯৫৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ন্যাটোতে যোগ দেয়৷ তবে, দুই জার্মানির পুর্নমিলনের আগ অবধি নিজেদের ‘আওতাভুক্ত নয়’ এমন এলাকাতে ন্যাটোর নেতৃত্বে মিশনে যায়নি জার্মানি৷ ১৯৯০ সালের পর থেকে বিশ্বের নানাপ্রান্তে শান্তিরক্ষা থেকে প্রতিরক্ষা অবধি নানা পর্যায়ে ন্যাটোর মিশনে অংশ নিয়েছে দেশটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Hanschke
বসনিয়া: জার্মানির প্রথম ন্যাটো মিশন
জার্মানি ১৯৯৫ সালে প্রথম ‘নিজেদের আওতাভুক্ত নয়’ এমন এলাকায় ন্যাটোর নেতৃত্বে শান্তি রক্ষায় সেনা মোতায়েন করে৷ দেশটির নাম বসনিয়া হ্যারৎসেগোভিনা৷ বসনিয়া যুদ্ধের সময় সেখানে নিরাপত্তা প্রদানে ভূমিকা পালন করে জার্মান সেনারা৷ ন্যাটোর সদস্য দেশগুলোর ষাট হাজারের বেশি সেনা সেসময় বসনিয়ায় মোতায়েন করা হয়েছিল৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/H. Delic
কসভোয় শান্তি রক্ষা
কসভোতে ন্যাটো নেতৃত্বাধীন শান্তিরক্ষা মিশনের শুরু থেকে সাড়ে আট হাজারের মতো জার্মান সেনা সেখানে মোতায়েন করা হয়৷ ১৯৯৯ সালে ন্যাটো সার্বিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর উপর বিমান হামলাও চালিয়েছিল, কেননা, সেই সময় তারা সংখ্যালঘু আলবেনীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং তাদের বেসামরিক সমর্থকদের উপর দমনপীড়ন চালাচ্ছিল৷ এখনও সাড়ে পাঁচশ’র মতো বুন্ডেসভেয়ারের সেনা দেশটিতে মোতায়েন রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/V.Xhemaj
এজিয়ান সি-তে টহল
জার্মানি ২০১৬ সালে কমব্যাট সাপোর্ট শিপ ‘বন’-কে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সমর্থিত ন্যাটো মিশনের আওয়তায় এজিয়ান সি-তে মোতায়েন করে৷ অভিবাসী সংকটের সময় গ্রিক এবং তুর্কি সমুদ্রসীমায় অবৈধ অনুপ্রবেশের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ ছিল এই মিশনের অংশ৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/M.Schreiber
এক দশকের বেশি সময় ধরে আফগানিস্তানে
জার্মান সংসদ ২০০৩ সালে আফগানিস্তানে মোতায়েন ন্যাটো নেতৃত্বাধীন বাহিনীতে সেনা পাঠানোর পক্ষে মত দেয়৷ ফলে জার্মানি ন্যাটো বাহিনীতে তৃতীয় বৃহত্তম সেনা পাঠানো দেশে পরিনত হয়৷ এই মিশনে পঞ্চাশ জনের বেশি জার্মান নিহত হয়েছে৷ এখনো প্রায় হাজারখানেকের মতো সেনা সেদেশে মোতায়েন রয়েছে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/A.Niedringhaus
লিথুয়ানিয়ায় জার্মান ট্যাংক
বাল্টিক রাষ্ট্রগুলোতে ন্যাটোর উপস্থিতি বাড়ানোর অংশ হিসেবে বুন্ডেসভেয়ারের সাড়ে চারশ’ সেনা ২০১৭ সালে লিথুয়ানিয়ায় মোতায়েন করা হয়েছে৷ ন্যাটোর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এই উপস্থিতিকে শক্তিশালী করছে জার্মানির সর্বাধুনিক ট্যাংক৷ তাছাড়া যুদ্ধের জন্য প্রস্তত বাহিনীর নেতৃত্বেও রয়েছে জার্মানি, ক্যানাডা, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র৷
ছবি: picture alliance/dpa/M. Kul
নেতৃত্ব গ্রহণ
২০১৯ সালে ন্যাটোর বহুজাতিক ‘ভেরি হাই রেডিনেস জয়েন্ট টাস্ক ফোর্স (ভিজেটিএফ)’-এর নেতৃত্ব দেবে জার্মানি৷ জোটটির পূর্বাংশে রাশিয়ার সম্ভাব্য আগ্রাসনের জবাব দিতে এই ব়্যাপিড রিঅ্যাকশন ফোর্স তৈরি করা হয়েছে৷
ছবি: S. Gallup/Getty Images
7 ছবি1 | 7
এই বাহিনীর জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, আকাশপথে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়ার ব্যবস্থা এবং যুক্তরাষ্ট্রের মতো কম্যান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সক্ষমতা গড়ে তুলতে ইইউ দেশগুলোর কাছ থেকে অঙ্গীকার চেয়েছেন জোসেপ বরেল৷
নিজস্ব বাহিনী গড়ে তুলতে ইইউকে অনুরোধ করেছে যুক্তরাষ্ট্র৷ সেটা ন্যাটোর পরিপূরক হবে বলে মন্তব্য করেছেন জো বাইডেন৷
২০০৭ সাল থেকে ইইউর ১৮টি ব্যাটেলগ্রুপ রয়েছে যার সদস্য সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার৷ কিন্তু চাড ও লিবিয়ায় তাদের মোতায়েনের চেষ্টা করেও সফল হওয়া যায়নি৷ প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যাটেলগ্রুপগুলোকে কয়েকটি ছোট ইউনিটে পরিণত করা গেলে তাদের মোতায়েন করা সহজ হতে পারে৷