অ্যামেরিকার সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞা নিয়ে মুখ খুলল উত্তর কোরিয়া। অ্যামেরিকার পদক্ষেপকে পক্ষপাতদুষ্ট এবং উস্কানিমূলক বলে ব্যাখ্যা করা হলো।
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি সমুদ্রে মিসাইল পরীক্ষা করেছে উত্তর কোরিয়া। জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়া প্রাথমিকভাবে মনে করেছিল, উত্তর কোরিয়া পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা করেছে। কিম জং উন পরে জানান, হাইপারসনিক মিসাইলের পরীক্ষা হয়েছে। ওই পরীক্ষার পরেই উত্তর কোরিয়ায় ব্যালেস্টিক মিসাইল পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে অ্যামেরিকা। উত্তর কোরিয়ার উপর একাধিক মার্কিন এবং জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা আছে, নতুন নিষেধাজ্ঞা তার উপর যুক্ত হলো।
উত্তর কোরিয়াকে কাবু করতে জাতিসংঘের কিছু ‘অস্ত্র’
পারমাণবিক অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার কোনো তোয়াক্কাই করছে না উত্তর কোরিয়া৷ দেশটির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান রয়েছে তাই জাতিসংঘেরও৷ দেখা যাক, কত রকমের নিষেধাজ্ঞার বেড়াজালে আটকা পড়েছে উত্তর কোরিয়া৷
ছবি: Reuters/S. Sagolj
কয়লা এবং লোহার ওপর নিষেধাজ্ঞা
২০১৭ সালের আগস্ট মাসে উত্তর কোরিয়ার ওপর সব ধরনের কয়লা, লোহা এবং লোহার আকরিক আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জাতিসংঘ৷ওপরের ছবিতে উত্তর কোরিয়ার সীমান্ত সংলগ্ন ড্যানডং শহরের লিয়াওনিং গ্রিনল্যান্ড এনার্জি কয়লাখনি৷ খনিটি অবশ্য চীনের৷
ছবি: Reuters/B. Goh
মুদ্রায় নিষেধাজ্ঞা
বিদেশে কোনো ব্যাংক খুলতে পারে না উত্তর কোরিয়া৷ এমনকি জাতিসংঘের কোনো সদস্য দেশ যাতে পিয়ংইয়ংয়ের জন্য লাভজনক কোনো আর্থিক লেনদেন বা চুক্তিতে না যায়, নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে সে বিষয়টিও নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছে জাতিসংঘ৷ জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞায় বলা হয়েছে, কোনো দেশের নাগরিক যদি উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে এমন কোনো ব্যবসায়িক যোগাযোগ স্থাপন করে, তাহলে সংশ্লিষ্ট দেশটিকে অবশ্যই ওই নাগরিককে বহিষ্কার করতে হবে৷
ছবি: Mark Ralston/AFP/Getty Images
জাহাজ চলাচল
ছবির এই জাহাজটি উত্তর কোরিয়ার৷ ২০১৬ সালের মার্চে ফিলিপাইন্সে এটিকে থামানো হয়৷ উত্তর কোরিয়ার কোনো জাহাজে পণ্য পরিবহনও নিষিদ্ধ করেছে জাতিসংঘ৷ এমনকি পিয়ংইয়ংযে নিজেদের জাহাজে অন্য দেশের পতাকা লাগিয়ে কাজ চালাবে, সেই পথও বন্ধ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Dumaguing
আকাশেও নিষেধাজ্ঞা
উত্তর কোরিয়ার জাতীয় এয়ারলাইন্স ‘এয়ার কোরিও’ অবশ্য পুরোপুরি নিষিদ্ধ নয়৷ এখনো তাদের বিমান রাশিয়া আর চীনে যাওয়া-আসা করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Yonhap
জ্বালানিতেও...
২০১৭ সালের ডিসেম্বরে জাতিসংঘের আরোপ করা নিষেধাজ্ঞার পর থেকে জ্বালানি আমদানিতেও কঠোর বিধিনিষেধের আওতায় উত্তর কোরিয়া৷ ফলে জনজীবনেও এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে৷ নিষেধাজ্ঞার কারণে বছরে মাত্র ৪০ লক্ষ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল আমদানি করতে পারে উত্তর কোরিয়া৷ তাই সে দেশের নাগরিকদের প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম ডিজেল এবং কেরোসিন পেয়েই খুশি থাকতে হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Ralston
বিদেশে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং স্থাবর সম্পত্তি
উত্তর কোরিয়ার কূটনীতিকদের ওপরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জাতিসংঘ৷ জার্মানিসহ এখনো হাতে গোনা যে কয়েকটি দেশে উত্তর কোরিয়ার দূতাবাস আছে, সেখানে উত্তর কোরীয় কূটনীতিকরা চাইলেও একটার বেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন না৷ দেশের বাইরে দূতাবাস ছাড়া আর কোনো কাজে ঘর ভাড়াও করতে পারে না উত্তর কোরিয়া৷
ছবি: picture alliance/dpa/S.Schaubitzer
সামরিক প্রশিক্ষণ
কোনো দেশ উত্তর কোরিয়ার সামরিক বাহিনী, পুলিশ, বা আধা সামরিক বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিতে পারে না৷ এ বিষয়েও রয়েছে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা৷
ছবি: Reuters/S. Sagolj
কিম জং উনের মূর্তি
উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের আবক্ষ মূর্তি দেখতে বা পছন্দের কোনো জায়গায় রাখতে চান? তা জাতিসংঘের একেবারেই কাম্য নয়৷ তাই উত্তর কোরিয়ার ওপর যে কোনো ধরনের মূর্তি বিক্রিতেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জাতিসংঘ৷
ছবি: picture alliance/dpa/robertharding
8 ছবি1 | 8
নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ার পরে এবার মুখ খুলল পিয়ংইয়ং। তাদের দাবি, সম্পূর্ণ বিনা কারণে অ্যামেরিকা নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। উত্তর কোরিয়ার সরকারি সংবাদপত্রে বৃহস্পতিবার দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের একটি বিবৃতি ছাপা হয়েছে। সেখানে কার্যত অ্যামেরিকাকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, অ্যামেরিকার নতুন নিষেধাজ্ঞার সামনে মাথা নত করবে না পিয়ংইয়ং। আত্মরক্ষার্থে নতুন নতুন অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়ে যাওয়া হবে।
উত্তর কোরিয়ার দাবি, কোনো দেশকে লক্ষ্য করে নতুন মিসাইলের পরীক্ষা করা হয়নি। নিজেদের অস্ত্রভান্ডার এবং সামরিক শক্তির আধুনিকীকরণের উদ্দেশ্যেই এই পরীক্ষা করা হয়েছে। কোনো দেশের যাতে ক্ষতি না হয়, সে দিকে লক্ষ্য রাখা হয়েছিল। এরপরেই অ্যামেরিকাকে এক হাত নিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অ্যামেরিকা বরাবরের মতো দাদাগিরি চালানোর চেষ্টা করছে। উত্তর কোরিয়া তাতে ভয় পায় না।
অ্যামেরিকার বক্তব্য
একটি সংবাদমাধ্যমে এ বিষয়ে মুখ খুলেছেন অ্যামেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন। তিনি এদিন বলেছেন, উত্তর কোরিয়া একের পর এক অস্ত্রের পরীক্ষা করে শক্তিসাম্য নষ্ট করছে। ইচ্ছে করেই তারা এ কাজ করছে। ভবিষ্যতেও উত্তর কোরিয়া এভাবে আরো অস্ত্রের পরীক্ষা করতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। এ দিন ব্লিংকেন বলেছেন, অস্ত্রের পরীক্ষা বন্ধ করে উত্তর কোরিয়া যদি আলোচনার টেবিলে চায়, অ্যামেরিকা তাকে স্বাগত জানাবে।